বর্তমান যুগে নারী - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩

বর্তমান যুগে নারী

 

আদি পিতা হয়রত আদম (আ:) কে জুমার দিন সৃষ্টি করা হয়েছে। অতপর পরবর্তী জুমার দিন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। এসময় ফেরেশতাগণ আদম (আ:) এর বাম পাঁজর কেটে অত্যন্ত সুশ্রী নারী হয়রত হাওয়া (আ:) কে সৃষ্টি করলেন। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে নার নারী সৃষ্টি সূচনা। হযরত আদম ও হাওয়া (আ:) সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً  হে মানব সকল তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে  এবং তার থেকে তোমাদের সঙ্গিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি পৃথিবী নারী পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। (সুরা নিসা, আয়াত 1)1

মানুষ কি নারীর মর্যাদা অস্বীকার করতে পারে? মানব সমাজে সভ্যতা বিনির্মানে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। মাঠের রৌদ্র তপ্ত হইয়া, কারখানায় হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খাটিয়া, কিংবা অফিসের দকল সামলাইয়া শ্রান্ত দেহে নিরস মনে বাড়ি ফিরতেই নারী হাসিমুখে সাদর সম্ভাষণ, খাদ্য, পানীয় দান ও বজনী বজন দ্বারা পুরুষের দেহ মনের ক্লান্তি দুর করিয়া এক নতুন উদ্যমের সঞ্চার করিয়া দেয়। তাইতো কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, 
‘কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয়লক্ষী নারী।'
তাই নারীর মর্যাদা দান করা অপরিহার্য।

নারী কি পণ্য ?
নারীকে পণ্য হিসেবে বিজ্ঞাপনে উপস্থাপন করা যাবে না।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিস বিভাগের উদ্যাগে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা টেলিভিশনের জন্য বিজ্ঞাপন নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। বিজ্ঞাপনের প্রভাব ও এর আধেয় বিশ্লেষণ বিষয়ক সেমিনারে বিজ্ঞাপনে নারীর বিকৃতি উপস্থাপনার সমালোচনা করে বলেন, নারীকে কোনভাবেই পণ্য হিসেবে বিজ্ঞানে উপস্থাপন করা যাবে না। নারীর মর্যাদা রক্ষা করতে না পারলে দেশে পরিবার প্রথা হুমকির মুখে পড়বে বলে সংকা প্রকাশ করা হয়। সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব রয়েছে, তবে বিজ্ঞাপনের ভাষা ও আধেয় অনৈতিক হওয়া উচিত নয়।2

কতক নারী আছে যে, তারা দেখতে নারী হলেও আসলে তারা যন্ত্র। যে অর্থে দাম্পত্য জীবনে নারীর প্রয়োজন, সেই অর্থে তারা নারী নয়। না তাদের শরীর নারীর মত, নাম নারীর মত, পোশাক নারীর মত, ব্যাকরণেও তাদের বেলায় স্ত্রীলিঙ্গই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে নারীত্ব বলতে কোন কিছু অনুভূত হয় না। দেহাবয়ব নারীর মতই। কিন্তু নারীর প্রাণশক্তিতাতে থাকে না।3

নারীর শক্তি
নারী মহান আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি। নারী পুরুষের চির সঙ্গিনী, প্রথম মানব হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করে বেহেশতে স্থান দিলেন। ফল-ফুল, নদ-নদী, ফোয়ারা, সবুজ-শ্যামলী মাঠ, দুধ-মধু, আল্লাহ তাহাকে এ সমস্ত জিনিস দিলেন, কে তাহর ইসাব করিবে। এতসব দেওয়ার পরও মহান আল্লাহ দেখলেন যাহা শান্তি লাভের প্রধান অবলম্বন আদম (আ:) এখনও তা পয়নি। সেই শান্তিরূপিণী শান্তিদায়িণীকে না পাইলে এ যে দান বকশিশ ইহা সকলেই আদমের নিকট মিথ্যা। হযরত আদম (আ:) ঘুমিয়ে ছিলেন এমতবস্থায় আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর বাম পাজরের পিছন দিক থেকে হযরত হাওয়া (আ:) কে সৃষ্টি করলেন।,তিনি (আদম) (আ:) জাগ্রত হয়ে তাঁকে (হাওয়া) (আ:) কে দেখতে পান, এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন। আদম আ: এর প্রতি হাওয়া আ: আকৃষ্ট হন।

সামগ্রিকভাবে নারী ব্যক্তিত্ব একটা অসাধারণ শক্তি। প্রত্যেক নারী এই শক্তির অধিকারী হয়ে থাকে। নারীর দৈহিক, মানসিক ও ভাবাবেগগত জীবনের প্রতিটি দিক দ্বারাই ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি ঘটে থাকে। নারী ব্যক্তিত্বে এক ধরনের কোমলতা, নম্রতা, নমনীয়তা, ভালবাসা, মমত্ববোধ, ত্বরিত প্রতিক্রিয়া ও সাড়া দানের ক্ষমতা কবিত্ব এবং এ ধরনের আরও কিছু উপদান সঞ্চিত থাকে। নারী সত্তার এই উপাদানগুলোই একত্রিত হয়ে নারীত্ব বা নারীসত্তা নাম ধারণ করে। এ উপাদানগুলো নারীর জীবনের প্রত্যেক দিক ও বিভাগে কোন না কোনভাবে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। শরীরের আকৃতি ও ত্বকের গঠন, চাহনির ধরণ, চাল-চলন, বেশভূষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার, গতিবিধি, কথা বলার ধরণ, আবেগের উঠানামা এবং আরও বহু জিনিসের মাধ্যমে এসব উপদানের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। নারীত্ব যে প্রাচীরের বেষ্টনীতে থাকে, যে আসবাব পত্র ব্যবহার করে এবং বিছানায় বিশ্রাম করে, এই সবকিছুর সমন্বয়ে গঠিত পরিবেশ সার্বিকভাবে সাক্ষ্য দেবে যে, এগুলোর উপর নারী সত্তার প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে।4

যরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, 'যে স্ত্রীকে পুরুষ হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই জন্যেই তার প্রয়োজন ও কামভাব পুরুষের মধ্যে রাখা হয়েছে। আর পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি দ্বারা এজন্যেই তার প্রয়োজন মাটিতেই রাখা হয়েছে।' বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে স্ত্রীলোককে পাজর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, এবং সব চেয়ে উচুঁ পাজর হচ্ছে সব চেয়ে বেশি বাকা। সুতরাং তুমি যদি তাকে সম্পূর্ণ সোজা করতে চাও তবে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি তার কিছু বক্রতা রেখে উপকার লাভ করতে চাও, তবে অবশ্যই উপকার লাভ করতে পারবে।5

আদম (আ:) এর পরম সুখের উপকরণ শান্তি মুর্তি বিবি হাওয়া (আ:) উভয়ের মিলন সূত্র ধরে এ বিশ্বজগতে মানব জাতির বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছে। এ দু'জন দ্বারাই সৌন্দর্য মন্ডিত হয়েছে পৃথিবী আল্লাহ তা'য়ালা বিবি হাওয়া (আ:) কে সৃষ্টি করে স্নেহ সম্ভাষণে বললেন, ‘আদম তুমি তোমার এই স্ত্রী হাওয়াসহ এ বেহেশতে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাক এবং তোমরা উভয়ে এই বাগানের ফল, মূল, পাণীয় তৃপ্তিমত ভোগ করতে থাক কিন্তু এই গাছটির নিকটবর্তী হইওনা।

বিবি হাওয়াকে স্ত্রীরূপে পাইয়া হযরত আদম (আ:) পূর্ণ শান্তি লাভ করলেন। তাইতো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্ত্রীর প্রণয় আর স্নিগ্ধতায় বিগলিত হয়ে বলেছেন,
‘পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্র দাহ
কামিণী এনেচে যামিণী শাস্তি সমিরণ বারিবা
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহ নিশিতে হয়েছে বধু
পুরুষ এসেছে মরুতৃষ্ণালয়ে নারী যোগায়েছে মধু”

নারীর সঠিক অবস্থান
বর্তমান সভ্যতা নারীর প্রতি মারাত্মক ধরনের অবিচার করছে। এই সভ্যতা নারীকে সমানাধিকারের বিষ-বটিকা খাইে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে আনছে। সমান অধিকার নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রগতির প্রভাবে নারী বেতনের বিনিমে অভিনেত্রী, নর্তকী, প্রাইভেট সেক্রেটারী ও ব্যক্তিগত সহকারীর বেসে পুরুষের লালসাকাতর চাহনির সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে।6
নারীকে যখন গৃহের সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল থেকে টেনে বের করা হল, তখন তার পর্দা স্খলনের সাথে সাথে তার পোশাক সংক্ষিপ্ত হয়ে স্বল্প বশনে পরিণত হল। যা দেখে এক ধরনের সুশীল সমাজ বলেন, আমরা সবে মাত্র আধুনিক হতে চললাম।7 ‘আধুনিকতা বলতে যদি বুঝানো হয় আধুনিক জ্ঞানে সজ্জিত হওয়া, তাহলে সে আধুনিকতা তাকে স্রষ্টার কাছাকাছি নিয়ে যায়। আর আধুনিকতা বলতে যদি বুঝানো হয় জ্ঞান ও বুদ্ধির দুয়ারে তালা মেরে আধুনিক পণ্যসম্ভারে নিমজ্জিত হওয়া তাহলে সে আধুনিকতা তাকে স্রষ্টাকে বুলিয়ে দেয়।8

বর্তমানে নারী নাচ, গান ও বদ্যযন্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ক্লাব প্রতিষ্ঠা করছে, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে এসব কারণে স্বামী স্ত্রীর বিশ্বস্ততা নষ্ট হচ্ছে। নারীর নারীত্বকে ব্যবসার উন্নতির উপকরণে পরিণত করা হয়েছে। নারীকে নিয়ে অশ্লীল উপন্যাস লিখে, বিজ্ঞাপণের মডেলিং নগ্ন ছবির এলবাম, যৌন উস্কানীমূলক ছবি দ্বারা অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে। এসব কারণে মানুষ তৈরির কারখানা হিসাবে পরিবারের ভূমিকা শেষ হয়ে গেছে। যেখানে বসে একদিন নারী নতুন বংশধরকে মৌলিক আকিদা, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও আদব-আখলাক শিখাতো; শিশুদেরকে নৈতিক প্রেরণায় উজ্জীবিত করতো, পারস্পরিক সম্প্রীতি, সহানুভূতি, ত্যাগ, কুরবাণী, ধৈর্য, ও দৃঢ় সংকল্পের প্রশিক্ষণ দিত, সেই মানুষ গড়ার কারখানা এখন নিশ্চল ও নিশ্চপ।9

যার নতুন প্রজন্মের বা বংশধরদের মধ্যে মানসিক বিপর্যয় ও অরাজকতা দেখা দিয়েছে। এদের নেই কোন ধর্ম বিশ্বাস, নেই কোন মানবীয় মূল্যবোধ, নেই কোন সামাজিক মর্যাদার প্রতি তাদের কোন আকর্ষণ ও আগ্রহ। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণেই দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। মানসিক ভারসাম্য ও নৈতিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে চরমপন্থী ও উগ্র মতবাদ এবং পাশবিকতায় আক্রান্ত হয়েছে। মানুষের সাথে মানুষের প্রীতি ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। চতুর্দিকে হিংস্রতা; নৃশংসতা; হিংসাত্মক সংঘাতের ছড়াছড়ি। এসব গুলোর অন্যতম কারণ হল মায়ের মানসিক ও নৈতিক সোবাযত্ন ও পরিচর্যা থেকে নতুন প্রজন্মের বঞ্চিত।10

পুরুষ নারীকে চায়। তাই সে তার পিছু নেয়। নারী পুরুষকে চায় না। সে চায় যে পুরুষ তাকে কামনা করুক। সে চায় যে পুরুষ তার পিছু নিক। কি চমৎকার সমীকরণ। এ কারণে পুরুষ তাকায় নারীর দিকে। আর নারী তাকায় তার নিজের দিকে। কারণ পুরুষ যেহেতু তার দিকে তাকাবে সেহেতু নিজেকে দর্শনীয় করে রাখা চাই। মানবতার দৃষ্টিতে নারী পুরুষ একই শ্রেণীভূক্ত। মহান স্রষ্টা স্বয়ং এ সমতার স্বীকৃতি দিয়ে পার্থক্যের মানদন্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন।11

আল্লাহ পাক বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ  হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিষ্ট আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাদিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাদিক পরহেযগার। নিশ্চই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খরব রাখেন। (সুরা হুজরাত, আয়াত 13)12 তার নির্দেশাবলির মধ্যে একটি এই যে, هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ তিনি তোমাদের মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন, (সুরা আনআম, আয়াত 2)13  مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ  মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। এবং এ মাটিতেই ফিরিয়ে নেয়া হবে এবং পুনরায় এ কে তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে। (সুরা ত্বোয়াহা, আয়াত 55)14

নারী দৈহিক গঠন
নারী ও পুরুষের মধ্যে যে বাস্তব পার্থক্য বিদ্যমান তা হল মৌলিক ধরনের। এই পার্থক্যের আসল কারণ হল স্বয়ং টিসুগুলোর নির্মাণগত ব্যবধান। এই মৌলিক পার্থক্য অবহিত হওয়ার পরও নারী প্রগতির কর্ণধাররা নারী পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে ব্যস্ত। আসলে নারী পুরুষের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। পুরুষদের অনুকরণ করার পরিবর্তে নিজেদের স্বতন্ত্র প্রকৃতির দাবী অনুযায়ী নিজ নিজ যোগ্যতার বিকাশ ঘটানো নারীদের কর্তব্য। নারীরা এক বা একাধিকবার গর্ভ ধারণের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করে। যাদের সন্তান হয় না তারা ভারসাম্যহীন ও রগচটা।

নোবেল পুরুষ্কার প্রাপ্ত ফরাসী অর্থনীতিবিদ এলেক্সিস কারেল (Alexis carrel) তিনি লিখেছেন, “নারীর শারীরিক গঠনের একটা বিরাট অংশ বিশেষভাবে শুধু গর্ভ ধারণের নিমিত্তে নির্মিত হয়েছে। কোন নারীকে যদি তার দৈহিক ও মানসিক গঠনের দাবী পূরণে বাধা দেওয়া হয় তবে সে তার জীবনীশক্তি হারিয়ে নির্জীব ও নিরানন্দ হয়ে যাবে। মাতৃত্ব দ্বারা সে একটা স্থানীয় ও তরতাজা সোন্দর্য লাভ করে। নর-নারীর যৌনক্রিয়া একদিক থেকে বলবান করা ও অপর দিকদিয়ে ফলবান হওয়া দ্বারা এটা বার্হ্যিক ও ঐন্দ্রিয়কভাবেই বোধগম্য।5

আমাদের শরীরের প্রতিটা অঙ্গ তার চাহিদা পূরণ করতে চায়। এ চাহিদা পূরণে বাধা দেওয়া হলে তার সমগ্র শারীরিক ব্যবস্থাটাই ভেঙ্গে পড়ে। নারীর নারীত্বের দাবীই হল তার সন্তান প্রসব করা চাই। এটা তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের চাহিদা। সুতরাং নারীকে গর্ভ ধারণের বিরুদ্ধে বিদিষ্ট করে তোলা মোটেই উচিৎ নয়। কেননা তাদের বৈশিষ্ট্যের প্রতি দৃষ্টি দেয়া সুরম্য পৃথিবী গড়ার জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।6

নারীর জন্য দাম্পত্য জীবনের তুলনায় অন্য যে কোন জিনিসকে দ্বিতীয় পর্যায়ের গুরুত্ব দেয়া অত্যাবশ্যক। যারা বর্তমান কালের যাবতীয় সমস্যাবলী থাকা সত্ত্বেও নারীকে বংশবৃদ্ধির বাইরের অন্য কোন ধরনের উচ্চ মানের নারীত্বের কাহিনী শুনিয়ে তার মনস্তাত্বিক হয়রানি বাড়ায় তারা মিথ্যুক, বেঈমান ও অপরাধী। 7

বিপথগামী নারী: ড: সুলিভান (Sullivan) স্বীয় গ্রন্থ “এ্যালকোহলিজম” এ লিখেছেন নারীদের সাধারণ কারখানায় ভর্তি হয়ে যাওয়া শুধু যে বিবাহিত জীবনে ঘরোয়া দায়িত্ব পালনেই বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে তা নয়। বরং এটা কৈশরে সাংসারিক জ্ঞান অর্জনেও বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলে রান্না-বান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং শিশুদের লালান-পালন সম্পর্কে সর্বাত্বক অজ্ঞতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি তার গবেষণার শেষে লিখেছেন, যে চাকুরী নারীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘরোয়া কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখে সে চাকুরী মদখুরির আপদ বৃদ্ধির সহায়ক এবং গোটা প্রজন্মের স্বাস্থ্যের জন্য এই অভিশাপের বিরূপ প্রভাব
বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে যাবে। প্রকৃতিগতভাবে বিশেষ কতকগুলো ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে তারতম্য রয়েছে। তাইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'বিধাতাকে দোষারোপ করি না তিনি নর ও নারীকে যথেষ্ট ভিন্ন করেই সৃজন করেছেন। 8

নারীর দর্শন 
আমরা মুসলিম নারী, আমাদের ধর্ম ইসলাম, আমাদের আল্লাহমুখী নৈতিক সভ্যতার ভিত্তি এই ধর্মের নীতিমালা ও মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমাদের সাংস্কৃতিক সত্তা সারা পৃথিবী থেকে স্বতন্ত্র। নারীত্ব, বিয়ে ও নারী পুরুষ সংক্রান্ত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। এরূপ ক্ষেত্রে সঠিক কর্মপন্থা হবে এই যে, আপনি শুধু নারী পুরুষের সাম্য, পর্দা ও চাকরির ব্যাপারেই শুধু নয়, সমগ্র জীবন সম্পর্কেই স্থির করে ফেলুন যে, আপনাকে ইসলামের অনুসারী হিসাবেই জীবনযাপন করতে হবে। ইসলামে মহিলাদের সকল মানবীয় ও নারীসুলভ অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। তবে তার দু'টো সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

প্রথমত, মহিলাদের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে গৃহ ও পরিবার। যেসব সমাজে নারীকে শর্তহীন ও বাধাবন্ধনহীনভাবে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, সেসব সমাজের এখন জটিল সমস্যায় আক্রান্ত। আর নারীরাও তাদের নারীত্ব অবর্ণনীয় লাঞ্চনা; গঞ্জনা ও অবমাননার শিকার। তাছাড়া ইসলাম নারীকে বন্ধিনী হিসাবে ঘরে আটকে রাখেনি। বরঞ্চ নতুন প্রজন্মকে মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, সভ্যতা ও ইসলাম দ্বারা সুসজ্জিত করা এবং পরিবারকে ইসলামী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে মন্ডিত করার পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব তার কাছে অর্পণ করছে। আধুনিক সভ্যতার অনুসারী সমাজে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত সন্তানরা যে চরিত্র ও মানসিকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে তাতে শুধু যে জাতীয় পর্যায়ে অপরাধের ত্বরিত প্রসার ঘটছে তা নয়, সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনেও মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে, এতে শিশুদের ভিতর হিংস্রতা ; নিত্যনতুন সমস্যাস জন্ম দিচ্ছে তাও নয়, প্রতারণা, অশ্লীলতা, ব্যভিচার ও নির্লজ্জতার ছড়াছড়ি। এসব কারণে আধুনিক নারী নবপ্রজন্মের লালন-পালনে শোচনীয় ব্যর্থতারপরিচয় দিয়েছে। আর নারীত্বের স্বাধীনতা ও উন্নয়ণের নামে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে গোটা পৃথিবীতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ইসলামের উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ মানের মানুষ তৈরি করা, সেই সর্বোত্তম মানুষের মাধ্যমে ন্যায় ও কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলা ও পরিচালনা করা। যার মাধ্যমে সমাজ ও সভ্যাতার উৎকর্ষ সাধিত হয়।

তবে নারীদের যদি চাকুরীতে নিয়োগ করতে চান তাহলে শর্ত সাপেক্ষে কলকারখানাও দপ্তরে তাদের জন্য পৃথক পর্দাযুক্ত কাজের ব্যবস্থা থাকবে। তাদের ডিউটির সময়ও কম রাখতে হবে, যাতে তারা ছেলেমেয়েদের যথোচিত দেখাশুনা করতে পারে এবং মুরব্বী, ভাইবোন ও দেবর, ননদ ভাসুরদের সাথে সাংসারিক কাজকর্মে অংশ নিয়ে পারিবারিক পরিবেশকে সেই আবেগ অনুভূতি ও মূল্যবোধে সমৃদ্ধ করতে পারে। তা না হলে গোটা মানব সমাজই ধ্বংস হয়ে যাবে। পরিবারের সমস্ত নারী পুরুষকে আয় রোজগারে লেলিয়ে দিয়ে নিছক অর্থনৈতিক সম্পদ বিপুল পরিমাণে উপার্জন করা যেতে পারে, তবে ঈমান ও চারিত্রিক সম্পত্তি নির্ঘাত লোপাট হয়ে যাবে।

পুরুষ কর্তৃক নারীর মর্যাদা
নারী পুরুষের মধ্যে তারতম্য থাকলেও অনেক ব্যাপারেই তাদের মধ্যে পূর্ণ সংগতি রয়েছে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন মানবতার প্রশ্নে নারী পুরুষ সকলেই সমান অধিকার রাখে। আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ আমি মানুষকে মাটির শেষাংশ তথা নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছিন (সুরা মুমেনুন, আয়াত 12)19 কারণ উভয় শ্রেণীর মূল উৎস হল মাটি, তারা সকলেই আমার অপূর্ব সৃষ্টি। তাদের মাধ্যমে আমি এ পৃথিবীকে সাজিয়েছি, এবং উভয়কে নিয়েই আমি ফেরেশতাদের সাথে গর্ববোধ থাকি।20

পুরুষ নারীর আসল মর্যাদা দিতে পারেনি বলেই পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খলা আর বিপর্যয়। পুরুষ কখনও কি স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখেছে যে কে এই নারী তার মুখ খানা মোলায়েম করে ধরে খুব কাছাকাছি ব্যক্তিগত আয়নার মত তার দি তাকিয়ে দেখেছে কখনও কিছু দেখা যায় কি-না ? তার ঠোঁটে মুখে, চোখে চুম্বন দিয়ে দ্বিতীয়বার কি তাকিয়ে দেখেছে ত মুখের রং পাল্টে যায় কি-না ? তার দেহ যতটুকু মাতামাতি করেছেন তা করেছেন দেহের লোডে। তার চোখের মধ্য দিয়ে সরাসরি তার হৃদয়ের দিকে তাকিয়েছেন কখনও না, এ কারনেই পবিত্র কুরআনের আয়াতের রহস্য বুকে নিয়ে মার বোঝেনি রাসূল (সা:) এর হাদীসের রহস্য। বরং এ সত্যটি উপলব্ধি করেছেন বিশ্বকবি ওমর খৈয়াম তাইতো তিনি নারী অনাবিল সৌন্দর্য বিমুগ্ধ হয়ে লিখেছেন,

'ওগো নারী শ্রেষ্ট তুমি অবনীর
গোলাপে গঠিত যেন ভেতর বাহির
মাঝে মাঝে সবখিয়ে তাই মনে হয়।
তুমিতো গোলাপ ছাড়া অন্য কিছু নও।'

নারী পৃথিবীর প্রবেশদার
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ 'তার নিদর্শাবলীর মধ্যে আর একটা নিদর্শন হল তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদে সঙ্গিণীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মধ্য থেকে শাস্তি পাও, এবং তিনি তোমাদের হৃদয়সমূহের মধে পারস্পরিক ভালবাসা এবং অনুকম্পা সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয় চিন্তাশীলদের জন্য এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে। (সুর রুম, আয়াত 21)21 পুরুষের মধ থেকে নারীকে সৃষ্টি করার পর, সৃষ্টির ফর্মুলায় টেনে নেয়া হল নারীকে। তখন থেকে পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্ম হতে থাকল নারীর গর্ভে থেকে। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা বুঝা বড় কঠিন। যদি কেবল হাওয়া আ: ভুল করে দুনিয়ায় নির্বাসিত হতেন, তাহলে আদম আ: বেহেশতে থেকে যেতেন, তাহলে বিচ্ছেদ বেদনায় কাহার কি অবস্থা হইত কে জানে ?

যাই হোক মানব দুনিয়ার আদি হইতে আমরা নারীকে পুরুষের সঙ্গিণীরূপে দেখতে পাই। এই যে দুনিয়ায় আমরা বাস করি হইাও বেহেশতের প্রতিকৃতি। বেহেশতের নমুনা এখানেও বিদ্যমান। 'আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য সুসংবাদ বেহেশতে বাগান আছে, এখানে বাগান আছে, বেহেশতে নহর, নদ-নদী আছে, এখানেও নহর, নদ-নদী আছে নালা আছে, বেহেশতে মধু, দুধ, পানি আছে, এখানেও মধু, দুধ, পানি আছে, বেহেশতে স্তর আছে এখানেও নারী আছে আজকের দুনিয়ায় যারা বড় লোক তারা জেলখানায় গেলে যেমন দালান কোঠা, উত্তম খানা-পিনা, লেখা পড়ার বই পুস্তক পত্র-পত্রিকা, টিভি-বিসিডি থেকে শুরু করে ইত্যাদি সব সুযোগ-সবিধা পাইয়া থাকে তেমনি নির্বাসিত মানুষ দুনিয় বেহেশতের নমুনা নেশান সব লাভ করিয়াছে।

পুরুষের ভেতর থেকে এসেছিল নারী। তার পর নারীর ভিতর থেকে এসেছে পুরুষ। একজনের ভিতরটা অন্য জনের বাহি নারীই এই দুনিয়ার প্রবেশদ্বার। নারীর দ্বার পার হইয়াই দুনিয়ায় আসিতে হয় তাই নারী বিশ্বমানবের মর্যাদার পাত্রী।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ 'নারী পুরুষের পোশাক এবং পুরুষ নারী পোশাক। (সুরা বাকারা, আয়াত 187)22 নারীর দ্বার পার হইয়াই মানু দুনিয়ায় আসিয়াছে। অসহায় শিশু যখন কাঁদে, তখন মাতৃরূপি নারীর হাতের ও বুকের ছোঁয়া পাইয়া সদ্য প্রসূত শিশু কা থামিয়া যায়। নারীর অঙ্গুলী ঝরা স্নেহ এবং বক্ষ ঝরা ক্ষীর শিশু মানবেন জীবন বাঁছিয়াছে। সে বড় হইয়াছে গড়ে উঠে মানব সত্যতা। আমাদের পল্লিকবি জসিম উদদীন নারীকে ঝিনুকে মুক্ত সদৃশ বলেছেন,
‘দুঃখের সায়রে মায়ের এক সূখ
রঙিন ঝিনুক পোরা মুক্ত এতটুকু।

নারী সুন্দর
এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি নারী। সুন্দর বলেই সে দুর্বল। পৃথিবীর যে দিকে তাকান যায় সে দিকে এ সত্য পরিস্ফটন হয়ে উঠে যে যত বেশি সুন্দর সে তত বেশি দুর্বল। উদাহরণস্বরূপ যেমন ফুল, পাখি আর নারী এ বিশ্বে আর বি অতটা সুন্দর নয়। আর কিছু অতটা দুর্বলও নয়, সৌন্দর্য আর দুর্বলতা একই সাথে হাত ধরে চলে। নারীর উপলক্ষ্যই কবি কবিতা ফুটিয়াছে, গায়কের কন্ঠে গুঞ্জন উঠিয়াছে, সাহিত্যিকের সাহিত্য পুষ্ট হইয়াছে, এমনকি সুফির সাধনা পূণ্য হইয়াছে কে নারীকে অবজ্ঞা করে। নারীর মর্যাদা সর্বত্র এই হল নারী।

নারী সাম্য
ইসলামে নারী ও পুরুষ মানুষ হিসাবে সমান। মুসলমান হিসাবে সমান। আকীদা ও বিশ্বাসের দিক দিয়ে তাদের ভেতে বিরাজ করছে পরিপূর্ণ সাম্য। নৈতিকতার দিকে দিয়েও ইভয় সমান। চারিত্রিক গুণ ও খারাপ চারিত্রিক গুণাবলী পথ এক রকমের এবং উভয়ের ভাল কাজ ও সৎকাজের পথ এই রকমের এবং উভয়ের ভালো কাজ ও মন্দ কাজের বদলা ও এক তাকওয়া ও পরেজগারীতে উভয়ের মধ্যে থেকে যে যত এগিয়ে যাবে, সে তত বেশি মর্যাদা পাবে। হালাল ও হারামের সীমা উভয়ের জন্য একই। একজনের অপরাধের শাস্তি অন্যজনকে দেয়া হবে না। ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা উভয়ের জন্য ফরযইসলাম প্রচারের দায়িত্ব উভয়ের জন্য সমান। উভয়ের মতামত দেয়া ও সমালোচনার অধিকার ও সমান।

নারীর পার্থক্য
উভয়ের জন্মগত যোগ্যতা, ক্ষমতা এবং দৈহিক গঠন ও দায়িত্বের দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে দুটো মৌলিক পার্থক্য রয়েছে: প্রথমত: গৃহ বহির্ভূত যাবতীয় কষ্টকর ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজ পুরুষের উপর অর্পিত আর নারীর আসল মৌলিক দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের লালন-পালন ও ঘরোয়া পরিবেশকে সুসজ্জিত করা। তবে তারা অপরিহার্য সামজিক প্রয়োজনে ব্যতিক্রমধর্মীভাবে ঘরের বাইরেও যেতে পরে, যেমন নারী শিক্ষা, চিকিৎসা, তাদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত ও প্রচর ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত: যেহেতু প্রকৃতি নারীর ভিতরে একটা যৌন আকর্ষণ ও প্ররোচনা জন্মগতভাবেই সঞ্চিত রেখেছে, আর পুরুে মধ্যে রেখেছে উত্তেজিত হওয়া ও আগ্রাসন চালানোর স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। উত্তেজিত ভাবাবেগের পথে বান্ধব বাধাবিঘ্ন আম মন-মগজে ক্রমাগত অগ্নি উদগিরণের দরুন গঠন মূলক শক্তি গুলো ধ্বংস না হয়ে পারে না। এজন্য প্রাকৃতিক প্রয়োজে ভিত্তিতে সমাজকে স্বভাবগত উত্তেজনা ও ব্যভিচার থেকে রক্ষা করার জন্য নারী ও পুরুষের স্বতন্ত্র অবস্থান ও স্বতন্ত্র কর্মক্ষে অত্যাবশ্যক প্রতীয়মান হয়। তাই নারী আদেশ হলো, সে যে নিজ গৃহে আপন কর্মক্ষেত্রে নিজের কাজ করে। গৃহের বাজি যেতে হলে পর্দা সহকারে যাবে। এ দুটো পার্থক্যের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় নারীর কাছ থেকে কোন কিছু কেড়ে নেয়া হয়নি। বরং তাকে শক্তি ও নিরাপত্তা দান করা হয়েছে।

বাংলাদেশে তালাকের সংখ্যা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনী ক্ষমতাবান পরিবারে তালাক বা ডিভোর্স মহাম আকার ধারণ করছে। রাজধানীতে নিবন্ধিত বা রেকর্ডস্থ তালাকের মধ্যে মেয়েদের ডির্ভোসের সংখ্যা হল ৯০ ভাগ আর ভাগ হল ছেলেদের। বর্তমানে ঢাকা শহরের মেয়েরা ক্লাবে যায় মধ খায়, মাতলামী করে এদের বাবা মারা এতে আনন্দি হয়। এটা নাকি এদের সমাজিক মর্যাদা। নারী অধিকারের নামে এরা জারয়ু স্বাধীনতা চায়। এরা পরিবার ব্যবস্থাকে ভেঙ্গেচুরমার করে দিতে চায়।23

(১) তথাকাথিত আধুনিক শিক্ষিতা নারীদের একটি মনস্তাত্বিক চিত্র রবীন্দ্রনাথ তুলে ধরেছেন তাঁর মনিহারা গল্পে। আধুনিকতার দোহাই টেনে যদি নারী পুরুষের মধ্যকার বাতাবরণ তুলে দেয়ার চেষ্টা চালান হয়, তবে সমাজে অনাচার সৃষ্টি বেশি হয়, সংসারে সূখ বিনষ্ট হয়, এ সত্য তিনি মনিহারা 'গল্পের নায়ক ফণিভূষণের মূখ থেকে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, বিধাতার দোষ দেই না, তিনি মেয়ে পুরুষকে যথেষ্ট ভিন্ন করিয়াই সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু সভ্যতায় সে ভেদ আর থাকে না এখন মেয়েও পুরুষ হইতেছে, পুরুষও মেয়ে হইতেছে। সুতরাং ঘরের মধ্য হইতে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিদায় লইল। তাহলে আমরা বলতে পারি যে, নারী কি পুরুষকে বিয়ে করছে, নাকি পুরুষকে নারীকে বিয়ে  করছে এ কারণে তারা উভয় থাকে চিন্তিত।

(2) স্বামীর উপর একক অধিকার এবং সে অধিকার মৃত্যুর পরেও প্রলম্বিত হতে থাকে। নারী চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্যটি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের 'নিশীথে' গল্পে।

নিশীথে’ গল্পের প্রধান চরিত্র জমিদার দক্ষিণাচরণ বাবু তার স্ত্রীর স্বামীভক্তির কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “রোগের সম মার স্ত্রী অহর্নিশ এক মুহূর্তের জন্য বিশ্রাম করেন নাই। সেই কটা দিন একটি অবলা স্ত্রী লোক, মানুষের সামন্য শক্তি ইয়া, প্রাণপণ ব্যাকুলতার সহিত, দ্বারে সমাগত যমদূতগুলোর সঙ্গে অনবরত যুদ্ধ করয়িাছিলেন। তাঁহার সমস্ত প্রেম, সম জয়, সমস্ত যত্ন আমার এই অযোগ্য প্রাণটাকে যেন বক্ষের শিশুর মতো দুই হন্তে ঝাপিয়া ঢাকিয়া রাখিয়াছিলেন। আহার ছিল না, নিদ্রা ছিল না, জগতের আর কোন কিছুর প্রতি দৃষ্টি ছিল না। 

(3) আধুনিক স্ত্রী মণি মালিকা। সে স্বামীকে যতটা না ভাল বাসতে পেরেছে তার ছেয়ে অধিক ভাল বেসেছে স্বামীর অলংকারাদি। স্বামীর দুঃসময়ে মণি মালিকা তার অলংকারাদি দিয়ে স্বামীকে সাহায্য না করে তা আকড়িয়ে রাখার ব্যর্থ ও চালায়। কিন্তু মণি মালিকা অবশেষে তাঁর সে সম্পদই রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়নি বরং নিজের জীবনকেও রক্ষা করতে পা লোভী মধুসূদনের কারণে।

নারী চিত্তের এক অতৃপ্ত বিত্ত বাসনা প্রায় একই রূপ ভাব ধারা নিয়ে ফুটে উঠেছে ‘স্বর্ণমৃগ' গল্পে। গল্পে অদ্যনাথ বৈদ্যনাধ চক্রবর্তী দুই শরিক। উভয়ের মধ্যে বৈদ্যনাথের অবস্থাই কিছু খারাপ। বৈদ্যনাথের স্ত্রী মোক্ষদা সুন্দরী সংসারের সম্পদশালী অদ্যনাথের বিত্ত সম্পত্তি মোক্ষদা সুন্দরীর কাঁটা স্বরূপ।4

তথ্যসূত্র :
1, সুরা নিসা, আয়াত 1
2    রফিকুজ্জামান রুমান, নয়া দিগন্ত, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ঢাকা।
3.     নারী অধিকার বিভ্রান্তি ও ইসলাম, মূল নঈম সিদ্দিকী, অনুবাদক আকরাম মারুফ ও আবদুস                 শহীদ নাসিম, শতাব্দী কাশনী, বড় মগবাজার, ঢাকা,
4    প্রাগুক্ত, 
5    তাফসীরে ইবনে কাছীর, খন্ড-৫, 
6    নারী অধিকার বিভ্রান্তি ও ইসলাম, মূল নঈম সিদ্দিকী, অনুবাদক আকরাম মারুফ ও আবদুস                 শহীদ নাসিম, শতাব্দী প্রকাশনী, বড় মগবাজার।
7    অধ্যাপক আবু জাফর, পাক্ষিক পালাবদল, ১২তম বর্ষ, ৮ম সংখ্যা, ১৬-৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০২
8    সাইমুম সিরিজ, সংখ্যা সাহিত্য প্রকাশ, বড় মগবাজার, ঢাকা
9   নারী অধিকার বিভ্রান্তি ও ইসলাম, মূল নঈম সিদ্দিকী, অনুবাদক আকরাম মারুফ ও আবদুস                 শহীদ নাসিম, শতাব্দী প্রকাশনী, বড় মগবাজার, ঢাকা।
10    প্রাগুক্ত
11   কোরানিক সেলফ কন্ট্রোল এবং মৃত্যুহীন জীবন, এস এম জাকির হোসেন
12   সুরা হুজরাত, আয়াত 13
13.   সুরা আনয়াম, আয়াত 2
14.    সুরা ত্বোয়াহা, আয়াত 55
15  নারী অধিকার বিভ্রান্তি ও ইসলাম, মূল নঈম সিদ্দিকী, অনুবাদক আকরাম মারুফ ও আবদুস                শহীদ নাসিম  শতাব্দী প্রকাশনী, বড় মগবাজার, ঢাকা।
16 নারী অধিকার বিভ্রান্তি ও ইসলাম, মূল নঈম সিদ্দিকী, অনুবাদক আকরাম মারুফ ও আবদুস                শহীদ নাসিম  শতাব্দী প্রকাশনী, বড় মগবাজার, ঢাকা।
17.   অধ্যাপক আবু জাফর, পাক্ষিক পালাবদল, ১২তম বর্ষ, ৮ম সংখ্যা, ১৬-৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০২
18.  নারী অধিকার বিভ্রান্তি ও ইসলাম, মূল নঈম সিদ্দিকী, অনুবাদক আকরাম মারুফ ও আবদুস                শহীদ নাসিম শতাব্দী প্রকাশনী, বড় মগবাজার, ঢাকা।
19. সুরা মুমেনুন, আয়াত 12
20 আল কুরআন,
21.  সুরা রুম, আয়াত 21
22.  সুর বাকারা, আয়াত 187
23.  নারী অধিকার ও তালাকের মহামারী, এরশাদ মজুমদার, দৈনিক নয়াদিগন্ত, শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল,          ২০১২ ঢাকা
24.   রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে নারী, ঢাকা, সংগ্রাম ৩০ শে চৈত্র ১৪১৮, ১৩এপ্রিল, ২০১২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here