আমরা মুসলমান আমাদের হাতে আজ যারা নির্যাতিত হচ্ছে তারা ও মুসলমান নারী কেন এই নির্যাতন। এরকারণ বা-কি? নারী আর পুরুষ একে অপরের পরিপুরক। নারীরা মায়ের জাতী নারীদের সম্মান করা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। কিন্তু আজ বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায় নারী নির্যাতনের ভয়াল চিত্র। স্বাধীনতারপর থেকে আজ পর্যন্ত যত যে কত হাজার নারী ধর্ষিতা হয়েছে এসিডদগ্ধ অপহরন, নির্যাতন হয়েছে তার কোনহিসাব সরকার বা কোন মানবাধিকার সংগঠন দিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। (বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘণের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে- এ সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৭৫ জন নারী, একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন। ধর্ষণের পর হত্যার হয়েছে ৪৩ জন। ধর্ষণ পরবর্তী আত্মহত্যা করেছে ১২ জন নারী। একই সময় ১০৭৮ শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং হত্যার হয়েছে ৪৪৫ শিশু।)
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে মিড়িয়া এ্যাডভোকেসি শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান মো: হারুন অর রশিদ বলেন, ২০২২ সালে মোট ৯৭৬৪ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৩৬০ জন। ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে ৪৫০ জন।দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৪০ জন। যৌতুকের জন্য মারধর করা হয়েছে ২৬৭৫ জন। যৌতুক না পেয়ে হত্যার শিকার হয়েছে ১৫৫ জন। অপহরণ করা হয়েছে ১৮৭০ জন। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৭০২৭টি মামলা হয়েছে।
তাহলে এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রিতিদিন, প্রতিনিয়ত নারীদের নানা কাজে একলা চলা ফেরা করতে হয়, তাদেরই সম্মুখীন হতে হয় এ ধরনের পরিস্থিতির। তবে অনেকে মনে করেন ঢাকা শহরের নারী নয় পুরুষরা ও নির্যাতিত ও নিরাপত্তা হীনতায় দিনাতিপাত করছে। এ ক্ষেত্রে ধনি, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত উভয় সমান ভূক্তভোগী। ঢাকা শহরের ৯০ শতাংশ মানুষ মনে করেন বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা নিরাপত্তা ও পুলিশি নিরাপত্তার অভাববোধ করেন সব চাইতে দরিদ্র মহিলারা। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে এ সব সমস্যার পিছনে কারণ হল স্রষ্টা কর্তৃক বিধি-বিধান না মানা, পর্দা না থাকা, নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, সাংস্কৃতিক বেহায়াপনা, অধিকাংশ জনগোষ্টির ইসলামী জ্ঞান না থাকা এবং ঐতিহ্যগত সহানুভূতি দিন দিন হ্রাস পাওয়া এধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশের কি অবস্থা পাঠক মহল ভেবে দেখুন একবার। প্রতিদিন হাট বাজারে মাঠে ঘাটে যে সকল নারীরা মানসিক শারিরীক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া দুস্কর। তবে এটা ও সত্য বর্তমান পৃথিবীর সব দেশে নারীরা যৌন নিপিড়নের শিকার হচ্ছে। প্রাচীন আমলে মেয়ে শিশু জন্মালে তাদের কাছে অসম্মানের ছিল বটে। তারা জীবন্ত কবর দিয়ে দিত। কিন্তু কখনো নির্যাতন করতো না। আধুনিক সভ্যযুগে পথে ঘাটে, বাস-ট্রেনে, বাসা-বাড়িতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থলে নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক সহিংসতা তো আছেই। এছাড়াও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, প্রতারণা, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের মাধ্যম হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্ম এখন বড় সমস্যা।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদেরকে নৈতিকতার পরিবর্তে চরিত্রহীন করে তুলেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধের সুযোগ না থাকায় সমাজে নারীসহ সকল ক্ষেত্রে নির্যাতনের হার প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে।এখন শিক্ষা ব্যবস্থা যৌনতা কিভাবে শিখবে তা শেখানো হচ্ছে। এমনিতেই সমাজে রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণ, গুম, খুন, হত্যা লেগেই আছে। জাতিকে যদি এই দুষ্ট চক্র থেকে বাঁচাতে হয় তাহলে আগে শিক্ষা ব্যবস্থার ইসলামীকি করণ করতে হবে। তাহলে জাতি চারিত্রিকভাবে দৃঢ়তা আসবে। এতে শুধু নারী জাতি নয় সমগ্র জাতি সম্মান ও মর্যাদার আসনে অলংকৃত করবে ইনশাআল্লাহ।
সত্তর আশির দশকে নারী নির্যাতন ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিন্তু আজ সেই অপরাধের ডাল পালা গজিয়ে মহিরুহের আকার ধারন করেছে। আমাদের জীবনের শান্তি সুখ কেড়ে নিয়েছে হরন করেছে যাতায়াতের অধিকার। শহীদ মিনারে নারীকে লাঞ্চিত করন। একুশের বই মেরায় নারীকে অপদস্ত করন। থার্টি ফাস্ট নাইটে শাওন আক্তার বাধনদের মত নারীকে উল্লাসিত কতিপয় তরুনের লাঞ্চনা যদিও এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক তর্ক বির্তকের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু আসল সত্য নারীরা সব খানেই নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে বার বার। আজ আমার দেশের হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকরা সকাল-বিকাল পিপড়ার সারির মত যাতায়াত করতে দেখে এ শ্রেনীর লোকের গর্বে বুক ফুলে উঠে। কেউ কেউ এটাকে নারী স্বাধীনতার নীরও বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু এ গার্মেন্টস শ্রমিকরা যাতায়াতের সময় দুস্কৃতি কারীর হাতে প্রতিদিন প্রতি নিয়ত লাহ্চিত অপমানিত ও নির্যাতিত হচ্ছে তার হিসাব কি আমরা যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলি তারা রাকি। পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা দেকতে পাই গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষিতা শুধু গার্মেন্টস কর্মীকেন রাতের শীপটে কাজ করতে হয় এমন চাকুরীজীবি নারীদের কর্মস্থলের নিজস্ব যানবাহন না থাকায় নিজের ইজ্জত আবুকে হাতে নিয়ে যাওয়া আসা করতে হয়। রুশদানিয়া বুশরার মত মেয়ে নিজের ঘরে প্রান ও ইজ্জতকে রক্ষা করতে পারল না দেখা গেল কলেজে গেছে কোন সৌড়ষি কুমারী সন্ধে হয়ে গেল এখন ও ফিরছে না বাসায় মা, বাবা খোজা খুজি করে ফেলনা দুইদিন পর উদ্ধার করল পুলিশ হতভাগীনির লাশ কোন ড্রেন তেকে। গত বছর এক উপমন্ত্রীর বোনের বস্তা বন্দী রাশ পাওয়া গেল বাস স্ট্যানের নিকটে ধর্সন, খুন, এসিড নিক্ষেপ অপহরণ যৌন হয়রানী ছাড়া দেশের নারী সমাজ অহরহ ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। খুন অপহরন যৌন হয়রানীর মত মারাত্মক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন তো আছে।
ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড কিন্তু আশ্চার্যজনক হলেও এ আইনগুলা প্রকারান্তরে অকার্যকর। আইনের প্রখরতা যতই তীব্রতর হোক না কেন অপরাধ কিন্তু হয়েই যাচ্ছে। তাহলে কি নারী নির্যাতন ঠেকানোর কোন উপায় নেই। পরিক্ষীত সত্য যে নারী অধিকার নারী নির্যাতন আইন কোনটাই নির্যাতন বন্ধ করতে পারেনি পারবেও না। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক পর্দার বিধান চালু করতে হবে। জন সাধারণকে বিশেষ করে যুব সমাজকে ইসলামী জ্ঞাণে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। নারীরা মায়ের জাতী তাদের প্রতি নির্যাতন করা যাবে না। তার সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে। উপরোক্ত আইনকে যথা যথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
নারী নির্যাতন রোধে নিম্নোক্ত পন্থা গুলো বাস্তবায়ন করা দরকার।
দারিদ্র দুরিকরণে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সমূহ দুরীকরণ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি তরান্ধিত করা এবং জন সমষ্টিকে অর্থনৈতিক স্থিতিশলতা সংরক্ষণ। সম্পদ কতিপয় লোকের হাতে কুক্ষিগত না হয়, এবং যাতে অধিকাংশ লোক বঞ্চিত না হয় সে জন্য সম্পদের অসমবন্টন দুর করে সুসমবন্টনের নিশ্চয়তা দান। দুস্ত জনগোষ্টি ও দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। যেন সবাই অন্তত দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারে। দরিদ্র লোকদের স্বল্প মেয়াদী ঋণ দিয়ে তাদের কর্মকান্ডকে উসাহিত করে দারিদ্র বিমোচনের আরও বলিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
নারীর সম্মান মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলিম যুবকের নৈতিক দায়িত্ব। নারী মহান আল্লাহর সৃষ্টি আমাদের জন্য রহমত স্বরুপ। তাই সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা উচিত।
বেশ সুন্দর লেখা ও সময়োপযোগী
উত্তরমুছুন