শহরের নারীরা কতটুকু নিরাপদ - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৪

শহরের নারীরা কতটুকু নিরাপদ

প্রাক ইসলামী যুগে নারীদের কোন অধিকার ও মর্যদা ছিল না। তারা কেবল মাত্র পুরুষের আমোদ-প্রমোদ ও ভোগ বিলাসের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হত। ইসলাম নারী সমাজকে এ সব দুগর্তি ও দুদর্শা থেকে মুক্ত করে তাদের ধর্মীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। ইসলাম ধর্মে মাতা-কন্যা-ভগ্নী-স্ত্রী প্রভূতি হিসেবে নারীদের বিশেষ অধিকার ও মর্যাদা স্বীকৃত হয়েছে। 

আমরা মুসলমান আমাদের হাতে আজ যারা নির্যাতিত হচ্ছে তারা ও মুসলমান নারী কেন এই নির্যাতন। এরকারণ বা-কি? নারী আর পুরুষ একে অপরের পরিপুরক। নারীরা মায়ের জাতী নারীদের সম্মান করা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। কিন্তু আজ বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায় নারী নির্যাতনের ভয়াল চিত্র। স্বাধীনতারপর থেকে আজ পর্যন্ত যত যে কত হাজার নারী ধর্ষিতা হয়েছে এসিডদগ্ধ অপহরন, নির্যাতন হয়েছে তার কোনহিসাব সরকার বা কোন মানবাধিকার সংগঠন দিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। (বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা আইন সালিশ কেন্দ্র (আসক৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘণের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে- সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৭৫ জন নারীএকক ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন। ধর্ষণের পর হত্যার হয়েছে ৪৩ জন। ধর্ষণ পরবর্তী আত্মহত্যা করেছে ১২ জন নারী। একই সময় ৭৮ শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং হত্যার হয়েছে ৪৪৫ শিশু।)

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৩ উপলক্ষে মিড়িয়া এ্যাডভোকেসি শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান মো: হারুন অর রশিদ বলেন,  সালে মোট ৪ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৩০ জন। ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে ০ জন।দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ০ জন। যৌতুকের জন্য মারধর করা হয়েছে ৫ জন। যৌতুক না পেয়ে হত্যার শিকার হয়েছে ৫ জন। অপহরণ করা হয়েছে ০ জন। ২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৭টি মামলা হয়েছে।  

তাহলে এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রিতিদিন, প্রতিনিয়ত নারীদের নানা কাজে একলা চলা ফেরা করতে হয়, তাদেরই সম্মুখীন হতে হয় এ ধরনের পরিস্থিতির। তবে অনেকে মনে করেন ঢাকা শহরের নারী নয় পুরুষরা ও নির্যাতিত ও নিরাপত্তা হীনতায় দিনাতিপাত করছে। এ ক্ষেত্রে ধনি, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত উভয় সমান ভূক্তভোগী।  ঢাকা শহরের ০ শতাংশ মানুষ মনে করেন বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা নিরাপত্তা ও পুলিশি নিরাপত্তার অভাববোধ করেন সব চাইতে দরিদ্র মহিলারা। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে এ সব সমস্যার পিছনে কারণ হল স্রষ্টা কর্তৃক বিধি-বিধান না মানা, পর্দা না থাকা, নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, সাংস্কৃতিক বেহায়াপনা, অধিকাংশ জনগোষ্টির ইসলামী জ্ঞান না থাকা এবং ঐতিহ্যগত সহানুভূতি দিন দিন হ্রাস পাওয়া এধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশের কি অবস্থা পাঠক মহল ভেবে দেখুন একবার। প্রতিদিন হাট বাজারে মাঠে ঘাটে যে সকল নারীরা মানসিক শারিরীক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া দুস্কর। তবে এটা ও সত্য বর্তমান পৃথিবীর সব দেশে নারীরা যৌন নিপিড়নের শিকার হচ্ছে। প্রাচীন আমলে মেয়ে শিশু জন্মালে তাদের কাছে অসম্মানের ছিল বটে। তারা জীবন্ত কবর দিয়ে দিত। কিন্তু কখনো নির্যাতন করতো না। আধুনিক সভ্যযুগে পথে ঘাটে, বাস-ট্রেনে, বাসা-বাড়িতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থলে নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক সহিংসতা তো আছেই। এছাড়াও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, প্রতারণা, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের মাধ্যম হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্ম এখন বড় সমস্যা।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদেরকে নৈতিকতার পরিবর্তে চরিত্রহীন করে তুলেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধের সুযোগ না থাকায় সমাজে নারীসহ সকল ক্ষেত্রে নির্যাতনের হার  প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে।এখন শিক্ষা ব্যবস্থা যৌনতা কিভাবে শিখবে তা শেখানো হচ্ছে। এমনিতেই সমাজে রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণ, গুম, খুন, হত্যা লেগেই আছে। জাতিকে যদি এই দুষ্ট চক্র থেকে বাঁচাতে হয় তাহলে আগে শিক্ষা ব্যবস্থার ইসলামীকি করণ করতে হবে। তাহলে জাতি চারিত্রিকভাবে দৃঢ়তা আসবে। এতে শুধু নারী জাতি নয় সমগ্র জাতি সম্মান ও মর্যাদার আসনে অলংকৃত করবে ইনশাআল্লাহ।

আজ যদি দু’ একটা ঘটনা ঘটত তাহলে মেনে নেয়া যেত। কারণ দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত কোন না কোন নারী নির্যাতন হয়রানীর শিকার হচ্ছে। অথচ আজ থেকে ত্রিশ বছর আগেও নারীরা রাস্তা ঘাটে নিরাপদে নির্ভিঘ্নে চলা ফেরা করতে পারতেন। তখন সামাজিক রক্ষনমীলতা ছিল বটে। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা ছিলনা। হয়তো তখন পর্দার মধ্যে চলা ফেরা করার কারণ নিরাপত্তাহীনতা ছিলনা। কিন্তু দেশ ভাগ হওয়ার পর এ জাতীর ও নারী সমাজের উপর নেমে এল শকুনী হায়নাদের হিংস্র থাবা। আশির দশকে এদেশের মেয়েদের চলাফেরায় নিরাপত্তার প্রশ্নটি এসে যায়। এ কথা গুলা বাপ দাদাদের কাছ থেকে শুনা, জানিনা তাঁরা একথা গুলা মিথ্যা বললেন কিনা। কিন্তু আমাদের দেখা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে স্বামীর পাশ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নেয়া। বাপের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করা, মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে ধর্ষিতা হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী পালন করা এখন নিত্য মিত্তিক ব্যপারে দাঁড়িয়েছে।

সত্তর আশির দশকে নারী নির্যাতন ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিন্তু আজ সেই অপরাধের ডাল পালা গজিয়ে মহিরুহের আকার ধারন করেছে। আমাদের জীবনের শান্তি সুখ কেড়ে নিয়েছে হরন করেছে যাতায়াতের অধিকার। শহীদ মিনারে নারীকে লাঞ্চিত করন। একুশের বই মেরায় নারীকে অপদস্ত করন। থার্টি ফাস্ট নাইটে শাওন আক্তার বাধনদের মত নারীকে উল্লাসিত কতিপয় তরুনের লাঞ্চনা যদিও এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক তর্ক বির্তকের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু আসল সত্য নারীরা সব খানেই নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে বার বার। আজ আমার দেশের হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকরা সকাল-বিকাল পিপড়ার সারির মত যাতায়াত করতে দেখে এ শ্রেনীর লোকের গর্বে বুক ফুলে উঠে। কেউ কেউ এটাকে নারী স্বাধীনতার নীরও বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু এ গার্মেন্টস শ্রমিকরা যাতায়াতের সময় দুস্কৃতি কারীর হাতে প্রতিদিন প্রতি নিয়ত লাহ্চিত অপমানিত ও নির্যাতিত হচ্ছে তার হিসাব কি আমরা যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলি তারা রাকি। পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা দেকতে পাই গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষিতা শুধু গার্মেন্টস কর্মীকেন রাতের শীপটে কাজ করতে হয় এমন চাকুরীজীবি নারীদের কর্মস্থলের নিজস্ব যানবাহন না থাকায় নিজের ইজ্জত আবুকে হাতে নিয়ে যাওয়া আসা করতে হয়। রুশদানিয়া বুশরার মত মেয়ে নিজের ঘরে প্রান ও ইজ্জতকে রক্ষা করতে পারল না দেখা গেল কলেজে গেছে কোন সৌড়ষি কুমারী সন্ধে হয়ে গেল এখন ও ফিরছে না বাসায় মা, বাবা খোজা খুজি করে ফেলনা দুইদিন পর উদ্ধার করল পুলিশ হতভাগীনির লাশ কোন ড্রেন তেকে। গত বছর এক উপমন্ত্রীর বোনের বস্তা বন্দী রাশ পাওয়া গেল বাস স্ট্যানের নিকটে ধর্সন, খুন, এসিড নিক্ষেপ অপহরণ যৌন হয়রানী ছাড়া দেশের নারী সমাজ অহরহ ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। খুন অপহরন যৌন হয়রানীর মত মারাত্মক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন তো আছে। 

তাহলে আমাদের প্রচলিত আইন কি এই অনাচার, অত্যাচার রোধ করতে পারছে ? বাংলাদেশের নারী নির্যাতন আইন ভারতের চেয়েও শক্তিশালী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ০ সংশোধিত ৩ এর ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে তাহলে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবে। এই আইনের ৯ () ধারায় বলা আছে, ‘ধর্ষণ বা ধর্ষণ পরবর্তী নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষকের মৃত্যুন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে। তার সাথে জরিমানা হবে সর্বনিম্ন  লাখ টাকা। ৯ () ধারায় বলা আছে, যদি একাদিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে ঐ নারী মারা যায় তাহলে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ড ও কমপক্ষে  লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। প্রশ্ন হল এত কঠিন আইন থাকা সত্ত্বেও শুধু প্রয়োগের অভাবে এ জঘন্য অপরাধের বিচার হচ্ছে না। অন্যদিকে ধর্ষণ আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে নারী সংস্থাগুলো সন্তুষ্ট নয় । তারা বলেন নানাভাবেই পুরুষ নারীর ওপর যৌন হয়রানি ও অত্যাচার (Sexual assault) করতে পার যা আইনে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। আর এ ধরণের আপত্তিকর আচরণ আইনের আওতায় পড়বে না। বিশেষ করে কর্পোরেট অফিসে নারী নির্যাতনের হার বাড়ছে। আইন জানা এবং আইনের প্রয়োগ ঠিকঠাক মত কার্যকর না হওয়ায় এর ফল আমরা পাচ্ছি না।

ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড কিন্তু আশ্চার্যজনক হলেও এ আইনগুলা প্রকারান্তরে অকার্যকর। আইনের প্রখরতা যতই তীব্রতর হোক না কেন অপরাধ কিন্তু হয়েই যাচ্ছে। তাহলে কি নারী নির্যাতন ঠেকানোর কোন উপায় নেই। পরিক্ষীত সত্য যে নারী অধিকার নারী নির্যাতন আইন কোনটাই নির্যাতন বন্ধ করতে পারেনি পারবেও না। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক পর্দার বিধান চালু করতে হবে। জন সাধারণকে বিশেষ করে যুব সমাজকে ইসলামী জ্ঞাণে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। নারীরা মায়ের জাতী তাদের প্রতি নির্যাতন করা যাবে না। তার সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে। উপরোক্ত আইনকে যথা যথ বাস্তবায়ন করতে হবে। 

নারী নির্যাতন রোধে নিম্নোক্ত পন্থা গুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। 

দারিদ্র দুরিকরণে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সমূহ দুরীকরণ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি তরান্ধিত করা এবং জন সমষ্টিকে অর্থনৈতিক স্থিতিশলতা সংরক্ষণ। সম্পদ কতিপয় লোকের হাতে কুক্ষিগত না হয়, এবং যাতে অধিকাংশ লোক বঞ্চিত না হয় সে জন্য সম্পদের অসমবন্টন দুর করে সুসমবন্টনের নিশ্চয়তা দান। দুস্ত জনগোষ্টি ও দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। যেন সবাই অন্তত দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারে। দরিদ্র লোকদের স্বল্প মেয়াদী ঋণ দিয়ে তাদের কর্মকান্ডকে উসাহিত করে দারিদ্র বিমোচনের আরও বলিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।

নারীর সম্মান মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলিম যুবকের নৈতিক দায়িত্ব। নারী মহান আল্লাহর সৃষ্টি আমাদের জন্য রহমত স্বরুপ। তাই সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা উচিত।

1 টি মন্তব্য:

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here