সমাজ ও রাষ্ট্রে পতিতা বৃত্তির কুফল - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩

সমাজ ও রাষ্ট্রে পতিতা বৃত্তির কুফল

 


গত কয়েকদিন আগে সংসদ ভবন এলাকায় গুরতে গেলাম। যার সাথে গেলাম তার বয়স আমার বয়স অপেক্ষা তিন অথবা চার বছরের ছোট। বিগত  চার পাঁচ বছরের মধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় সন্ধ্যার পর যাওয়া পড়েনি। সেদিন ফার্মগেট থেকে দুজন মিলে হেটে আসতেছি। তাই ভাবলাম সংসদ ভবন এলাকায় একটু ঘরে যাই। দেখলাম বেশ লোকজন আরাম করে বসে গল্প গুজব করছে। অন্যদিকে এক হাত দুই হাত পর পর সেছে গুজে দাঁড়িয়ে মধ্যম ও অল্প বয়স্ক মেয়েরা গুরাগুরি করছে। তাদের আসপাশে ছেলেরা গুরছে এবং কথা বার্তা বলছে। তাদের কান্ড কারখান দেখে এই লেখার প্রসব বেদনা।

মানব জন্মের পর থেকেই মানুষ বাঁচার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। বলা যায় সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ, অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসার জন্য কাজ করে আসছে। সমাজকে বিবর্তনের জন্য কখনও নারী আবার কখনও বা পুরুষ সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু আজ বড় পরিতাপের বিষয় হলো বিশ্ব যখন উন্নতির শিখরে আরোহন করছে ঠিক তখনই পৃথিবীতে ও আমাদের এই সমাজে আর একটি নতুন পন্থা চালু হয়ে গেল তাহলো নারী দেহ বিক্রি। যা পতিতাবৃত্তি নামে পরিচিত। যার বর্তমান আধুনিক ইংরেজী নাম SEXUAL WORKER বা যৌন কর্মী। এদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন, পতিতা, কলর্গাল, র্যৌনকর্মী, বারবাজারী, পুলিশের ভাষায় ১৪ নম্বর, সেফটি ভাল SAFETY VALVE আমাদের প্রধান মন্ত্রীর শেখ হাসির ভাষায় নিশি কুটুম্ব।

SAFETY VALVE বলতে আমরা বুঝি এমন এক যন্ত্র বা ব্যবস্থা যা স্বয়ংক্রিয় মাত্রাতিরিক্ত চাপ EXCESSIVE PRESSURE কমিয়ে দেয়। SAFETY VALVE এর সংজ্ঞায় বলা আছে IN STEAM BOILER A DEVICE OPENING AUTOMATICALLY TO RELIEVE EXCESSIVE PRESSURE (অর্থাৎ বাষ্প নির্মাণ পাত্রে যে যন্ত্র আপনা থেকেই খুলে অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে দেয়।)

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন রিপুর দাস করে, অন্যদিকে সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেন, قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ  “মুমিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে, এ নীতি তাদের জন্য অতিশয় পৰিত্ৰতাময়। আর তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণমাত্রায় অবহিত।" (সুরা নূর, আয়াত ৩০)

পুরুষদের বলার পর মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ “মুমিন মহিলাদের বল, তারা যেন তাদের ইজ্জত আব্রুকে হেফাজত করে নিজেদের দেহ ও লজ্জাস্থানকে আবৃত রাখে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতাময়।” (সুরা নূর, আয়াত ৩১)

ক্ষুদা, লোভ, লালসা, দয়া, ঘুম, জৈবিক চাহিদা এ গুলোর প্রতি মানবের দূর্বলতা কোন কালেও কম ছিল না। তবে মানব চরিত্রের মধ্যে যে জিনিসটি বেশি কাজ করে তা হলো জৈবিক চাহিদা ও ক্ষুধা। সাভাবিক ভাবে বা সমাজ স্বীকৃত উপায়ে যখন মানুষ যৌন চাহিদা মিটাতে পারে না তখনই সে অবৈধ উপায়ে যৌন চাহিদা মিটানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা যিনার নিকটবর্তীও হইওনা কেননা ইহা বড়ই অশ্লীল খারাপ কাজ ও নিকৃষ্ট আচরন (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৩২) সাবধানতার বাণী উচ্চারনের সাতে সাথে আবার সফলতার কথাও আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ “বিশ্বাসীরা অবশ্যই সফল কাম।" এবং  وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ঐ সমস্ত পুরুষ ও মহিলা সফল কাম হয়েছে যারা তাদের নিজেদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করেছে (সুরা মুমেনুন, আয়াত ১  ও ৫)


পতিতা বৃত্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, পুরুষ যখন যৌন চাহিদা মিটানোর জন্য নিজ স্ত্রী ব্যতিরেখে অবৈধভাবে অন্য কোন নারীর পানিপান করে। অন্যদিকে নারী অর্থের বিনিময়ে তার দেহ দান করতে প্রস্তুত হয়, আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক একটা অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হওয়াটাই পতিতাবৃত্তি।

ENCYCLOPEDIA BRITANNICA তে বলা হয়েছে, INDISCRIMATE SEXUAL ACTIVITY IN EXCHAGE FOR MONEY OF VALIABLES. অন্য আর একটি সংজ্ঞাতে বলা হয়েছে, INDUKGENCE INPROMIS CUOUS SEXUAL RELATIONSHIP FOR PAYMENT WITHOUT ANY EMOTIONAL ATTACHMENT BEING INVDNED যা কিনা সামাজিক বা নৈতিকতার অথবা ধর্মীয় দিক নিয়ে যতই দোষণীয় হোক না কেন।

পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞায় যা-ই বলা হোকনা কেন সমাজে এই ঘৃন্য পেশা চলতে দেয়া যায় না। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে মজিদে বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ “এবং তোমরা গৃহে অবস্থান করবে, প্রাক ইসলামী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িও না।" (সুরা আহযাব, আয়াত ৩৩) কুরআন মজিদে আরও বলা হয়েছে,  وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ “আর তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন জিনিস পেতে চাইবে তাহলে তা পর্দার আড়ালে বাইরে দাঁড়িয়েই তাঁদের নিকট চাইবে। বস্তুত এ নীতি তোমাদের এবং তাদের দিলের পবিত্রতা রক্ষার পক্ষে অধিকতর উপযোগী অনুকূল।" (সুরা আহযাব, আয়াত ৫৩)

উপরে সুরা আহযাবের ৩৩ এবং ৫৩নং আয়াতে যদিও পর্দার কথা বলা হয়েছে তথাপিও হুঁশিয়ার বানী উচ্চারণ করা হয়েছে যে তোমরা নিজ গৃহের বাইরে যাবে না এবং নিজেদের সুন্দরীরুপে পর পুরষের সামনে উপস্থাপন করবে না। কারণ প্রথমে দেখা স্বাক্ষাত, তার পর কথা, তার পর আকার ইঙ্গিত এমনি ভাবে শেষ পর্যন্ত যৌন মিলন। যা কি-না গর্হিত কাজ।

পতিতাবৃত্তি নিয়ে অনেক কথাই বলা হচ্ছে। পতিতাবৃত্তি মানুষের আদি পেশা। কেউ কেউ বলেন পতিতাবৃত্তি সহজাত। আবার কেউ কেউ বলেন পতিতাবৃত্তি সৃষ্টির শুরু থেকে চলে এসছে, তবে যতটুকু জানা যায় পতিতাবৃত্তি সহজাত বা আদিম নয়। ১৯৮৩ সালে জাতিসংঘের এক রির্পোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল যে পতিতাবৃত্তি বিশ্বের সব চেয়ে পুরাতন পেশা নয়। বরং এটা এক ধরণের দাস প্রথা,পতিতাবৃত্তি সভ্যতার জন্ম লগ্ন থেকে এসেছে এমন কোন প্রমাণাদিও আমাদের হাতে নেই। (অপসংস্কৃতির বিভিষিকা সালাহ উদ্দিন জহুরী)

পতিতাবৃত্তি সমাজ বিবর্তনের বহু বছর পরে শুরু হয়েছে, তবে প্রাচীণ ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সমাজে বিভিন্ন রীতি নীতির কারণে মেয়েদেরকে ভোগ করা হতো। সভ্যতার যাত্রা পথে তৎকালীন ভারতীয় সমাজে নোংরা আচার ব্যবহারের কারণে নারী জাতি নিপীড়িত; লাঞ্চিত; অপমানিত; অত্যাচরিত হতো বিভিন্ন নিয়ম কানুনের ছদ্দাবরণে তার পর ছুড়ে ফেলা হতো সমাজ থেকে।

বাংলায় এ পেশার উদ্যোগতা রাজা লক্ষণসেন। পুরুষরা অর্থের বিনিময়ে ঘরে ঘরে বিবাহ করত। কোন কোন স্বামীর শতাধিক স্ত্রীও থাকত। শতাধিক স্ত্রী থাকায় বহু স্ত্রীগণ তাদের স্বামীর সঙ্গ পেত না যার ফলে তারা গোপনে ব্যভিচারে লিপ্ত হত। এই ব্যভিচারের অপরাধে মেয়েটি সমাজচ্যুত হত। সমাজচ্যুত মেয়েটির সামনে তখন দুটি পথ খোলা থাকত। হয়ত আত্নহত্যা নয়তো পতিতাবৃত্তি ।


অথচ আল্লাহ তা'য়ালা বিবাহের সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে বলেন, وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا  “বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে ভাল লাগে, দুই, তিন, অথবা চার যদি আশংকা কর যে তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবেনা, তবে একজনকে বিবাহ কর।" (সুরা নিসা, আয়াত ৩)

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুই দুই, তিন তিন, চার চার, বিবাহ করার কথা বলে সাথে সাথে সাবধান বানী উচ্চারণ করে বলেন, সমতা বিধান না করতে পারলে তবে একটি বিবাহ করবে। সেখানে শত শত বিবাহ করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে তাদেরকে বল্গাহীন ভাবে ছেড়ে দিয়ে সমাজে পতিতাবৃত্তির মতো একটা জগন্য পাপ ছড়ানো অবশ্যই গর্হিত কারজ।

নগর সভ্যতার পত্তনের ফলে ধীরে ধীরে যৌনতার প্রসার লাভ করতে থাকে। এটাকে তখন দমন করার চেষ্টা করা হলেও স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে তা হয়ে উঠেনি। ফলে বিধাব স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলারা গোপনে যৌন ব্যবসায় লিপ্ত হতো। ENCYCLOPEDIA এর মতে নগরায়ণ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন, সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের কারণে আধুনিক বেশ্যা বৃত্তি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যার ফলে সমাজ ও সভ্যতায় নেমে এসেছে বিপর্যয়।

কুরআনে ঘোষণা করেছে, وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِن نِّسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِّنكُمْ ۖ فَإِن شَهِدُوا فَأَمْسِكُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ حَتَّىٰ يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا “নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরদ্ধে তোমরা চারজন স্বাক্ষী নেবে। যদি তারা স্বাক্ষী দেয়, তবে তাদের গৃহে অবরাদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয়, অথবা তাদের অন্য ববস্থা করেণ।" (সুরা নিসা, আয়াত ১৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,  وَاللَّذَانِ يَأْتِيَانِهَا مِنكُمْ فَآذُوهُمَا ۖ فَإِن تَابَا وَأَصْلَحَا فَأَعْرِضُوا عَنْهُمَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ تَوَّابًا رَّحِيمًا “আর যে দুজন ব্যভিচারে লিপ্ত হবে তাদের উভয়কে শাস্তি দেবে, তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয় তবে তাদেরকে রেহাই দেবে, নিশ্চয় আল- হ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সুরা নিসা, আয়াত ১৬)

বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তির মতো এই জগন্য পেশা বদ্ধ করার জন্য ১৯৮১ সালে আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য বাবু প্রফুল কুমার শীল সংসদে একটি বিল উত্থাপন করেন। উত্থাপিত বিলের উপর দুঘন্টা আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন একজন মন্ত্রীসহ ১০জন সংসদ সদস্য। বাবু প্রফুল কুমার শীল উত্থাপিত বিলের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, 'পতিতাবৃত্তি মাতৃত্বের অবমাননা এ সমাজে নারীদের সম্ভ্রম রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

নৈতিকতার অধঃপতন থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে অসামাজিক কাজে লিপ্ত পতিতালয়গুলো বন্ধ করে দিয়ে পতিতাদের পূর্ণবাসিত করে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুঃখ এই জাতির দুঃখ বাবু প্রফুল কুমার শীলের যে, দশজন আলোচকই সাহিত্যিক ভাষায় পতিতাবৃত্তির গুণকীর্তন ও ফজিলত বর্ণনা করলেন যে, তারা সমাজের 'সেফটি ভালব' (SAFETY VALVE) সুতরাং তা বন্ধ করা যাবে না। পরে বেচারা প্রফুল কুমার শীল সকলের চাপে প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিলেন। তিনি বাইরে এসে মন্তব্য করলেন সবাই যখন পতিতাদের প্রেমে দিওয়ানা তখন আমি একা চিৎকার করে কি লাভ। তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বললেন মুসলমান সদস্যরা পতিতাবৃত্তির পক্ষে বর্তব্য রাখলেন কি করে, এ পেশা যদি এতই ভাল হয় এতই মহৎ হয় তাহলে এ পথে তাদের বোন, ভগ্নি, আর কন্যাদের নামালেইতো পারেন। (অপসংস্কৃতির বিভিষিকা)

পতিতাবৃত্তিরোধ কল্পে বর্তমানে বাংলাদেশে যে আইন আছে তা ব্রিটিশদের গড়া আইন। সময়ের বিবর্তনে কালের স্রোত ধারায় অনেক কিছু বদলালেও পতিতাবৃত্তির আইনের কোন হেরফের হয়নি। ১৯৯৩ সালের ২রা জুন প্রবর্তিত হলো (দি বেঙ্গল সাগ্রেশন অব ইমমোরেল ট্রাফিক এ্যাক্ট-১৯৯৩)। এটাই পতিতাদের নিয়ে প্রথম ব্রিটিশ আইন যা এখনও চালু আছে। পাকিস্তান আমলে এ আইন ছিল বাংলাদেশ আমলেও রাষ্ট্রপতির ৪৮নং আদেশ বলে পূর্বের সকল আইনের সঙ্গে ১৯৩৩ সালের এই আইনটি বহাল রাখা হয়। যা হোক এ আইনের কতিপয় পরস্পর বিরোধী ধারা কিভাবে আমাদের সরকার সযতনে সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন তার নমুনা লক্ষণীয়।

কেউ যদি পতিতালয় হিসাবে ব্যবহারের জন্য নিজের জায়গা বা বাড়ি ব্যবহার করে বা এই উদ্দেশ্যে ভাড়া দেয়, তবে তার শাস্তি দু' বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয়ই, দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শান্তি পাঁচ বছর জেল অথবা জরিমান যে ভাড়া দেয় এবং যে নেয় উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।” (ধারা-৪ (১)

এ ব্যাপারে কোর্টে নালিশ করতে পারবে কেবলমাত্র পৌরসভা বা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা কোন রেজিস্ট্রার্ড সমাজ সেবামূলক সংগঠন অথবা কথিত পতিতালয়ের আশে পাশের তিনের অধিক বাসিন্দা।" (ধারা-৪ (৭)

পুলিশের সুপারিন্টেন্ডেন্ট যদি জানতে পারেন যে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাস আবাসিক এলাকা প্রমোদ এলাকা অথবা প্রকাশ্য রাস্তার পাশে একটি পতিতালয় আছে, তবে তিনি সরিয়ে নেবার জন্য নোটিশ দেবেন, এবং পতিতালয়ের তদত্ত্বের জন্য ইন্সপেক্টর অব পুলিশের নীচে কেউ তদন্ত করতে পারবে না।" (ধারা-৬)

পতিতাদের আয়ের উপরে যদি কেউ নির্ভর করে (সে পুরুষ হোক আর মহিলা হোক) তবে তার শাস্তি তিন বছর কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা ও সে পুরুষ হলে এই শান্তির সাথে বেত্রাঘাত করা যেতে পারে। তবে পতিতার আয়ের উপর তার মা ও সন্তানরা নির্ভরশীল হলে তাদের কোন শাস্তি পেতে হবে না। কিন্তু তার পতিতার পতিতাবৃত্তিতে সহযোগিতা করলে বা খদ্দের যোগাড় করে আনলে তাদেরও একই শান্তি পেতে হবে।” ধারা-৮ (২) "কেউ যদি কোনভাবে ফুসলিয়ে বা জোর করে ধরে নিয়ে কোন মেয়েকে আটকে রাখে বা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্যকরে তার শাস্তি তিন বছর জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানা ও পুরুষের জন্য বেত্রাঘাত। (-১১) তবে কোন একটি মেয়ে যদি প্রকাশ্য স্থানে আকার ইঙ্গিতেও কোন খদ্দেরকে ডাকে তবে তার শাস্তি হবে এক বছর জেল অথবা একশত টাকা জরিমানা।' (ধারা-৭)

উপরোক্ত আইনগুলো পাঠ করলে বুঝা যায় যে, আইনগুলো দ্বারায় শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে তৃতীয় ব্যক্তির জন্য। প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা নেই। যারা সরাসরি অপরাধী অর্থাৎ পতিতা ও গ্রাহক এদের জন্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। আসলে পতিতাবৃত্তির আইনগত ভিত্তি নেই।

যিনা ব্যভিচার ও পতিতাবৃত্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,  وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা যিনার নিকটবর্তী ও হইওনা কেননা ইহা বড়ই অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ এবং খারাপ কাজ।" ((সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৩২))  الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ “ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যাভিচারী পুরুষ তাদের প্রত্যেককে একশো বেত্রাঘাত করবে, আল্লাহর  বিধান কার্যকর করণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে যদি তোমরা আল্লাহতে এবং পরকালে বিশ্বাসী হও। বিশ্বাসীদের একটি দল যেন ওদের শান্তি প্রত্যক্ষ করে।" (সুরা আন নুর, আয়াত )
হাদিসে আছে ‘অবিবাহিত নারী পুরুষের ক্ষেত্রে শাস্তি একশত বেত্রাগত এবং একবছর দেশান্তরীত। আর বিবাহিত নারী পুরুষের ক্ষেত্রে একশত বেত্রাগাত ও রজম বা পাথর মেরে মৃত্যদন্ড কার্যকর করা’। (সহিহ মুসলিম)

কুরআনের অন্য এক জায়গায় বিবাহিত ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারীর শান্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘বিবাহিত ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারীকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা কর কেননা এটাই তাদের কৃতকর্মের শাস্তি।’ বাংলাদেশের এক শ্রেনীর মুসলিম নামধারী আকেলমান্দ পতিতাবৃত্তিকে সমাজের 'সেফটি ভালব' SAFETY VALVE বা সামাজিক ভার সাম্যের রক্ষাকবচ বলে যখন অভিহিত করছেন, তখন জাতিসংঘ পতিতাবৃত্তিকে সভ্য সমাজের জন্য মসিবত বলে চিহ্নিত করেছে।

পতিতাদের ছাড়া সমাজ ও সভ্যতায় নানা রকম রোগ জীবানু সৃষ্টি হয়। যেমন, সিফিলিস, গণেরিয়া, বিভিন্ন চর্মরোগ HIV, AIDS এর মত মারাত্মক রোগ সমূহ। এই সমস্ত জীবাণু বহনকারী পতিতাদের উদরে যে, সন্তান আসে তা মানব সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি স্বরূপ। এরা খাটি হারামযাদা হিসেবে দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৮৫ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে দালালদের অত্যাচারে শবমেহের নামের এক মেয়ের মৃত্যু হলে দেশব্যাপী পতিতালয় উল্লেদের আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের পাশা পাশি সমাজ কল্যাণ বিভাগ পি. জি. হাসপাতালের বিশিষ্ট ডাক্তারের উদ্যোগে ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিঠির দ্বারা পতিতাদের স্বাস্থ্যের উপর জরিপ চালনো হয়। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ১২৯ জন পতিতার মধ্যে ১৮ জন পতিতাই সিফিলিস, গণেরিয়া রোগে আক্রান্ত, চর্মরোগে আক্রান্ত ২০জন, জন্ডিসে আক্রান্ত 5জন, মোটামুটিভাবে ৬জন রোগমুক্ত। তাও আবার নুতন পতিতা হওয়ার কারণে। জরিপকারী চিকিৎসকদের অভিমত ছিল এই যে, প্রকৃত পক্ষে কোন পতিতাই রোগমুক্ত নয়।

ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন এ্যান্ড পাবলিক হেলথ ১৯৯৪ সালে গবেষণা করে দেখেছে পতিতাবৃত্তির কারণে ভারতে AIDS রোগ ছড়াচ্ছে। 2000 সাল নাগাদে বিশ্বের এক চতুর্থাংশ অতষ্টর রোগী ভারতে পাওয়া যাবে। সুতরাং এই সমস্ত যৌন কর্মী পতিতা বা সেফটি ভালব যে নামেই ডাকা হোক না কেন এদের দ্বারা সমাজ ও সভ্যতার এক বিরাট হুমকি স্বরুপ

পতিতাদের পূর্ণবাসনের জন্য যে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরী করা হয়েছিল তা বছরের পর বছর ফাইল বন্ধি হয়ে পড়ে রয়েছে। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সভপতিত্বে সচিবালয়ে পতিতা ও ভাসমান নারীদের পূর্ণবাসনে  এক বৈঠক হয়। বৈঠকে পতিতা ও ভাসমান দু:স্থ নারীদের পূর্ণবাসন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এন জি ও এর সমন্বয়ে গঠিত একটি কোম্পানীকে অনুমোদন দেয়া হয়। 

ঘোষণা করা হয় এই কোম্পানী পরিচালনা করবে ১১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা বোর্ড। থাকবেন কোম্পানীর চেয়ারম্যান।কোম্পানীর অনুমোদিত মূলধন হবে ১০ কোটি টাকা। এতে ১ লাখ শেয়ার রাখা হবে। পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা বিতরণকৃত মূলধন হবে ১ কোটি টাকা। বৈঠকে নারী পাচার রোধের বিষয় নিয়ে আলোচনার পর তা সম্পূর্ণরপে বন্ধ করার জন্য বেঙ্গল সাপ্রেশন অব ইমমোরাল ট্রাফিক এ্যাক্ট ১৯৩৩ এর আমূল সংশোধনের জন্য উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সে সাথে ভাসমান ও অসহায় নারীদের পতিতাবৃত্তি থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে বর্তমান প্রচলিত হলফ নামা পদ্ধতির পরিবর্তন ও সংশোধন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

কিন্তু ঐ বৈঠকের পর আর কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি অদ্যাবধি। দুঃখজনক হলেও সত্য সরকার ক্রিকেট খেলা সহ অন্যান্য খেলার জন্য শত কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেন, সরকার কি পারে না শত কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা বাবায়ন করতে পতিতাবৃত্তি নির্মূল ও পতিতা পূর্ণবাসনের জন্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী তারা কি পারেন না সমাজের এই নারী বন্ধিনীদেরকে উদ্ধার করতে। অথচ বিশ্বাসীরা বলেন, وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا  “হে আমাদের প্রভু আমাদের থেকে জাহান্নামের শান্তি নিবৃত কর, এর শান্তিতো নিশ্চিত বিনাশ।“ (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৫)  আল্লাহ আরও বলেনإِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا আশ্রয়স্থল ও বসবস হিসাবে তা কত নিকৃষ্ট।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত 66)

বর্তমান যুগ সজাতার যুগ। আমরা সবাই সভ্য বলে দাবি করি। কিন্তু মুখে বললে তো আর সভ্য হওয়া যায় না। যদি আমরা আমাদের কাজে কর্মে সভ্যতার নির্দশন না রাখি। পতিতাবৃত্তি আমাদের যুব সমাজ থেকে শুরু করে জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, ধ্বংস করছে আমাদের সমাজ ও সভ্যতাকে। এই পতিতাদের জঠরে যে মানব সন্তান জন্ম নেয় তারা হলো খাঁটি হারামঘাদা। আর এই হারামযাদারা মানব সভ্যতা, সমাজ ও জাতির জন্য এক চরম চপেটাঘাত।

সমাজে পতিতাবৃত্তির কারণে মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বিভিন্ন ধরণের কুফল বয়ে আনে।উল্লেখযোগ্য হল: (১) পতিতারা বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন, এইডস্ (এইচ, আই, ভি), সিফিলিস, গণোরিয়া, মেহ-প্রমেহ, ক্ষয়রোগ ইত্যাদি প্রধান। (২) পতিতা বৃত্তির কারণে যৌন সম্ভোগের বৈধ পথ রূদ্ধ হয়ে যায়। ফলে বিবাহ, পরিবার, সন্তান সন্তুতির প্রতি মানুষের অবজ্ঞা সৃষ্টি হয়। (৩) পতিতা বৃত্তির কারণে মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যকার বিভেদ উঠৈ যায়। চতুষ্পদ জন্তুর যৌনসঙ্গমের কোন নির্দিষ্ট পরিসর নেই,তেমনি মানুষ যখন যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন এ পরিসরের দেয়াল টপকে মানুষ চতুষ্পদ জন্তুতে পরিণত হয়।  আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ ‘তারা খায় ও আনন্দ উপভোগ করে যেমন আনন্দ উপভোগ করে চতুষ্পদ জানোয়ার।’ (সূরা  মুহাম্মদ, আয়াত ১২) (৪) পতিতাদের লজ্জা থাকে না। যৌন পিপাসা মিটানোর নেশায় সে সাধারণ মানবিক লজ্জা-শরম হারিয়ে ফেলে। বৈধ-অবৈধের মধ্যে কোন পার্থক্য তার কাছে আর থাকে না। (৫) মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here