বর্তমান যুগ আলটা মর্ডান (ULTRA MODERN) যুগ। বর্তমান যুব সমাজ স্বর্ণের চেইন, স্বর্ণের বালা, আংটি, ব্রেসলেট পরে ঘুরে বেড়ায়। অনেকে আবার স্বর্ণের কলম, স্বর্ণের ঘড়ি, স্বর্ণের সিগারেট লাইটার, স্বর্ণের টাইক্লিপ ইত্যাদি ব্যবহার করে। এ গুলোকে আভিজাত ও মর্ডান যুগের প্রতীক মনে করা হয়। রুপ চর্চা প্রসাধন ও অলংকারাদির প্রতি দুর্বলতা নারী চরিত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সৌর্য বীর্যের প্রতীক পুরষের জন্যে 'মর্ডান ও স্মার্ট' হতে গিয়ে স্বীয় পুরুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে নারীর মত স্বর্ণালংকারে নিজেকে শোভিত করা কি যুক্তি সংগত?
স্বর্ণ অলংকার মানুষের জন্য মোহগ্রস্ত আল্লাহ বলেন, زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ মানবকে মোহগ্রস্ত করছে নারী, সন্তান সন্ততি, স্বর্ণ ও রৌপ্য, চিহিৃত অশ্ব, গবাদি পশু এবং ক্ষেত খামার আকর্ষণীয় বস্তু। এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। অথচ মহান আলাহ তায়ালা পুরাইষের জন্য স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা হারাম করেছেন। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা:) রেশম ডান হাতে এবং স্বর্ণ বাম হাতে নিয়ে বলেছেন এ 'দুটি' জিনিস আমার উম্মতের পুরুষ লোকদের জন্য হারাম। (আবু দাউদ নাসায়ী)
অপর এক হাদীসে আছে রাসুল (সাঃ) এক ব্যক্তির হাতে একটি স্বর্ণের আংটি দেখতে পেলেন এবং সেটাকে টেনে বের করে দুরে নিক্ষেপ করলেন তার পর বললের তুমি কি নিজ হাতে আগুনের স্ফুলিংগ ধরে রাখতে চাও? পরে নবী করীম (সা:) চলে যাওয়ার পর লোকটিকে বলা হলো তোমার আংটি তুলে নাও এবং কাজে লাগাও। তখন লোকটি বলল আল্লাহর কসম! রাসূলে পাক (সা:) যা দুরে নিক্ষেপ করেছেন আমি তা তুলে নেব না। (মুসলিম)
পুরষ বা মহিলা যে স্বর্ণ ব্যবহার করুক না কেন তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব তার উপর পড়বেই। যদি ও মহিলাদের জন্যে স্বর্ণ ব্যবহার ইসলাম জায়েজ করেছে। তবুও অত্যধিক ব্যবহারকে নিরৎসাহিত করা হয়েছে। তবে স্বর্ণ ব্যবহারের ফলে পদার্নশীল মহিলাদের চাইতে বেপর্দা মহিলাদের ক্ষতির আশংকা বেশী। আর সব চাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরুষেরা।
প্রাকৃতিক ভাবে মানুষ প্রতিনিয়তই নিজের অজান্তে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের স্বীকার হচ্ছে। ৪টি প্রদান উৎস থেকে ঘটছে এই প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। যথা:-(১) আবরণ বা ভূত্বকে (EARTHS CRUST) প্রচুর পরিমানে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকে। ফলে ভূত্বক হতে প্রতিনিয়ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে। (২) মহাশূন্য হতে আসা কসমিক রশ্মি (COSMIC RAYS) তেজক্লিয়তার একটি গুরত্বপূর্ণ উৎস। (৩) বায়ুমন্ডলে ATMOSPHERE অল্প পরিমানে RADON ও THRONE আছে যারা সামান্য পরিমানে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে। (৪) মানুষের শরীরেও কিছু তেজস্ক্রিয় উপাদান আছে, যে গুলো তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে, যেমন 4°k পটাশিয়াম14 কার্বণ 22 Ra রেডিয়াম।
যে সব শারীরিক উপাদান তেজস্ক্রিয়তার সৃষ্টি করে পটাশিয়ামের সব চাইতে বেশী উলে-খ যোগ্য। মহিলাদের শরীয়ে পটাশিয়ামের পরিমান পুরষের চাইতে কম থাকে তদুপরি যে সব মহিলা পর্দানশীল ও বাইরে বের হতে আপদ মন্ত্রক ঢেকে বের হয় তারা ভূত্বক কসমিক রশ্মি ও বায়ুমন্ডলের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব থেকে অনেকটাই হেফাজত থাকেন।
কিন্তু পুরষদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে হয় এবং তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান উন্মুক্ত থাকে বলে তারা সহজেই ভূত্বক কসমিক রশ্মি ও বায়ুমন্ডলের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সহজেই শিকার হয়। অন্যদিকে পুরুষের শরীরে তেজস্ক্রিয় উপাদান গুলোর পরিমান ও মহিলাদের তলিনায় বেশী থাকে।
International committee on Radiation protection 1959-1966 মানুষের জন্য তেজষ্ক্রিয়তার সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রা Maximum permissible dose নির্ধারণ করে দিয়েছে। মানুষের শরীরে এই নির্ধারিত পরিমানের বেশী তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ ঘটলে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
মনে রাখা দরকার ২/১ দিন বা ২/১ মাসের মধ্যে সাধারণত এই তেজষ্ক্রিয়তার কোন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া বুঝা যায় না। এমনকি পঞ্চাশ বছর পর ও তেজষ্ক্রিয়তার ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে, আবার কখনো সারা জীবনেও প্রকাশ ঘটে না। তেজষ্ক্রিয়তার ক্ষতিকর প্রভাব গুলোর মধ্যে রয়েছে: (১) ত্বক লালচে হয়ে শুকিয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে, এমনকি ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। (২) Bone sucrose's হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (৩) রক্ত সল্পতা Anemia (8) ব্লাড ক্যান্সার Leukemia (৫) ক্রোমোজোমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (৬) Gene mutation এর frequency বৃদ্ধি পায়। (৭) চোখে পানি পড়তে পারে Cataract. (৮) এর ফলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে বিভিন্নপ্রকার অস্বাভাবিকতার Abnormalities বহির প্রকাশ ঘটতে পারে।
সুতরাং নিজের ভবিষ্যৎ বংশধরদের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক পুরষের কর্তব্য সর্ব প্রকার স্বর্ণালংকার ব্যবহার পরিত্যাগ করা। অন্যদিকে বিভিন্ন সাংসারিক কাজ কর্ম কোটা বাছা ইত্যাদির কারণে মহিলাদের হাতের তালুতে প্রায় চুলকানী হতে দেখা যায় এ দুটি রোগের চিকিৎসাতেই স্বর্ণ অত্যন্ত কার্যকর।
রৌপ্য Silver একটি Heavy metal এবং মৃদু তেজস্ক্রিয় পদার্থ রৌপ্যের পারমানবিক ওজন স্বর্ণের ওজনের তুলনায় অনেক কম অর্থাৎ ১০৮। রৌপ্যের একটি গুণহলো এর রোগ জীবানু ধ্বংস করার ক্ষমতা আছে। রৌপ্যের তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণের ফলে কি ক্ষতি হতে পারে তা পুরুষদের স্বর্ণালংকারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার
নারী ও পুরষ নির্বিশেষে সকল মুসলমানদের জন্য স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার করা হারাম। হযরত ওম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সা:) বলেছেন, 'যে লোক স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রের পানাহার করবে তার পেটে জাহান্নামের আগুন খেল। (বুখারী ও মুসলিম) স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে যদি নিয়মিত পানাহার করা হয় তাহলো মারাত্মক বিষক্রিয়া Serious Toxicity) ঘটতে পারে। স্বর্ণের বিষক্রিয়ার ফলে বেশী আক্রান্ত হয় ত্বক। Skin ও মিউকাম ঝিলি Moues membrane ত্বকে সাধারণত Erythema থেকে শুরু করে মারাত্নক Exfoliating dermatitis পর্যন্ত হতে পারে। মিউকাস ঝিলি- তে যে সব ক্ষত Lesion হতে পারে তন্মধ্যে Steatites, Pharyngitis, Traumatic, colitis, Vaginitis এবং Glossies প্রধান। রৌপ্যের বিষক্রিয়াও প্রায় স্বর্ণের অনুরপ। শরীরের যে সব জায়গায় আলোতে উন্মুক্ত থাকে রৌপ্যের বিষক্রিয়ার ফলে সে সব এলাকার ত্বকও মিউকাস ঝিলি- ধুসৱ নীলরং Gray to blue pigmentation ধারণ করতে পারে। এ রোগকে Chrysalis বলে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কুৎসিত দেখায়।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা জায়েজ নয়। আবু মুসা আশআরী থেকে হাদিস বর্ণিত রসুল সা: বলেন আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য রেশমী কাপড় ও স্বর্ণ ব্যবহার হারাম করা হয়েছে, আর নারীদের জন্য হালাল করা হয়েছে। (তিরমিযি)
অতি মর্ডান বা ULTRA MODERN হতে গিয়ে নিজেকে এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদেরকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা যেমন অন্যায় তেমনি আল্লাহ পাকের আদেশ নিষেধ ও তাঁর রাসুলের দেখানো পথে চলা উত্তম। সুতরাং স্বর্ণ ও রোপ্যের ব্যবহার ও স্বর্ণ রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার যেহেতু ইসলাম পুরুষ ও মহিলার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে তা মেনে চলা উচিত।
তথ্য সুত্র:-
১। সুন্নত ও বিজ্ঞান- প্রথম খন্ড, ডা: খন্দকার আবদুল মান্নান।
২। আবু দাউদ ও নাসায়ী।
3। Tutorial pharmacy cooper and Gun pharmacology and pharmacy therapeutics Stoker India.
৪। মুসলিম শরীফ ও বোখারী শরীফ।
5। Good man and Gilman's the pharmacological Basis of therapeutics 7th Ed page 704.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন