শিক্ষায় মূল্যবোধের অবক্ষয় - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩

শিক্ষায় মূল্যবোধের অবক্ষয়

ইসলামী জ্ঞান তত্ত্বের আলোকে জ্ঞানের উৎস হচ্ছে ওহীর জ্ঞান। ওহী ভিত্তিক জ্ঞান Revealed Knowledge ও মানব অর্জিত জ্ঞান Acquired Knowledge। মানুষের জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত। যুগে যুগে মানব সমাজে অনেক কিছু জ্ঞান হিসেবে প্রচলিত হয়েছে, যা সত্যিকার অর্থে জ্ঞান নয়। পশ্চিমা জগতের পণ্ডিতগণ জ্ঞানের বিন্যাস ও আহরণ প্রক্রিয়াকে ইসলামী ধ্যান-ধারণা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

পশ্চিমা দুনিয়া ও মুসলিম বিশ্বের সামনে হাজির হয়েছে এক মস্তবড চ্যালেঞ্জ সন্ত্রাস। পশ্চিমা দেশগুলোকে বুঝতে হবে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে সন্ত্রাসের। এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এই সন্ত্রাস প্রসূত হলে এই বিদ্বেষের কারণসমূহ খুঁজে বের করতে হয়ে। অত্যাচারিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠির প্রতি তাদের বৈদেশিক নীতি বদলাতে হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন বিভিন্ন জনগোষ্টির আত্ম প্রতিষ্ঠার দাবীর প্রতি তাদের সম্মান দেখাতে হবে। সংঘাতের পরিবর্তে সংলাপকে বেছে নিতে হবে শান্তির সহায়ক হিসাবে। আমরা যারা মুসলমান আমাদের সামনে চ্যালের হল সবাইকে এটা বুঝান যে ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মে সন্ত্রাসের কোন অস্তিত্ব বা স্থান নেই। এটা শুধু মুখের কথা নিয়ে বুঝালে চলবেনা বুঝাতে হবে আমাদের আচরণের মধ্য দিয়ে এবং সেটাই ইসলামিক রীতিনীতি। ইসলাম সম্পর্কে আজ সারা বিশ্বে যে বিভ্রান্তির বেড়াজাল তাও দূর করতে হবে আমাদেরকেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে এই মুহুর্তে বাইরের  লোকদের কিছু বুঝানোর আগে, আমাদের নিজেদের ঘরটাকে একটু গোছাতে হবে। আমাদের ঘরটা আজ বড় বেসামাল বড় এলোমেলো ও অশান্ত। এই অশান্তির অন্যতম প্রধান কারণ শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় যে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা সংবাদপত্র সমূহ পড়লেই বুঝা যায়।

খুন; ধর্ষণ; ধর্ষণের পর হত্যা; ধর্ষণ সেঞ্চুরী পালন; মাস্তানী; ডাকাতি; বোমাবাজী; টেন্ডার বক্স ছিনতাই; ব্ল্যাকমেইলিং; অপহরণ; শিশু পাচার; আসিড নিক্ষেপ; নারী নির্যাতন; আত্মহত্যা; ইভ টিজিং; ইভ টিজিং পর আত্মহত্যা; চোরাচালানী; মাদকাশক্তি; ছিনতাই; রাহাজানী; দুর্নীতি; অনিয়ন্ত্রিত সড়ক দুঘর্টনা; ট্রাফিক জ্যাম; পরিবেশ দুষণ ইত্যাদি। এই চিত্র যে কোন সুশীল সমাজের নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমরা কোথায় যাচ্ছি? সকল বিবেকবান মানুষের মনে আজ এ প্রশ্ন।

বর্তমানে স্কুলে বা শ্রেণি কক্ষে কোন ধরনের লেখাপড়া হয় না। এখন শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগে থাকে নানা
 ধরনের উপকরণ। এসব উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন হাতের কাজের পরীক্ষা দিচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। এর মাধ্যমে তাদের মেধা যাচাই করা হচ্ছে। এ ধরনের কারিকুলাম দিয়ে শিক্ষা হচ্ছে না। এ কারিকুলাম সম্পর্কে শিক্ষকদের কোন ধরনের ধারণা নাই। এসব কারিকুলামে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ভিত নষ্ট করে দিচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা মোবাইল ট্যাব নিয়ে বেশি ব্যস্ত। শিক্ষকরা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেট থেকে সব দেখে লিখে আনতে বলে। যেখানে অভিভাবকবৃন্দ হরহামেশা বলছে ডিভােইস থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখতে। সেখানে আমরা আরো উৎসাহিত করছি। শিল্প ও সংস্কৃতির নামে ব্যবহারিক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খাবারের রান্নার উপকরণ নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। স্কুলে সামষ্টিক কাজের জন্য বিভিন্ন উপকরণ যেমন, কাগজ কলম, রঙিন পেন্সিল, ঘাম, মার্কার, আর্ট পেপার, পাষ্টার। খেলা ধুলার উপকরণ ব্যাটবল, রেকেট, রশি, নেট ইত্যাদি। তাছাড়া কৃষিশিক্ষা ও জীবন জীবিকার জন্য মাটির গাছের চারা, পাত্র এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ফাস্ট এইচ বক্সে নানান ধরনের চিকিৎসা উপকরণ নিতে হয়। আবার মশারি, বিছানা চাঁদর, বালিশ স্কুলে নিতে হয়। 

ছেলে-মেয়েরা ক্লাসে কিভাবে বন্ধুদের সাথে কথা বলবে, বয়সের সাথে সাথে তাদের শারীরিক গঠন কিভাবে পরিবর্তন হয় তা আলোচনা করা হয়। আসলে এর মাধ্যমে যৌনতার সকল উপকরণ স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা নিচ্ছে। এই বিকৃতিতো উপর তলা থেকে শিখানো হচ্ছে।

পাপিয়ারা, নায়ক নায়িকা শেয়ার মার্কেট লুট, ভোট চুরি, বিদেশে টাকা পাচার, জুলুম, নিযাতন, গুম খুন, অপহরণ, গনগ্রেফতার, গায়েবী মামলা হামলা, চাদা বাজি, মদ, গাঁজা, ইয়াব, জাল জালিয়াতি, মিথ্যা কথা, অনাচার, টন্ডারবাজি, মাস্তানি, খুনো খুনি, দখল বাজিতখন সংস্কৃতির বিকৃতির নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। জগনার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা যখন বলেন, ছাত্রলীগ করাই তার চাকরির যোগ্যতা। তখন তো বুঝাই যাচ্ছে এই জ্ঞান আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের শিক্ষা কি আমাদেরকে দুর্নীতি দূর করতে শিখাচ্ছে ? উত্তর না। স্বাধীনতা পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের পূর্ণ গঠনের জন্য পৃথিবীর সব জাতির কাছ থেকেই অভূতপূর্ব সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়ে আসছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সাহায্য প্রদান করেছিল। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এত টাকা পয়সা পেয়েও আমরা দেশটাকে ভালভাবে গড়ে তুলতে পারলাম না কেন? এ প্রশ্নের উত্তর কি আমরা দিতে পারবো। কারা এই টাকা পরিচালনা করেছিল। এই টাকা দেশের শ্রমিক শ্রেণী খরচ করেনি, কৃষক খরচ করেনি, জেলে-তাঁতীরা খরচ করেনি, কামার-কুমোরা খরচ করেনি,মাঝি-মাল্লারা খরচ করেনি। এই টাকা খরচ করেছিল তথাকথিত ডিগ্রী ধারী শিক্ষিত লোকেরাই।

আমাদের দেশ প্রেমের অভাবে, নৈত্রিকার অভাবে, মূল্যবোধের অভাবে আমরা দেশ গড়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতে পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারলাম না। আমরা বিশ্ববাসীর আস্থা হারিয়ে ফেললাম। এর পরবর্তী কালের বন্যা, সাইক্লোন, জলোচ্ছাস ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় বিদেশী যে সব সরকার ও সংস্থা বাংলাদেশে সাহায্য পাঠিয়েছে তা তারা বাংলাদেশ সরকারকে না দিয়ে তাদের মনোনীত কতগুলো এন জি ও মারফত জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস পেয়েছে। এর চাইতে লজ্জা আমাদের কাছে আর কি হতে পারে? সরকার যারা চালান তারা সবাই শিক্ষিত, তারা কতটুকু সৎ, সরকার তা ভালভাবেই জানেন। জানে বলেই সরকার মেরুদন্ড সোজা করে বলতে পারেনা যে সাহায্যের ব্যবস্থাপনায় তোমরা আমাদেরকে বিশ্বাস করুণা সেই সাহায্যের আমাদের কোন দরকার নেই। এর থেকে বুঝা যায় আমরা কতটা নৈতিকতা বিবর্জিত।

এ ধরণের নেতৃত্ব দ্বারা সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার ছেলের সরকার, সেই ছেলে কোথায়? এখন আমাদের সমস্ত জাতির একমাত্র লক্ষ্য টাকা আর টাকা। এখন লেখা পড়ারও মূল উদ্দেশ্য দাঁড়িয়েছে টাকা কামানোর বিদ্যা সংগ্রহ করা। তাই শিক্ষায় যে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটবে তাতে আর বিচিত্র কি।

বর্তমান তরুণ সমাজের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে, তাদের মধ্যে যে অস্থিরতা  অন্যায় প্রবণতা এবং ধ্বংসাত্মক মাদকাসক্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে তার ভয়াবহতা আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা যদি মাদকসেবনরত বিপথগামী তরুণদের দিকে তাকাই এবং খোঁজ খবর নেই, থানায় রির্পোট করা অপরাধ জনিত মামলাগুলো থেকে অপরাধের নায়কদের নাম ঠিকানা যোগাড় করি, তাহলে দেখতে পাব যে এই সব অপরাধী মাদকাসক্তদের উল্লেখযোগ্য অংশই সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত ও প্রভাবশালী ধনী সম্প্রদায়ের বখে যাওয়া ছেলেমেয়েরা।

এরা যে কোন দিন স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়নি তা নয়। পুঁথিগত বিদ্যা এদেরকে অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। যেমন পারেনি পরিবারের মা, বাবা, ও অন্যান্য অভিভাবকেরা। তাই বলা যাইতে পারে যে এতদিন শিক্ষাঙ্গনকে মানুষ বানাবার কারখানা হিসাবে এবং শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে আমরা ভেবে এসেছিলাম, যে সব সম্পর্কে এখন নতুন করে চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। দেশ গড়ার জন্যে যে শিক্ষিত লোকদের যে প্রয়োজনীয়তা এতদিন সবাই উপলব্ধি করে এসেছে, দেখা যাচ্ছে তাদের অনেকের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব, তাদের অনেকেই দেশের সাথে শত্রুতা করছে।

যাদেরকে আমরা অশিক্ষিত বা মুখ্য সুখ্যু বলে অবজ্ঞা করি, তারা কিন্তু তাদের কর্তব্য ঠিকঠাক ভাবেই পালন করে আসছে। জেলে জাল ফেলছে, তাঁতী তাঁত বুনছে, কামার হাতুড়ি পেটাচ্ছে, কুমোর পাত্র গড়ছে, শ্রমিক মাল বইছে, কৃষক চাষ করছে চাল, ডাল, তরি তরকারি ফলাচ্ছে। এরাই হল সমাজের কর্ম চঞ্চল অংশ। এরা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করে নিয়তিকে মেনে নেয়। তাই বলে দেশ গড়ার কাজে শিক্ষিত লোকদের ভূমিকা কম একথা বলা সমীচিন হবেনা। প্রকৃত শিক্ষাই মানুষকে আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলে। আজ আমরা প্রতিনিয়ত যে মানব সম্পদ উন্নয়নের কথা বলছি। আলোকিত মানুষ ছাড়া সেই মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষিত লোক ও আলোকিত লোকের মধ্যে তফাৎ আছে। বস্তুগত বিদ্যার সাথে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ যুক্ত করতে পারলেই একজন শিক্ষিত মানুষ আলোকিত মানুষ হতে পারে। আজ দেশ ও সময়ের দাবী আলোকিত মানুষের শুধু শিক্ষিত মানুষের নয়। এখন সময় এসেছে সৎ মানুষ খুঁজে বেড়াতে হচ্চে।

সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে যে নৈতিকতার ধস নেমেছে তা ঠেকাতে হলে আমাদেরকে একেবারেই গোড়াতে ফিরে যেতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকাতে হবে। পরিণত বয়সে মানুষকে নৈতিকতা শেখান যায় না। শেখাতে হয় একেবারে শিশুকাল থেকে শুরু করে এবং তা করতে হলে প্রথম যে কাজটি করতে হবে তাহল বর্তমানে যে বস্তুগত শিক্ষাব্যবস্থা তার সাথে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

নৈতিক শিক্ষার বড় উৎস হল ধর্ম শিক্ষা। ধর্ম মানুষকে উদার হতে শেখায় মহৎ হতে শেখায়। আল্লাহ পাক কুরআনে ঘোষণা করেছেন হ মানুষ তোমরা সবাই একই সম্প্রদায়ভুক্ত।' সব মানুষকে ভাই হিসাবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন ও হাদিসে যে নৈতিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে তা অনুসরণ করলেই যে কোন মানুষ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। অথচ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা জীবনকে ধর্ম থেকে আলাদা করে ফেলেছি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় দূর করতে হলে অনেক গুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

(১) স্কুল ফাইনাল পর্যন্ত এক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

(২) এক ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্ম শিক্ষার সিলেবাস থাকবে। 

এখন স্কুল শিক্ষার একটা পর্যায়ে ধর্ম শিক্ষা যে নেই তা নয়। তবে এ শিক্ষা অনেকটা দ্বীনিয়াত শিক্ষার মত। একটা কথা মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় শিক্ষা আর দ্বীনিয়াত শিক্ষা এক জিনিস নয়। স্কুলে ধর্ম শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কোরআন ও হাদীস অনুসারে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবার জন্য যে সব নির্দেশ দেওয়া সেগুলো ছাত্রছাত্রীদের মাঝে তুলে ধরা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে কোরআনে যে সর্বোচ্চ তাগিদ দেয়া হয়েছে তা তাদেরকে বুঝাতে হবে। জ্ঞান ও বিজ্ঞানের যে সংঘাত নেই বরং অদ্ভত সামঞ্জস্য আছে এটা একবার তারা বুঝতে পারলে নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে তাদের আগ্রহ বেড়ে যাবে।

(৩) ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে পৃথিবীর একমাত্র Role Model হিসেবে চিহ্নিত করা। প্রত্যেক দেশে আদর্শ মানুষ খোঁজা হয়, নতুন প্রজনাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য। আদর্শ মানুষকে বলা যেতে পারে এক একটা Role Model লিংকন, মাও সেতুং, মহাত্মাগান্ধী প্রভৃতি মনিষির নাম বিখ্যাত।

রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বলিষ্ট নেতৃত্ব, চারিত্রিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিগত জীবনে সততা, সৃষ্টির প্রতি ভালবাষা, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা সর্বদিক বিচার করলে এরা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তা নয়। তবুও তারা এক একটা সময়ের Role Model লোকেরা চায় এমন Model যিনি রক্ত মাংসে গড়া, যিনি ঘৃনা ও বিদ্বেষের উর্দ্ধে, যিনি সদা সত্য ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকদের ভাই হিসেবে গণ্য করেন, যিনি রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে নানা কর্মে থেকেও স্রষ্টা প্রেমে বিভোর থাকেন, তিনি কোন জিনিসের প্রতি আসক্ত নন, যিনি সকল মানুষের জন্য, সকল কর্মকাণ্ডের জন্য অনুকরণীয় হবেন, তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা:) যার কথা বাইবেল সহ অন্যান্য কিতবে উল্লেখ আছে। তার নিকট নাযিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ট ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন। আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ আমি তোমাকে বিশ্বরগতের প্রতি কেবল রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।' (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)

রাসূল (সা:) মানব জাতির সকল কর্মকাণ্ডে যে উত্তম আদর্শ হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর সকল কথায় ও কাজে। এসব কথা ছাত্র-ছাত্রীর সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরে তাদের চরিত্র গঠনে সহায়ক হবে। পবিত্র কোরআনে إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ইসলামকে আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন বা (পথ) বলা হয়েছে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত 19) যেহেতু আমরা মুসলমান, এদেশের ৯০% মানুষের ঈমান আকিদায় ইসলাম ঐতপ্রোতভাবে জড়িত। সেহেতু আমাদের একমাত্র Role Model হতে হবে মানব জাতির শেষ পথ প্রদর্শক হযরত মুহাম্মদ (সা:)।

অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে এই ধারণাটা বন্ধমুল করে দিতে হবে যে, আজকের বিশ্বে ঠিক এই সময়ে কেউ যদি আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালক, আদর্শ ধর্ম প্রচারক, আদর্শ সমাজ সংস্কারক, আদর্শ মানবতাবাদী খোজেন তবে সেই খোঁজ পাওয়া যাবে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর মধ্যে। তিনি সত্যিকার অর্থে সমগ্র মানব জাতির আদর্শ। তিনিই সব যুগের সর্ব সময়ের নেতা।

(৪) ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে হলে তাদের শিক্ষকবৃন্দকে নীতিবান হতে হবে। এখন যে সব শিক্ষক শিক্ষিকা দেশের শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে ঢুকে গেছেন তাদের অনেকেই আসলে অন্য কোন চাকুরী না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঢুকেছেন। এটা এক ধরনের বিদ্যায় গলদের মত। দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষায় প্রবেশ যোগ্য ও নীতিবান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে, যে পদ্ধতিটি চালু করা দরকার তা হল Education Service Commission গঠন করে তার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে শিক্ষক নিয়োগ করা, এবং তাদেরকে ভাল বেতন স্কেল দেওয়া যাতে শিক্ষকরা অন্য পেশার তুলনায় হীনমন্যতায় না ভোগেন।

মানুষ গড়ার কারিগর যদি অন্ন চিন্তায় বিভোর থাকেন, তাহলে তিনি মানুষ গড়বেন কেমন করে? তবে শিক্ষকদেরকে এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক বেশী। শিক্ষক যদি মনে আনন্দ নিয়ে চিন্তা মুক্ত হয়ে পাঠদান করাতে পারেন তাহলে শিক্ষকতাটা তিনি উপভোগ করতে পারবেন।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকাতে হলে সরকারকে আরও বিবেকবান ও আরও দূরদর্শী হতে হবে। আমাদের দেশের বেশ কিছু চ্যানেল এবং বিদেশী বেশ কিছু চ্যানেল, ফেইস বুক ও ইন্টারনেটে যে অশ্লীল ছবি দেখান হয়, তা কোন বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র হনন করার জন্য এই সব ব্যবস্থা কেন? যে কোন মনস্তত্ত্ববিদ বলবেন কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের কাছে এই সব অশ্লীল ছবির আবেদন অনেক বেশী। দেশের বিভিন্নস্থানে লুকিয়ে থাকা কিছু বিবেকহীন গোষ্ঠী শুধু পয়সার লোতে ছাত্রদেরকে পর্ণ ছবি দেখিয়ে তাদের পরকালটা ঝর ঝরে করে দিচ্ছে এবং হতাশা গ্রস্ত যুবকে পরিণত করছে। যারা এ কাজ করছে, তারা নিজেদের ছেলে-মেয়েদের কথা একবারও ভেবে দেখেনা। সরকাকে এ ব্যাপরে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তরুণদের বাঁচাবার জন্য এই দেশকে বাঁচাবার জন্যে।

বর্তমান বাংলাদেশে টি ভি চ্যানেল গুলোতে যদি দৈনিও কিছু সময় খবর, খেলাধুলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কথা, মহানবী (সা:) এর জীবনের কথা, আমাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের কথা, ক্লাশরুমে পড়াশুনার কথা, হামদ-নাতে, কোরান ও হাদিসে যে সব কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা কেন নিষেধ করা হয়েছে সে সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক আলোচনা, অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে কোরআন হাদিসের তাগিদ, পৃথিবীর ও আমাদের দেশের জীব বৈচিত্রের সচিত্র প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ ইত্যাদি। উপরোক্ত কাজ গুলো করলে চ্যানলগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা আয় আরও বাড়বে।

আজ আমাদেরকে গালি দেওয়া হয় Fundamentalist বা মুসলিম মৌলবাদী বলে। বিদেশীদের দোষ দিয়ে কি লাভ। মুসলমান ঘরের সন্তানরা নিজেদেরকে মৌলবাদী হিসাবে গালি দেয়, আর আমরাও মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছি। অথচ উচিত ছিল যে খুন করে তাকে তুমি খুনি বলা মৌলবাদী নয়, যে ঘরবাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে তাকে সন্ত্রাসী বলা মৌলবাদী নয়, যে দোকান লুঠ করেছে তাকে লুষ্ঠনকারী বলা মৌলবাদী নয়।

Fundamentalist মৌলবাদী হচ্ছে এক স্রষ্টায় বিশ্বাস করা, তার সকল রাসূলকে বিশ্বাস করা, রাসূলে রাসূলে তারতম্য না করা, সদা সত্য কথা বলা, নিজের কাজ ভালভাবে করা, পীড়িতের সেবা করা, ধর্ম কর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে অন্তর দিয়ে ভালবাসা এসব গুনাবলীই হল মৌলবাদী। সুতরাং উপরোক্ত কথাগুলো মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পারলে আমাদেরকে কেউ মৌলবাদী বলে গালি দিতে পারবে না। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, যে বিষয় গুলোর কথা উল্লেখ করলাম সেগুলি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোন পরিচ্ছন্ন ধারণা নেই। আর সে কারণেই আমরা অন্যের সামনে আমাদের কথাগুলো ঠিক তুলে ধরতে পারিনা।

তাই বলব বিজ্ঞান শিক্ষা, ইসলাম শিক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মনে রাখতে হবে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জোরেই বলীয়ান হয়ে অতীতে মুসলমানরা আটশত বছর পৃথিবীকে আলো দেখিয়েছিল। আজকের মুসলিম বিশ্বকে যদি আবার জেগে উঠতে হয়, তবে তা সম্ভব হবে এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরই জোরে আসতে হবে। South East এর যে সব দেশকে আমরা Asian Tiger বলে আখ্যায়িত করছি, তাদের অনেকেই পঞ্চাশের দশকে তাদের ছাত্রদেরকে পাঠাত আমাদের এখানে পাঠ নেবার জন্য Korea এর Per Capital Income তৎকালীন পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে কম ছিল। তাহলে গত কয়েক দশকে এই দেশগুলো কিভাবে এগিয়ে গেল? তাদের হাতে কি আলাদীনের আশ্চায্য প্রদীপ ছিল। না ছিল না। তবে তাদের হাতে ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি । আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভয়ানক পিছিয়ে আছি। আমরা অল্পদামে কাঁচামাল রপ্তানী করছি, আর বেশিদামে বাইরে থেকে Finished Products কিনে আনছি। যেসব লোক বাইরে পাঠাচ্ছি, তাদের অধিকাংশ Unskilled যার কারণে Globalization I Open market এ নেমে আমরা এক অসম প্রতিযোগীতর সম্মুখীন হয়েছি। বর্তমান যুগকে বলা হচ্ছে Knowledge financial system এর যুগ। আমরা Knowledge কে ব্যবহার করছি কোথায়?

মোট কথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এই প্রযুক্তির দক্ষতার মাধ্যমে আমাদের লোক সংখ্যাকে মানুষের সংখ্যার সমান করতে হবে। তখনই জনশক্তি বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে। উপরোক্ত কথাগুলোর মূল যে ভিত্তি তা হল আমাদের শিক্ষার সাথে নৈতিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন। আর নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরী হয় ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষাব্যবস্থায় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সাথে ইসলামী শিক্ষার সাথে সমন্বয় সাধনে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে আসুক এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here