একজন মিল্টন সমাদ্দার উত্থান ও কিছু কথা - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

একজন মিল্টন সমাদ্দার উত্থান ও কিছু কথা


বহুল আলোচিত 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' নামে আশ্রয় কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার। বরিশালের উজিরপুর থেকে বাবাকে পিঠিয়ে ওষুধের দোকান চুরি করে ঢাকায় এসে সে বনে যায় মানবতার ফেরিওয়ালা। রাস্তায় পঁচা-গলা, পাগল-অসহায়, দুস্হ, অসুস্হ মানুষদেরকে তাঁর মিরপুর আশ্রমে লালন-পালন শুরু করেন। তাঁর মানবিক কাজ দেখে মানুষ তাঁকে সাহায্য করতে থাকেন। আস্তে আস্তে সে আশ্রমটা বড় হল। তাঁর এ মহৎ কাজ দেখে সরকারও তাঁকে পুরষ্কৃত করলেন। বর্তমানে তার আশ্রমের বয়স ১০ বছর পূর্ণ হল। দান অনুদানের টাকা দিয়ে তিনি সাভারে আরও বড় পরিসরে আশ্রম তৈরি করেছেন। 


গত ২৫ এপ্রিল 'মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার' এবং 'জীবনের ধাপে ধাপে প্রতারণা’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। এই প্রতিবেদন দেখার পর থেকে বুকের ভিতরে চিন চিন করে ব্যথা অনুভব করেছি এই জন্য যে একজন হৃদয়বান মানবতার ফেরিওয়ালার পেছনে কারা সাংবাদিক লেলিয়ে দিয়ে মানবতার গন্ডদেশে চপেটাঘাত করছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে গত ১.৫.৩০২৪ তারিখে তাকে গ্রেফতারের পর এ জাতি ভয়ংকর প্রতারণার আর অপকর্মের তথ্য জানতে পেরেছে।

আমাদের ক্ষয়িঞ্চু সমাজ ব্যবস্হায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, পুলিশের কর্মকর্তা, ব্যাংকার, অফিসার, সচিব, আমলা-কামলা তাদের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। ছেলে-মেয়ে কানাডা-আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বে থাকে অন্যদিকে বাবা-মা দিনের পর দিন পড়ে থাকে আশ্রমে। প্রতিবন্ধী সন্তান হলে বাবা-মা সে সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু ডাস্টবিবের পাশে পড়ে থাকে, সেই সব অসহায় মানুষকে সমাজ থেকে কুড়ে নিয়ে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মিল্টন সমাদ্দার আশ্রমে ঠাই দিয়েছেন।
এ সমাজ ব্যবস্হায় একজন অসহায় মানুষকে রাস্তা থেকে, ডাস্টবিনের পাশ থেকে তুলে এনে তার আশ্রমে স্হান দিয়েছেন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় মহতকাজ। ভাল কাজের সাথে সমালোচনাও থাকবে। কাজের সাথে তার ভুলও থাকতে পারে। তবে, তা দেখতে হবে ভুলটি কোন পর্যায়ের। 

মিল্টন সমাদ্দার প্রতারণা, অনিয়মের যে লোমহর্ষক তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী পেয়েছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। তিনি মাদকাশক্ত। মানুষের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। ডিবি প্রধান জনাব হারুন অর রশীদ বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মিল্টন একজন সাইকোপ্যাথ। তিনি মানব পাচারের সাথে জড়িত। মিল্টন সমাদ্দার নিজেই মাদকসেবী।


তথাকতিথ মানবতার ফেরিওয়ালা সমাজের তার নাম সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী শিশু ও রোগাক্রান্তদের এনে মানুষের কাছ থেকে দান অনুদান নিয়ে তাদের  খরচ করতেন না। বরং অসুস্থ হলে নিজেই তাদের চিকিৎসার নামে অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে ফেলতেন। মিল্টন স্বীকার করেছেন অপারেশন থিয়েটারের নামে মানুষকে কাটাছেঁড়া করতেন। অসহায় মানুষদের টর্চারসেলে নিয়ে পেটাতেন। তার ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা রয়েছে।

এছাড়াও 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' তার আশ্রমে যারা মারা গেছেন, তাদের ডেথ সার্টিফিকেট নিজেই দিতেন, ডাক্তারের সিল স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করতেন। তাদের কোথায় কবর দেয়া হলো! সে তথ্য তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বীকার করছে।  আশ্রমে জাল মৃত্যুসনদ, মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যা কত তা নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে। কখনো বলা হচ্চ ৯০০ জন কখনো বলা হচ্ছে ৭০০ জন। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মিরপুর মডেল থানায় ৩টি মামলা করা হয়েছে। আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের ব্যয়ভার বহন করার জন্য চট্রগাম ভিত্তিক সংগঠন শামসুল হক ফাউন্ডেশনকে সাময়িক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে কাজ  শুরু করেছে এবং তারা একজন চিকিৎসককে সার্বক্ষণিক আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করেছে। বর্তমান মিরপুর পাইক পাড়ায় ১১জন মহিলা, ১১ জন পুরুষ ও ৫ জন বাচ্চ। এবং সাভার আশ্রম কেন্দ্রে ৫৩ জন মহিলা, ৫২ জন পুরুষ, ৪০ জন বাচ্চা  ও স্টাফ ৪০ জনসহ সর্বমোট ২১২ জন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অসহায় মানুষদের খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করতে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামের সংস্থাটি এগিয়ে এসেছে।

দেশের নামকরা 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' কিভাবে চলে এসব কিছু দেখার দায়িত্ব হলো সরকারের সমাজ সেবা ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। তারা যদি বছরে একবার দেখবাল করতেন তাহলে আজকে এই করুণ পরিণতি চোখে দেখতে হতো না।

যাইহোক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশের সকল সরকারি বেসরকারি আশ্রমের দেখাবাল করার জন্য উপযুক্ত সংস্হার মাধ্যমে দেখবাল করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানাই। 

এছাড়াও আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন বা আহ্ছানিয়া মিশনকে স্হায়ী দায়িত্ব দেয়া যাইতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই মিল্টন সমাদ্দারের মত মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথকে তার দুস্কর্মের জন্য যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তির ব্যবস্হা করা হোক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here