সভ্যতার সোবহে সাদেকে মানুষ দুর্বল নারীর মধ্যে মাতৃত্বের মহত্ত্ব আবিষ্কার করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল। কিন্তু আধুনিক সভ্যযুগে নারীর প্রতি পুরুষের অতিভক্তি প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। তাই আজ নারীকে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যবসায়ের পুঁজি হিসেবে। প্রকৃত পক্ষে নারীর প্রতি পুরুষেরা অভিভালবাসা দেখাতে গিয়ে আবার আধা সভ্যযুগের মতো ভোগ্য পণ্যের পর্যায়ে নামীয়ে আনা হয়েছে নারীকে।
একটি জাতির উন্নতি সমৃদ্ধি ও সভ্যতা বিনির্মাণের জন্য চাই একটি শিক্ষিত জনগোষ্টি। আর জনগোষ্ঠির শিক্ষার জন্য চাই শিক্ষিত মাতৃসমাজ। তাইতো মহিয়ষী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত সারা জীবণ নারী শিক্ষার জন্য আন্দোলন করে গেছেন। তেমনি পারিবারিক, সামাজিক, শান্তি, শৃংখলার জন্য নারী শিক্ষার পাশা পাশি চাই সুশৃংখল, শালীনতা বোধ সম্পন্ন নারী সমাজ।
আমরা একটু চিহ্নশীল হলে বুঝতে পারবো আমাদের দেশে খুন খারাবী, রাহাজানী, ছিনতাই, ডাকাতী, চাঁদাবাজী, মানীসহ নানাবিধ অপরাধ মূলক কাজ যারাই করছে তাদের অধিকাংশ বস্তি থেকে উঠে আসা বা বস্তিতে যাদের বসবাস। কারণ সেখানে নারীদের নেই শালীনতাবোধ, নেই সংযম, নেই শ্রদ্ধাবোধ, নেই রক্ষণশীলতা, আর এই গুণগুলো অর্জিত হয় শিক্ষার মাধ্যমে। তাইতো নেপোলিয়ান বলেছিলেন "তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।
মানুষের জন্মধাত্রী হিসেবে নারী সব সময় শ্রদ্ধার দাবীদার। সে পৃথিবীতে শুধু জন সম্পদেই সমৃদ্ধ করেনি সে মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বের প্রতিষ্ঠাত্রীও বটে। এই নারীর কণ্ঠে ঘুম পাড়ানী গান বের হয়। যা একটি অবোধ শিশুকে ঘুমাতে সহায়তা করে। নারীর শালীনতা সংযম যুগে যুগে আদর্শ জাতির জন্ম দিয়েছে। আবার নারীর পদস্খলনেই বহু জাতির ধ্বংস ডেকে এনেছে। ইতিহাসে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে।
সুতরাং যে সংযম ও শালীতাবোধ মানুষকে শ্রদ্ধাস্পদ করে মানুষের জন্য মানুষের মনে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে, সেই শালীনতাবোধ রক্ষার জন্য যা কিছু আচার আচরণ অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে এসেছে তাকে বাদ দিয়ে সমাজে সুশৃংখল পরিবেশ বজায় রাখার কথা চিন্তা করা অবান্তর।
নারীর রূপ লাবণ্য শীরের কমণীয়তা মেজাজের নমনীয়তা কন্ঠ স্বরের মাধুর্য এ সমস্তই তার পরম সম্পদ। আল্লাহ নারীকে যে সকল অঙ্গ প্রতঙ্গ দিয়েছেন সে সমন্ত্রের মধ্যেই নারীত্ব শুধু মাতৃত্বের নম্র উপকরণের সন্নিবেশ করেছেন। শিশু কাল হতেই মায়ের কোলের উষ্ণ কোমল পরশে আদরে সোহাগে যত্নে শিশুর মাঝে যাতে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সভ্য মনোবৃত্তির স্ফরণ ঘটে তজ্জন্য আল্লাহ নারীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নম্র করে সৃষ্টি করেছেন।
নারীর শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় কোলের অংশকে আল্লাহ অধিক ভাবে নমনীয় করে সৃষ্টি করেছেন। এবং তাতে শিশু খাদ্যের সংস্থান করে রেখেছেন। যাতে মানব সন্তান সেই বুকের উষ্ণ আবেশে থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে দিনে দিনে বেড়ে উঠতে পারে। শুধু তাই নয় নারীর কণ্ঠ স্বরকে আল্লাহ মধুর করে দিয়েছেন, যাতে স্বরের কাঠিন্যে সন্তানের মাঝে ভীতির উদ্রেক না করে এবং তা হতে যেন ভীরুতার সঞ্চার না হয়। নারীর মানসিকাতায় যদি রক্ষতা আসে কন্ঠস্বর যদি শক্ত হয় তবে তা মনব সভ্যতার প্রতি হবে এক ভয়াবয় হুমকি স্বর।
আল্লাহ তায়লা বলেন, وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ “তারা যেন মস্তকে আবরণ এবং বক্ষের উপর চাদর পরিধান করে।” (সুরা নূর, আয়াত ৩১) অন্য আয়াতে আলাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا “হে নবী আপনি নিজের স্ত্রীগণকে এবং নিজের কণ্যাদিগকে এবং মোমেনা নারীগণকে বলুন তারা যেন বাইরে যাবার সময় নিজেদের চাদর গুলি মাথার নিচে টেনে শরীর ঢেকে দেয় এতে তাদের চিনতে অসুবিধা হবে, যাতে দুষ্ট রোকেরা তাদেরকে উত্ত্যক্ত করতে না পারে" ( সুরা আহযাব, আয়াত 59)
শিশুর বৃদ্ধির প্রয়োজনে যেমন নারীকে তার সমীয়তা কর্মীয়তা রক্ষা করে চলতে হয়। তেমনি কর্তব্য ক্লান্ত মানবতার প্রয়োজনে এবং মানব সভ্যতা সংরক্ষণের জন্য ও তা সমানভাবে প্রয়োজন। আল্লাহ বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ তাহার একটি নির্দশন এই যে তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জন্য রমণীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তাদের মধ্যে তোমরা মানসিক শান্তি পেতে পার।" (সূরা রুম, আয়াত ২১) তাই নারীর স্বভাব নমণীয়তা কমণীয়তা এবং রূপ লাবণ্যকে সে জন্য মানব সভ্যতার সূতিকাগার বলা হয়।
ব্যক্তির সুস্থ্যতা সঠিকভাবে লালন পালন ও বর্ধন লাভের জন্যে যেমন দেহ ও প্রাণের পারস্পরিক উন্নতিশীল হওয়া আবশ্যক ঠিক তেমনি একটি জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার পুরোপুরি সংরক্ষণ একই। নারীকে সংসারের সকল পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করে সভ্যতার শ্রীবৃদ্ধি করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য।
সুতরাং নারী শুধু সন্তানের জন্মধাত্রীই নয়, নারী সভ্যতার জন্মধাত্রী। সন্তান প্রসবের পর সন্তানের এবং নারীর উভয়ের মঙ্গলের জন্য জনসমাগমের অন্তরালে নির্মল একটি পরিবেশ নির্দিষ্ট থাকে। তেমনি মানব সভ্যতার মঙ্গলের জন্য জনসমাগমের অন্তরালে নির্মল পরিবেশে নারীর শরীরই মানব সভ্যতার সূতিকাগার। সুতরাং সভ্য সুন্দর মানুষ সৃষ্টির জন্য এবং সভ্যতার উৎকর্ণ সাধনের জন্য যা কিছু গুণের প্রয়োজন আল্লাহ নারীর মাঝে সে সব কিছুর সন্নিবেশ করেছেন। তাইতো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুর ইসলাম বলিয়াছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’।
তথ্যসূত্র :
1. সাংস্কৃতিক বখাটেপনা- আবদুল মবিন মিয়া।
2.
3.
4.
5.
6. সঞ্চিতা - কাজী নজরুল ইসলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন