AIDS বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী। AIDS যার অপর নাম অনিবার্য মৃত্যু। পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে এ এব মরণ ব্যাধি। সামগ্রিকভাবে বিশ্বের ঘাতক মরণ ব্যধি হিসেবে এর অবস্থান চতুর্থ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, AIDS - Worldwide it is the fourth killer. বর্তমান মানব সভ্যতার জন্য হলো সবচেয়ে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী রোগ। ঘাতক এই ব্যাধি আবিস্কারের পর থেকে অদ্যাবধি ৬ কোট মানুষ HIV/AIDS আক্রান্ত হয়েছে। আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো AIDS। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার 2001 সালর প্রতিবেদন মতে, About one third of those currently living with HIV/AIDS are aged 15-24 most of them do not know they carry the virus. ( সুত্র : U S. AIDS)
বিশ্বে AIDS
পৃথিবীর কয়েকটি অঞ্চলে HIV/AIDS পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে এখন পর্যন্ত 2 কোটি 18 লাখ মানুষের জীবনহানী হয়েছে। 2000 সাল পর্যন্ত মৃত্যুর প্রহর গুনছে আরও 3 কোট 61 লাখ। 2001 সালের শেষ নাগাদ এ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে 5 কোটি 61 লাখ। 1985 সাল থেকে শুরু হরে 2000 সাল পর্যন্ত এরোগে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল 1 কোট 88 লাখ এবং বছর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়াবে 2কোটি 18 লাখে। 2010 সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে 2 কোট 43 লাখে।১৯৮০ সাল থেকে শুরু করে এর রোগীটি চিহিৃত করার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে AIDS রোগে আক্রান্ত হয়ে আনুমানিক ৩ কোটি ৫০ লক্ষ লোক মারা গেছে। AIDS কে বর্তমানে একটি মহামারী ব্যাধি হিসেবে গণ্য করা হয়। HIV ভাইরাসটি সম্ভবত 1900 শতকের শেষ দিকে আফ্রিকাতে দেখা যায়। আমেরিকায় সর্বপ্রথম AIDS রোগটি নির্ণয় করে এবং তার পরে আশির দশকের শুরুর দিকে এই রোগের কারণ হিসেবে HIV ভাইরাসকে শনাক্ত করে তাদের গবেষণায় উঠে আসে HIV আক্রান্তর ৭০ শতাংশই সমকামী এবং উভকামী পুরুষ।
১৯৮৪ সালে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই মহামারী রোগের ভাইরাস শনাক্ত করেন। ফরাসি বৈজ্ঞানিকেরা এর নাম দেন Lymphadenopathy-associated virus অর্থাৎ লসিকাগ্রন্থির রোগ-সংশ্লিষ্ট ভাইরাস। আর মার্কিনীরা এর নাম দেয় Human T-cell Lymphotropic virus অর্থাৎ মানব টি-কোষ লসিকাগ্রন্থি-অভিমুখী ভাইরাস। ১৯৮৬ সালে এই ভাইরাসের পুনঃনামকরণ করা হয় Human Immune Deficiency Virus (HIV) অর্থাৎ মানব প্রতিরক্ষা অভাব সৃষ্টিকারী ভাইরাস। ২০০৫ সালে এইডস ২২ থেকে ৩৩ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় যার মধ্যে ৫ লক্ষ ৭০ হাজারের ও বেশি ছিল শিশু। এই মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ ঘটে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা (Sub-Saharan Africa) অঞ্চলে। তখন ধারণা করা হয়েছিল ভাইরাসটি আফ্রিকার প্রায় ৭ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করবে। ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৩ কোটি ৩২ লক্ষ মানুষ AIDS এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে যাদের মধ্যে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ছিলো শিশু। এর তিন-চতুর্থাংশেরই মৃত্যু ঘটেছে আফ্রিকার সাহারা-নিম্ন ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর অঞ্চলে। ২০১৬ সালে বিশ্বে প্রায় ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ লোক HIV দ্বারা আক্রান্ত ছিল এবং ঐ বছর AIDS কারণে ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। তবে ২০১৬ সালে ২০১৫ সালের তুলনায় নতুন HIV সংক্রমণের সংখ্যা ৩ লক্ষ কম ছিল। বেশির ভাগ AIDS আক্রান্ত রোগীই সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাতে বাস করে। তবে 2022 সালে এসে 3 কোটি 90 লাখ আক্রান্ত। তবে বর্তমানে তুলনামূলভাবে কমে আসছে।
বাংলাদেশে প্রথম HIV/AIDS রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। বাংলাদেশে HIV/AIDS সংক্রমিত হয়েছেন ১৪ হাজার জন। চিকিৎসার আওতায় এসেছেন ৮৪ শতাংশ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু হয় ২০৫ জনের। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৫৮৮ জনের। উল্লেখ্য যে, প্রথম যিনি শনাক্ত হয়েছিলেন, তিনি এখনো সুস্থভাবে বেঁচে রয়েছেন।
বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও ঝুঁকি বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশে ভারত ও মিয়ানমার এ রোগের উচ্চঝুঁকিতে। সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা। আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ। এইডস আমাদের দেশে প্রকট নয়। তারপরও সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী AIDS বিষয়ে অবগত নন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় AIDS / STD প্রতিবেদনে HIV সংক্রমিত ৭২৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৪২০ জন, নারী ২১০ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ জন। গত এক বছরে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠীর ১৮৬ জন, রোহিঙ্গা ১৮৮ জন, বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ১৪৪ জন, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন, নারী যৌনকর্মী ১৭ জন, সমকামী ৬৭ জন, পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ১৩ জন রয়েছেন।
বাংলাদেশে যে সব কারণে HIV/AIDS বিস্তারে ঝুকিপূণ তাহলো অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালণ পদ্ধতি।দারিদ্রতা, মাইগ্রেশন, পার্শ্ববর্তী দেশে সমূহে AIDS এর প্রকোশ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়া, নারী নির্যাতন, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, পতিতাবৃত্তি, সমকামিতা, অবৈধ যৌন মিলন, যিনা, ব্যভিচার ইত্যাদি। এরই প্রেক্ষিতে 1988 সাল থেকে প্রতি বছর 1 ডিসেম্বর বিশ্ব AIDS দিবস পালন করা হয়।
A- Acquired অর্থ জন্মগতভাবে প্রাপ্ত নয়, বরং অর্জিত
I Immune শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
D Deficiency প্রতিরোধ ক্ষমতার অকার্যকারিতা/ অকার্যকর/ অভাব
S Syndrome অনেকগুলো চিহৃ ও লক্ষণ সমষ্টি যেমন মুখে ঘাঁ, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাস যন্ত্রের রোগ, পেটের রোগ, চামড়ার রোগ ইত্যাদি।
HIV কি ?
Human Immune Deficiency Virus ভাইরাসের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমণ করে থাক। ভাইরাসটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ কারী রক্তের শ্বেতকায় কোষটি হেলপার কোষে প্রবেশ করে এবং তার কর্মক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেয়। ফলে পরিণতি AIDS এবং অকাল যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যু।
যেভাবে ছড়ায়
অধিকাংশ মানুষ জানে না যে AIDS কিভাবে ছড়ায়। তাই তারা সচেতন হতে পারে না। মূলত চারটি উপায়ে AIDS এক জনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে বা দেহে ছড়ায়। এক. AIDS আক্রান্ত এমন কোন ব্যক্তির সাথে যে, কোন উপায়ে যৌন মিলন করলে। দুই. দুষিত রক্ত অর্থাৎ HIV ভাইরাস আছে এমন লোকের রক্ত শরীরে গ্রহণ করলে। তিন. AIDS আকান্তে মায়ের থেকে শিশু জন্মের পুর্বে জন্মের সময় ও জন্মের পরে এটা হতে পারে। চার. HIV/AIDS আছে এমন লোকের শরীরে সিরিঞ্জ বা সুচ ব্যবহার করা হয়েছে সেই সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে।
AIDS লক্ষণ সমূহ
HIV আক্রান্তের শরীরে ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত অত্যন্ত নীরবে জীবানু বসবাস করতে থাক, যা রোগী নিজেও জানেনা। যে, কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কিছু লক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছে। এক. শরীরের ওজন শতকরা ১০ ভাগেরও বেশি কমে যায়। দুই. এক মাসের বেশি সময় ধরে ডাইরিয়া চলতে থাকা। তিন. এক মাসের বেশি সময় ধরে একটানা জ্বর জ্বর ভাব থাকা। চার. এক মাসের বেশি সময় ধরে একটানা শুকনো কাশি থাকা। পাচ. সারা দেহে চুলকানি জনিত চর্মরোগ হওয়া। ছয়. বার বার হারপসি জুষ্টার এর সংক্রমন হওয়া। সাত. মুখ ও গলায় ফেনা যুক্ত এক ধরনের ঘা (ছত্রাক) হওয়া। আট. চামড়া মুখে ও চোখে চাকার মত চ্যাপ্টা উচু বেষ্টনী হয়ে লাল রঙের দাগ হয়ে পড়া। নয়. গলা ও গালের তলা ও কুচকির নাসিকা গ্রন্থি ফুলে উঠা ইত্যাদি।
এক. AIDS এর মৌলিক জ্ঞান অর্জন করে, কিভাবে হয় ? কেন হয়? তা জেনে যথাযথভাবে ফিরে থাকার মাধ্যমে। দুই. পরীক্ষা কেন্দ্র খুলে। সারা দেশের প্রতি থানায় HIV পরীক্ষা কেন্দ্র খুলেAIDS আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। তিন. ব্লাড ব্যাংক চালূ করা। কেউ যাতে দুষিত রক্ত না নিতে পারে। তার জন্য ব্ল্যাড ব্যাংকের মাধ্যমে রক্ত নেয়ার ব্যবস্থা করা। চার. যৌন শিক্ষা চালু করা। নিরাপদ যৌন মিলনের নিয়ম জানলেAIDS কমে যাবে। পাঁচ. রোডিও টিভিতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশবাসিকে সচেতন করা।ছয়. চলচ্চিত্র নির্মাণ করার মাধ্যমে।সাত. পত্র পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে।আট.সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও আলোচনার সভার মাধ্যমে।নয়. ধর্মীয় অনশাসন মেনে চলার মাধ্যমে।দশ. সারা দেশের সকল পতিতালয় উচ্ছেদের মাধ্যমে।এগার. কনডম ব্যবহারের মাধ্যমেে।বার. AIDS দিবস উদযাপনের মাধ্যমে।
AIDS প্রতিরোধে ইসলাম
ইসলাম একটি জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়। ইসলামের সামাজিক ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি আছে বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি। ইসলামের রয়েছে নিজস্ব শিক্ষা আদর্শ ও মূল্যবোধ। ধর্ম মানুষকে স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করতে শেখায়। ইসলাম মানুষকে পার্থিব কামনা বাসনার নিকট আত্মসর্ম্পন করতে বা এর গোলামে পরিণত হতে শেখায় না। প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ ও অনৈতিক লালসা মানুষকে পঙ্গুত্বের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়। আর এরূপ হলে মানবতার কল্যাণের লক্ষ্য অর্জন হয় না। তাই ইসলামে কখনো মানুষাকে পশুত্বের স্তরে নামিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। আল্লাহ বলেন, زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ স্ত্রী লোক সন্তান সন্ততি স্বর্ণ রোপৌর স্তুপ, তেজি ঘোড়া, গৃহপারিত জন্ত্র, ও কর্ষণযোগ্য জমি, এর সবকে মানুষের কাছে আর্কষণীয় করে দেয়া হয়েছে। (সুরা আল ইমরান, আয়াত 14) যৌন প্রবুত্তিকে নোংরা বা আপত্তিকর মনে করার কোন কারণ নাই। এ সকল স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে অবদমন করার যুক্তি ইসলাম সমর্থন করেন বরং প্রবৃত্তি সসূহ সচেতন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার উপর ইসলাম গুরুত্বারোপ করে।
ধর্মীয় অনুশাসন HIV/AIDS প্রতিরোধে সহায়ক। ইসলামে সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত দাম্পত্য জীবন যাপনের ক্ষেত্রে েইসলামের মৌলিক চিন্তা, চেতনা জীবনবোধ, যৌন আচরণ, নৈতিক মূল্যবোধ, বৈবাহিক জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য যিনা ও সমকামিতার পরিণাম, নারী নির্যাতন মাদক প্রতিরোধ দারিদ্রবিমোচন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা HIV/AIDS প্রতিরোধ গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুশৃঙ্খল, সুসংবদ্ধ, সুসামঞ্জস্য ও হিতকর নীতিমালাকে নৈতিকতা বলা হয়। ইসলামে নৈতিকতার উপর ভিত্তি করেই আইন কানুন রচিত হয়। নৈতিকতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا যৌন অঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ নারী, আল্লাহকে অধিক স্বরণকারী নারী ও পুরুষ এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। (সুরা আল আহযাব, আয়াত 35) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا অবৈধ যৌন সংযোগের নিকটবর্তী হয়োনা কেননা ইহা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনী ইসঈরাই, আয়াত 32) নৈতিকতা ব্যত্তিতের বিকাশ ঘটায়, জীবনকে সর্বেোত্তম আর্দেশে পরিপূর্ণতা দান করে। নৈতিকতার অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানুযষের জৈবিক চাহিদা ও সামাজিক চাহিদার প্রয়োজন স্থাপন করা যা তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করবে। নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষকে ইসলাম পশু হিসেবে বিবেচনা করে। হাদিসে আছে রসুল সা: বলেন, যখন কোন জাতি প্রকাশ্যে বেহায়াপনা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন এক ধরনের মহামারী ছড়িয়ে পড়ে যা ইতিপূর্বে কোন জাতিতে আসেনি। (ইবনে মাজাহ) সুতরাং হাদিসের ভাষ্যমতে বর্তমানে HIV/AIDS কে আমরা সেই মহামারী বলতে পারি।
মানব জীবনের সীমাহীন কল্যাণের ক্ষেত্রে বিবাহ অদ্বিতীয় একটি পদ্ধতি। পরিবার হলো সমাজের খুটি। পরিবারের মৌলিক দুইজন সদস্য হলো স্বামী স্ত্রী। বিবাহ হলো তাদের সম্পর্কের মূল ভিত্তি। সুতরাং বিবাহ বহির্ভূত বা অবৈধ অথবা অপ্রাকৃতিকভাবে যৌন সম্ভোগ ইসলাম সমর্থন করে না। মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মানুষের সহজাত ও স্বভাবগত চাহিদা পূরণ মানসিক প্রশান্তি ও চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন যৌন সম্ভাগ ও সন্তান সন্ততি লাভের অন্যতম উপায়। বিবাহ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। বিবাহ না করলে চারিত্রিক স্খলন ঘটতে পারে। বিবাহ না করার কারণে যিনা, ব্যভিচার, বেড়ে যায়্ আর যিনা, ব্যভিচারের কারণে আজকের দুনিয়াতে HIV/AIDS মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে দারিদ্রতা মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যায়। দারিদ্রতার কারণে মানুষ অবাধ ও অবৈধ যৌন মিলনে সহায়তা করে। দারিদ্রতার কারণে অবৈধ যৌনাচার বৃদ্ধি পায়। ফলে HIV/AIDS আক্তান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে। এতে পারস্পরিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হতে থাকে। অনুরূপভাবে ইসলামে যৌন আচরণ, যিনা ব্যভিচার বিষয়ে ইসলামের হুশিয়ারী, সমকামিতা, শিশু কিশোর পাচার, নারী নির্যাতন, নারীর মর্যাদা, মানবাধিকার, মাদকাশক্তি এই সকল বিষয় আলোচনা করলে আমরা AIDS সম্পর্কে আর জানতে পারি । কিন্তু প্রবন্ধের দীর্ঘতার কারণে আর আলোচনা করা হলো না।
তবে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তথা ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব, মুহাদ্দিস, মুফাসিসর, বিশিষ্ট আলেম ওলামা, তাফসির কারক, সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় সভা সমাবেশ, ঈদের জামায়াত, বিবাহ অনুষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্থানীয় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় বক্তব্য বিবৃতি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে HIV/AIDS এর মত মারাত্মক এই ব্যাধি সম্পর্কে গণ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই মরণ ব্যধি সম্পর্কে সচেতন করা আবশ্যক।
পরিশেষে, আমরা বলতে পারি, ইসলাম আল্লাহ তায়ালার মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের জীবনের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে ইসলামের শাশ্বত বিধি-বিধান মেলে চলার মাধ্যমে, তাই ইসলামী অনুশাসন পুরোপুরি মেনে চললে এবং উপরে বর্ণিত প্রতিরোধ সমূহ যথাযথভাবে মেনে চললে মানুষ HIV/AIDS মত ঘাতক ব্যধি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন