বাংলাদেশ আজ মাদক দ্রব্যের বিশাল বাজারে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বস্বাধীন চেতনা বোধ বিলুপ্ত করার জন্য মাদকের মরণাস্ত্রে বর্ষণ ও এসিড কালচারই যতেষ্ট বিকল্প আর কোন অস্তের দরকার নেই। মাদক দ্রব্যের প্রতি দুনির্বার আকর্ষন মানুষের এক আদিম প্রবনতা। এ প্রবনতার কারনেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিশেষ গেষ্টির মধ্যে এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল আনন্দের উৎসবে কখনো ধর্মীয় উৎসবে মানব সভ্যতার প্রাচীনতম যতগুলো অভ্যাস আছে তন্মধ্যে প্রাচীনতম হল মাদক দ্রব্য ব্যবহার। ১৫ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় মাদক সংক্রান্ত মামলা ৯৬৬৪৭টি, আসামী ৯৪৬৫৮ জন, ইয়াবা ৩১১৮১৬৩৯৩ পিস, গাঁজা ১০৩৩৪১৭ কেজি, গাঁজা গাছ ৩৯৫৩৮টি, হিরোইন ২৯৮২কেজি, ফেন্সিডিল ৮৬৪২ লিটার, ফেন্সিডিল ৬৪৭৫৪৬৩ বোতল, ইনজেক্টিং ড্রাগ ১০৮৮৮৩৪ এ্যাম্পুল এবং বিদেশীমদ ১৮৩৫০১৮ বোতল এবং কোকেন ৩৪.৭১ কেজি উদ্ধার করা হয়েছে।
২০২০ সালে মাদকসেবীদের ওপর জরিপে দেখা যায় যে, শিশু মাদকাসক্ত ৪.৫৭ শতাংশ, ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৬.৮৯ শতাংশ, ২১ থেকে ২৫ বছরের বয়সের তরুণদের সংখ্যা ২৪.৭২ শতাংশ, ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৭.২৬ শতাংশ, ৩১ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৫.২৩ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে ৮.৬৩ শতাংশ, ৪১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩.৫ শতাংশ, ৪৬ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬.৯ শতাংশ এবং ৫০ বছরের ওপরে ২.৩ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে যে এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ধুমপায়ী। ধুমপায়ীরা বলে তাকে কাজের গতিকে চাঙ্গা করতে সিগারেটের বিকল্প নাই। কিন্তু এদের এ ধারণা একেবারেই মিথ্যা বরং জরিপে দেখা যায় ধুমপায়ীদের দ্বারা লোকজন দ্রুত অসুস্থ হয়। বাংলাদেশে মাদকের প্রসার ও ভৌক্তার সংখ্যা দুটোই অত্যন্ত ভয়াবহ। ১৮ কোটি মানুষের এই ছোট দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৩ লাখ। উদ্বেগজনক হলেও এ সংখ্যাটি দিন দিন গাণিতিকহারে বাড়ছে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহতম মুসলিম দেশ। বাংলাদেশের মানুষের ইসলামী চেতনাবোধকে ভোতা করে দেয়ার বিশাল এক নীল নকশা নিয়ে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর ও পঞ্চম বাহিনীর সদস্য ভারতীয় উগ্র হিন্দু গোষ্টি এবং বাংলাদেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবি সমন্বয়ে গঠিত মাদক দ্রব্যের আগ্রাশনের এ্যাকশন জোট করে বাংলাদেশের সীমান্ত জুড়ে মদ, গাঁজা, আফিম, হোরোইন, ফেনসিডিল প্রভূতি সকল প্রকার মাদক দ্রব্যের গুদাম ঘর আড়ত খুলে কোটি, কোটি টাকার মাদক দ্রব্য পরিকল্পিত ভাবে চোরাচালানী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। নির্বিকার চিত্তে সীমান্তরক্ষী ও প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই। নদী পথে নৌকা, লঞ্চ, ট্রলার, স্টীকার সহ জলযানে, স্থল পথে, ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, রেলগাড়িতে, প্রাইভেটকার, ঠেলা গাড়ি, রিকশায় অন্যান্য চোরাচালান কৃত ভারতীয় পন্যের সাথে উল্লেখিত মাদক দ্রব্য ব্যাপক ভাবে চালান দিয়ে থাকে তার সাথে বেশ্যা, পতিতা, যৌন কর্মী, চোর, ডাকাত, ছিনতাই কারীরা, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয়ের অকুল সাগরে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। একটা স্বাধীন জাতীকে পদানত দাসানুদাস করে রাখার জন্য সে দেশের স্বাধীন স্পৃহা চেতনাবোধ ধ্বংস করে মাঝা ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেখার জন্য, সে দেশের স্বাধীনতাকে সস্যাত করার জন্য, সে দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি, সে দেশের সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের কর্মদক্ষতা ও নৈতিক অবক্ষয় ঘটিয়ে দেয়াটা পারমানবিক বোমার চাইতে ও মাদক অধিকতর ধ্বংসাত্নক ও কার্যকর বলে প্রমানিত।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের ক্ষেত্রে মাদক সব সময় ক্ষতিকর নেশা দ্রব্য হিসেবেই দেশে পরিচিত এবং চিহ্নিত। কারণ বৈজ্ঞানিক প্রয়োজন গবেষনা চিকিৎসা কোন ক্ষেত্রেই মাদকের ইতিবাচক ভূমিকা না থাকায় নিরন্ধুশভাবে এটি রাষ্ট্রীয় ভাবে বন্দ করে দেওয়া অনস্বীকার্য। এই বাস্তবতায় দেশের সম্ভাবনাময় উঠতি প্রজন্ম যাদের বয়স মাত্র ১৮ থেকে ২৫ তারাই এ নেশার জালে জড়িয়ে পড়ছে বেশী। মাদকাসক্তের এই নিন্মগামী হওয়ার কারনে সমাজ ব্যবস্থাকে বিচলিত করে তুলছে। এমনিতেই সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অশান্তি, রাজনৈতিক সংঘাত, দারিদ্র কর্মসংস্থানের অভাব এবং ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্যতার কারনে উঠতি প্রজন্ম যেভাবে বিভ্রান্ত জীবনাচরনে অতীষ্ট সেখানে সামাজিক চোরাগলিতে মাদেকের হাতছানি তাদের বশিভূত করতে প্রলুব্দ করেছে বলে উত্তরোত্তর মাদকা সক্তের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে মাদকের সহজ প্রাপ্যতা বন্ধু বান্ধবদের চাপ, কৌতুহল, বিরুপ পারিবারিক পরিবেশ, জৈবিক চাহিদা, হতাশা, ভৈৗগলিক সুবিধা, পারিবারিক দ্বদ্ধ, চিত্র বিনোদনের অবাব, অজ্ঞতা, ব্যক্তিগত কারণ, ধর্মীয় অনুভূতির অভাব, ক্রটিপূর্ন ব্যক্তিত্ব, হাতে প্রচুর অর্থ থাকা, বেকারত্ব নিঃসঙ্গতায় মাদকের ব্যবহার বাড়ছে।
সারা দেশের যুবক তরুনদের অধিকাংশ নেশায়গ্রস্ত হয়ে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে, সেই খবর অনেক ভিভাবক রাখেন না। কিন্তু পারিবারিক দায়িত্ব বোধের উপর বিশেষ করে বাবা, মায়ের উপর তাদের সন্তানদের উপর নজর রাখা একান্ত জরুরী বলে আমরা মনে করি। সেই সাথে দেশের প্রতিটি নাগরিক তার ঘরের প্রতি তার আশ পাশের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই বুঝতে পারবে যে, মাদকের নেশায় মত্ত সমাজের এই শ্রেনীর ছেলে পেলে কারা। নেশাগ্রস্ত হয়ে এরা নৈতিকতার অবক্ষয় শুধু ঘটাচ্ছেনা সমাজ ও জাতয়ি জীবনে সর্বনাশা ডেকে আনছে। বর্তমান বাংলাদেশে বহুমুকী অপরাধের , মারাত্নক সয়লাভ চলছে তার অন্যতম কারণ প্রচ্চাত্য ও অশ্লীল আকাশ সংস্কৃতি ঘরে ঘরে প্রদাপর্ন, নেশা দ্রব্যাদির রাগামহীন ব্যবস্থা ও ব্যবহার, নৈতিকতাহীন শিক্ষা ব্যবস্থা, অশ্লীল বই ও পতিকা, ডিশ কালচারের বদৌলতে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ ছবি দেখে যুব সমাজের নৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। পদা প্রথা না তাকায় আমাদের যুব সমাজের নৈতিকভিত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারণ পুরুষ নারীর কামনীয় অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলোর প্রতি প্রলুব্ধ নজরে তাকায় ফলে লেখা পড়া বাদ দিয়ে ক্রমান্ধয়ের দিকে পা বাড়ায়। এ সমস্ত সমস্যা গুলো সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রন করতে পারে সরকার।তার সাথে জনগনের সক্রিয় সাহায্য সহযোগিতায় ও পুলিশ প্রশাসন কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। তবে একান্নবতী পরিবার ও ধর্মীয় অনুশাসন মাদকা সক্তের এই অবরীলাকে ঠেকিয়ে রাখছে। তবে সমাজে শিক্ষিত জনগোষ্ঠির সংখ্যা ও প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করতে না পারলে এই সমাজ তেকে মাদকের অপব্যবহার দুর করা যাবে না।
মাদকাসক্তের এই নীল দশর্ন থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের রক্ষার জন্য বিধি বিধান দিয়েছেন। এই দুনিয়ার মানুষকে মহান আল্লাহ তায়ালা বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃস্টি করেছেন। তিনি চান দুনিয়ার মানুষ আল্লাহর নিয়ামত সমুহ প্রয়োজন মতো পেয়ে সুখ সাচ্ছন্দ্যপূর্ন জীবন যাপন করুক। ইসলামের লক্স্য হচ্ছে মানব সমাজের সংশোধন ও মানুষের সার্বিক কল্যান সাধন এবং সর্ব প্রকারন্যায়, জুলুম, দুস্কৃতি ও পাপ কাজ থেকে তাদের মুক্ত ও বিরত রাখা, ইসলাম আল্লাহর অর্বতীন তুলনাহনি জীবন ব্যবস্থা, এর লক্ষ্য মানবতার কল্যান সাধন এবং মানব জীবনের স্বাভাবিক বিকাশ ও অগ্রগতির সাতে পূর্ন মাত্রায় আনজাম বিদান। ইসলাম সকল প্রকার মাদক দ্রব্য ও মদ পান সম্পূর্ন রুপে স্থায়ীভাবে হারাম করেছে মাদক বিরোদী আইন রচনা করে। ইসলাম মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে হিপাজতের জন্য সুস্ত্য দেহ মেধা ও সমাজ বিনির্মানের উদ্দেশ্য বদ্ধ পরিকর। একটি সমাজ বিনির্মানের জন্য সুস্থ্য মস্তিষ্ক একান্ত বাবেই কাম্য। মাদকতা যেহেতু মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে নস্যাত করে দেয় পলে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রে তথা গোটা মানব সমাজের অকল্যান ও অমঙ্গল সাধিত হয়। তাই ইসলামে মাদকতার শাস্তির জন্য আইন বিধিবদ্ধ হয়েছে যার পিছনে রয়েছে বহু বিদ কারণ ও যোক্তিকতা যেমন- মানসিক ক্ষতি, এর পলে মদ্যপায়ী উত্তোজিত হয়। আত্নহত্যার প্রবণতায় উৎসাহী হয়। মানসিক তব্রি প্রতিক্রিয়ায় ভোগে, গোপসীয়তাফাঁস করে দেয়। কর্মক্ষমতার অবনতি হয়। হজম শক্তি বিনষ্ট হয়, উচ্ছংখল আচরণ করে, অসংলগ্ন ব্যবহার করে, দুর্বলতা ও হতাশায় বোগে,খাদ্যস্পৃহা কমে যায়। হচহারা বিকৃত হয়। স্নায়ুবিক দৃর্বলতা সৃষ্টি হয়। লিবার ও কিডনিকে সম্পূর্ন রুপে বিনষ্ট করে দেয়। রক্ত দুষিত হয়, এইচ আই ভি / এইডস সহ নানাবিধ কঠিন রোগ হয় সন্তান দুর্বল হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। যার কারণে মহান রাব্বুল আলামীন এই ক্ষতি কারক মদ ও মাদকতা তার বান্দাদের জন্য হারাম গোষণা করেছেন। মাদক একটি রাসায়নিক যুদ্ধের সামিল। মাদকের এই আগ্রাসন থেকে আমাদের জয়ী হতেই হবে। অন্যথায় দেশ ও জাতী রসাতলে যাবে। মাদকের হিংস্র তাবা তেকে বাচার জন্য কতিপয় পরামর্শ নিন্মে উপস্থাপন করা হলো-
মাদক সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীনের ও তার রাসুলের বিধিবিধান পবিত্র কোরআন-হাদিসের দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলা।
ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ।
নৈতিক অবক্ষয়ের মাদকাসক্ত পতিতা বৃত্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে। সুতরাং মাদকের সাথে পতিতা বৃত্তির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালাতে হবে।
মাদক দ্রব্য জনিত বৈধ অনৈতিক ব্যবসা বাণিজ্য ও অপরাধের জন্য দৃষ্টান্ত মূলক কঠোর শাস্তি বিধান করতে হবে।
ঘাতক মাদক চোরাচালানী মাদক সম্রাটদের মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করতে হবে।
মাদক পতিতা ও সন্তাস মুক্ত এলাকা গ্রাম ইউনিয়নউপজেলা গড়ে তোরার জন্য সমাজ কর্মীদের সকল প্রকার সরকারী সহযোগিতা দান।
বেকার ও হতাশা গ্রস্ত যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্তা করতে হবে।
মাদক উৎপাদনের কারখানা ও সুড়ঙ্গ পথ গ্রদামঘর গুঁড়িয়ে দিতে হবে।
মাদক বিরোধী গণ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী গনসংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে বলবো মাদকের এই নীল দর্মন থেকে দেশ ও জাতীকে বাঁচাতে হলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রশাসনকে আর ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। চারিত্রিক দৃঢ়তা ও নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধনে দেশের যুব গড়ে তুরতে না পারলে এ জাতীর ধ্বংস অনিবার্য। দেশ মাতৃকার উজ্জল নক্ষত্র যুব সমাজ তার পরিচর্যা করা ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্রের ও প্রমাসনের একান্ত কর্তব্য। নৈতিক অবক্ষয় রোধ ওচারিত্রিক দৃঢ়তা যদি যুব সমাজের মধ্যে ফিরে আনতে হয় তাহলে উপরোক্ত পর্রামশ গুলি যতাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করা আমরা জরুরী মনে করি। যদি এ সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন না করা হয় তাহলে মাদকের এই বিশাল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে তবে জয়ী হওয়া যাবে না। এবং এই বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন