অন্যদিকে ইসলামী সংস্কৃতি বলতে আমরা বুঝি কুরআন, সুন্নাহ ভিত্তিক মানুষের সামষ্টিক জীবনের চিন্তা, চেতনা বিশ্বাস প্রত্যয়, অনুভূতি, অনুরাগ, মূল্যবোধ ক্রিয়াকান্ড। সৌজন্যমূলক আচরণ পরিমার্জিত ও পরিশোধিত সৎকর্মশীলতা উন্নত নৈতিকতা তথা জীবনের সকল কর্মকান্ড।
আজ থেকে বায়ান্ন বছর আগে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করি। স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর আমাদের থেকে পার হয়ে গেল। কিন্তু ৯০% মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নতি হয়নি। অর্থনৈতিক দুর্দশায় এ জাতি দিশেহারা। পাশা পাশি কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ সমুহকে আরও উন্নত করার পরিবর্তে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
সংস্কৃতির আগ্রাসন এ জাতির আগামী দিনের কর্ণধাররা হয়ে পড়েছে বিকৃত রুচিসম্পন্ন ও নৈতিক দুর্বলতায়। সিনেমা, সঙ্গীত, নাটক, যাত্রা, টেলিভিশন, বার্থ ডে, বিজ্ঞাপন, পতিতা, প্রগতি, চিত্ত বিনোদনের, ডিশ এন্টিনাসহ সংস্কৃতির সকল প্রচার মাধ্যম গুলোকে মানুষের মন বিবেক ও নৈতিকতাবোধকে ধ্বংসের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। আমাদের সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে রুচি বিকৃতিও ঘটছে।
পরিকল্পিতভাবে গোটা সমাজকে বিশেষ করে যুব শক্তিকে সংস্কৃতির অধঃপতনের নিন্মস্তরে নামিয়ে দিচ্ছে। অন্যায় জুলুমের বিরদ্ধে যেন প্রতিবাদী শক্তি গড়ে উঠতে না পারে সে জন্য সুকৌশলে দেশের যুবশক্তির মেরদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। যারা এর বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদেরকে উগ্র মৌলবাদী সাম্প্রদায়ীক শক্তি বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
রাস্তায় রাস্তায় সিনেমা পোষ্টারের নামে নগ্ন নারী দেহ প্রদর্শিত হচ্ছে। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের খারাপ কাজের দিকে নিতে এই পোষ্টার গুলি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ব্যান্ড শো, পালা যাত্রা, জুয়া হাউজি, মাদক ব্যবসা অশ্লীল মেগাজিন সরকারি রেজিষ্টারী নিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে এবং ভারতীয় অশ্লীল মেগাজিন বাজারে সংলাভ এবং আমাদের প্রচার মাধ্যম গুলো যে সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছে তা খুবই বিপদ জনক। আমাদের দেশের নায়ক নায়িকারা সংস্কৃতির যে বারোটা বাজিয়ে দিতেছেন তা সকলের নিকট জানা। এখন নায়ক নায়িকাদের সন্তানের পিতা কে তা সাংবাদিকগণ বের করতে হয়। রুচি বিকৃতি আর কাকে বলে।
বর্তমানে ডিশ লাইনের মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতি দিয়ে আমাদের যুব সমাজকে বিপথ গামী করছে।আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল যে তারা ক্ষমতায় গেলে রেডিও টিভির স্বায়ত্ব শাসন দিবে। কিন্তু সে উদ্দোগ আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি বরং বেসরকারি ভাবে নতুন নতুন চ্যানেল খোলার অনুমতি দিচ্ছে এমন সব লোকের হাতে যারা অশ্লীলতাকে আরও ব্যাপক মাত্রায় সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।
বাংলাদেশে সেনসর বোর্ড আছে বলে মনে হয় না। যার প্রমাণ খাইছি তোরে, পালাবি কই, কালা কাফন, পারলে ঠেকাও, এই ধরণের ছায়াছবি নির্মিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে হাজার, হাজার ছায়াছবি নির্মাণ হয়েছে। তাতে হাতে গোনা কয়েকটা ছবি বাদে সবগুলো অশ্লীল পোশাক, অঙ্গভঙ্গি, নূত্য সংলাপ গান ইত্যাদি পরিবেশন অপসংস্কৃতি অশ্লীলতাকে ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। নারী নির্যাতন এগুলো এখন সামাজিক ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে।
অথচ নারী নির্যাতনের ঘটনা দেখানোর ছলে ধর্ষণ, বস্ত্র হরণ ইত্যাদি এমনভাবে দেখানো হয় যাতে নারী নির্যাতনকে বাস্তবে উস্কে দেয়া হয়। সন্ত্রাসীদের সংলাপ, ভাব ভঙ্গিতে সন্ত্রাস বিরোধী মনোভাব তো দুরে থাক, উল্টো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকেই যুবকদের উৎসাহিত করে।
পাশ্চাত্য জগতের কৃষ্টি কালচার আমাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে। রেডিও সিনেমার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের বেহায়াপনা প্রচার আমার দেশের তরুণ তরুণীদের জাহান্নামের দরজায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আমার দেশের এ বেহায়াপনা দেখে একজন হিন্দু সাহিত্যিক অধ্যাপক হরলাল রায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, আগেকার তরুণ তরুণীরা অনুসরণ করতো তাদের পূর্ব পুরুষ আর মহা মনীসীদের। কিন্তু এখনকার তরুণ তরুণীরা অনুস্বরণ করে সিনেমার নায়ক নায়ীকাদের।
চলচ্চিত্র শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয়। বরং তা মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ও সৎপ্রবৃত্তি জানানোর শক্তিশালী হাতিয়ার। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির বিকশিত যুগে আমরা অপসংস্কৃতির আগ্রাসন লক্ষ করছি, যা আমাদের সামাজিক, ধর্মীয় মুল্যবোধকে আঘাত করে চলছে। জীবন দর্শন ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মননশীল চলচ্চিত্র নির্মাণে সিনেমা নির্মাতাদের আগ্রহ নাই।
সরকারি পর্যায়ে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন রোধের কার্যকরী পদক্ষেপ আশা করি। আমার দেশের ছেলে মেয়েরা মাইকেলজ্যাকশন, শাহরু খান, মাধুরী দিক্ষীত, সালমান খানকে চেনে। এরা চেনে না নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, আব্বস উদ্দিন, মীর মোশাররফ হোসেন। পড়েনা এদের সাহিত্য। কথিত ব্যান্ড শো অনুষ্ঠানে উন্মাদ নিত্য করে ক্লান্তিতে অবসাদ গ্রস্থ জীবনের অন্ধকোন নেশা গ্রস্ত হয়ে শুটি মেরে থাকে। নৃত্যের নামে দেহসর্বস্বতাকেই শুধু তুলে ধরে বিনোদনের নামে রুচি এবং মননকে জীর্ণ এবং দরিদ্র করতে, করতে এমন জায়গায় পৌঁছায় যে শেষ পর্যন্ত কি যে ভাল আর কি যে মন্দ তা বিচার করতেও শিখেনা। কু-রুচির পার্থক্য করা তাদের পক্ষে হয়ে ওঠে দুরুহ। এর জন্য সমাজকে দায়ী করা চলেনা।
শিক্ষার্থীরা মোবাইল, ট্যাব নিয়ে বেশি ব্যস্ত। শিক্ষকরা ইন্টারনেট থেকে সব লিখে আনতে বলে। যেখানে ডিভাইস থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখার চেষ্টা করছে অভিভাবকগণ। সেখানে আমরা উৎসাহিত করছি।শিল্প ও সংস্কৃতি ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খাবার রান্নার উপকরণ স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলের সামষ্টিক কাজের জন্য বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে যেতে হয়। যেমন কাগজ ও রঙিন পেন্সিল/কলমের পাশা পাশি ঘাম, মার্কার, আর্ট পেপার, পোস্টার খেলা ধুলার উপকরণ ব্যাটবল, রেকেট, রশি, নেট ইত্যাদি। কৃষিশিক্ষা বা জীবন জীবিকার জন্য মাটি গাছের চারা, পাত্র এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা জন্য ফাস্ট এইড বক্সের মধ্যে নানা ধরনের চিকিৎসা উপকরণও ক্লাসে নিতে হয়। আবার মশারি, বিছানার চাদর, বালিশ স্কুলে নিতে হয়।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক পরিবেশ, প্রচার মাধ্যম, সবকিছু আজ পুঁজিপতি শ্রেণীর এবং তাদের সহযোগী সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পৃষ্টপোষকতা হওয়ার জন্য এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মেয়েরা আজ নির্বিঘ্নে চলা-ফেরা করতে পারেনা।
অবক্ষয় আক্রান্ত নেশাগ্রস্ত তারুণ্যকে বাঁচাতে হলে ইসলামকে আমাদের জীবনাদর্শন করতে হবে। বস্তুগত সভ্যতার ধ্বংস স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে বিশ্বের বিবেকবান সম্প্রদায় বলছে ধর্মই হল নৈতিক স্তম্ভের উৎস। ধর্ষণ সেঞ্চুরীর কালচার থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে ইসলামী মূল্যবোধের দিকে ফিরে আসতে হবে। সেই সাথে দেশের সকল ইসলামী শক্তিগুলোকে সকল মত প্রার্থক্য ভুলে গিয়ে এক হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সকল অপসংস্কৃতির মূলে কুঠারাঘাত করতে হবে, তবেই সম্ভব দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন