ন্যায় পাল শব্দটি সুইডিশ শব্দ OMBUDSMAN যার বাংলা ন্যায় পাল। ন্যায় পাল এর আবিধানিক অর্থ হচ্ছে দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের কবল থেকে নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য যে ব্যক্তি অভিযোগ গ্রহণকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয় তাকে ন্যায় পাল বলে। যতটুকু জানা যায় ন্যায় পাল সর্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় 1809 সালে সুইডেনে। তারপর ফিনল্যান্ডে 1919 সালে, ডেনমার্কে 1955 সালে, নিউজিল্যান্ডে 1961 সালে, নরওয়েতে 1993 সালে গ্রেট বিটেনে 1967 সালে, অস্ট্রেলিয়ায় 1973 সালে।
বাংলাদেশের সংবিধানে ন্যায়পালের পদমর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক।1980 সালে ন্যায়পাল ‘অধ্যাদেশ’কেমন হবে এবং কোন ধরনের ব্যক্তি ন্যায়পাল নিযুক্ত হবেন সেই ব্যাপারে বলা হয়েছে, তিনি প্রবীন আইনজীবি, সাবেক বিচারপতি অথবা অবসরপ্রাপ্ত এমন ব্যক্তি যিনি সকল মহলের আস্থা ও শ্রদ্ধাভাজন সমাদৃত ও নন্দিত ব্যক্তি এবং তিনি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কার্য ব্যবস্থার যথার্থতা নির্ণয়ের ও সংরক্ষনের অন্যতম নিয়ামক।
বর্তমান বিশ্বে প্রায় 75টির বেশী দেশে এ ন্যায় পাল নিয়োগ করা হয়েছে। এটা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে নিয়োগ দেওয়ায় হয়েছে। কোন কোন দেশে সংবিধানের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ন্যায় পাল প্রতিষ্ঠার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মানবাধিকার লংঘন, নানাবীদ দুর্নীতি অগনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পরিহার করে সুশাসন ও আইনের কার্যকারিতা নিশ্চত করতে ন্যায় পালের প্রতিষ্ঠা। সারা বিশ্বে ন্যায়পাল এর ধারণা ছড়িয়ে দিতে 1978 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক OMBUDSMAN সংস্থা যা সংক্ষেপে (IOI) আই ও আই বলা হয়। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় পালের অফিস সমুহের প্রতিনিধিত্বকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি যাতে বিশ্বব্যাপী আরও বিকাশিত হতে পারে সে জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি স্কলারশিপ, ফেলোশিপ বৃত্তিসহ আরও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সাহয্য করে থাকে। (IOI ) আই ও আই সারা বিশ্বকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে কাজ করে থাকে।
তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। এখানে দুর্নীতি শিরায় শিরায় প্রবেশ আছে। যার বাস্তব প্রমাণ ট্রান্সফারেন্সি উন্টার ন্যাশনাল কর্তৃক দুর্নীতি এক নম্বর বাংলাদেশকে চিহ্নিত করণ। এমতাবস্থায় বিভিন্ন অভিযোগ গঠন কারী সংস্থা সমুহের নিরপেক্ষতা নিয়ে দেখা দিয়েছে ন্যায় পাল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকপত্রিকাগুলো যেমন, প্রথম আলো, ইত্তেফাক, সংগ্রাম, ইনকিলাব, নয়াদিগনন্ত, যুগান্তর, মানবজমিন, ডেইলি স্টার এবং ইকোনোমিক রির্পোটাস ফোরামসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা মনে করে বাংলাদেশের সব সমস্যার মুলে হচ্ছে সুশাসন ব্যবস্থার অভাব। এর জন্য প্রয়োজন সুস্থ্য রাজনৈতিক পরিবেশ। বাংলাদেশের প্রশাসন যন্ত্রের বর্তমান যে অবস্থায় ন্যায়পাল আবশ্যকতার ব্যাপারে সবাই একমত হবেন। দেশে দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার, স্বজনপ্রিতি, হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষনের ভুমিকায় পুলিশ, বিশ্ব বিদ্যালয়ে ধর্ষনের সেঞ্চুরী পালন। এ সমস্ত হাজার ও খবর দৈনিক পত্রিকা গুলি চাপায়। তাছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তো আছেই।
১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসলে তখন ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য অফিস অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারি বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল। তার পর আইন মন্ত্রণালয় হয়ে ফাইলটি জাতীয় সংসদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। দুভার্গজনক ভাবে ফাইটির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিগত 53 বছরে আর কোন পদক্ষেপ বা উদ্যোগ কোন সরকার নেয়নি।
তাই সরকারের নিকট অনুরোধ করিছ গণতন্ত্রের বিকাশ, প্রশাসনের জবাব দিহিতা নিশ্চিত করার নিমিত্তে আগামী সংসদে ন্যায়পাল নিয়োগ প্রতিষ্ঠা করে জনগনের অধিকার ফিরিয়ে দিন। আমরা আশা করি সরকারের এই সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশবাসীকে আগামী দিনে দেশের উন্নয়নের অন্যতম মাইল ফলক হিসাবে কাজ করবে। এটি গণতন্ত্রের প্রধান নিয়ামক ও বটে। এ জাতী বার বার আশায় বুক বেঁধেছে এ দেশটি একটি সুখি সমৃদ্ধশালী একটি আত্নপ্রত্যয়ী সুশৃঙখল জাতি হবে। এখানে থাকবে না কোন অভাব, অনটন। নিজের দেশের সন্তানদের রক্ষা করবেন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে কিন্তু এ জাতি তা পারেনি বার বার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ জাতিকে ইচ্ছে মতো ব্যবহার করেছে। এমনি একটি মুহুর্তে ন্যায় পাল প্রতিষ্ঠা করা এ জাতির প্রাণের দাবী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন