নিলর্জ্জ
ক্রীয়া কর্মদ্বারা কেউ কোন দিন ধার্মিক হতে পারেনি কিংবা অপরের শ্রদ্ধাভাজন হতে ও পারেনি।
নিলর্জ্জতার কারনে শ্রদ্ধাবোধ শক্তি লোপ পায়। ফলে এরা যেমন অপরের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে
পারেনা তেমনি অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীলও হতে পারে না। নিলর্জ্জ মানুষ একদিকে যেমন দায়িত্ব
জ্ঞানহীন হয়ে থাকে অপরদিকে তেমনি কর্তব্য বিমূখও হয়ে থাকে। এরা অন্যায় অশ্লীল আচরণ
করে ও তার জনা লজ্জা অনুভব করে না সুতরাং নিলর্জ্জ মানুষ সমাজের বোঝা এরা দুস্কৃতিকারী।
ইমাম
গাযযালী তার আল হিকমাতু ফি মাখলুকাতিল্লাহ গ্রন্থে লিখেছেন আল্লাহ একমাত্র মানুষকেই
লজ্জা দান করেছেন। যদি মানুষের মাঝে লজ্জা ও কুন্ঠা না থাকতো তবে সে কখনো গুনাহার কাজ
হতে বিরত হত না। কর্তব্য কাজ করত না। অতিথি মেহমানদের কদর করত না। বাবা মায়ের সেবা
করত না। ভালো কাজে আগ্রহী হত না আর মন্দ কাজ হতে বিরত থাকত না।
লজ্জা
মানুষের ভূষণ। লজ্জা সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি এবং সভ্যতার আংগিক। যে জাতী যত
বেশী লজ্জাশীল সে জাতী ততবেশী সভ্য। রাসূলে করীম সা: বলেছেন প্রত্যেক জাতীর কতগুলো
বৈশিষ্ট্য আছে ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জা। (ইবনে মাজাহ) তিনি আরও বলেছেন, লজ্জা ঈমান
বা বিশ্বাসের অর্ন্তগত এবং ঈমান বেহেশতে অবস্থিত। অশ্লীলতা মন্দের অন্তর্গত এবং মন্দ
দোযখে অবস্থিত। (তিরমিযি)
লজ্জা
না থাকলে পৃথিবীতে সভ্যতা বলে কিছু থাকত না। থাকত না মানুষ আর পশুতে পার্থক্য। শুধু
মাত্র লজ্জার ভূষণ দ্বারাই আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
রাসূলে করীম সা: বলেছেন, যার মধ্যে অশ্লীলতা থাকে উহা তাকে অপমানিত করে। আর যাহার
মধ্যে লজ্জা থাকে উহা তাকে সুশোভিত করে। (তিরমিযি)
আল্লাহ
মানুষকে বেহেশতেই স্থান দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, وَيَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ “হে আদম তুমি ও তোমার স্ত্রী বেহেশতে
বসবাস কর, তোমাদের যা যা ইচ্ছা খেতে থাক কিন্তু স্বরণ রেখ ঐ গাছটির নিকটবর্তী যেও না
(সুরা আরাফ ১৯) فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ ۖ وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَا إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِينٌ কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় তারা যখন ঐ গাছের ফল খেল তখন তাদের নিকট তাদের
লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা বেহেশতের পাতা দিয়ে তাদের লজ্জা ঢাকতে আরম্ভ করল।
(সুরা আরাফ ২২)। হযরত আবু সাইদ খুদরী রাঃ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সা: পর্দার মধ্যস্থিত
কুমারী বালিকা হতেও অধিকতর লজ্জাশীল ছিলেন। (বুখারী মুসলিম)
এত
বেশি লাজুক চিলেন বলেই রাসূলে করীম সা: ছিলেন পৃথিবীর সব চেয়ে পবিত্র মানুষ। লর্জ্জার
সাথে পবিত্রতার সর্ম্পক কত গভীর এতেই প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই দেখা যায় সমাজের সবচেয়ে
সভ্য মানুষগুলি সবচেয়ে লাজুক এবং সবচেয়ে বখাটে মানুষ গুলি সবচেয়ে নিলর্জ্জ।
বেহেশত হতে মানুষ যখন বিতাড়িত। তখন লজ্জাপীড়িত মানুষের বেদনা ক্লিষ্টরুপ দেখে সেদিন মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতের ভান্ডার খুলে দিলেন। তিনি দুনিয়াকে সৌন্দর্যের আধার করে দিলেন। ভোগ্য উপভোগ্য বস্তুর প্রাচুর্য দ্বারা সাজিয়ে দিলেন। মানুষের সৌন্দর্য্য স্পৃহাকে পরিপূর্ণতা দান করলেন রুচিকর পোশাকের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন, يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ ‘হে আদম সন্তানগণ আমি অবশ্যই তোমাদের লজ্জা নিবারণের জন্য এবং তোমাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য পোশাক নাযিল করেছি। (সুরা আরাফ ২৬) সুতরাং লজ্জার সাথে পোশাকের সমন্বয় সাধনের মধ্যেই মানুষের জন্য আল্লাহর প্রকৃত সৌন্দর্য নিহিত।
ইসলামে 'ছতর' কথাটি দ্বারা নারী পুরুষের শরীরের গোপনীয় অংশ যেভাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। শুধু মুসলমানগণই নয় বরঞ্চ সারা দুনিয়ার সভ্য মানুষ সভ্যতা এবং শালীনতার খাতিরে তা সমর্থন করে থাকে। আল্লাহ,قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ - وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ বলেন মোমেন পুরুষদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং গুপ্তস্থান রক্ষা করে। তারা যা করে আল্লাহ তা অবগত আছেন। আর মুমিন নারীগণ কে বলুন তারা যেন আপন দৃষ্টি সংযত রাখে। আপন লজ্জাস্থান রক্ষা করে চলে। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও (সুরা নূর : ৩০-৩১)
সুতরাং মানুষের শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য মানসিক পবিত্রকার জন্য সমাজ ও সব্যতার জন্য লজ্জা আল্লাহর এক অনুপম নেয়ামত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন