প্রথমবার মত শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে জুন মাসের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে জুলাই মাসের নির্বাচনে চারদলীয় জোট তথা খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন। ২০০৬-৭ সালে রাজনৈতিক সংকটের সময়, আমেরিকা, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দেশী এবং বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশলের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন।
ক্ষমতায় গ্রহনের করে তার মাস্টার প্লান মত তখনকার প্রধান বিচারপতি খায়রুল মত বাস্টার্ড কুলাঙ্গার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করে। হাসিনা তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার মানসে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' পরিকল্পনায় দেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল, পঙ্গু ও দেশকে ভারত নির্ভরশীল করার মানসে দেশপ্রেমিক চৌকস ৫৭ সেনা অফিসারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। সেনাবাহিনীর মেরুদন্ড ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়ার মাধ্যমে দেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি বলে দেশে ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বয়ানের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলকে গনতান্ত্রিক চর্চায় বাধা প্রদান করতে থাকে। সকল দলকে রাজনীতির করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।
জামায়াত মানবতা বিরোধী অপরাধ করছে এই বয়ান হাজির করে ২০১৩ সালে বিচার কাজ শুরু করে। বিচারের নামে শুরু হয় প্রহসন। বিচারিক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে নাটক সাজায়। মাওলানা সাঈদীর রায় ঘোষণার দিন ৮৭ জন সাধারণ মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে।
জামায়াতের মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তির আডালে শাহবাগে ফ্যাসিবাদ কায়েমের মাধ্যমে এদেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করার সকল আঞ্জাম সম্পন্ন করে। শাহবাগ ইসলাম ও ইসলামী মুল্যবোধকে ধ্বংস করার পায়তারা শুরু করলে হেফাজতে ইসলাম এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা পালন করে।
হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্ত্বরে সমবেত হলে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা ৫ মে রাতের অন্ধকারে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির যৌথ অভিযানে শত শত নিরপরাধ মুসল্লীকে হত্যা করে। শত শত অর্ধমৃত মানুষ গুলোকে গান পাউডার দিয়ে তাদেরকে হত্যা করে।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে দিয়ে বাংলাদেশে এক তরফা নির্বাচন করায়। এই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীলীগ নির্বাচিত হয়। তৃতীয় মেয়াদে হাসিনা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। শুরু হয় বিরোধী দলগুলোর প্রতি নির্যাতন, গুম, খুন, অপহরণ এবং গোপন বন্দিশালায় তথা আয়নাঘর।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর পরিকল্পনায় চাতুর্যের সাথে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ভোটে নিয়ে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রাতেই ভোট করে ফেলে। পরে যার নাম হয় নীশি রাতে ভোট বা তাহাজ্জুদী ভোট। যা ছিল চরম সহিংসতাপূর্ণ এবং ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। হাসিনা চরিত্রহীন, লম্পট, মাদক চোরাচালানী মাফিয়া ডন, খুনিদেরকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়। তারা নাকি জনপ্রিয় নেতা। আসলে তারা ছিল মাস্টার রোলের এমপি। তখনকার সরকারের সাবেক পূর্ণমন্ত্রী ও জোটের নেতা দাবী করছেন, সংসদে ৮০ ভাগ সদস্যই চোরাচালানী বা চোরা চালানের সাথে জড়িত!
চতুর্থ মেয়াদে হাসিনা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক দুর্নীতি, বৈদেশিক ঋণ, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, ব্যাংকিং খাতে লুটপাট এবং অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিরিয়ন টাকা পাচার করতে থাকে।
তথাকতিথ জাতীয় শুদ্ধাচার পদকদারী সাবেক আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ দুর্নীতির মাধ্যমে র স্ত্রী, তিন মেয়ের নামে ৩৪৫ বিঘা বা ১১৪ একর। তাছাড়া তার নিজ নামে ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে ৩৩টি ব্যাংক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার হরণ করার দায়ে র্যাবের ডিজি থাকা অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
সাবেক সেনাপ্রধান মোহাম্মদ আজিজ আহমেদ। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন দুর্নীতি, গণতন্ত্র হরণ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করণ ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তির হরণের দায়ে তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা পড়েছেন।
হাসিনার মতামতকে চ্যালেঞ্জ করায় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সংবাদপত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব ভারতের হাতে তুলে দেয়া এবং ভারতের সমালোচনা করায় হত্যা করা হতো। তাছাড়া ভারতকে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সকল চুক্তি করা হয়েছে শুধুমাত্র হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য।
এরপর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আমি-ডামি অর্থাৎ আওয়ামীলীগ প্রার্থী বনাম আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং জাতীয় পার্টি মিলে ২৪ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়। উল্লেখ্য যে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভোটের আগে ভারত সফর করেন। সফর শেষ করে দেশে এসে তিনি ঘোষণা করেন তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। নির্বাচন নিয়ে কি কথা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া আমি কোন কথা বলতে পারবো না। আমার সে অনুমতি নাই। এইভাবে ২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সরকার বিরোধীরা ২০২২ সাল থেকে হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করছে। ২০২৪ জুন মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী নতুন ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আধা সামরিক বাহিনী, আনসার, গোয়েন্দা বাহিনী, এবিপিএনসহ রাষ্ট্রের সকল সংস্থা বিক্ষোভ দমন-পীড়নে নৃশংসতা চালায়।
যার ফলে ছাত্র-জনতা, শ্রমিক, দিনমজুর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রিক্সাচালক, ভ্যান চালকসহ নানা পেশার ১৮০০ শত মানুষ নিহত হয়েছিল। আহত, পঙ্গুত্ববরণ করেছে ৩০ হাজার। যার মধ্যে দু'চোখ অথবা এক চোখ, দু'পা অথবা এক পা হারিয়েছে হাজারো মানুষ। হাজার হাজার গুলি খওয়া মানুষগুলোর রক্তের বিনিময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
এইভাবে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার বিলিয়ন টাকা পাচারকারী, খুন, গুম, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, গোপন বন্দিশালা, আয়নাঘরের কারিগর খুনি হাসিনার শাসনামাল শেষ হয়। অবসান ঘটে আওয়ামী কুলাঙ্গারের রাজনীতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন