বিয়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিয়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা

পরিবার
পরিবার Family রাষ্ট্রের প্রথমস্তর। সামগ্রিক জীবনের প্রথম ভিত্তি প্রস্তুর First foundation stone। পরিবারেরই বিকশিত রূপ রাষ্ট্রে। স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, মাতা-পিতা, ভাই-বোন প্রভৃতি একান্নভূক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠে পরিবার। বৃহদায়তন পরিবার কিংবা বহু সংখ্যক পরিবারের সমন্বিতরূপ হচ্ছে সমাজ। (পরিবার ও পারিবারিক জীনব, মাওলানা আবদুর রহিম)
 
পরিবার সমাজের মূল। রাষ্ট্র সংবদ্ধ সমাজের ফসল। পরিবার থেকে মানুষের সামাজিক জীবনযাপন  ‍শুরু হয়। সামাজের সুষ্ঠুতা নির্ভর করে পারিবারের সুষ্ঠুতার উপর। সুষ্ঠু পারিবারিক জীবনের সুষ্ঠতা একটি সুষ্ঠ রাষ্ট্রের প্রতীক। পরিবারকে বাদ দিয়ে যেমন সমাজের কল্পনা করা যায় না, তেমনি সমাজ ছাড়া রাষ্ট্রও অচিন্তনীয়। (পরিবার ও পারিবারিক জীনব, মাওলানা আবদুর রহিম)

প্রাচীনকাল থেকেই পরিবার দুটো ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়ে আসছে। একটি হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি নিহিত স্বভাবজাত প্রবণতা। এই প্রবণতার কারণে মানুষ চিরকাল পরিবার গঠন করতে ও পারিবারিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। আর দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে সমসাময়িক কালের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।3

পরিবারকে ভিত্তি না করে, ভিত্তি হিসাবে পরিবারকে গড়ে না তুলে, সত্যিকারভাবে স্থায়ী কোন সভ্যতা কিংবা মজবুত কোন রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সুস্থ্য চিন্তার অধিকারী প্রত্যেকটি মানুষের নিকট একথা অত্যন্ত প্রবল। পুরুষ ও নারীর বিবাহিত জীবন দ্বারাই শুরু হয় একটি পরিবারের ভিত্তি । নারী পুরুষের বিয়ে এবং দাম্পত্য জীবন প্রকৃতির স্বভাব সম্মত বিধান। এ এক চিরন্তন ও শাশ্বত ব্যবস্থা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ  'প্রত্যেকটি জিনিসকেই আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। (সুরা জারিয়াত, আয়াত 49)

দাম্পত্য প্রশান্তির মডেল
সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, “যাতে করে পুরুষ তার কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করে।” অর্থাৎ দাম্পত্য জীবনের প্রশান্তি ও তৃপ্তিই তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য এই দাম্পত্য শাস্তির দাবি অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদুর প্রসারী মানুষের শাস্তি ও তৃপ্তি কেড়ে নেয়া মামুলী ব্যাপার নয়। হয়রত আবু হুরায়রা (রা) নবী করিম (সা:) কে জিজ্ঞাসা করেন যে ভালো স্ত্রী কে ? রাসুল (সা:) জবাব দিলেন: “সেই স্ত্রীই ভাল, যার প্রতি দৃষ্টি দিলে সে (অর্থাৎ তার সমগ্র সত্তা) স্বামীকে সন্তুষ্ট করে, যখন স্বামী তাকে কিছু বলে, সে তা মেনে নেয় এবং নিজের ব্যাপারে বা স্বামীর সম্পদ সম্পর্কে এমন কোন বিরূপ আচরণ করে না, যা স্বামী অপছন্দ করে। একজন স্ত্রীর নারীত্বের এ হচ্ছে একটা সুস্পষ্ট মানদন্ড ও মাপকাঠি।

আল্লাহ বলেন, سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ ‘মহান পবিত্র সেই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি লোকের সমস্ত জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, উদ্ভিদ ও মানব জাতির মধ্যে থেকে এবং এমন সব সৃষ্টি থেকে যার সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানে না।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত 36) আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে ‘বিয়ে’ ও সম্মিলিত জীবনযাপন, এবং তার ফলে তৃতীয় ফসল উৎপাদন করার ব্যবস্থা কেবল মানুষ, জীব-জন্তু, উদ্ভিদ, গাছ-পালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এ হচ্ছে গোটা বিশ্ব প্রকৃতির অন্তর্নিহিত এক সুক্ষ্ম ও ব্যাপক ব্যবস্থা। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানব জাতির প্রকৃতির সাথে পূর্ণাঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ ধর্ম ইসলাম। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি সমাজ সভ্যতায় বিয়ের রীতি অনুসৃত হয়েছে। বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। সমাজ জীবনে মানব মানবীয় সুখ শান্তি মানসিক তৃপ্তি লাভ আবেগ অনুভূতি কামনা বাসনার প্রেম প্রীতির চরম ফলাফল এবঙ মানব বংশের স্থায়ীত্ব ও সভ্যতা বিয়ের উপরই নির্ভরশীল।

বংশ রক্ষার জন্য নারী পুরুষের দৈহিক সম্মিলন অপরিহার্য। আর নারী পুরুষের পারস্পরিক মিলন সম্ভোগের জন্য বিবাহ হচ্ছে একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও শালীন পদ্ধতি। এর মাধ্যমে রয়েছে মানুষের অফুরন্ত যৌন কামনা নিবৃত্তির বৈধ গ্যারান্টি। একারণেই যে কোন মানবীয় সভ্যতার উন্নতর পর্যায়ে বিবাহকেই যৌন সম্পর্ক নির্ণয়ের একমাত্র বৈধ মাধ্যম মনে করা হয়।

বিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার বিধান
বিবাহ একদিকে সামাজিক বন্ধন অন্যদিকে একটি ইবাদতও বটে। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারী ও পুরুষের মিলন তখনইবিশুদ্ধ ও সঙ্গত হতে পারে, যখন এ মিলনের সঙ্গে সামাজিক দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। এর ফলে একটি নতুন পরিবার উদ্ভব ঘটবে। আর পরিবারকে মাতৃস্বরূপিণী কোষ (Mother cell) বলা হয়ে থাকে। সুতরাং পরিবার পারিবারিক জীবন এবং মানব সভ্যতার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিয়ে একটি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا ۗ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا ‘আর তিনিই আল্লাহ, যিনি পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাদের মধ্যে বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিয়েছেন। (সুরা ফোরকান, আয়াত 54) جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا তিনি তোমাদের স্বজাতীয়দের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য জুটি বানিয়েছেন। (সুরা শুরা, আয়াত 11) ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ।’ هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ‘তিনিই আল্লাহ তিনিই তোমাদিগককে একজন মাত্র ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তারই স্বজাতী থেকে তার জুড়ি বানিয়েছেন। যেন তার কাছে পরম শান্তি ও স্থিতি লাভ করতে পার। (সুরা আরাফ, আয়াত 189) أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ‘স্ত্রীরা তোমাদের পোষাক স্বরূপ, আর তোমরা ভূষণ হচ্ছ তাদের জন্য।’ (সুরা বাকারা, আয়াত 187) “তোমাদের জন্যে তোমাদের স্বজাতীয়দের মধ্য থেকে জুড়ি সৃষ্টি করেছেন, যেন তারা তাদের কাছে পরম শান্তি, স্বস্তি লাভ করতে পারে, এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যে গভীরবন্ধুত্ব ও দয়া অনুকম্পা ও জাগিয়ে দিয়েছে। একটি সুখময় পরিবার ও সমাজ গড়ার লক্ষে স্বামী নির্বাচনে ইসলাম স্ত্রীকে দিয়েছে অধিকার। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ ۖ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ ۚ أُولَـٰئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ ۖ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য, দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য। (সুরা নুর, আয়াত 26বিববাহ অর্থ নর নারীর সম্মিলন। বিবাহ আরবী শব্দ 'নিকাহ' এর অভিধানিক অর্থ হল যৌন সহবাস। অর্থাৎ বিবাহ বলতে এমন এক চুক্তি যার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হল জনন প্রক্রিয়া ও সন্তান-সন্তুতি, বিধি সিদ্ধকরণ যা সমাজ, ধর্ম ও সংস্কৃতি দ্বার স্বীকৃত।

নারীর বিয়ে ও সন্তান
উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় এখনকার মেয়েরা বিয়ে বিলম্বিত করে থাকে। এখন তারা সতিত্ব নিয়ে উপহাস করে। এটা প্রাচীন যুগের কোন অসভ্য প্রথা। এখনকার মেয়েরা যৌনকে উপভোগ করে, এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তারা নৃত্যশালায়, নাইটক্লাবে ও পানশানায় যখন তখন ডুকে পড়ে এবং তৃপ্তিকর যৌন আনন্দ উপভোগ করোর জন্য নবিন তাগড়া যুবকদের সাথে গাঁটছড়া বার্ধে। এরা নিজেদেরকে বেপরোয়া পরিবেশে ঠেলে দেয়, এভাবে তারা অবাধে প্রাঘ বিবাহ যৌনতায় লিপ্ত হয়।

অথচ আল্লাহ তায়ালা বিয়ের মাধ্যমে যৌন মিলনকে বৈধ করে দিয়েছেন। সকল সৃষ্টিতেই নর নারীর (Male sex and Female sex)  আসঙ্গ লিপ্সা আছে। কিন্তু প্রাণীকুল তো আর আশরাফুল মাখলুকাত নয়। কাজেই কাজেই তাদের কামবৃত্তি পুরণের ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্ন আসে না। প্রকৃতিগত লিপ্সার তাড়নায় হিংসা- প্রতিহিংসা, বিবাদ-বিসম্বাদ প্রভূতির ভিতর দিয়ে তারা আপন ক্ষুদা নিবারণ করে। কিন্তু মানুষ তার কাজ কর্মে এতটুকু বিশৃঙ্খলতা, লজ্জাহীনতা আল্লাহ পছন্দ করেন না। উপযুক্ত বয়সের বিবাহ চরিত্রের সংরক্ষক। উপযুক্ত বয়সে বিবাহ না করলে উত্তেজনা বসবর্তী হয়ে তার মন সকল সময় ঐ একই বিষয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাক। ফলে তার কোন কাজে  মন বসে না।

অবিবাহিত ব্যাক্তি উত্তেজনার তাড়নায় অনেক সময় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয়। ইহাতে তার পার্থিব লাঞ্চনা ও বেইজ্জতী হয়। দোযখের খোরাক তো হয়ই সমাজে শান্তি, স্থিশীলতা ও মানব সভ্যতার বিনষ্ট সাধন করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া মানুষ পরস্পরের প্রতি যতখানি মহব্বত প্রবণ হয় অত আর কিছুতেই হয় না। (ইবনে মাজাহ)

রাসুল সা: আরও বলেন, দুনিয়ার সবই সম্পদ। তবে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হল নারী, যে পুরুষের স্ত্রী নাই, সে পুরুষের নিশ্চয় নি:স্ব মিসকিন। আর যে নারীর স্বামী নাই সে নিশ্চয় নি:স্বা মিসকিনাহ। (তরাগীব)

বান্দাহ বিবাহ করলে তার অর্ধেক ধর্ম পূর্ণ হয়, বাকী অর্ধেকের জন্য আল্লাহকে ভয় করা চাই। (বায়হাকী) পুরুষের শান্তির জন্য নারী সৃষ্টি। আর শান্তিলাভ অর্থ মুক্তি লাভ। একজন পুরুষ যখন স্ত্রীর অভাবকে জয় করতে পারে কেবল তখনই স্ত্রীর মধ্যে সৎগুণ সৃষ্টি হয় এবং স্ত্রীর মধ্যে সৎগুণ সৃষ্টির ফলেই গর্ভজাত সন্তান সৎপ্রবৃত্তি লাভ করে। আর সৎপ্রবৃত্তি দ্বারাই গড়ে উঠে মানব সভ্যতা। বিবাহের মাধ্যমে যে মানব সন্তান দুনিয়ায় আসে তা সমাজ ও সভ্যতার জন্য হয় কল্যাণকর। অন্যদিকে অবৈধ মিলনের মাধ্যমে যে মানব সন্তান দুনিয়ায় আসে তা খাঁটি হারামযাদা হিসেবে সমাজ ও সভ্যতার বিপর্যয় ঘটায়।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পরিবার হচ্ছে একটি ছোট সমাজ সংস্থা (Small community)। কেননা বৃহত্তর সমাজ সংস্থার পৌরহিত্য সাধারণ জীবনের সাথে মানুষের সম্পর্ক স্থাপন করে দেয় এই পরিবার। সেই সাথে এই কথাও মনে রাখতে হবে যে, বিবাহ হচ্ছে একটি যৌন সংস্থা (Association of sex) ন প্রজননের একটি স্থায়ী কারখানা। আর তা সংস্থাপিত রয়েছে বিয়ে সম্বন্ধের (Contract of Marriage) উপর। তার অর্থ পরিবার একই সঙ্গে একটি সম্প্রদায় (community) এবং একটি মহাসম্মিলন (Association)।

এ্যারিস্টটলের মতে, পরিবার একটি অতি স্বাভাবিক মানবীয় সংস্থা। মানুষের মৌলিক প্রযোজনাবলী পুরণের জন্যে তার প্রয়োজন একজন সহকর্মীর, তাদের মিলন ও সাহায্যকারীর। আর স্ত্রী সে হতে পারে তার সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রমান সহকারী, সাহার্যকারী তা স্বীকরা না করে উপায় নেই। সুতরাং পরিবার হচ্ছে পথম স্বাভাবিক সমাজ সম্মিলন।

মানুষ স্বভাবের দিক দিয়েই সামাজিক জীব এবং নর এবং নারী নিজ নিজ প্রজাতির গুণের কারণে একত্রিক ও সম্মিলিত জীবনযাপনে বাধ্য। এ কারণেই তাদের মিলন অস্থায়ীও যেমন নয়, তেমনি নিচক কার্যকারণ ঘটিতও নয়, বরং এ হচ্ছে  একান্তই স্থায়ী ও স্বাভাবিক ব্যবস্থা। এ জন্যে পরিবারকে বলা হয় A moral friendship rejoicing in each other's goodness। পরস্পরের কল্যাণকামনা পূর্ণ নৈতিক বন্ধুত্ব।

বিজ্ঞান বলে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মিলনে ব্রেইনি চাপ ও মস্তিষ্কের খিচুনী থেকে মুক্তি দেয় রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে উন্নত থেকে উন্নততর করে এবং শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে পর নারীর সাথে মিলনকালে মস্তিষ্কে পাপানুৰোধ এবং চারিত্রিক অপরাধবোধ থাকার ফলে মিলন দ্বারা ফায়িদার হলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে বেশি। যা বর্তমান দুনিয়ায় HIV, AIDS এর মত মহামারীতে সয়লাভ।

বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান বলে যদি সুস্থ্য থাকতে চান, তাহলে বিবাহ করুণ। যে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সা: আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে বলেছেন। তাই আজকের বিজ্ঞান আবার একই কথা বলছে। বিজ্ঞানীদের রির্চাসে জানা যায় বিবাহিত লোকদের নেশার প্রতি আগ্রহ কম। তারা নিজেদের খাদ্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখে। এক সঙ্গী সকল ব্যাপারেই অপর সঙ্গীকে সহায়তা করে। উনিশ হাজার লোকের উপর জরিপ চালানোর পর দেখা গেছে যে এ্যাজমা থেকে শুরু করে মাথা ব্যথা পর্যন্ত প্রায় সকল কুমার-কুমারীদের তুলনায় বিবাহিতরা কম আক্রান্ত হয়। (বিবাহের কল্যাণময় বিধান, মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন, মাসিক আদর্শ নারী, ৯ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ফেব্রুয়ারী ২০০৩)

বিজ্ঞানের এ ঘোষণা দ্বারা বুঝা যায় যে মাতা পিতা যদি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে মানব সন্তানও রোগাক্রন্ত হয়। যার ফলে সমাজ ও সভ্যতায় এক বিরাট হুমকি সৃষ্টি হয় অন্যদিকে সন্তান যদি সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত হয় তা হলে সমাজ ও সভ্যতায় গড়ে ওঠে উৎকর্ষতা। চরিত্রের পরিত্রার প্রতি ইসলাম যেরূপর জোর দিয়েছে দুনিয়ার অন্য কোন ধর্ম সেইরূপ জোর দিয়েছে বলিয়া আমাদের জানা নেই।

স্বামীর চরিত্র রক্ষার দায়িত্ব
স্বামীর চরিত্র রক্ষা করা স্ত্রীর স্বাভাবিক ও প্রকৃতি প্রদত্ত দায়িত্ব। নারী যদি-এ দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য দেখায়, তবে স্বামীর পদস্খলনে তাকেও দায়ী করা হবে। এর শান্তি আখেরাতে যা হবে, তাতো হবেই। দুনিয়ায় স্বামী-স্ত্রীর শান্তি ও আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। যা আমাদের কারো কাম্য নয়। দাম্পত্য জীবনের সাফল্যের জন্য নারীর ভূমিকাটা আসল। তা হলো নারীত্বের পরিপূর্ণও সর্বাত্বক অভিব্যক্তি। নারীত্বের এই মূল উপাদান, গোটা দাম্পত্য জীবনের আকর্ষণ নির্ভরশীল। নারীত্ব নামক এই উপদানটা যত জাগ্রত, সচেতন ও সক্রিয় হবে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ততই মজবুত ও মধুর থাকবে এবং দাম্পত্য পরিবেশ ততসুস্থ, সুন্দর ও সুখময় থাকবে। আর এই উপাদান যতই দুর্বল, স্তিমিত ও নিস্তেজ হয় স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন ও ততই ঢিলে হয়ে যায়, ঘরোয়া পরিবেশ ও ততই নিরস ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, ফলে দাম্পত্য জীবনে ঘটে নানা অঘটন।
রাসূল সা: বলেছেন, “হে যুবক সম্প্রদায় যাহারা খরচবরদারী করিতে পার তাহারা বিবাহ কর। কেননা বিবাহ চক্ষু যৌনাঙ্গের রক্ষাকারী। আর যাহারা খরচবরদারী করিতে অক্ষম হয় তবে রোযা রাখ, কেননা রোযায় কাম প্রভৃতি দমি হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا ۖ وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ ۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرً ‘হে মানব মন্ডলী তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একটি ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তাতে তদ্বীয় সহধর্মীনী সৃষ্টি করেছেন, এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। এবং সেই আল্লাহকে ভয় কর যার নামের দোহাই দিয়ে তোমারা একে অপরকে ভাগেদা করা, এবং আত্মীয়তাকে ও ভয় করা নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের তত্ত্বাবধানকারী (সুরা নিসা, আয়াত ১৯)

এই আয়াতে যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে তাদের ছাড়া বহু পুরুষ ও নারী আদম আ: ও হাওয়া আ: এর বংশ থেকে আল্লাহ পাক ছড়িয়ে দিয়েছেন। পুরুষের আধিক্য উল্লেখ করার পর নারীদের আধিক্য উল্লেখ করা নিষ্প্রেয়োজন। কেননা যুক্তি ও জ্ঞানের দাবী হচ্ছে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হবে। আর এ কারণেই আল্লাহ তা'য়ালা একজন পুরুষের জন্য চার জন্য নারী বেধ করেছেন। (তাফসীরে মাযহারী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৬৯০)

পারিবারিক জীবনের বিপর্যয়
পারিবারিক জীবনের বিপর্যয়টা হলো সবচেয়ে উদ্বেগজনক। একটিা সভ্যতা যখন সামগ্রিকভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখন এর কুফল দেখা না দিয়ে পারে না। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামষ্টিক পরিস্থিতি ও সুস্থ্য সুন্দরভাবে মানবিক জীবনযাপনে প্রভাবিত করছে সেটাও পারিবারিক জীবনের বিপর্যয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী।

এর ফলে দাম্পত্য জীবন তালাকের পর্যায়ে গড়ায়। বস্তুবাদী সভ্যতায় নারীকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাতে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। উপরোক্ত বক্তব্য গুলো এই কারণে উদ্ভুত হয়েছে যে আমাদের দেশে যারা নারী প্রগতির আন্দোলন চালাচ্ছেন এবং যারা নারীকে ঘর থেকে বের করে আনার কোশেষ করছে, তারা পাশ্চাত্য প্রেমে অন্ধ হয়ে আছে। অথচ পাশ্চাত্যের কী শোচনীয় পরিণতি ভোগ করছে তা তারা ভেবে দেখছেন না। গবেষক উইল ডুরান্ট (Will Durant)এর বলেন, নারীকে শিল্প কারখানায় নিয়োগের স্বাভাবিক পরিণতি দাঁড়ায় এই যে, পারিবারিক জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।

নারীর সম্মতি ব্যতিত বিবাহ হতে পারে না এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু কেবল নারীর সম্মতিকে অগ্রগন্য করে বিয়ে দেয়া সমীচিন কিনা এ বিষয়ে বিশিষ্ট গ্রন্থকার মাওলানা আব্দুল খালেক বলেন, 'নারীদের স্বভাব, গতিবিধি ও বুদ্ধিমত্তা পর্যালোচনা করলে নিঃসন্দেহে বলা যায় তারা সাধারণত বুদ্ধিতে পরিপক্ক থাকে না, চিন্তাশক্তিও তাদের থাকে নিতান্তই দুর্বল এবং তারা প্রায় আবেগ ও সাময়িক মোহে পরিচালিত হয়। আবেগের বশীভূত হলে বংশীয় মর্যাদা রক্ষা ও স্বাভাবিক মঙ্গলা- মঙ্গলের, চিন্তা-ভাবনা খুব কমই করে থাকে।' তারা তোষামোদে ও প্রতারণা প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে পড়েছে এমন দৃষ্টান্ত মোটেও বিরল নয়। সুতরাং নিজেদের পূর্ণ অধিকার থাকা সত্ত্বেও বিবাহের ন্যায় জীবনের পরম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে অভিভাবকের যুক্তিসংগত মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে চলা মেয়েদের উচিত।(মাসিক মদিনা, জুন ২০০২, পৃ. ৫০) 21

বিবাহের কল্যাণকর দিক

বিবাহের কল্যাণকর দিক হল বিবাহের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হয়। মানব প্রেম প্রতিষ্ঠা হয়, সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা হয়। বিবাহের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় আত্মীয়তার সম্পর্ক, বিবাহের মাধ্যমে দূরিভূত হয় যেনা-ব্যভিচার, অবৈধ প্রেম, পরনারী গামিতা ইত্যাদি। বিবাহের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠা হয় ভরসাম্যপূণ্য জীবন ব্যবস্থা গড়ে উঠে সভ্যতা।

বিপর্যয়

নারী যদি প্রাত্যহিক জীবনে প্রিয়জনদের সাথে মেলামেশা ও লেনদেন করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার আদায় করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি পালন করার মাধ্যমে ইসলামী জীবন যাপনের দৃষ্টান্ত অনুস্বরণ করে তাহলে ও শিখবে। নারী যদি বাড়ীতে নামাজ পড়ে শিশুদের সামনে, কোরআন পড়ে কর্ণগোচর করে তাহলে শিখবে এতে তারা বড় হয়ে সমাজ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করবে।

কোন নারী যদি এমন একজন মানুষ উপহার দিত যে পবিত্র ও নির্মল নীতিমালার ওপর দৃঢ় ঈমান ও মানব সেবায় নিঃস্বার্থ মনে সক্রিয় থাকতে পারে, উন্নতর নৈতিক মানের ওপর নিজের স্বভাব ও করতে পারে, তাহলে সে লক্ষ টাকা বেতনে কোনো সরকারী বা বেসরকারী চাকুরী করে দেশের শক্তি ও পারে। এ ধরনের একজন নাগরিক গোটা দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারে এবং তার নৈতিক ও আমি প্রবৃদ্ধি ঘটাতে পারে। নারীর করণীয় এই কাজটা একজন নারী সম্পূর্ণ একাকিনী যত সুস্থ ও সুন্দরভাবে সমাধা করতে পারে, দুনিয়ার লক্ষ লক্ষ পুরুষ মিলিত হয়েও ততটা সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে না, নারী সমাজ যে গড়ার দায়িত্বকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করতে শুরু করেছে। সে দিন থেকে রাস্তা ঘাটে প্রকাশ্য দুর্বৃত্তপনা, পার্কে পার্কে  প্রেম প্রণয়, অফিস আদালতে দুর্নীতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানে নৈরাজ্য এবং কল কারখানায় দাঙ্গা হাঙ্গামার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

একাধিক বিয়ের সমস্যা 

মানবীয় সমাজ ও সভ্যতা অত্যন্ত জটিল ও পেঁচালো ব্যবস্থা। এর প্রত্যেকটা দিক ও বিভাগের বহুসংখ্যক দম্পতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সূক্ষ্ম সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রকৃতির বিভন্ন দাবী জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজন এবং পুরুষের চাহিদাকে জীবনের প্রত্যেক বিভাগ ও অঙ্গনে পূরণ করা হয়। সমাজ ব্যবস্থার ইসলামী নীতি ও দর্শনে এখানেই নিহিত। ইসলামের সুতীক্ষ্মদৃষ্টি সীমাবদ্ধ বিষয়গুলোর মধ্যে হারিয়ে যায় না। ইসলামের দাম্পত্য জীবন পদ্ধতি যে পূর্ণাঙ্গ ভারসাম্যের প্রতীক।

সুরতরাং আমরা একথা নির্দিধায় বলতে পারি সামাজিক, নৈতিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে বিয়ের কল্যাণকর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হয়। মানব প্রেম প্রতিষ্ঠা হয়, সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা হয়। বিবাহের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় আত্মীয়তার সম্পর্ক, বিবাহের মাধ্যমে দূরিভূত হয় যেনা-ব্যভিচার, অবৈধ প্রেম, পরনারী গামিতা ইত্যাদি। বিবাহের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠা হয় ভরসাম্যপূণ্য জীবন ব্যবস্থা গড়ে উঠে সভ্যতা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here