নারী শিক্ষার বর্তমান অবস্থা - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩

নারী শিক্ষার বর্তমান অবস্থা



শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড Education is the back bone of a nation কেবলমাত্র সুশিক্ষাই এই মেরুদন্ডকে দৃঢতা দিতে সক্ষম। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষ হিসেবে সকল প্রকার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্র চাই সঠিক যোগ্যতা। এ যোগ্যতা অর্জনের জন্য দৈহিক, মানসিক ও নৈতিক দিক দিয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও গুণাবলী ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ শক্তি ও প্রতিভার উম্মেষ ও বিকাশ সাধনের যে নিরল প্রচেষ্টা শৈশবকাল থেকে চলে তাই শিক্ষা। (ড. মোহাম্মদ লোকমান, শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচলিত ও ইসলামী মূল্যবোধ ও একটি তুলনামুলক বিশ্লেষণ -বাংলাদেশ প্রসঙ্গ, শিক্ষা সেমিনার 92)
শিক্ষার ধারণা হল মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহের বিকাশসাধন। সুঙ্খ ও সুকৌশল পরিমার্জিতকরণের উদ্দেশ্যে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। শিক্ষা প্রয়োজনীয় হলেও নীতিহীন শিক্ষা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার আলোয় হৃদয়ালোককে উদ্ভাসিত উজ্জ্বল ও জ্ঞান সমৃদ্ধ করে। আজকের দুনিয়ায় আমাদের সর্বাদিক প্রয়োজন হচ্ছে, এমন শিক্ষাব্যবস্থা যা আমাদের মনকে সলক প্রকার দু:খ-দুর্দশা, শোষণ-বঞ্চনা ও লুণ্ঠন বন্ধ করে মানবীয় প্রয়োজন পূরণ করবে। আমাদের সামষ্টিক সংহতি, সামাজিক সুবিচার, ন্যায়পরায়নতা এবং ব্যক্তির পরম সাফল্য ও সার্থকতাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য।(মাওলানা আবদুর রহিম, শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি) এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের আজ যে জিনিসটি দরকার তাহল শিক্ষা। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তvন সাধন এবং একই সাথে মানুষের চারিত্রিক গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

শিক্ষা বলতে কি বুঝি ?

ইংরেজিতে Education বলা হয়। আর Education শব্দটি উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ Educer হতে। যার মানে হচ্ছে, লালন-পালন করা (Rearing)। সুতরাং শিক্ষা এর শব্দার্থ হল, লালন-পালন করা এবং মানব শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং চরিত্র তারবিয়াত দান করা। অতএব শিক্ষা বলতে শুধু পুথিগত বিদ্যাকেই বুঝায় না। বরঞ্চ ইহার সকল প্রকার তারবিয়াতকেও শামিল করে। 

জাতীয় আদর্শ এবং ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের কাছে স্থানান্তর করাসহ সময়ের সাথে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা অর্জvন করানো শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিত। প্লেটোর মতে, কোন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা রচিত হওয়া উচিত সেই দেশের সংবিধানের আদর্শনুয়াযী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শেষের কবিতায় শিক্ষাকে তুলনা করেছেন পরশ পাথরের সাতে। তার চিন্তা অনুযায়ী শিক্ষা হল পরশ পাথর, তার থেকে ছিটকে আলোটাই হচ্ছে কালচার। 

মহাকবি ইকবালের মতে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হল খুদী বা আত্মার উন্নতি সাধন। খুদী উন্নতি হলে সে-ই মানুষের সমস্ত কর্মকান্ড নিম্নরূপ এবং সুষমমন্ডিত করতে সক্ষম। Stanly Hull-If you teach your children the three Rs (i.e, Reading, Writing & Arithmetic) & Leave the fourth R (i.e, Religion) you will get a fifth R (i.e, Rascality) (আবদুল কাদের মোল্লা, আমাদের শিক্ষানীতি প্রণনয়ে জাতীয় মূল্যবোধ  ও আদর্শিক ভিত্তি; জাতীয় শিক্ষা সেমিনার 97)

আরবী ভাষায় শিক্ষা এর মানে হচ্ছে তালীম যার মুল হল ইলম বা Knowledge যার মানে হচ্ছে, শিক্ষা গ্রহণ বা শিক্ষ গ্রহণে অন্যকে সাহায্য করবে

পরিভাষাগত দিক দিয়ে শিক্ষা বলতে এমন কর্মকে বুঝায় যার ফলে শিশু বয়:প্রাপ্তির সাথে সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্বভার বহন এবং তার উপর আপতিত সমস্যাবলী Problems সমাধানে সক্ষম হবে।

দ্বিতীয় দলের মতে, শিক্ষা বরতে বুঝায়, যার দ্বারা মানুষ তার পরিবেশ ও সমাজের সাথে পরিচিত হয় এবং যাতে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ই উকৃত হয়।

তৃতীয় দলের মতে, শিক্ষা বলতে বুঝায় এমন কর্ম যাদ্বারা সমাজে ভারসাম্য বঝায় রাখা সম্ভব হয়। অর্থাৎ যে কার্যের মাধ্যমে শিক্ষিত ব্যক্তি তার সমাজের ভরসাম্যতা বজায় রাখতে সামর্থ হয়। 

চতুর্থ দলের মতে, শিক্ষ এমন এক কর্মপদ্ধতিকে বুঝায় যদ্বারা সমাজের বয়স্করা নবীনদেরকে এমনভাবে গড়ে উঠাবে যাতে তারা ভবিষ্যতে নিজেদের ভার বইতে শিখে এবং তাদের পূর্বপুরুষদের রীতিনীতি অনুযায়ী পরবর্তীদের গড়তে পারে। মূলকথা শিক্ষা বলতে শুধু পুথিগত বিদ্যাকেই বুঝায় না। বরং সঠিক শিক্ষ এমন ক্রিয়াকর্ম যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি, সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রেই উন্নতি। (এ বি এম ছিদ্দিকুর রহমান, শিক্ষার মানে ও এর উদ্দেশ্য; শিক্ষা সেমিনার 92)  

শিক্ষার ভিত্তি  

শিক্ষা কোন মতাদর্শ ভিত্তিক হবে ? এর মূল দর্শন কি হবে ?  

প্লেটের রিপাবলিকে বর্ণনা করেছেন, শিক্ষার কাজ হবে প্রতি ব্যক্তির স্বাভাবিক যোগ্যতা আবিস্কার করে তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া যাতে সে আদর্শ ও সুপরিকল্পিত সমাজের ভাল নাগরিক হতে পারে এবং তার নিজ শ্রেণির নির্দিষ্ট কর্তব্য দক্ষতার সাথে পালন করতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব হবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মের লোকদের স্বভাবজাত গুণ ও দক্ষতা বিকাশ করে যে ব্যক্তি যে কাজের উপযুক্ত তাকে সে কাজের জন্য নিয়োগ করা। প্লেটো মনে করেন তার আদর্শ সমাজের শিক্ষাব্যবস্থা প্রত্যেক ব্যক্তি যে কাজের যোগ্য সেই কাজের শিক্ষা গ্রহণ করে রাষ্ট্রের সেবা করতে পারবে এবং রাষ্ট্রের সেবা করে ব্যক্তিও সুখী হবে। (স্যামুয়েল স্মিথ, আইডিয়াস অব গ্রেট এডুকেশন)


শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 

মানুষ তার শিক্ষার দ্বারা জাগতিক ও পারলৌকিক সর্বক্ষেত্রে সাহায্য গ্রহণ করে থাকে। শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন মনিষির একাধিক মতামত রয়েছে। শিক্ষার সাথে মনুষ্যত্ববোধের গুরুত্বও অপরিসীম। বিভিন্নস্তরের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয়তা হিসেবে শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। কোন কোন জাতি শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মের উপর জোর দেয়। আবার কেহ কেহ নিজস্ব মতবাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। তবে সাধারণত শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণে ধর্মীয় আকীদা, ভু-রাজনীতি, রাজনৈতিক আদর্শ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিই গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শিক্ষার উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি স্বাধীনতা দান এবং জাতি, ধর্ম, সাদা, কালো নির্বিশেষে সাম্যতামদান। আর সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য এর বিপরীতমূখী। এতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রের মঙ্গল সাধন। এখানে ব্যক্তির মঙ্গলের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় না। রাষ্ট্রের ইচ্ছায় শিক্ষা পদ্ধতি গঠিত হবে। অপর পক্ষে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহে শিক্ষার উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে, ইসলামী আকীদা, মনুষ্যত্ববোধ, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সমাজের মঙ্গল সাধন ইত্যাদি। (এ বি এম ছিদ্দিকুর রহমান, শিক্ষার মানে ও এর উদ্দেশ্য; শিক্ষা সেমিনার 92)    

ইংরেজ কবি Jhon Milton এর ভাষায় Education is a continuous process through which mental, physical and moral training is provided for new generation who also acquire their ideals and culture thought it. অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য মানসিক, শারীরিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যাপক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের মিশন ও জীবন ধারণের কলা-কৌশল অর্জন করে থাকে।  (উইলিয়াম হান্টার, দি ইন্ডিয়ান মুসলিাম; দি প্রিমিয়ার বুক হাউজ)

শিক্ষা সম্পর্কে প্রফেসর মুহাম্মদ কুতুব Concept of Islamic Education প্রবন্ধে বলেন, শিক্ষা হচ্ছে পরিপূর্ণ মানব সত্তাকে লালন করা, গড়ে তোলা এমন একটি লালন কর্মসূচি যা মানুষের দেহ, তার বুদ্ধিবৃত্তি এবং আত্মা, তার বস্তুগত আত্মিক জীবন ও পার্থিব জীবনের প্রতিটি কার্য কলাপের কোন একটিকেও পরিত্যাগ করে না। আর কোন একটির প্রতি অবহেলাও প্রদর্শ ন করে না। (প্রফেসর মোহাম্মদ কুতুব, দি কনসেপ্ট অব ইসলামিক এডুকেশন)

ইসলামী শিক্ষার আর একটি উদ্দেশ্য হল খেলাফতের দায়িত্ব পালনের যোগ্য লোক তৈরি করা এ দায়িত্ব পালনের জন্য যে ধরনের যোগ্যতা দক্ষতা ও বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন সে জ্ঞান অর্জনই হবে শিক্ষার মূলকাজ। 

আল্লাহ মানুষদিগকে তার বান্দেগী করার জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাই শিক্ষার উদ্দেশ্র হবে আল্লাহর খাঁটি বান্দা তৈরি করা। 

শিক্ষার মাধ্যমে এমন একদল লোক তৈরি করতে হবে যারা একটি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম এবং সে রাষ্ট্র পরিচালনায় খোদাভীরুতা, আমানতদারী ও সততা এবং যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে।

যেসব প্রত্যয় ও আদর্শের জন্র একটি জাতি মাথা উচুঁ করে দাঁড়ায় শিক্ষা ব্যবস্থাই তা জাতির ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভেতর অনুপ্রবিষ্ট করে। কাজেই একটি জাতির ধর্ম ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ হওয়া উচিৎ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। অধ্যাপক আবুল কালাম পাটওয়ারী বলেন, শিক্ষা হচ্ছে শারীরিক মানসিক দিক দিয়ে বিকশিত মুক্ত সচেতন মানব সত্তাকে খোদার সঙ্গে উন্নতভাবে সমন্বি করার একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া। 

আল্লামা ইকবান বলেন, জ্ঞান বলতে আমি ইন্দ্রিয়ানুভুতি ভিত্তিক জ্ঞানকেই বুঝি। কারণ জ্ঞান শারীরিক শক্তি প্রদান করে এবং এ শক্তি দানের অধনে হওয়া উচিৎ। এটা যদি দ্বীনের অধিনে না হয় তবে নির্ভেজালভাবে পৈশাচিক। (অধ্যাপক আবুল কালাম পাওটয়ারী, ইসলামে নারীর শিক্ষা, জাতীয় শিক্ষা সেমিনার 97) শিক্ষা বিজ্ঞানী Sir Percy nun তাঁর বিখ্যাত Education its data on first principles নামক গ্রন্থে লিখেছেন, শিক্ষার তিনটি লক্ষ্য হতে পারে :

1. ব্যক্তি চরিত্রের পূনর্গঠন 

2. পরিপূর্ণc জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ

3. ভাল দেহ ভাল মন বিনির্মাণ।

শিক্ষার গুরুত্বপূণ উদ্দেশ্য ও কার্যকরণ হল সততা, সত্যবাদিতা, সৌন্দর্য ও সদাচারণকে আধ্যাত্নিক জগতের শৃঙ্খলা বিধানের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় শামিল করে দেয়া। (মাওলানা আবদুর রহীম, শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি) 

ইসলামী শিক্ষার প্রধান বিষয় হল মানুষের ব্যক্তি-সত্তার উন্নয়ন। (ক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি) শিক্ষার প্রকৃত মূল্যবোধ ভিত্তিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইংরেজ করি Jhon Milton বলেন, Education is the harmonious development of body, mind and soul. অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে শরীর, মন ও আত্মার সুষম উন্নয়ন। এই harmonious development কোন মূল্যবোধ ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাকেই পূর্ণাঙ্গ ও উদার শিক্ষাবলি যা একজন মানুষকে তৈরি করে ব্যক্তিগত বা সরকারি দায়িত্ব, শান্তিকালীন ও যুদ্ধকালীন দায়িত্ব ন্যায়সংগতভাবে দক্ষতা সহকারে এবং উদারভাবে পালন করত। (উইলিয়াম হান্টার, দি ইন্ডিয়ান মুসলিম; দি প্রিমিয়াম বুক হাউজ) অতএব মানুষের মধ্যে ব্যক্তি সচেতনতা, আত্নানুভূতি এবং দায়িত্ব ও মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলাই হবে তার রচিত শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। ইসলামী শিক্ষা দর্শনে শিক্ষার দুটি দিক অবিচ্ছিন্ন:

1. একদিক দিয়ে তা শুধু সংশোধন ও সংগঠন

2. সামাজিক সংশোধন, সামাজিক পুনর্গঠন ও সার্বিক কল্যাণ বিধান।

তাই ইসলামী শিক্ষা দর্শনের মূল লক্ষ্য হল আল্লাহর প্রতি প্রেম ও ভালবাসাকে জাগ্রত ও তেজদীপ্ত করে তোলা। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ বিধান। (মাওলানা আবদুর রহীম, শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি) সুতরাং ইসলামে নারীর শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষা প্রদান করার মর্যাদা পুরুষের মর্যদার মত সমানভাবে নির্ধারণ করেছে এবং নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের জন্য কোন মর্যাদা নির্ধারণ করা হয়নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قِيلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوا يَفْسَحِ اللَّهُ لَكُمْ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছ এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদায় উন্নীত করবেন। (সুরা মুজদালাহ, আয়াত 11) সুতরাং বলা যায় যারাই জ্ঞানী তারাই মর্যাদাবান। 

জ্ঞান অর্জন ফরজ 

ইসলাম বিশ্বমানবতার চিরন্তন স্বভাবধর্ম যা মানব সভ্যতার ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের ধারায় পূর্ণতালাভ করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে। সামগ্রিক জীবন পদ্ধতিরূপে ইহকালন জীবনে দৈহিক, মানবিক ও আধ্যাত্বিক বিকাশের এবং পরকালীন জীবনে সার্বিক মুক্তির বিধি-বিধান ও পথ নির্দেশনা রয়েছে ইসলাম ধর্মে। ইসলামী জীবন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন এবং তদানুযায়ী আদর্শ জীবনযাপন ও আদর্শ সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে রাসুল (সা:) স্বয়ং ইসলামী শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।

মানব জাতিকে মূর্খতার অন্ধকর থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য রাসুল (সা:) এর আর্বিভাব হয়েছিল। اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ   خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ  اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ  عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ তাই তাঁর উপর অবর্তীন প্রথম বাণী, পড় তোমার প্রভুর নামে, ‍যিনি মানুষকে আলাক (রক্তপিন্ড) থেকে সৃষ্টি করেছেন। পর তোমার রব অতিব মহান। তিনি মানুষকে কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষাকে এক অজানা জ্ঞানের সন্ধান দিয়েছেন। যাহা সে জানত না। (সুরা আলাক, আয়াত 1-5) 

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ  জ্ঞানী ও মুর্খরা কি কখনও সমকক্ষ হতে পারে? (সুরা জুমার, আয়াত 9) তিনি আরও বলেন, وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ كَذَٰلِكَ ۗ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে (আল্লাহকে) অধিক ভয় করে। (সুরা ফাতির, আয়াত 28) রাসুল (সা:) বলেন, আল্লাহ যখন কোন ব্যক্তির কল্যাণ করতে চান তখন তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন।(বুখারী মুসলিম) রাসুল (সা:) আরও বলেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জvন ফরয।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান শিক্ষার জন্য পথে বের হয়, আল্লাহ তায়ালা তাহার জন্য বেহেশতে যাইবার পথ সহজ ও সুগম করে দেন। (তিমিযির হাদিস 2649) নবী করিম (সা:) ভাল করে জানতেন একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে হলে নারী পুরুষ সকেলকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাই তিনি নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

হযরত আয়শা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি কন্যা সন্তানদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তাকে উত্তমভাবে লালন-পালন ও শিক্ষাদান করে ঐ কন্যা সে ব্যক্তির জাহান্নামের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। (বুখারী শিষ্টাচার অধ্যায়) রাসুল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তির অধিনে কোন দাসী থাকে, সে যদি তাকে উত্তমরূপে লেখাপড়া ও শিষ্ঠাচার শিখিয়ে স্বাধীন করে দেয় এবং বিবাহ করে সে ব্যক্তি দুটি প্রতিদান পাবে। (বুখারী বিবাহ অধ্যায়)

ইবনে হুরায়েজ (রা:) বর্ণনা করেন কোন এক ঈদুল ফিতরের দিনে রাসুল (সা:) সব সালাত আদায় শেষে খুতবা দিলেন খুতবা শেষে তিনি মহিলাদের কাছে গেলেন এবং তাদেরকে কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ দিলেন। হাদিস (সুহিহ বুখারী, ইলম অধ্যায়)

এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেল যে শুধু নিজ কন্যা সন্তান নয়, বরং দাস দাসীদেরকেও সচ্ছরিত্র ও সুশিক্ষা দানের কথা বলা হয়েছে। জ্ঞান অন্ধেষণকারী ও জ্ঞানীদের সুউচ্চ মর্যাদা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قِيلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوا يَفْسَحِ اللَّهُ لَكُمْ তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী ও জ্ঞানী আল্লাহ তাদের মর্যাদার আরও উন্নতি দান করবেন। সুরা মুজদালাহ, আয়াত 11  

জ্ঞান অন্ধেষণ সম্পর্কে রাসুল (সা:) বলেছেন, ঐ ব্যক্তির মুখ উজ্জল করুন যে আমার বানী শ্রবণ করেছে। অত:পর তা অন্যের নিকট পৌঁছে দিয়েছে। জ্ঞানের অনেক বাহক নিজেই জ্ঞানী নয়। আবার জ্ঞানের অনেক বাহক নিজের চেয়ে অধিক জ্ঞানীর কাছে তা পৌঁছে দেয়। তিরমিযি ইবনে মাজাহ। কুরআন ও হাদিসের প্রামাণ্য আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়র যে শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে মানব মানবীকে ব্যাপকভাবে নিদের্শ, উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। জ্ঞান অর্জনের প্রতি রাসুল (সা:) বলেন, প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।হাদিস (বায়হাকী)

এখানে জ্ঞান অর্জন দ্বারা ধর্মীয় জ্ঞানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে শিক্ষা দ্বারা মানুষ তার স্রষ্টাকে, সৃষ্টিজগতকে আল্লাহর বিধি-বিধান পালন, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, বৈধ-অবৈধ, পর্দা-বেপর্দা, হালাল- হারাম, পাক-নাপাক, ফরজ-ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইত্যাদি বিষয়ে বিবেককে পার্থক্য নিরূপন করতে শেখায় প্রভুর ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করে জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাহ্যিক প্রয়োজনে বাংলা, ইংরেজি, অংক, ভূগোল, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, পদার্থ, রসায়ন, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পৌরনীতি, গ্রাস্থ অর্থনীতি, সাচিবিক বিদ্যা ও বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন নিষেধ আরোপ করা হয়নি। রাসুল (সা:) বলেছেন, রাতের কিছু সময় জ্ঞানচর্চা করা সরা রাতের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। হাদিস (সুনানে দারমী) 

জ্ঞানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য 

বর্তমান বিশ্ব সমাজের অন্যতম অংশীদার নারী। নারী গৃহিনী, মা, বন্ধু ও শিক্ষক। মানুষের অন্তর্নিহিত প্রকৃতি ও প্রবৃত্তির লালন-পালন, চিত্ত-বিনোদনের ক্রমবিকাশলাভ শিক্ষাকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে।  মহান আল্লাহ তায়ালা وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এ উদ্দেশ্যে যে তারা কেবল আমার দাসত্ব করবে। সুরা জারিয়াত, আয়াত-56 মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেচনা দিয়ে যখন সে তার আচার-আচরণ, চাল-চলন ও কার্যকলাপকে বিচার করবে তখন কোনটা ভাল, আর কোনটা মন্দ তা সহজভাবে বুঝতে পারবে। আল্লাহ বলেন,كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ

তোমরা অতি উত্তম লোকসমষ্টি। মানুষের কল্যাণের জন্যেই তোমাদের সৃষ্টি। তোমরা ন্যায়ের আদেশ দিবে ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। সুরা, আল ইমরান, আয়াত-110              

যে শিক্ষা বা বিদ্যা মানুষের ব্যক্তিগত কর্তব্য, সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে জানা যায় না, ব্যক্তি চরিত্রের কর্মে এবং মানবতার কল্যাণ হয় না তা ইসলামের দৃষ্টতে শিক্ষা নামে অভিহিত করা যায় না। নবী করিম (সা:) এ ধরনের শিক্ষা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চেয়ে বলেন, হে আল্লাহ ! যে জ্ঞান ও বিদ্যা কোন কল্যাণ দেয় না আমি তোমার নিকট তা থেকে পানাহ চাই। হাদিস (মিশকাত শরীফ) অন্য এক হাদিসে আছে, আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা:) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের ছোট বয়সে ইসলামী শিক্ষাদান ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলার চেষ্ট করা কর্তব্য।       

হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (সা:) বলেছেন, মানুষ মারা যায়, তখন তার যাবতীয় কাজ কর্মের সময় ও সুযোগ শেষ হয়ে যায়। অবশ্যই তখনও তিন প্রকারের কাজের ফল সে পাইতে পারে। যথা, (1) সদকায়ে জারিয়াহ, (2) এমন ইলম ও বিদ্যা যার ফল সুদূর প্রসারী হইতে পারে এবং (3) সচ্ছরিত্রবান সন্তান যারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। হাদিস (মুসলিম শরীফ) 

ইসলাম মূল শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোন পার্থক্য নির্ণয় করেনি। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল উহার দ্বারা উৎকৃষ্ট মাতা, উৎকৃষ্ট স্ত্রী, উৎকৃষ্ট বোন, উৎকৃষ্ট ভাবী ও উৎকৃষ্ট গৃহিনীরূপে গড়ে তোলা। তার চরিত্র গঠন ও সামাজিক জীবন যাপনের যাবতীয় বিধি-বিধান জানার সুযোগ যেন পায়। তবে নারীর জ্ঞান অর্জ ন করার সময় তাকে অবশ্যই শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে অর্জjন করতে হবে। ইসলাম সহশিক্ষাকে কখনও অনুমোদন করে না। 

হযরত আয়েশা (রা:), হাফসা (রা:), উম্মে সালমা (রা:) ও উম্মে ওয়ারাকা (রা:) পুরো কুরআর শরীফ হিফজ করেছিলেন। রাসুল (সা:) এর সকল স্ত্রীগণ কম বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তবে বিবি আয়েশা (রা:) 2210টি হাদিস বর্ণনা করেন। ফিকহের ক্ষেত্রে এত অধিক ফতোয়া রয়েছে যে তাতে কয়েকখানা গ্রন্থ হতে পারে। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, 2য় খন্ড)। খানেসা, সফিয়া, আতিকা, যয়নব, উম্মে আয়মন, মায়মুনা, রুকাইয়া (রা:) কবিতা রচনায় প্রসিদ্ধি লাভ করেন। রফিদা, আসলামিয়া, উম্মে মুতা, উম্মে কারাশা, হাসনা বিনতে হাজাশ, ময়াজ, লায়লা, উম্মে যিয়াদ, রুবি, উম্মে আতিয়া, উম্মে সুলাম (রা:)গণ চিকিৎসা ও অস্ত্রোপাচারে অধিক দক্ষ ছিলেন। যেহেতু জ্ঞান অর্জন করা নারী এবং পুরুষের সবার জন্য ফরজ, তাই আমরা দেখি ইসলামের প্রাথমিক যুগে উম্মাহতুল মোমেনিন মহিলা সাহাবী, তাবেঈ মহিলাগণ বিভিন্ন বিষয়ে তারা পান্ডিত্য অর্জ ন করেছেন।           

নারী শিক্ষায় সাবধানতা অবলম্বন

ইসলাম নারীর জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের কোন বিষয়কেই নিষিদ্ধ করেনি। কিন্তু কোন জ্ঞান নারীর স্বভাব সম্মত এবং নারীর জন্য প্রয়োজনীয়তা তা স্থিরকরে শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে অর্জন করতে হবে। ইসলাম সহশিক্ষাকে কখনও অনুমোদন করে না। এজন্য নারীদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারে। নারী শিক্ষার উদ্দেশ্যই হল তাকে উৎকৃষ্টর মাতা, উৎকৃষ্ট স্ত্রী এবং উৎকৃষ্ট গৃহিনীরূপে গড়ে তোলার মাধ্যমে মানবসভ্যতার উৎকর্ষ সাধন করা।

নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা দেওয়া (এর অর্থ এই নয় যে, তাকে উচ্চশিক্ষা দেওয়া যাবে না) উচিত। যাতে তারা তাদের পরিবেশে শিক্ষালাভ করতে পারে। এখানে তাদের পরিবেশ বলতে বুঝানো হয়েছে শরিয়তের সীমারেখার মধ্য তা অতিক্রম করে নয়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ছেলে-মেয়ে একসাথে একই ক্লাসে পাশা-পাশি, পাঠ শিখার কারণে সমাজে বেহায়াপনা ও যৌনাচারসহ নানা শরিয়ত বিরোধী কর্মকান্ড চলছে। 

আল্লাহ নারীদের সুক্ষ্ম অনুভূতি দান করেছেন। যা তাদেরকে শিক্ষা ও ধর্মের প্রতি আগ্রহী করে যদি তাদেরকে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জনের অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়া যায়। কারণ নারীরা দ্বীনি চরিত্র ও উত্তম শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে অগ্রগামী। যদি তারা এমন শিক্ষক-শিক্ষিকা পায় যারা সৎপথের নির্দেশনা দিতে পারেন, তাহলে তারা শ্রবণ ও অনুসরণে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। (রাসুল সা: যুগে নারী স্বাধীনতা, আবদুল হালিম আবু হুফাজ, ঢাকা 1খন্ড) 

সহশিক্ষার কারণে অবাধে মেলামেশার ফলে বহু ধরনের সংক্রামক ব্যাধি বিস্তার লাভ করছে যে, কারণে সমাজের অসংখ্য তরুণ-তরুণীর মুল্যবান জীবন ধ্বংস হচ্ছে। শিক্ষার মাধ্যমে যে নারী মানব সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনের ভূমিকা পালন করত, সেই নারী মানব সভ্যতার বিপর্যয় ডেকে আনেছে। আল্লাহ বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ তোমরা গৃহভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খ তার যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না। সুরা আহযাব, আয়াত-33। রাসুল (সা:) বলেন, তোমাদেরকে প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হলো। হাদিস (সহিহ বুখারী) তবে স্বামী, অভিভাবক, পিতা ও মাতার অনুমতি নিয়ে বের হতে পারবে এবং হিজাব পরিহিত অবস্থায় বের হতে হবে। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا

হে নবী আপনি বিবি, কন্যা এবং মুমিন মহিলাদের বলে দিন তারা যেন তাদের শরীর চাঁদর দ্বারা আবৃত করে রাখে। সুরা, আহযাব, আয়াত-59

রাসূল (সা:) বলেন, যে নারী সুগন্ধি দ্রব্যাদি ব্যবহার করে লোকের মধ্যে গমন করে সে একজন ভ্রষ্টা নারী। হাদিস (তিরিমিযি) 

ইংল্যান্ডের কিখ্যাত মণীষী জোসেফ বলেন, যে ছেলেকে মানুষ করতে একটি বিশটি বছর সময় লাগে, ঠিক একটি মেয়ে সেই ছেলেকে মাত্র বিশ মিনিটের ভেতর নষ্ট করে দিতে পারে। ভদ্রতা ও নম্রভাবে হাটতে হবে, যাতে করে ‍জুতার শব্দ মানুষ শ্রবণ করতে না পারে। আল্লাহ বলেন, وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তাওয়অ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সুরা, আল নুর, আয়াত -31     

নৈতিক শিক্ষা

আদর্শ বিবর্জিত শিক্ষ আমাদের জাতীয় চরিত্রকে কুলষিত করেছে, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইংরেজ করি Jhon Milton বলেন, Education is the harmonious development of body, mind and soul.অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে শরীর মন ও আত্মার উন্নয়ন। সুতরাং একটি জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি ও সভ্যতা বির্ণিmমানের জন্য চাই একটি শিক্ষিত জনগোষ্টী। আর জনগোষ্টীর শিক্ষার জন্য চাই শিক্ষিত মাতৃসমাজ। বোনাপোর্ট বলেছিলেন, Give me a good mother. I will give me a good nation ‘অর্থাৎ তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একজন শিক্ষিত জাতি উপহার দিব।’ পারিবারিক, সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলার জন্য নারী শিক্ষার পাশা-পাশি চাই সুশৃঙ্খল, শালীনতাবোধ সম্পন্ন নারী সমাজ। আমরা একটু চিন্তাশীল হলে বুঝতে পারব আমাদের দেশে খুন-খারাবী; রাহাজানী;চিনতাই; চাঁদাবাজী; মাস্তানী; নারী নির্যাতন; অপহরণ; নারী পাঁচার; ধর্ষণ; ইভ টিজিং; এ্যাসিড নিক্ষেপসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কাজ যারাই করছে তাদের অধিকাংশ বস্তি থেকে উঠে আসা বা বস্তিতে যাদের বসবাস। কারণ সেখানে নারীদের শালীনতাবোধ, সংযম, শ্রদ্ধাবোধ ও রক্ষণশীলতা নেই। আর এই গুণগুলি অর্জিত হয় শিক্ষার মাধ্যমে। বলা যেতে পারে আমাদের মেয়েরা তো এখন যথেষ্ট শিক্ষিত। তাহলে কেন উপরোক্ত অপরাধগুলি বেড়ে চলছে। তাই আমরা বলতে চাই আমাদের মেয়েরা এখন যথেষ্ট শিক্ষিত, কিন্তু তারা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়ার ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। এখানে নৈতিক শিক্ষা বলতে ধর্মীয় অনুশাসন ভিত্তিক শিক্ষা বুঝানো হয়েছে। সুতরাং সমাজ ও সভ্যতা বির্ণিমানে নারী শিক্ষা অপরিহার্য। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here