দেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। তখনকার সময় ঔই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এখন প্রায় ১৮ কোটি মানুষ আবাদি জমি কমেছে, মানুষ বেড়েছে।
বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় একটি। বর্তমানে বাংলদেশে হেক্টর প্রতি ধানের ফলন বিশ্বে তৃতীয়। চীন ও ভিয়েতনামের পরে বাংলাদেশের অবস্থান।
বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে আগেকার মানুষ ভাত খেত বেশি। এখন রুটি, শাকসবজি, ফলমুলের প্রতি মানুষের ঝোক বাড়ছে। এর ফলে গমের চাহিদা বাড়ছে। দেশে প্রায় ১৩.৫ লাখ টন গম ও ২৫ লাখ টন ভুটা উৎপাদন হচ্ছে। তবে,গম উৎপাদনে বাংলাদেশে বিশ্বে অষ্টম।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) নিরাপত্তা বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, জাতিসংঘ দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। যার লোকসংখ্যা ১৮ কোটি। এখানে প্রায় প্রতিদিন ২২০ হেক্টর তথা বছরে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ঘরবাড়ি, অফিস- আদালত, মিল-কারখানা, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি জন্য চলে যাচ্ছে।
সরকার প্রতি বছর ৩০-৩৫ লাখ খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করে। এর ফলে দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা বড় চ্যালেঞ্জ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে দেশে ২৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। (যদিও আওয়ামীলীগ সরকার তথ্য বিভ্রাট করে কম দেখিয়েছে, প্রকৃত তথ্য আরও বেশী) তারা দৈনিক ২২০০ কিলো ক্যালোরি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। মাথাপিছু ১৮০৫ কিলো ক্যালোরি খাদ্যসংগ্রহ করতে পারে না তাদেরকে বলা হয় হতদরিদ্র।
পুষ্টিবিদদের মতে, ২২০০ কিলো ক্যালোরি খাদ্য পূরণের জন্য ১জন মানুষ প্রতিদিন ২৫০-৩০০ গ্রাম চাল, আমিষ ১৫০-২০০ গ্রাম, মাছ-মাংস-ডিম-দুধ ৩৫-৪০ গ্রাম, সবজি ২৫০ গ্রাম, ফল ১৫০-২০০ গ্রাম, আঁশজাতীয় খাবার ১০০ গ্রাম এবং পরিমাণমতো পানি খাওয়া উচিত। গবেষণা বলছে মানবদেহের সুষ্ঠু গঠন ও রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, লবণ ও পানিসহ প্রায় ৪০ রকমের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান জরুরি।
প্রতি বছরে মানুষ বাড়ছে। আবাদি জমি কমেছে। ২০২১ সালে জনসংখ্যা বেড়ে ১৮ কোটি হয়েছে। ২০৫০ সালে হবে প্রায় ৩০ কোটি। তাতে খাদ্যের চাহিদা হবে ৪ কোটি টন। তাইতো জনসংখ্যার চাপ, নিরাপদ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
পৃথিবীতে দানাদার খাদ্যশস্য হচ্ছে চাল। আবার চালের মূল্যও বেশি। প্রতিদিন ১ জন লোক যদি ৫০০ গ্রাম চাল খায়, তাহলে বছরে ১৮৩ কেজি লাগে যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের মানুষ যদি দিনে ১০০ গ্রাম চালের পরিবর্তে সবজি ও ফল খাদ্য খায় তাহলে পুষ্টি চাহিদা যেমন পূরণ হবে তেমনি খাদ্য আমদানি কমে যাবে। আমাদের দেশে আলু উৎপাদন হয় ১ কোটি টনেরও বেশি। তবে, সংরক্ষণের অভাবে অনেক নষ্ট হয়। পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের প্রধান খাদ্য আলু। আমাদের বছরে আলুর চাহিদা ৭৫-৮০ টন। বাকী আলু আমরা রপ্তানি করতে পারি। প্রয়োজন শুধু আমাদের মানসিকতা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন।
সে হিসেবে আমরা অনায়াসে আলু, শাকসবজি, ফল ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে পারি। প্রয়োজন শুধু একটু সচেতনতা বৃদ্ধি, মানসিকতা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের। শাক-সবজি, ফল-মূল খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সবজি খায় দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ।
বাংলাদেশে আলুসহ ১৩৭ গ্রাম দিনে যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। অথচ সবজিতে অত্যধিক পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ লবণ, যা শরীরের গঠন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দেহ মন সুস্থ সবল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই, খাদ্য নিরাপত্তায় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা সৃষ্টি, সঙ্কট নিরসন ও খাদ্য নিরাপত্তায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি।
বাংলদেশের কৃষি তথা ধান নির্ভর। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বেশ মনোযোগী। এ খাতের ব্যাপক সাফল্যের কারণ হিসেবে দেখে। কিন্তু এখন আমাদের শাক-সবজি, মাছ-গোশত ও ডিম, দুধের উৎপাদনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা সবজি, মাছ-গোশত, ডিম- দুধ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে অপুষ্টিতে ভোগা জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় এসব পুষ্টিকর খাবার যুক্ত করতে হবে। তবে সকল পর্যায়ে সুষম খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই নীতিগত ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চালের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। চালের চাহিদা কমানোর জন্য খাদ্য তালিকায় চালের পরিমাণ হ্রাস করে মাছ, গোশত, ডিম, সবজি, দুধ ও ফলমূল বাড়াতে হবে। তথা পুষ্টিকর সুষম খাবার যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ে সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে।
চীন ও জাপানের কৃষকেরা পরিশ্রম করে খাদ্য শস্যের উৎপাদন বাড়িয়ে প্রায় চার গুণ করেছে। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা শ্রম, মেধা মনন দিয়ে নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে নিত্যনতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা পুষ্টি সমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য ও ক্রয় ক্ষমতা অর্জন সুস্থ-সুন্দর জাতি গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে এই প্রত্যাশা করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন