ধারণা করা গুণা - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

ধারণা করা গুণা

বর্তমান পৃথিবীতে ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ চলছে। ইসলাম মানুষের দোষ অন্বেষণ নিষেধ করে মানুষের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তা ততক্ষণ পর্যন্ত, যখন মানুষ প্রকাশ্যে অশ্লীলতা বা অপরের কষ্টের কারণ না হয়। এখন ব্যাপক বাক স্বাধীনতার ফরে সমাজের সকল প্রকার নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ان الامير اذا بتغى الريبة في الناس افـسـدهـم ‘শাসকরা যখন সন্দেহের বশে মানুষের দোষ অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেয়।’ (আবু দাউদ) তবে কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খোঁজ-খবর নেয়া ও অনুসন্ধান করা একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তবে সেটা এ নির্দেশের আওতাভুক্ত নয়। যেমন , কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচার-আচরণে বিদ্রোহের কিছুটা লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে তারা কোন অপরাধ সংঘটিত করতে যাচ্ছে বলে আশংকা সৃষ্টি হলে সরকার তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে পারে। তবে ইসলামী রাষ্ট্রের শত্রদের তথ্য সংগ্রহ ও রাষ্ট্রোদ্রোহীদের অবস্থান জানার জন্য গোয়েন্দা নিযুক্ত রাখতে পারেন। অথবা কোন ব্যক্তিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয় বা তার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে চায় তাহলে তার ব্যাপারে নিশ্চিত হবার জন্য সে তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে ও খোঁজ-খবর নিতে পারে। দেশের জনগণের খুঁজে খুঁজে মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটি বের করা এবং তাদেরকে পাকড়াও করা ইসলামী সরকারের জন্যও জায়েয নয়।
অনুমান বা ধারণা করা সম্পর্কে কুরআনুল কারিমের সুরা আল হুজরাতের 12 নং আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يأيها الذين أمنوا اجتنبوا كثيرا من الظن إن بعض الظن إثم ولاتحسوار لا يغتب بعضكم بعضاء أيحب أحدكم أن يأكل تر امیه مهتافكرهتموه واتقوا الله إن الله تواب رحيره
সরল অর্থ- হে ঈমানদারগণ, বেশী বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাক। কেননা  কোন কোন ধারণা ও অনুমান স্পষ্ট গুনাহ। দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি আছে, যে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? না কেউ তা পছন্দ করে না। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু।

এখানে ظَنٌّ এর অর্থ ধারণা করা। অর্থাৎ সৎ ও আল্লাহভীরু লোকদের ব্যাপারে ধারণা পোষণ করা। যা ভিত্তিহীন এবং সর্বোব মিথ্যা। বুখারী-মুসলিমের হাদীসে এটাকে أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ সব চাইতে বড় মিথ্যা গণ্য করেছে। এখানে বলা হয়েছে, إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ অর্থাৎ তোমরা কু-ধারণা থেকে ‍বিরত থাক। যদি কারো কোন দোষ-ত্রুটি তোমরা জানতে পার, তবে তা গোপন কর। সেটাকে মানুষের সামনে বলে বেড়িও না, আর  খুঁজে খুঁজে দোষ বের করো না।

গীবত হল, অন্য লোকের কাছে কোন ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি বলে বেড়ানো। যা সে অপছন্দ করে। আবার এমন দোষের কথা বলা যা ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক  নাই। তাহলে তাকে মিথ্যা অপবাদ বলা হয়। যা  মহাপাপ। কোন মুসলিম ভাইয়ের নিন্দা করা, যেন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া  কেউ পছন্দ করে না। এক ব্যক্তি রাসুল (সা:) কে জিজ্ঞেস করলেন, গীবত কাকে বলে? রসুল (সা:) বললেন, কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে পছন্দ করে না। লোকটি বলল, যদি আমার কথা সত্যি হয়? তিনি বললেন, তোমার কথা মিথ্যা হলে সেটাতো অপবাদ। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী) এ কাজ স্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে করা হোক বা ইশারা ইংগিতের মাধ্যমে করা হোক সর্বাবস্থায় হারাম। অনুরূপভাবে এ কাজ ব্যক্তির জীবদ্দশায় করা হোক বা মৃত্যুর পরে করা হোক উভয় অবস্থায় তা সমানভাবে হারাম।

হাদীসে নবী সা: বলেছেন, من رأئي عـورة فـسـتـرهـا كـان كـمـن احـيـا مـوؤدة কেউ যদি কারো গোপন দোষ-ত্রুটি দেখে ফেলে এবং তা গোপন রাখে তাহলে সে যেন একজন জীবন্ত পুঁতে ফেলা মেয়ে সন্তানকে জীবন দান করলো। (আল জাস্সাস) দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করার এ নির্দেশ শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, বরং ইসলামী সরকারের জন্যেও। ইসলামী শরীয়ত মন্দ কাজের দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত করেছে তার দাবী এ নয় যে, সে একটি গোয়েন্দা চক্র কায়েম করে মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটিসমূহ খুঁজে খুঁজে বের করবে এবং তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবে। বরং যেসব অসৎ প্রবণতা ও দোষ-ত্রুটি প্রকাশ হয়ে পড়বে কেবল তার বিরুদ্ধেই তার শক্তি প্রয়োগ করা উচিত। গোপনীয় দোষ-ত্রুটি ও খারাপ চালচলন সংশোধনের উপায় গোয়েন্দাগিরি নয়। জনসাধারণের শিক্ষা সামগ্রিক প্রশিক্ষণ এবং একটি পবিত্র সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করাই তার একমাত্র উপায়।

হযরত আবু হোরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসুল সা: বলেছেন, তোমরা কোন ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে  খরাপ ধারণা বা অনুমান নির্ভর কথা বলো না। কারো দোষের খবর জানার চেষ্টা করেরো না, গোয়েন্দাগিরি করো না। অপরে প্রতি হিংসা, বিদ্ধেষ ও শত্রুতা দেখাবে না। অপরকে নিন্দা মন্দ বা পেছনে লেগে থাকবে না, তোমরা সবাই ভাই ভাই হয়ে থাক। (বুখারী ও মুসলিম) একজন মু’মিন মুসলমানের উচিত নিজের দুনিয়া ও আখেরোতের আযাব থেকে বাঁচতে অনুমান নির্ভর বা ধারণা ভিত্তিক কথা বলা থেকে বিরত থাকা। কারো দোষ খুঁজে বেড়ানো থেকে নিজেকে হেফাযত করা।

নিন্দার বাস্তব ভিত্তি হলো গীবত। মিথ্যা হলো অপবাদ এবং দু'জনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হলে চোখলখুরী। ইসলামী শরীয়াত এ তিনটি জিনিসকেই হারাম করে দিয়েছে। ইসলামী সমাজে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে যদি তার সামনে অন্য কোন ব্যক্তির ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা হতে থাকে তাহলে সে যেন চুপ করে তা না শোনে বরং তার প্রতিবাদ করে। আর যদি কোন বৈধ শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া কারো সত্যিকার দোষ-ত্রুটিও বর্ণনা করা হতে থাকে তাহলে এ কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে আল্লাহকে ভয় করতে এবং এ গোনাহ থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিতে হবে।

দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করার ক্ষেত্রে হযরত উমর (রা) এর ঘটনা অতীব শিক্ষাপ্রদ। একবার রাতের বেলা তিনি এক ব্যক্তির কন্ঠ শুনতে পেলেন। সে গান গাইতেছিল। তাঁর সন্দেহ হলো। তিনি প্রাচীরে উঠে দেখলেন, সেখানে শরাব প্রস্তুত, তার সাথে এক নারীও। তিনি চিৎকার করে বললেন, ওরে আল্লাহর দুশমন, তুই কি মনে করেছিস যে, তুই আল্লাহর নাফরমানী করবি আর তিনি তোর গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করবেন না? জবাবে সে বললো, আমীরুল মু'মেনীন, তাড়াহুড়ো করবেন না। আমি যদি একটি গোনাহ করে থাকি, তবে আপনি তিনটি গোনাহ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আপনি দোষ-ত্রুটি খুঁজেছেন। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন, দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করো। কিন্তু আপনি প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছেন। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে। কিন্তু আপনি অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছেন।

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) কাবার দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমার পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে শেষ করা যায় না। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার নিকট একজন মুমিন মানুষের মর্যাদা, পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব তোমার চেয়েও বেশী। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সঃ) বলেছেন, মিরাজের রাত্রে আমি দেখি যে, কতকগুলো লোকের তামার নখ রয়েছে, ঐগুলো দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা আচতে রয়েছে। আমি হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেন, এরা ওরাই যারা লোকদের গীবত করতো। হাদীসটি আবু দাউদের।

রাসূল সা: বলেন, তোমাদের কারও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা পোষণ ব্যতীত মৃত্যুবরণ করা উচিত নয়। (মুসলিম, আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ) আর এক হাদীসে বলেন, আমি আমার বান্দার সাথে তেমনি ব্যবহার করি, যেমন সে আমার সম্বন্ধে ধারণা রাখে। (মুসনাদে আহমাদ) এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করা ফরয এবং কু-ধারণা পোষন করা হারাম। এমনিভাবে যেসব মুসলিম বাহ্যিক অবস্থার দিক দিয়ে সৎকর্মপরায়ণ দৃষ্টিগোচর হয়, তাদের সম্পর্কে প্রমাণ ব্যতিরেকে কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। রসুল সা: বলেন, তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, ধারণা মিথ্যা কথার নামান্তর। বুখারী মুসলিম) ভালো লোকের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা বৈধ নয়। তবে বাহ্যত: মন্দ লোক পাপাচারীর প্রতি মন্দ ধারণা করা অবৈধ নয়। (কুরতুবী) যে ব্যক্তির কটু বাক্যের ভয়ে লোকজন তার সাথে উঠাবসা পরিত্যাগ করে কিয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহ তা'আলার কাছে জঘন্যতম ব্যক্তি।” (বুখারী ও মুসলিম)

মু'মিনদের ব্যাপারে অনাকাংঙ্গিত কোন সংবাদ শুনলেই খারাপ ধারণা করা যাবে না, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হবে। যেমন আয়েশা (রাঃ) এর ব্যাপারে মুনাফিকরা যখন খারাপ কথা প্রচার শুরু করল তখন কতক মু'মিনও তা বিশ্বাস করে খারাপ ধারণা করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তাদের তিরস্কার করে বললেন, যখন মু'মিন এমন সংবাদ শুনল তখন নিজেদের ব্যাপারে কেন ভাল ধারণা করেনি? রাসূল সা: বলেন, তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা ধারণা করা বড় মিথ্যা। হাদীসে বলা হয়েছে, কেউ বিনা অনুমতিতে কারোর ঘরে উঁকি মেরে দেখলে তার চোখ ফুটা করে দাও। (সহীহ বুখারী) অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা শোনার জন্য কান খাড়া করে অথচ তারা তা অপছন্দ করে, কিয়ামতের দিন তার দুই কানে গলিত শিশা ঢালা হবে। (সহীহ বুখারী)

গীবত করা ও শ্রবণ করা সমান অপরাধ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব, কলহ, বিবাদ ও ফাসাদ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে গীবত করার প্রচলন বেশি। তারা দুজন একত্রিত হলে তৃতীয় আরেক জনের গীবত না করে ওঠেই না। রাসূল সা: বলেন, مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ যে ব্যক্তি আমার কাছে তার মুখের মধ্যবর্তী স্থান ও দু'রানের মধ্যবর্তী স্থান সংরক্ষণের দায়িত্ব নেবে আমি তার জান্নাতের যাওয়ার দায়িত্ব নেব। (সহীহ বুখারী)

হযরত নু'মান রা: হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (স;) বলেছেন, তিনটি অভ্যাস আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই থাকবে। (এক) লক্ষণ দেখে শুভাশুভ নির্ণয় করা, (দুই) হিংসা করা এবং (তিন) কু-ধারণা পোষণ করা। একটি লোক জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (স:) ! এর সংশোধন কিরূপে হতে পারে? উত্তরে তিনি বলেন, হিংসা করলে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, কু-ধারণা পোষণ করলে তা ছেড়ে দিবে এবং লক্ষণ দেখে যখন শুভাশুভ নির্ণয় করবে তখন স্বীয় কাজ হতে বিরত থাকবে না, বরং সেই কাজ পুরো করবে।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আমাদের কারো গোপন বিষয় সন্ধান করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি আমাদের সামনে কারো কোন বিষয় প্রকাশ হয়ে পড়ে তবে আমরা তাকে ঐ জন্যে পাকড়াও করতে পারি। রাসূল (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন করে রাখে সে এতো বেশী পুণ্য লাভ করে যে, সে যেন কোন জীবন্ত প্রোথিতকৃতা মেয়েকে বাচিয়ে নিলো।

বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসূল (সঃ) বলেছিলেন, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের মান-মর্যাদা তোমাদের উপর এমনই পবিত্র যেমন পবিত্র তোমাদের এই দিনটি, এই মাসটি ও এই শহরটি।'  হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের উপর প্রত্যেক মুসলমানের মাল, মান-সম্মান ও রক্ত হারাম

মানুষের মন্দ হওয়ার জন্যে এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অন্য মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করবে।  রাসূল (সঃ) বলেছেন, হে ঐ লোকের দল! যারা শুধু মুখে ঈমান এনেছো, কিন্তু অন্তরে ঈমান রাখেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করা ছেড়ে দাও, তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধান করো না। যদি তোমরা তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধান কর এবং ওগুলোর পিছনে লেগে থাকে, তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন, এমন কি তোমরা তোমাদের পরিবার পরিজনদের কাছেও মন্দ লোক বলে বিবেচিত হবে এবং লজ্জিত হবে। আবু দাউদের হাদিস

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা একে অপরের সাথে মতবিরোধ করো না, একে অপরের সাথে মেলামেশা পরিত্যাগ করো না, একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো, বরং আল্লাহর বান্দারা সবাই মিলে ভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলমানের জন্যে এটা বৈধ নয় যে, সে তার মুসলমান ভাইএর সাথে তিন দিনের বেশী কথাবার্তা বলা ও মেলামেশা করা পরিত্যাগ করে। (এ হাদীসটি মুসলিম, তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।

কখন গীবত বৈধ

জুলুমের প্রতিকার করতে পারে এমন ব্যক্তির কাছে জুলুমের অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার অধিকার মজলুমের আছে। ফকীহ ও হাদীস বিশারদগণ এ বিধি প্রণয়ন করেছেন যে, গীবত কেবল তখনই বৈধ যখন শরীয়াতের দৃষ্টিতে সংগত কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তার প্রয়োজন পড়ে এবং ঐ প্রয়োজন গীবত ছাড়া পূরণ হতে পারে না। সুতরাং এ বিধির ওপর ভিত্তি করে আলেমগণ নিম্নরূপ গীবতকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন:
1. যে ব্যক্তি জুলুমের প্রতিকারের জন্য কিছু করতে পারে বলে আশা করা যায় এমন ব্যক্তির কাছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের ফরিয়াদ।
2. সংশোধনের উদ্দেশ্যে এমন ব্যক্তিদের কাছে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অপকর্মের কথা বলা যারা তার প্রতিকার করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
3. ফতোয়া চাওয়ার উদ্দেশ্যে কোন মুফতির কাছে প্রকৃত ঘটনা বর্ণনার সময় যদি কোন ব্যক্তির ভ্রান্ত কাজ-কর্মের উল্লেখ করা প্রয়োজন হয়।
4. মানুষকে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের অপকর্মের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য সাবধান করে দেয়া। যেমন : হাদীস বর্ণনাকারী, সাক্ষী এবং গ্রন্থ প্রণেতাদের দুর্বলতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্ণনা করা সর্বসম্মত মতে শুধু জায়েযই নয়, বরং ওয়াজিব। কেননা, এ ছাড়া শরীয়াতকে ভুল রেওয়ায়াতের প্রচারণা ও বিস্তার থেকে, আদালতসমূহকে বেইনসাফী থেকে এবং জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদেরকে গোমরাহী থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। অথবা উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোন ব্যক্তি কারো সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী কিংবা কারো বাড়ীর পাশে বাড়ী খরিদ করতে চায় অথবা কারো সাথে অংশীদারী কারবার করতে চায় অথবা কারো কাছে আমানত রাখতে চায় সে আপনার কাছে পরামর্শ চাইলে তাকে সে ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি ও ভাল-মন্দ সম্পর্কে অবহিত করা আপনার জন্য ওয়াজিব যাতে না জানার কারণে সে প্রতারিত না হয়।
5. যেসব লোক গোনাহ ও পাপকার্যের বিস্তার ঘটাচ্ছে অথবা বিদআত ও গোমরাহীর প্রচার চালাচ্ছে অথবা আল্লাহর বান্দাদেরকে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড ও জুলুম-নির্যাতনের মধ্যে নিক্ষেপ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সোচ্চার হওয়া এবং তাদের দুষ্কর্ম ও অপকীর্তির সমালোচনা করা।

শিক্ষনীয় বিষয়

গীবতকারী ব্যক্তি যখনই উপলব্ধি করবে যে, সে এ গোনাহ করছে অথবা করে ফেলেছে তখন তার প্রথম কর্তব্য হলো আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং ঐ হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। এরপর তার ওপর দ্বিতীয় যে কর্তব্য বর্তায় তা হচ্ছে, যতদূর সম্ভব এ ধারণা করা থেকে বিরত থাকবে। অতএব আমাদের সকলের উচিত এসব ঘৃণ্য আচরণ পরিহার করে সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধশালী পরিবার ও সমাজ গঠন করা।

তথ্যসূত্র :
1. তাফসীর তাফহীমুল কুরআন
2. তাফসীর আহসানুল বয়ান
3. তাফসীর আবু বকর জাকারিয়া
4. তাফসীর ফাতহুল মাজীদ
5. তাফসীর ইবনে কাছির

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here