সাংস্কৃতি একটি ব্যাপক ভিত্তিক প্রত্যয়। কোন জনগোষ্টির বিশ্বাস, চিন্তা, চেতনা, মূল্যবোধ, প্রথা, প্রতিষ্ঠান, উপাসনা পদ্ধতি, জীবনাচরণ, প্রযুক্তি ইত্যাদি সবই সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্ত। প্রত্যেক সংস্কৃতির দুটো প্রদান দিক রয়েছে (১) বস্তুগত দিক। (2) অবস্তুগত দিক বা বিমূর্ত দিক। সমাজের মানুষ যা তৈরি করে মানবিক প্রয়োজন মিঠায় তা হচ্ছে সংস্কৃতির বস্তুগত দিক আর সমাজের বিশ্বাস, আচরণ, জীবণ দ্বারা ইত্যাদি হচ্ছে সংস্কৃতির অবস্তুগত দিক। (জাতি ভাষা সংস্কৃতি ও স্বাধীনাতা- আহমদ আবদুল কাদের)
কর্মক্লান্ত জীবণের অবসাদ মুছে দিতে সংস্কৃতির অবদান কেউ অস্বীকার করে না। এ ছাড়া অবসর বিনোদনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসাবেও কাজে লাগাই সংস্কৃতিকে। একটা রাষ্ট্রের ভৌগলিক প্রসার, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য উন্নত জাতি দেহের সাথে সম্পর্কিত। এসবে জাতির দেহ শাক্তিশালী হয়।
কিন্তু প্রাণহীন দেহ যেমন মূল্যহীন তেমনি সাংস্কৃতিহীন জাতি ও সুকৃতিহীন। আসলে সাংস্কৃতিই জাতির প্রাণ। জাতির মান উন্নয়নে সংস্কৃতির দান অপরিসীম। তাই কি উন্নত বা উন্নয়ণশীল সকল জাতির জন্যেই একটা গতিশীল সংস্কৃতির বিশেষ প্রয়োজন। এটা কিন্তু একেবারেই ধ্রুবসত্য কথা সাংস্কৃতি যাদের অনিশ্চিত বা দুর্বল জাতির প্রতি আনুগত্য ও তাদের দ্বন্ধ বহুল জাতির প্রতি মমত্ববোধ ও তাদের কাছে গুরুত্বহীন। (জাতি ভাষা সংস্কৃতি ও স্বাধীনাতা- আহমদ আবদুল কাদের)
সংস্কৃতিই জাতি গঠনের সোপান, সংস্কৃতির রাখি বন্ধনেই যে, সংঘবদ্ধ হয় মানুষ আর গড়ে উঠে জাতি, একই ভাবে ভাষার, একই আবেগ অনুভূতির, একই আচার অনুষ্ঠানের, একই রীতি প্রথার, একই কৃষ্টি কালচারের কারণে মানুষ স্বাভাবিকভাবে একত্রিত হয়, জোট বাঁধে আর এই ভাবেই একটা জাতি গড়ে উঠে। (সাংস্কৃতিক নষ্টামী আবদুল মবিন মিয়া)
বিশ্বের সকল জাতিই কিন্তু নিজ নিজ সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। পৃথক পৃথক সংস্কৃতি সম্বলিত কোল জাতিই কিন্তু কালক্রমে এক থাকেনি। আমাদের সাংস্কৃতির গরমিলের কারণে আমরা এক থাকতে পারিনি পাঞ্জাবীদের সাথে। সংস্কৃতি একটা একক কিছু নয় অনেক কিছুর সমষ্টি। ভাষা সাহিত্য, দর্শন, নাটক, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চারুকলা, নিত্যশিল্প, অর্থাৎ মানুষের সুকুমার মনেবৃত্তির উন্মেষ ঘটানোর সকল প্রক্রিয়াই সংস্কৃতির অর্ন্তভূক্ত। (শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি- মাওলানা আব্দুর রহিম)
সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য হলো মানুষের উন্নত মানের মন মানসিকতা গড়ে তোলা, আর উন্নত মানের মন মানসিকতাটাই হলো সংস্কৃতি। আসল কথাটা হলো একটা বলিষ্ট সংস্কৃতি একটা জাতিকে বিশ্বের বুকে ইতিহাসের পাতায় যত খানী স্বরণীয় বরণীয় এবং মহিমান্বিত করতে পারে বোধ করি তার একশো ভাগের একভাগও পারেনা সেই জাতির সমস্ত সম্পদ আর শক্তি একত্রিত হয়ে। (অপসংস্কৃতির বিভীষিকা- জহুরী)
খালেদ বিন ওয়ালিদ, আমর ইবনে আস, হাজ্জাজ বিন ইউসুপ, মুহাম্মদ বিন কাশিম, মুছা তারিক এদের অতুলনীয় শৌর্য বীর্য সোনালী যুগের কিঞ্চিত সম্মান ও কি আনতে পেরেছে ইসলামী শাসকের জন্য? তারা সাম্রজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করেছে সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করেছে ব্যাস। এর অধিক সাধ্য তাদের ছিলনা। (শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি- মাওলানা আব্দুর রহিম)
কিন্তু যে শিরোপা অর্জন করেছে বাগদাদের খলিফা আল মামুনের যুগে কোন বীর্য বা বিত্ত নয়। সে যুগের ইসলামী সাম্রাজ্যের অবিস্মরণীয় জ্ঞান ভান্ডারের বিকাশই তার কারণ। ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রতি বিশ্বের যত শ্রদ্ধা তা সব বাগদাদের খলিফা আল মামুনের কারণে অন্য কোন কারণে নয়।
সংস্কৃতি চর্চা, মানুষের সুকুমার মনোবৃত্তির উন্মেষ ঘটানোর প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য প্রয়োজন আমরা একান্তভাবে অনুভব করি। আজ আমাদের বড় অভাব অর্থের নয়, চরিত্রের অর্থাৎ উন্নত মন মানসিকতার আমাদের নৈতিক চরিত্রের এত অবক্ষয়ের কারণ কি?
সম্পদ আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন। তাই বলে আমাদের মনোবৃত্তির পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে শুধু সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে ছোটা আর স্বর্ণ যুগের পেছনে ছোটা একই কথা। আজ গোট বিশ্বের যা অবস্থা তাতে বৈজ্ঞানিক সভ্যতা বিজ্ঞানের চাকা সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়াস দ্রুত গতিতেই ঘুরুক না কেন মানুষের মনের চোখ না ঘুরলে এ পৃথিবীর ভরাডুবি বিজ্ঞান ঠেকাতে পারবেনা। এটা ‘হলফ’ করে বলা যায়
সংস্কৃতির এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? এর জন্যে দায়ী সংস্কৃতি নয়। মানুষের রুচি বিকৃতি। সংস্কৃতি নষ্ট করেনি মানুষকে, বরং মানুষই নষ্ট করেছে সংস্কৃতিকে। বর্তমানে যারা সংস্কৃতি সাথে জড়িত তারা সংস্কৃতিকে ভালোবেসে করে না। তারা করে টাকার জন্য যা করলে টাকা আসে, তাতো তারা করবেই। কেননা চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। ফলে সংস্কৃতির স্বকীয়তা হারিয়ে টাকার সংস্কৃতির কদর বেড়েছে।
সভ্যতায় মানুষকে করে তোলে রুচিশীল। সহায়তা করে মানুষের মন মানসিকতার উন্নতি সাধনে। রসদ জোগায় সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে, অজ্ঞানকে জ্ঞানবান করে। আরামে আয়েশে, আহারে বিহারে, দৈনন্দিন জীবন যাত্রার সার্বিক প্রক্রিয়ার মাঝে তার জীনবকে করে সুন্দর ও মাধুর্যময়। (সাংস্কৃতিক নষ্টামী আবদুল মবিন মিয়া)
বর্তমান বিশ্বের অবস্থান একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে। কিন্তু মানুষের রুচি রাখতে বর্তমান সভ্যতার চরম ব্যর্থতা আর বির্তকের অপেক্ষা রাখে না এক রত্তি। আচার,আচরণ, অনুষ্ঠানে, আসনে, বসনে, ব্যবহারে, বাক্যালাপে, সাহিত্যে সংগীতে সর্বক্ষেত্রে বিকৃতি রুচির উলঙ্গ ছবি চোখে পড়ে লক্ষ্য করলেই।
আজ আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার বড় অভাব । মানুষের এই রুচি বিকৃতির ঢেউ যে তড়িৎ গতিতে ধাবমানতা কি দিয়ে ঠেকাবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগেই আমাদের সাবধান হওয়া প্রয়োজন। নয়তো প্রভার মতো মেয়েদের এই বঞ্চনার জন্য দায়ী কে?
পত্র পত্রিকা খুললেই দেখা যায় অভিনয়ের সাথে জড়িত মেয়েদের অনেকেই ভ্রষ্ট্র। অনেকেই পরকিয়ার সাথে মত্ত অথবােএবকক জন চার পাচটা করে বিবাহ করে। যদি তাই হয় কে দায়ী। সে জন্যে তাদের সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখার অন্তরায় করা? কে তাদের করে সর্বস্ব খোয়াতে? এর জন্য কি আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা দায়ী নয়?
বিদেশী সাংস্কৃতি পরিহার করে আমাদেরকে ফিরে আসতে হবে আমদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে অর্থাৎ ইসলামী সংস্কৃতি বা বাংলাদেশীদের নিজস্ব সাংস্কৃতিতে তাহলে সাংস্কৃতির দেওলিয়াত্ব রোধ করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র :
১. জাতি ভাষা সংস্কৃতি ও স্বাধীনাতা- আহমদ আবদুল কাদের
২. সাংস্কৃতিক নষ্টামী আবদুল মবিন মিয়া।
3. অপসংস্কৃতির বিভীষিকা-জহুরী
4. বাঁধনের বিচার চাই- জয়নাল হাজারী (সাবেক এম.পি)
5. শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি- মাওলানা আব্দুর রহিম
২. সাংস্কৃতিক নষ্টামী আবদুল মবিন মিয়া।
3. অপসংস্কৃতির বিভীষিকা-জহুরী
4. বাঁধনের বিচার চাই- জয়নাল হাজারী (সাবেক এম.পি)
5. শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি- মাওলানা আব্দুর রহিম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন