শৈশব ও কৈশরকাল: আরবের রীতি ছিল যে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরি করার জন্য জন্মের পর দুধ পান করার জন্য বেদুইন মহিলার কাছে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার নিয়ে আসতেন। এই অনুসারে মুহাম্মদ (সা:) কে হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবেন (হালিমাতুস সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়। শিশু মুহাম্মদ (সা:) কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং আর একটি তার অপর ভাইয়ের জন্য রাখতেন। হালিমা মুহাম্মদ সা: কে দু্ই পর মা আমিনার কাছে নিয়ে যান।
ছয় বছর পূণ হবার পর আমিনা শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে মদীনায় যান। মদীনায় একমাস থাকার পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন।মুহাম্মদ (সা:) এর বয়স যখন ৮ বছর তখন তার দাদা আবদুল মোত্তালিবও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মুহাম্মদ সা: এর দায়িত্ব দিয়ে যান।
প্রথম জীবন : আরবে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানত, প্রতিশোধস্পৃহা দমনে হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। মুহাম্মাদ (সা:) এ সংগেঠনে যোগদান করেন এবং এটাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন। মুহাম্মাদ (সা:) এর নির্দিষ্ট কোন পেশা ছিলনা। তিনি বনি সা’দ গোত্রের বকরি চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন।মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন।এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় আল আমিন। মুহাম্মাদ (সা:) এর সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার কোজে নিয়োগ দেন। খাদীজা (রা:) মুহাম্মাদ (সা:) সততা ন্যায় পরায়ণতার ও আমানত দারীতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদ (সা:) বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মুহাম্মাদ (সা:) তাঁর চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদীজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫।
মক্কী জীবন : গোপন প্রচার: ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের মাঝেগোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন খাদিজা তিন বছর নিরবে দাওয়াত দেন মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেন।তিনি পর্বতের দাঁড়িয়ে উচ্ছস্বরে সকলকে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু বা ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল।
দাওয়াতের বিরোধিতা : বিরোধীরা উস্কানী, উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, অপপ্রচার, কুটতর্ক, সাহিত্য ও অশ্লীল গান বাজনার ফ্রন্ট এরই মধ্যে ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ।নবী সবসময় চাইতেন যেন আবু জেহেল ও উমরের মধ্যে যেকোন একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করেতার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে এরপর একসময় নবীর চাচা হামযা ইসলাম গ্রহণ করেন।
তিন বছরের জেল: এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছে তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ (সা:) ও তার অনুসারীসহ গোটা বনু হাশেম গোত্রকে একঘরে ও আটক করে।তিন বছর আটক থাকার পর তারা মুক্তি পায়। মুক্তির পরের বছর খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। নিযাতনের তীব্রতায় মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান।কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন।এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদ এর পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে নবীকে রক্তাক্ত করে দেয়।
মি‘রাজ গমণ: মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা/মি’রাজ নামে পরিচিত। মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নবী (সা:) প্রশংসা ও পবিত্রতা গোষণা করেছেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সবশেষ ও সবশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ সা: সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী যার প্রশংসা ও পবিত্রতা মহান আল্লাহ নিজে করেছেন।
সুরা ক্বলমে আল্লাহ বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ নিশ্চয়ই আপনি এক মহান চরিত্রের অধিকারী।(আয়াত 4) আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ হে মুহাম্মদ! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত 107)
অন্য সুরায় আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সর্তককারীরূপে প্রেরণ করেছি।, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা উপলব্ধি করে না। (সুরা সাবা, আয়াত 28) আল্লাহ বলেন, إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। (সুরা ফাতাহ, আয়াত 8)
নবী প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُم مِّنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا ‘হে নবী আমি আপনাকে স্বাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সর্তককারীরূপে প্রেরণ করেছি! এবং আল্লাহর আদেশ ও তাঁর দিকে আহবানকারী এবং উজ্জল প্রদীপরূপে। আপনি মুমিনদের সুসংবাদ দিন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট বিরাট অনুগ্রহ রয়েছে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত 45-47) সুরা আরাফের 158নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ‘হে মুহাম্মদ ঘোষণা করে দাও, ওহে মানবজাতির! আমি তোমাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহর রসুল।
অন্য সুরায় আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا তিনি (আল্লাহ) যিনি তাঁর রসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছে, অপর সমস্ত ধর্মের ওপর ইসলাম ধর্মকে বিজয় দান করেছেন। (সুরা ফাতাহ, আয়াত 28) আল্লাহ বলেন, قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অসুরনণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগেকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু। (সুরা আল ইমরান, আয়াত 31)
আল্লাহ বলেন, مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَىٰ তোমাদের সঙ্গী বা সাথি বিভ্রান্ত নয় এবং বিপথগামীও নয়। (সুরা নাজম, আয়াত 2) একই সুরায় আল্লাহ বলেন, وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ এবং তিনি মনগড়া কথা বলেন না, এটা তো ওহি যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছে। (সুরা নাজম, আয়াত 3-4)
আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ তিনি সেই পবিত্র সত্তা, যিনি তাঁর রসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বিনসহ প্রেরণ করেছেন। যাতে তা সব দ্বিনের উপর বিজয়ী হয়। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সুরা তাওবা, আয়াত 33)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন