রোযার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫

রোযার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য

সারা বছর রোযা রাখা যায়। প্রতি চন্দ্র মাসের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা যায়। তবে, রমযান মাসের রোযা রাখা ফরজ। রোযা শুধুমাত্র আমাদের নবী মুহাম্মদ সা: এর উম্মতের জন্য ফরজ নয়, এটি পূর্বেকার নবী ও রাসুলের কওমের জন্যও ছিল। তবে রোযার সময়, পদ্ধতি ভিন্ন ছিল।

রোযা ফারসি শব্দ, অর্থ উপবাস থাকা। কোরআন ও হাদিসে একে সিয়াম বলা হয়েছে। আমাদের দেশে রোযা নামে প্রচলিত। সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। শরিয়ত মতে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বা রোযা বলে।রোযা জাতি-ধর্ম ও গোষ্ঠীর উপর ফরজ করা হয়েছে। কুরআনে সুরা বাকারা, ১৮৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববতী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও সিয়াম বা রোযাকে অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করা হল যেন তোমরা সংযমশীল হতে পারো বা মুত্তাকি হতে পারো।

হযরত আদম (আ.) প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা রাখতেন। 'আইয়ামে বিজ'কে বলা শুভ্রতার দিনসমূহ। হযরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) জান্নাতে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ায় তাঁদের গায়ের রং কালো হয়ে যায়। ফেরেশতারা তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করেন। ফেরেশতাদের দোয়ার ফলে তাঁদের গায়ের রং সাদা ও সুন্দর হয়। তখন থেকে আল্লাহ আদম (আ.) ও তাঁর উম্মতকে প্রতি মাসে ১৩' ১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
নাসায়ি শরীফের হাদিস হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতি চন্দ্র মাসে তিনটি রোযা বা সিয়াম পালন করতেন।
ইবনে মাজার হাদিস নুহ (আ.) রোযা পালন করতেন। মহানবী (সা.) বলেন, 'নুহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা ছাড়াও সারা বছর রোযা পালন করতেন।
ইবনে কাসিরের হাদিস মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেন, 'নুহ (আ.) প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা পালন করতেন। 
বুখারি শরীফের হাদিস মুসা (আ.)-এর জামানায় আশুরার রোজা ফরজ ছিল। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করে আসার পর ইহুদিরা আশুরার রোযা রাখতো। তা দেখে রাসুল (সা.) এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তারা বলেন এই দিনে আল্লাহ বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রু থেকে মুক্ত করে দেন। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ হযরত মুসা (আ.) রোযা রাখেন। মহানবী (সা.) সব শুনে বলেন, আমি হযরত মুসা (আ.) অনুসরণে তোমাদের থেকে বেশি হকদার। 
তখন মহানবী (সা.) আশুরার রোযা রাখেন এবং সাহাবিদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন। তবে রমযানের রোযা ফরজ হলে আশুরার রোযা নফলে পরিণত হয়।
হযরত দাউদ (আ.) বছরে ছয় মাস রোযা রাখতেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোযা হলো দাউদ (আ.)-এর রোযা। তিনি এক দিন রোযা রাখতেন এবং এক দিন রোযা ছাড়া অতিবাহিত করতেন।’
হযরত ঈসা (আ.) সময়ে রোযার প্রচলন ছিল। ঈসা (আ.) যখন জন্ম হয়, তখন লোকজন তাঁর মা মরিয়মকে তাঁর জন্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সুরা মরিয়ম ২৬নং আয়াতে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, فَقُوۡلِیۡۤ اِنِّیۡ نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمٰنِ صَوۡمًا فَلَنۡ اُکَلِّمَ الۡیَوۡمَ  اِنۡسِیًّا
আমি দয়াময়ের উদ্দেশে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি; সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে বাক্যালাপ করবনা। 
তাছাড়া হযরত ঈসা (আ.) জঙ্গলে ৪০ দিন রোযা রেখেছেন। ঈসা (আ.) এর  কওমের লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, 'আমাদের পাপ আত্মা কীভাবে বের করবো? উত্তরে তিনি বলেন, 'দোয়া এবং রোযা ছাড়া  বের করার কোন উপায় নাই।’

হযরত ওমর (রা.) বলেন, জাহেলী যুগ ও অন্ধকার যুগের লোকজন আশুরার রোযা পালন করত। রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার আগে মহানবী (সা.) নিজে আশুরার রোযা পালন করেছেন। 
বুখারী শরীফের হাদিস রমযানের রোযা ফরজ হলে নবী করীম সা. বলেন, যে চায় আশুরার রোযা রাখবে বা কেউ চাইলে আশুরার রোযা পরিহার করবে।
আল্লাহ বলেন, রমযান মাস মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎপথের নিদর্শন, ন্যায় ও অন্যায়ের মীমাংসারূপে কোরান অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা বাকারা ১৮৫নং আয়াতে বলা হয়েছে شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
রামাযান মাস, যে মাসে বিশ্বমানবের জন্য পথ প্রদর্শন এবং সু-পথের উজ্জ্বল নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের প্রভেদকারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে এবং যে ব্যক্তি পীড়িত অথবা প্রবাসী, তার জন্য অপর কোন দিন হতে গণনা করবে; তোমাদের পক্ষে যা সহজসাধ্য আল্লাহ তা'ই ইচ্ছা করেন ও তোমাদের পক্ষে যা দুঃসাধ্য তা ইচ্ছা করেন না এবং যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন তজ্জন্য তোমরা আল্লাহকে মহিমান্বিত কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
উল্লেখ্য যে দ্বিতীয় হিজরীতে রমযানের রোযা ফরজ করা হয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here