বুকের দুধ পান : ইসলামী দৃষ্টিকোন - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪

বুকের দুধ পান : ইসলামী দৃষ্টিকোন

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবছর ১ আগষ্টকে বিশ্বমাতৃদুগ্ধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। যার প্রতিপাদ্য হল-বুকের দুধ খাওয়ান শিশুকে বাঁচান। তথ্য প্রযুক্তির যুগে মায়ের দুধের পক্ষে প্রচারণা এবং মায়ের দুধের বিকল্প নাই। এ জাতীয় শ্লোগান গুলো আজ বিশ্বজুড়ে উচ্ছাতি হচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গোটা বিশ্বে আজ এ ধরনের প্রচার করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশে সরকারী ও বেসকারী পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালিত হচ্ছে। সভা, সেমিনার ও সেম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হচ্ছে। মায়ের দুধের গুরুত্ব উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার অসংখ্য নিত্য-নতুন যুক্তি প্রর্দশন করে শিশুকে মাযের দুধ পান করানোর উৎসাহিত করে চলেছেন। পৃথিবীর প্রথম মানব, মানবী হযরত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া (আ:) এর সময় থেকে মানব জাতির সাথে সংশ্লিষ্ট।মায়ের দুধ পান করানোর বিষয়টি মানব জাতির গন্ডি পেরিয়ে গোটা বিশ্বের তাবৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীকুলের সাথে সম্পৃত্ত।

আধুনিকতার এই যুগে স্বচ্ছল লোকদের স্ত্রীগণ নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য ও চাকচিক্যের অটুট আর ও দীর্ঘ স্থায়ী করার জন্য আপন সন্তানদেরকে বঞ্চিত করছে তাদের বুকের দুধ পান করানো থেকে। অথচ এ অযৌক্তিক চিন্তা, চেতনা প্রাকৃতিক নিয়ম, নীতির পরিপন্থী তো বটেই এমনকি শিশুদের সঠিক প্রতি পালন নীতির ও খেলাপ।

ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআন মানব জাতীর ইহলোকিক কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পথ প্রদর্শক। মায়ের বুকের দুধ পান করানোর বিষয়টি একটি কল্যাণকর বিষয় হিসেবে আল কুরআনের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি।, এমন কি শাল দুধ পান করানোর মত বিষয়টির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আল কুরআনে পাওয়া যায়। এখন বিশ্বে মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে প্ররোচনা চালাতে হয়।  সত্য হলো এ প্ররোচনার দায়িত্ব পালন করছে অমুসলিম বিশ্ব। যাদের হাতে সঙ্গত কারণেই আল কুরআনের মতো জ্ঞানগর্ভ ধর্মগ্রন্থ নেই। অথচ আমরা মুসলমানরা আজ তাদের মূখ পানে চেয়ে থাকতে হয় নছিহতের জন্য। আমরা যদি আল কুরআনের সঠিক অনুসরণ অনুকরণ করি তাহলে মুসলিম জাতি কখনোই এ জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন  হতো না। এমনকি বিশ্ববাসীকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে পারতো।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার পক্ষে এবং মায়ের দুধ পানে বাধা দানকারী পন্য সামগ্রি ও শিশুর খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার দেয়া প্রাকৃতিক বিধান পুনরায় মনব সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াস পাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা বিশ্বব্যাপী বিরাট কর্মসূচিও গ্রহণ করেছে যা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়।

মায়ের দুধের উপকারিতা - মায়ের দুধ পান পৃথিবীর এই প্রাকৃতিক নিয়মকে যারাই অযত্নে অবহেলায় আমল না করে আসছে তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় আজ এ হচ্ছে। তারই একটি অবহেলা মায়ের বুকের দুধ নিজ সন্তানদের না খাওয়ানো। তাইতো আজকের পৃথিবীতে শ্লোগান উঠছে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। কারণ বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখছে যে, মায়ের বুকের দুধ পুষ্টিকরই শুধু নয় এতে রয়েছে জীবানু প্রতিরোধক উপাদান। যা বাইরাসের বিরুদ্ধে বড়ই কার্যকর। মায়ের দুধে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপদান। মায়ের বুকের দুধ পরীক্ষা করে জানা যায় বুকের দুধে শুধুমাত্র টিউমার কোষ গুলোই মারা যায়। পক্ষান্তরে স্বাভাবিক কোষগুলো অক্ষত থাকে। 

মায়ের বুকের দুধ এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কার্যকরী। বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের স্তন ভরিয়ান ক্যান্সার এর সম্ভাবনা থাকে না। বুকের দুধ খাওয়ানো সময়কালীন মা গর্ভবতী  না হওয়ায় মায়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। অন্যদিকে বুকের দুধ ক্রয় করতে হয় না বিধায় সংসারে সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়। মোট কথা মায়ের বুকের দুধ শিশুদের জন্য এক বড় নেয়ামত। মায়ের বুকের দুধের কয়েকটি উপকারিতা নিম্নে তুলো ধরা হলো :

★ পাঁচ মান বয়স পর্যন্ত বুকের দুধেই যথেষ্ঠ।

★ বুকের দুধ খেলে শিশুর ডাইরিয়া, শ্বাসনালীর অসুখ বিসুখ ও অন্যান্য রোগ হয় না।

★ বুকের দুধ খেলে শিশুর স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

★ বুকের দুধ খেলে মা ও শিশুর মাঝে নিবিড় মানবীক সম্পর্ক গড়ে উঠে।

★ বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে বাড়তি টাকা খরচ হয় না।

★ মায়ের বুকের দুধ শিশুর জীবনের শ্রেষ্ঠ সুচনা।

★ মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালো শিশুর হাপানী রোগ হয় না।

★ মায়ের বুকের দুধ থেকে শিশুকে বঞ্চিত করার ফলে শিশুর মাঝে মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।

শালদুধ কাকে বলে- শাল শব্দটির অর্থ নির্যাস। শাল দুধ অর্থ মূলধন। ইংরেজিতে বলা হয় Colostrum আরবী ভাষায় বলা ‘আল লিবা’ কিংবা ‘লিবা’। লিবা হলো সন্তান উৎপাদনের সময়কালীন প্রথম দুধ। সন্তান জন্ম দানের সময় সর্ব প্রথম আগত দুধ হলো লিবা।

শাল দুধের উপকারিতা ও গুরুত্ব- শাল দুধের উপকারিতা সম্পর্কে A Guide to breast feeding নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে- Your first yellowish milk colostrum. Which may not even look like milk to you. Provides all the nutrition your new born need. The first yellowish milk the breast make is good for the baby. Colostrum is rich is vitamins, Proteins, and minerals which the baby need to be healthy and strong. Colostrum also helps protect the baby from infection and will prevent the baby from developing allergies. (A Guide to breast feeding রিভাইডজ এডিশন, ১৯৮৬ পৃষ্টা ১৩)

শাল দুধ সম্পর্কে- Encyclopedia Britannica তে বলা হয়েছে- Colostrum the milk released from the breast when lactation starts differs in composition from nature milk produced when lactation in well established the early milk. Or colostrum is rich in essential for growth it also contains the proteins that convey immunity to some infections from mother to young although not in such quantity as among domestic animals.  

জন্মের পর মায়ের স্তনে হলুদ দুধ আসে, তাতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ‘ইমুনোগ্লোবিন’ এর ফলে যে কোন রোগ শিশুকে আক্রমন করতে পারে না। (Encyclopedia Britannica ভলিউম ১০,১৫তম সংস্ককরণ, পৃষ্টা ৫৮৪)

কুরআনে দুধপান ও শাল দুধ সম্পর্কে-আল্লাহ বলেন, وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ ۖ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ ۚ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَّهُ بِوَلَدِهِ ۚ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَٰلِكَ ۗ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَن تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا ۗ وَإِنْ أَرَدتُّمْ أَن تَسْتَرْضِعُوا أَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُم مَّا آتَيْتُم بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ যে স্তন্যপান পূর্ণ করতে চায় তার জন্য জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর স্তন্য পান করাবে। পিতার কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ পোষণ করা। কাউকে তার সাধ্যাতিত কার্যভার দেয়া হয় না। কোন জননীকে সন্তানের জন্য এবং কোন পিতাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। এবং উত্তরাধিকারিগণের ও অনুরূপ কর্তব্য  কিন্তু যদি তারা পরস্পরের সম্মতি  ও পরামর্শক্রমে স্তন্য পান বন্ধ রাখতে চায় তবে তাদের কোন অপরাধ নেই। তোমরা যা বিধিমতো দিতে চেয়েছিরে তা যদি অর্পন কর তবে, ধাত্রী দ্বারা তোমাদের সন্তানকে স্তন্যপান করাতে চাইলে তোমাদের কোন পাপ নাই। আল্লাহকে ভয় কর এবং মনে রেখ যে, তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক অবগত। (সুরা বাকারাহ, আয়াত ২৩৩) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ ۚ وَإِن كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتَّىٰ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ۚ فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ ۖ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُم بِمَعْرُوفٍ ۖ وَإِن تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَىٰ ‘যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দিবে এবং সন্তানদের কল্যাণ সম্পর্কে তোমরা সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি নিজ নিজ দাবীতে অনমনীয় হও তাহলে অন্য নারী তার পক্ষে স্তন্য দান করাবে। (সুরা আত্ব ত্বালাক, আয়াত 6) আল্লাহ বলেন,وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ ۖ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي ۖ إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ মুসা জননীর অন্তরে ইঙ্গিত করলাম যে, শিশুটিকে স্তন্য দান করতে থাক। যখন তুমি তাঁর সম্পর্কে কোন আশংকা করবে তখন তাকে দরিয়ায নিক্ষেপ করিও এবং ভয় করিও না দু:খ করিও না আমি একে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব এবং একে রসুলদের একজন করব। (সুরা আল কাসাস, আয়াত ৭) আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতী তাঁর ব্যাখ্যায় সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, যে আয়াতটির নির্দেশ অনুযায়ী নবজাতক শিশুটিকে শাল দুধ বা লিবা পান করানো ওয়াজিব হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ মা সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় ‘দু’ বছর পর (সুর লোকমান, আয়াত ১৪)

পরিশেষে এ কথা নির্দিধায় বলা যায় মায়ের বুকের দুধ শিশুদের জন্য মহান আল্রাহ তায়ালার এক অপূর্ব নেয়ামত। মায়ের বুকের দুধ পান করানোর মাধ্যমে একদিকে মানব সভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হবে অন্যদিকে অর্থনিতিক সমৃদ্ধি হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here