সংস্কৃতিই যে জাতি গঠনের সোপান, সংস্কৃতির রাখি বন্দনেই যে, সংঘবদ্ধ হয় মানুষ আর গড়ে উঠে জাতি একই ভাবে ভাষার একই আবেগ অনুভূতির, একই আচার অনুষ্ঠানের একই রীতি প্রথার একই কৃষ্টি কালচারের কারনে মানুষ স্বাভাবকি ভাবে একত্রিত হয়। জোট বাঁধে আর এই ভাবেই একটা জাতি গড়ে উঠে। বিশ্বের সকল জাতিই কিন্তু নিজ নিজ সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। পৃথক পৃথক সংস্কৃতি সম্বলিত কোন জাতিই কিন্তু কালক্রমে এক থাকেনি। আমাদের সাংস্কৃতির গরমিলের কারনে আমর এক থাকতে পারিনি পাঞ্জাবীদের সাথে। সংস্কৃতি একটা একক কিছু নয় অনেক কিছুর সমষ্টি। ভাষা সাহিত্য, দশর্ন, নাটক, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চারুকলা, নিত্যশিল্প অথাৎ মানুষের সুকুমার মনোবৃত্তির উন্মেষ ঘটানোর সকল প্রক্রিয়াই সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্ত।
সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য হলো মানুষের উন্নত মানের মন মানসিকতা গড়ে তোলা। আর উন্নত মানের মন মানসিকাতাটাই হলো সংস্কৃতি। আসল কথাটা হলো একটা বলিষ্ট সংস্কৃতি একটা জাতিকে বিশ্বের বুকে ইতিহাসের পাতায় যতখানী স্বরণীয় বরণীয় এবং মহিমান্বিত করতে পারে বোধ করি তার একশো ভাগের একাংশ ও পারেনা সেই জাতির সমস্ত সম্পদ আর শক্তি একত্রিত হয়ে। খালেদ বিল ওয়ালিদ, আমর ইবনে আস, হাজজাজ বিন ইউসুফ, মুহাম্মদ বিন কাশিম, মুছা তারিখ এদের অতুলনীয় শৌর্য বীর্য সোনালী যুগের কিঞ্চিত সম্মান ও কি আনতে পেরেছে ইসলামী শাসকের জন্য? তারা সাম্রজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করেছে সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করেছে ব্যাস। এর অর্ধিক সাধ্য তাদের ছিলনা। কিন্তু সে শিরোপা অর্জন করেছে বাগদাদের খলিফা আল মামুনের যুগ কোন বীর্য বা বিত্ত নয়। সে যুগের ইসলামী সাম্রাজ্যর অবস্মরণীয় জ্ঞান ভান্ডারের বিকাশই তার কারণ। ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রতি বিশ্বের যত শ্রদ্ধা তা সব বাগদাদের খলিফা আল মামুনের কারণে অন্য কোন কারণে নয়।
সংস্কৃতি চর্চা মানুষের সুকুমার মনোবৃত্তির উন্মেষ ঘটানোর প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য প্রয়োজন আমরা একান্ত ভাবে অনুভব করি। আজ আমাদের বড় অভাব অর্থের নয় চরিত্রের অর্থাৎ উন্নত মন-মানসিকতার আমাদের নৈতিক চরিত্রের এত অবক্ষয়ের কারণ কি? সম্পদ আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন। তাই বলে আমাদের মনোবৃত্তির পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে শুধু সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে ছোটা আর স্বর্ন যুগের পেছনে ছোটা একই কথা। আজ গোটা বিশ্বের যা অবস্থা তাতে বৈজ্ঞানিক সভ্যতা বিজ্ঞানের চাকা সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়াস দ্রুত গতিতেই ঘুরুক না কেন মানুষের মনের চোখ না ঘুরলে এ পৃথিবীর ভরাডুবি বিজ্ঞান ঠেকাতে পারবেনা এটা ‘হলফ’ করে বলা যায়।
সংস্কৃতির এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? এর জন্যে দায়ী সংস্কৃতি নয়। মানুষের রুচি বিকৃতি। সংস্কৃতি নষ্ট করেনি মানুষকে। বরং মানুষই নষ্ট করেছে সংস্কৃতিকে। বর্তমানে যারা সংস্কৃতি করে তারা সংস্কৃতিকে ভালো বেসে করে না তারা করে পয়সার জন্য। যা করলে পয়সা আসে, তাতে তারা করবেই। চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। ফলে সংস্কৃতির স্বকীয়তা হারিয়ে রুপি সংস্কৃতির কদর যাচ্ছে বেড়ে। সভ্যতায় মানুষকে করে তোলে রুচিশীল, সহায়তা করে মানুষের মন-মানসিকতার উন্নতি সাধনে। রসদ জোগায় সুশৃংখল সমাজ গঠনে অজ্ঞানকে জ্ঞানবান করে। আরামে আয়েশে আহার-বিহারে দৈনন্দিন জীবন যাত্রার সার্বিব প্রক্রিয়ার মাঝে তার জীবনকে করে সুন্দর ও মাধুর্যময়।
বর্তমান বিশ্বের অবস্থান একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানীক সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে। কিন্তু মানুষের রুচি ধরে রাখতে বর্তমান সভ্যতার চরম ব্যর্থতা আর বির্তকের অপেক্ষা রাখে না এক রক্তি। আচার অনুষ্ঠানে আসনে বসনে ব্যবহারে বাক্যলাপে, সাহিত্যে, সংগীতে সর্বক্ষেত্রে বিকৃতি রুচির উলঙ্গ ছবি চোখে পড়ে লক্ষ্য করলেই আজ আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার বড় অভাব। মানুষের এই রুচি বিকৃতির ঢেউ যে তড়িৎ গতিতে ধারমান তা কি দিয়ে ঠেকাবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগেই আমাদের সাবধান হওয়া প্রয়োজন। নয়তো পরীমনি ও বুবলির মতো মেয়েরা কেন এত বেপরোয়া। জাহেদ খানের মতো লোখেরা কেন ডিগবাজি খাবে এবং তা মানুষের কাছে গর্ববোধ করে বলবে। তাছাড়া এখন নায়িকাদের সন্তানের বাবা কে তা খুবে বের করতে হয় সাংবাদিককে। যে ওমুক নায়িকার স্বামী ওমুন নায়ক। এর জন্য দায়ী কে? পত্র পত্রিকা খুললেই দেখা যায় অভিনয়ের সাথে জড়িত মেয়েদের অনেকেই ভ্রষ্টা। অনেকেই পরকিয়ায় থাকে মত্ত অথবা একেক জন ৪/৫ টা করে বিবাহিতা সত্যিই যদি তাই হয় কে দায়ী সে জন্যে তাদের সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখার অন্তরায় কারা? কে তাদের বাধ্য করে সর্বস্ব খোয়াতে? তাই বিদেশী সাংস্কৃতি পরিহার করে আমাদেরকে ফিরে আসতে হবে বাঙ্গালী ও বাংলাদেশীদের নিজস্ব সাংস্কৃতিতে তাহলে সাংস্কৃতির দেওলিয়াত্ব রোধ করা সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন