এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত নিজেদের প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার উম্মাদনায় ACID নিক্ষেপের মাধ্যমে মানব শরীর জলসে দিয়ে জীবন দুর্বিষহ ও যন্ত্রনাময় করে তুলছে। বিকৃত মূখ ও দেহ নিয়ে বির্বণ হয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতের সব আশা। ছার খার হয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন। ACID এর ভয়াল নৃশংসতা থেকে তিন মাসের শিশু থেকে 70 বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত রেহাই পায় না। এক জনের আক্রোশে 3/4জন ও শিকার হচ্ছে। মানবতাবোধ বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট্য নাই।
এক বিংশ শতাব্দীর সুচনা লগ্নে দাঁড়িয়ে বিশ্ব যখন জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উৎকর্স লাভে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন বাংরাদেশের এক শ্রেনীর মানুষ নারী নিযাতনে একে অপরের সাথে যেন প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। উদ্ভাবন করে চলেছে নারী নির্যাতনের নিত্য নতুন পন্থা।
আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের নির্মম ঘটনা হলো ধষণ, ধষর্নের পর হত্যা, ACID নিক্ষেপ, অপহরণ, বিদেশে পাচার, পতিতালয়ে বিক্রি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, যৌতুকের জন্য হত্যাসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। নারী ক্ষমতায়ন, বৈষম্য মুক্তি, স্বাবলম্বিতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে। অপর দিকে চলছে তখন স্ববিরোধিতাপূর্ণ বিরাজ করছে। সরকার বদলের সাথে সাথে প্রতিবারই নতুন সরকার নারী মুক্তির বাতাবরণ নিয়ে শুরু করে নতুন রাজিনীতি। কিন্তু চিরকালের বঞ্চিত অবহেলিত নির্যাতিত নারীর করুণ অশ্রু কখনো বন্ধ হয়নি। এ কথায় নারী মুক্তি চিত্র দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক বাচালতা ও কপটতার অর্থহীন বাগাভম্বরে।
ACID নিক্ষেপের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তারপরও ACID নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। কঠোর শাস্তির কথা ভেবে কিংবা না ভেবে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে উন্মুক্ত প্রেমিক যেমন এ ঘটনা ঘটছে তেমনি পারিবারিক কলহ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ACID নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।
ইউ, এন ডি ভিপির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। নারী শোষণের শিকার হওয়ার প্রধান কারণ বিশ্বের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসরত 130 কোটি লোকের মধ্যে 70 শতাংশ হচ্ছে মহিলাবিশ্বের 88 কোটি 5 লাখ নিরক্ষর মহিলার এক চতুথাংশই বাংলাদেশে। শ্রমের এক তৃতীয়াংশ যোগদান দিয়ে ও নারীরা পৃথিবীর আয়ের শতকরা 10 ভাগ পায় আর পৃথিবীর মোট সম্পত্তির মাত্র এক শতাংশের অধিকারী হয় নারীরা।
বাংলাদেশে যে সব হতভাগী ACID নিক্ষেপের শিকার হচ্ছে তাদের বেশির ভাগের বয়স 10 থেকে 30 এর মধ্যে এবং অধিকাংশই সমাজের নিচে পড়ে থাকা গরিব ও নিপীড়িত পরিবারের মেয়ে। সাধারণত আক্রমনের কারণ থাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং যৌতুক পরিশোধে অপারগতা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ACID ব্যবহৃত হচ্ছে। আক্রমন কারীরা সাধারণত তরুণ।
বর্তমান বাংলাদেশে মহিরা পরিষদ সমিতি ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজ, মানবাধিকার বাস্তবয়ন সংস্থা, উইমেন্স ফর উইমেন্স আইন সালিশী কেন্দ্র, জাতীয় আইন সহায়তা পরিষদ সহ দেশে প্রায় 220টি নারী সংগঠন নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন করছে। কিন্তু তার পর ও নারী নির্যাতন হয়েই যাচ্ছে। বিগত বছর গুরোর পরিসংখ্যানরিম্মে তুলে ধরা হলো 1980 সালে ACID আক্রান্ডের সংখ্যা 1জন মামলা 1টি।1985 সালে 14 জন মামলা 6টি। 1990 সালে 21 জন মামলা 12টি। 1991 সালে 20 জন মামলা 9টি।1992 সালে 29 জন মামলা 17 টি। 1993 সালে 37 জন মামরা 19টি। 1994 সালে 19 জন মামলা 8টি।1995 সালে 51 জন মামলা 21টি। 1996 সালে 83 জন মামলা 29 টি। 1997 সালে 117 জন মামলা 32টি।1998 সালে 119 জন মামলা 43 টি। 1999 সালে 123 জন মামলা 54 টি। 2000 সালে 130 জন মামলা 90টি।2001 সালে 150জন মামলা 143 টি। (সুত্র দৈনিক জনকষ্ঠ 30 আগস্ট 2002 শুক্রবার পৃষ্ঠা 13) ১৯৯৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪২২টি হামলার ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮০২ জন। গত বছর যেখানে ১৯টি ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২১ জন, সেখানে চলতি বছরে এই ১০ মাসেই ২০টি সহিংসতায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ জন।
শিল্প ও পন্যসভ্যতার বিকাশের জন্য আমাদের দেমে ACID এর প্রচলন বেড়েছে ব্যাপক হারে। অবশ্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রস্তাবের পরিপেক্ষিতে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত কারণে ACID এর সহজ প্রাপ্যতা রোধে 11 ধরনের ACID আমদানির উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে বানিজ্য মন্ত্রনালয়, তাহরো হাইড্রোক্লোরিক ACID কনসান ট্রেডেট সালফিউরিক এ্যাসিড, নাইট্রিক এ্যাসিড, কার্বলিক এ্যাসিভ, ক্রোমিক এ্যাসিটিক এমোনিয়া, কাস্টিক সোড়া, কাস্টিক ফ্লুইট এলকলি গ্লাসিয়াল এ্যানিটিক এ্যাসিড, ব্যাটারী ফ্লাইভ, ব্যাটারী ফ্লুইভ এলকলি বিশেজ্ঞদের মতে মানষদেহে ক্ষতিকরার মতো ACID গুলো নাইট্রিক এ্যাসিড, সালফিউরিক এ্যাসিড, এ্যানিটিক এ্যসিড এবং ইড হাইড্রোক্লোরিক এ্যাসিড। তবে এ চারটি মধ্যে সব চেয়ে ক্ষতিকর ACID হচ্ছে সালপিউরিক।
যদি বিষত্তে বা দাহ্য পদার্থ দ্বারা কোন মহিলার অথহানী করা হয় তাহলে 9টি সুর্নিদিষ্ট ও আলাদা উপধারায় মৃত্যুদন্ড, যাবজীবন কারাদন্ড অনর্ধিক 14 বছর বকংবা 7 বছর কারাদন্ড সহ অতিরিক্ত শাস্তির বিদান করা হয়েছে। অন্যদিকে যদি কোন ব্যক্তি কোন ক্ষয়কারী বিষাক্ত বা দাহ্য পদার্ত দ্বারা কোন শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটায় তাহলে তিনি মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত হবেন।( নারী ও মিশু আইন 4) যদি কোন নারী ও শিশুকে ধষন করে তা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত হইবে। অথবা যাবজ্জীবন কারা দন্ডে দন্ডিত হইবে। ( নারী ও শিশু আইন 6) উল্লেখিত আইন গুলো কঠোর এবং যথার্থ। কিন্তু এ সব আইন গুলোর যথার্থ প্রয়োগ হচ্ছে না তার কারণ পুলিশের অসততা। পুলিশ আদারতে যে চার্জমীট পাঠায় সাধারণত তা খুবই দুবর্ল এবং ক্রটিপূর্ণ। অন্যদিকে চলে টাকার বিনিময়ে আপোস মিমাংশা।
নরওয়ের উইমেন্স কমিউনিষ্ট পার্টির প্রদান ভারান্তি এরিকসনের প্রকাশিত গ্রন্থ (Sisters comedies) এ লিখেছেন পুঁজি ও নারীর অধিকার একসাথে স্বীকৃত হতে পারে না। বরং একটি অপরটিকে প্রত্যাখ্যান করে অস্বীকার করে। পুঁজির কৌশন পৃষ্ঠ পোষনে নারীর নায্য অধিকারের ভাগ্য ইতিবাচক হতে পারে না। সমাজ ব্যবস্থার অভ্যান্তরে আদেশ ও আইন যতই অবাধ ও যুক্ত দেখক না কেন তা আসলে প্রশাসন বিরোধী বলা বাহুল্য ঐ বিরোধী শক্তি সমাজ নিজেই।
শুধু যে আইনের হেরফেরের জন্যই আপোস আসে তা নয়। সামান্য কিছু টাকার জন্যও আপোসে আসে। সম্পদ সুষম বন্টনের অভাবে সৃস্ট দারিদ্রের পলে মোষিতকে নির্যাতিতকে যেকানে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করতে পারে। সেখানে নির্যাতিতার বঞ্চনার দুর্গতি শেষ হতে পারে না।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ACID সন্ত্রাসের নৃশংসতার আশঙ্কা বিরাজ করছে। ACID জীবন কেডে নিতে না পারলে ও একটি স্বপ্ন আশা আকাংখা মুহুতে ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। কয়েক ফোটা জ্বলীয় পদার্থের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনা যেকত ভয়াবহ তা একমাত্র ভূক্ত ভোগীরা বুঝতে পারেন। তখন ঐ মানুষটিকে কি দেশের 13 কোটি অবনত মুখ শান্তনা দিতে পারে।দেশের মানুষের বিবেক জাগ্রত না হলে সুষ্ঠভাবে আইনের প্রয়োগ না ঘটলে ACID সন্ত্রাসের অবিশাপ তেকে আমাদের মুক্তি নেই। আমাদের সমাজ জীবন বর্তমানে কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত। নৈতিকতা ও মূল্য বোধের চরম অবক্সয় ঘটেছে। আমাদের জীবনে পাশা পাশি আচে আইনের মারপ্যাচ এবং আইন প্রয়োগে বিরাট পাক, ফোকার এর উপর আছে আইন শৃংখলা রক্ষা কারী বাহিনীর চরম উদাসীনতা এবং সমাজ পতিদের ক্ষমতা লিপ্সায় অপরাধীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার প্রবনতা।
উপরিক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি ACID সন্ত্রাস দ্রুত বাড়তেছে। সুতরাং আমাদের কে সামাজিকভাবে আর ও বেশী সহানুভূতিশীল এবং সমব্যয়ী হতে হবে। ACID বিভীষিকার বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে একটি ইতিবাচক কল্যাণধর্মী সামাজিক চেতনা। পালন করতে হবে মানবিক দায়িত্ব তা না হলে মানুষ হিসেবে আমাদের সমাজে বসবাসের কোন অধিকার থাকে না। থাকা উচিত ও নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন