জুলুম কারা করে ? - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৪

জুলুম কারা করে ?

মানুষ ! আল্লাহ তা'য়ালর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আর আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট গ্রন্থ 'আল কুরআন' যা নাজিল করেছেন মানুষের জন্য যাতে বান্দার প্রতিটি কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। কিয়ামতের মাঠে কাউকে এক কদমও নড়তে দেয়া হবে না জবাবদিহিতা ছাড়া। রসুল (সা:) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফেরত দেন না। ১. রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া। ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। ৩. মজলুমের দোয়া। মহান আল্লাহ বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিযি হাদিস) 

মানুষের সঙ্গে কারণে-অকারণে, অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন করা যাবে না। জুলুম, নির্যাতন মারাত্মক অপরাধ। অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন, নিবেদন আল্লাহ তায়ালার নিকট সরাসরি পৌঁছে যায়। সুতরাং মানুষের উচিত, কোন সৃষ্টির প্রতি জুলুম নির্যাতন না করা। জুলুম বলা হয়-যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। অধিকার হরণ, নির্যাতন, আর্থৈনতিক ক্ষতিসাধন, দৈহিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন, মর্যাদা ও মানহানিকর ব্যবহার, নৃশংসতা চালানো, সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা  জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।

ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। তাছাড়া জুলুমের সহযোগিতা করা, জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করা হারাম। এটি শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার হুকুম একই। জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। জুলুম থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হচ্ছে লালসা, ক্ষমতার লোভ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ সংবরণ করা হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জন, হালাল টাকায় পোশাক-আশাক পরিধান করা।

সমাজের অনেক ভলোলোক আছে এবং তারা ধর্মকর্মে এগিয়ে থাকলেও জুলুম-অত্যাচারে পিছিয়ে নেই। তারা সমাজের সহজ-সরল ও নিম্নশ্রেণির মানুষের প্রতি জুলুম করে। তাদের প্রতি জুলুমকে অপরাধ মনে করেন না। জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এ অপরাধ সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত  মজলুম ক্ষমা না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত মাফ না। কুরআনের ২৬ নং সুরার ২২৭নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَذَكَرُوا اللَّهَ كَثِيرًا وَانتَصَرُوا مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا ۗ وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ অত্যাচারীরা বা জুলুমকারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?

রসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জালেমকে দীর্ঘ হায়াত দান করেন। যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর ছাড় দেন না। জালেম সম্পর্কে কুরআনের ১১নং সুরার ১১৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَআর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড় না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে জাহান্নাম তোমাদেরও স্পর্শ করবে।

আল্লাহ তা’য়ালা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে ১৬নং সুরার ৯০নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ আল্লাহ তোমাদের ন্যায়পন্থা, অবলম্বন ও নিকটা আত্মীয়দের হক প্রদানে নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিষেধ করেন। জালেমের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন নন। তিনি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন।

মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। পৃথিবীতে  জুলুমের কারণে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। অধিকার হরণ, ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা বড় জুলুম। বিত্তশালীরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাশীনরা সাধারণ লোকের প্রতি নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে জালিমদের জীবনে নেমে আসে বিপদ-আপদ।  রসুল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন। (মুসলিম শরীফের হাদিস) 

কুরআনের ৬নং সুরার ৫৭নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنِّي عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّي وَكَذَّبْتُم بِهِ ۚ مَا عِندِي مَا تَسْتَعْجِلُونَ بِهِ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ يَقُصُّ الْحَقَّ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِينَ জালিম কখনো সফল হয় না। জালিমের বিচার দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় জায়গায় আল্লাহ জুলুমের প্রতিদান দিয় থাকেন। রসুল (সা.) বলেছেন, দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তা’য়ালা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি। (তিরমিজির হাদিস) 

সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। কুরআনের ৩০নং সুরার ৪১নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ। রসুল (সা.) বলেন, তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। (বুখারি হাদিস) 

বর্তমান পৃথিবীতে চর্তুকদিকে শুধু জুলুম, নির্যাতন অত্যাচার, লোভ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ থেকে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদেরকে জালিমের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here