মানব জন্মের পর থেকেই মানুষ বাঁচার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। বলা যায় সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ, অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসার জন্য কাজ করে আসছে। সমাজকে বিবর্তনের জন্য কখনও নারী আবার কখনও বা পুরুষ সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু আজ বড় পরিতাপের বিষয় হলো বিশ্ব যখন উন্নতির শিখরে আরোহন করছে ঠিক তখনই পৃথিবীতে ও আমাদের এই সমাজে আর একটি নতুন পন্থা চালু হয়ে গেল তাহলো নারী দেহ বিক্রি। যা পতিতাবৃত্তি নামে পরিচিত। যার বর্তমান আধুনিক ইংরেজী নাম SEXUAL WORKER বা যৌন কর্মী। এদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন, পতিতা, কলর্গাল, র্যৌনকর্মী, বারবাজারী, পুলিশের ভাষায় ১৪ নম্বর, সেফটি ভাল SAFETY VALVE আমাদের প্রধান মন্ত্রীর শেখ হাসির ভাষায় নিশি কুটুম্ব।
SAFETY VALVE বলতে আমরা বুঝি এমন এক যন্ত্র বা ব্যবস্থা যা স্বয়ংক্রিয় মাত্রাতিরিক্ত চাপ EXCESSIVE PRESSURE কমিয়ে দেয়। SAFETY VALVE এর সংজ্ঞায় বলা আছে IN STEAM BOILER A DEVICE OPENING AUTOMATICALLY TO RELIEVE EXCESSIVE PRESSURE (অর্থাৎ বাষ্প নির্মাণ পাত্রে যে যন্ত্র আপনা থেকেই খুলে অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে দেয়।)
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন রিপুর দাস করে, অন্যদিকে সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেন, قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ “মুমিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে, এ নীতি তাদের জন্য অতিশয় পৰিত্ৰতাময়। আর তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণমাত্রায় অবহিত।" (সুরা নূর, আয়াত ৩০)
পুরুষদের বলার পর মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ “মুমিন মহিলাদের বল, তারা যেন তাদের ইজ্জত আব্রুকে হেফাজত করে নিজেদের দেহ ও লজ্জাস্থানকে আবৃত রাখে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতাময়।” (সুরা নূর, আয়াত ৩১)
ক্ষুদা, লোভ, লালসা, দয়া, ঘুম, জৈবিক চাহিদা এ গুলোর প্রতি মানবের দূর্বলতা কোন কালেও কম ছিল না। তবে মানব চরিত্রের মধ্যে যে জিনিসটি বেশি কাজ করে তা হলো জৈবিক চাহিদা ও ক্ষুধা। সাভাবিক ভাবে বা সমাজ স্বীকৃত উপায়ে যখন মানুষ যৌন চাহিদা মিটাতে পারে না তখনই সে অবৈধ উপায়ে যৌন চাহিদা মিটানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়।
পতিতা বৃত্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, পুরুষ যখন যৌন চাহিদা মিটানোর জন্য নিজ স্ত্রী ব্যতিরেখে অবৈধভাবে অন্য কোন নারীর পানিপান করে। অন্যদিকে নারী অর্থের বিনিময়ে তার দেহ দান করতে প্রস্তুত হয়, আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক একটা অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হওয়াটাই পতিতাবৃত্তি।
ENCYCLOPEDIA BRITANNICA তে বলা হয়েছে, INDISCRIMATE SEXUAL ACTIVITY IN EXCHAGE FOR MONEY OF VALIABLES. অন্য আর একটি সংজ্ঞাতে বলা হয়েছে, INDUKGENCE INPROMIS CUOUS SEXUAL RELATIONSHIP FOR PAYMENT WITHOUT ANY EMOTIONAL ATTACHMENT BEING INVDNED যা কিনা সামাজিক বা নৈতিকতার অথবা ধর্মীয় দিক নিয়ে যতই দোষণীয় হোক না কেন।
উপরে সুরা আহযাবের ৩৩ এবং ৫৩নং আয়াতে যদিও পর্দার কথা বলা হয়েছে তথাপিও হুঁশিয়ার বানী উচ্চারণ করা হয়েছে যে তোমরা নিজ গৃহের বাইরে যাবে না এবং নিজেদের সুন্দরীরুপে পর পুরষের সামনে উপস্থাপন করবে না। কারণ প্রথমে দেখা স্বাক্ষাত, তার পর কথা, তার পর আকার ইঙ্গিত এমনি ভাবে শেষ পর্যন্ত যৌন মিলন। যা কি-না গর্হিত কাজ।
অথচ আল্লাহ তা'য়ালা বিবাহের সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে বলেন, وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا “বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে ভাল লাগে, দুই, তিন, অথবা চার যদি আশংকা কর যে তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবেনা, তবে একজনকে বিবাহ কর।" (সুরা নিসা, আয়াত ৩)
নগর সভ্যতার পত্তনের ফলে ধীরে ধীরে যৌনতার প্রসার লাভ করতে থাকে। এটাকে তখন দমন করার চেষ্টা করা হলেও স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে তা হয়ে উঠেনি। ফলে বিধাব স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলারা গোপনে যৌন ব্যবসায় লিপ্ত হতো। ENCYCLOPEDIA এর মতে নগরায়ণ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন, সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের কারণে আধুনিক বেশ্যা বৃত্তি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যার ফলে সমাজ ও সভ্যতায় নেমে এসেছে বিপর্যয়।
কেউ যদি পতিতালয় হিসাবে ব্যবহারের জন্য নিজের জায়গা বা বাড়ি ব্যবহার করে বা এই উদ্দেশ্যে ভাড়া দেয়, তবে তার শাস্তি দু' বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয়ই, দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শান্তি পাঁচ বছর জেল অথবা জরিমান যে ভাড়া দেয় এবং যে নেয় উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।” (ধারা-৪ (১)
এ ব্যাপারে কোর্টে নালিশ করতে পারবে কেবলমাত্র পৌরসভা বা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা কোন রেজিস্ট্রার্ড সমাজ সেবামূলক সংগঠন অথবা কথিত পতিতালয়ের আশে পাশের তিনের অধিক বাসিন্দা।" (ধারা-৪ (৭)
উপরোক্ত আইনগুলো পাঠ করলে বুঝা যায় যে, আইনগুলো দ্বারায় শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে তৃতীয় ব্যক্তির জন্য। প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা নেই। যারা সরাসরি অপরাধী অর্থাৎ পতিতা ও গ্রাহক এদের জন্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। আসলে পতিতাবৃত্তির আইনগত ভিত্তি নেই।
পতিতাদের ছাড়া সমাজ ও সভ্যতায় নানা রকম রোগ জীবানু সৃষ্টি হয়। যেমন, সিফিলিস, গণেরিয়া, বিভিন্ন চর্মরোগ HIV, AIDS এর মত মারাত্মক রোগ সমূহ। এই সমস্ত জীবাণু বহনকারী পতিতাদের উদরে যে, সন্তান আসে তা মানব সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি স্বরূপ। এরা খাটি হারামযাদা হিসেবে দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৮৫ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে দালালদের অত্যাচারে শবমেহের নামের এক মেয়ের মৃত্যু হলে দেশব্যাপী পতিতালয় উল্লেদের আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের পাশা পাশি সমাজ কল্যাণ বিভাগ পি. জি. হাসপাতালের বিশিষ্ট ডাক্তারের উদ্যোগে ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিঠির দ্বারা পতিতাদের স্বাস্থ্যের উপর জরিপ চালনো হয়। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ১২৯ জন পতিতার মধ্যে ১৮ জন পতিতাই সিফিলিস, গণেরিয়া রোগে আক্রান্ত, চর্মরোগে আক্রান্ত ২০জন, জন্ডিসে আক্রান্ত 5জন, মোটামুটিভাবে ৬জন রোগমুক্ত। তাও আবার নুতন পতিতা হওয়ার কারণে। জরিপকারী চিকিৎসকদের অভিমত ছিল এই যে, প্রকৃত পক্ষে কোন পতিতাই রোগমুক্ত নয়।
ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন এ্যান্ড পাবলিক হেলথ ১৯৯৪ সালে গবেষণা করে দেখেছে পতিতাবৃত্তির কারণে ভারতে AIDS রোগ ছড়াচ্ছে। 2000 সাল নাগাদে বিশ্বের এক চতুর্থাংশ অতষ্টর রোগী ভারতে পাওয়া যাবে। সুতরাং এই সমস্ত যৌন কর্মী পতিতা বা সেফটি ভালব যে নামেই ডাকা হোক না কেন এদের দ্বারা সমাজ ও সভ্যতার এক বিরাট হুমকি স্বরুপ
পতিতাদের পূর্ণবাসনের জন্য যে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরী করা হয়েছিল তা বছরের পর বছর ফাইল বন্ধি হয়ে পড়ে রয়েছে। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সভপতিত্বে সচিবালয়ে পতিতা ও ভাসমান নারীদের পূর্ণবাসনে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে পতিতা ও ভাসমান দু:স্থ নারীদের পূর্ণবাসন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এন জি ও এর সমন্বয়ে গঠিত একটি কোম্পানীকে অনুমোদন দেয়া হয়।
ঘোষণা করা হয় এই কোম্পানী পরিচালনা করবে ১১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা বোর্ড। থাকবেন কোম্পানীর চেয়ারম্যান।কোম্পানীর অনুমোদিত মূলধন হবে ১০ কোটি টাকা। এতে ১ লাখ শেয়ার রাখা হবে। পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা বিতরণকৃত মূলধন হবে ১ কোটি টাকা। বৈঠকে নারী পাচার রোধের বিষয় নিয়ে আলোচনার পর তা সম্পূর্ণরপে বন্ধ করার জন্য বেঙ্গল সাপ্রেশন অব ইমমোরাল ট্রাফিক এ্যাক্ট ১৯৩৩ এর আমূল সংশোধনের জন্য উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সে সাথে ভাসমান ও অসহায় নারীদের পতিতাবৃত্তি থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে বর্তমান প্রচলিত হলফ নামা পদ্ধতির পরিবর্তন ও সংশোধন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কিন্তু ঐ বৈঠকের পর আর কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি অদ্যাবধি। দুঃখজনক হলেও সত্য সরকার ক্রিকেট খেলা সহ অন্যান্য খেলার জন্য শত কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেন, সরকার কি পারে না শত কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা বাবায়ন করতে পতিতাবৃত্তি নির্মূল ও পতিতা পূর্ণবাসনের জন্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী তারা কি পারেন না সমাজের এই নারী বন্ধিনীদেরকে উদ্ধার করতে। অথচ বিশ্বাসীরা বলেন, وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا “হে আমাদের প্রভু আমাদের থেকে জাহান্নামের শান্তি নিবৃত কর, এর শান্তিতো নিশ্চিত বিনাশ।“ (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৫) আল্লাহ আরও বলেন, إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا আশ্রয়স্থল ও বসবস হিসাবে তা কত নিকৃষ্ট।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত 66)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন