মানসিক চাপ ও হতাশা : প্রেক্ষিত ইসলাম

মানসিক চাপ তথা Stress  এবং হতাশা তথা Depression এ দু' টো আধুনিক যুগের রোগ। মানসিক চাপ বা হতাশা শারীরিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিকর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মানসিক চাপের কারণ মানসিক উদ্বিগ্নতা যার কারণে ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, উত্তেজনা বাড়ে। ফলে মানুষের শরীর ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যার ফলে শরীরের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। তাতে রক্তে হরমোনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ব্লাড প্রেসার, ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। টেনশন মানুষের ভিতর উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করে। 

মানসিক চাপ বা Stress ক্ষতিকর একটি দিক হলো হার্ট অ্যাটাক। গবেষণা বলছে, অতি মাত্রার রাগি, উদ্বিগ্ন এবং শত্রুতা পোষণ হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী। তাছাড়া Stress মানুষের শারীরিক সুস্হতার নষ্ট করে। বিশেষজ্ঞরা মানুষের দেহের ক্ষতিকর দিকগুলো শ্রেনিবিন্যাস করেছেন। যেমন, আতঙ্ক ও উদ্বিগ্নতা : কন্ঠস্বরের অস্বাভাবিকতা, তোতলানো এ ভয়যুক্ত কথা বলা। অতি কর্ম প্রবণতা : ঘুম কম হওয়া, দু:স্বপ্ন দেখা, চর্মরোগ,  দাগ, ব্রণ, একজিমা,  বদ হজম, বমিভাব, পিঠ, ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা।মাইগ্রেন : মাথা ব্যথা, বুকে ব্যথা, ব্লাড প্রেশার, কিডনি জটিলতা এবং এলার্জি।  হৃদরোগ : হার্ট অ্যাটাক, প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, নিরাশ হওয়া, ক্ষুদা নাথাকা, স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া। 

মানসিক চাপ ও হাতাশা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ইসলামী নিয়ম-নীতি মেনে চলা। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষ কখনও হতাশ হয় না। সকল বিপদাপদ মসিবতে আল্লাহকে স্বরণ করে। চরম দু:খ কষ্টে, ধৈর্য ধারণ করে এবং সকল বিষয় আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়। 

মানুষ যখন হতাশ হয় তখন তার ভিতর আল্লাহ বিমূখতা দেখা দেয়। আল্লাহ বিমুখতা কারণে অবিশ্বাসীরা উদ্বেগ উৎকন্ঠায় নিমজ্জিত হয়। তারা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পাওয়া না পাওয়ায় হাতাশায় ভোগে। তাই তারা দু:খ শোকে ধৈর্য রাখতে পারে না। ফলে নানা মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ফলে শারীরিক এ মানসিক অস্থিরতায় ভোগে এবং শরীর স্বাস্থ্য অসুখ বিসুখে নিপতিত হয়।

অন্যদিকে যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন। তারা মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন। তাদের কোন মানসিক চাপ থাকে না। শরীর দেহ মন প্রফুল্ল ও সজীব থাকে। তাদের অভিভাবক মহান আল্লাহ তা'য়ালা। পবিত্র কুরআনের সুরা তোয়াহার ১২৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَ مَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِکۡرِیۡ فَاِنَّ لَہٗ مَعِیۡشَۃً ضَنۡکًا وَّ نَحۡشُرُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ  اَعۡمٰی 'যে আমার স্বরণ থেকে বিমুখ, তার জীবনের ভোগ সম্ভার সংকুচিত হবে এবং কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠবো।

সুরা তাওবার ১১৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَّ عَلَی الثَّلٰثَۃِ الَّذِیۡنَ خُلِّفُوۡا ؕ حَتّٰۤی اِذَا ضَاقَتۡ عَلَیۡہِمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَ ضَاقَتۡ عَلَیۡہِمۡ اَنۡفُسُہُمۡ وَ ظَنُّوۡۤا اَنۡ لَّا مَلۡجَاَ مِنَ اللّٰہِ  اِلَّاۤ  اِلَیۡہِ পৃথিবী দিগন্ত বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকুচিত এবং তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়েছিল। এবং তারা নিজেরা নিজেদের জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ল। এখানে সংকুচিত বলতে মানসিক চাপ এ হতাশার কথা বলা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, মানসিক চাপের ক্ষতি থেকে শান্ত ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মকানুন মেনে চলা।

সুরা ফাতিরের ৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ہُوَ الَّذِیۡۤ  اَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ  فِیۡ قُلُوۡبِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ  لِیَزۡدَادُوۡۤا  اِیۡمَانًا مَّعَ اِیۡمَانِہِمۡ তিনি আল্লাহ বিশ্বাসীদের অন্তরে শান্তনা দান করেন যাতে তাদের অন্তর দৃঢ় থাকে। সুরা নাহলের ৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ ہُوَ مُؤۡمِنٌ فَلَنُحۡیِیَنَّہٗ  حَیٰوۃً  طَیِّبَۃً ۚ وَ لَنَجۡزِیَنَّہُمۡ اَجۡرَہُمۡ بِاَحۡسَنِ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ মু'মিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যাহা সৎকাজ করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব।

আমরা সব সময় আল্লাহ তায়ালার অনুশাসন মেনে চলবো। মনকে সব সময় প্রফুল্য রাখবো। সত্য কথা বলবো, সত্য পথে চলবো। ঝগড়া বিবাদে জড়াবো না। তাহলে মানসিক চাপ ও হতাশা আমাদের ভিতর বাসা বাধতে পারবে না। এতে শরীর ও মন প্রশান্ত হবে।