সরকার বলছে এই মামলা তাদের কোন হাত নেই বলে সরকার নিজেকে আলাদা করার চেষ্টা করছে। তারা আইনি বিষয় বলে আখ্যায়িত করছে। তারা বলছে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর মামলা করছে। আসলে বিষয়টি তা নয়। সরকারের ইচ্ছাতেই ড. ইউনুসকে হয়রানি করা। ড. ইউনূসের দেশে বিদেশে মর্যাদা ও খ্যাতির উপর কলঙ্ক কালিমা লেপন করাই উদ্দেশ্য।
তিনি জাতির সম্পদ কীভাবে তাঁকে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তা করা উচিত ছিল আমাদের সরকারের। অথচ মানুষটিকে কুটনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়ে বিশ্বনেতা, যাঁরা সরকারের মন্ত্রী ও কূটনৈতিকদের নাগালের বাইরে থাকেন, তাঁদের কাছে তাঁকে কীভাবে পাঠানো যায়, সেই উপায় খুঁজে বের করতে উদ্ধোগ নেয়া উচিত ছিল।
ড. ইউনূস বৈশ্বিকভাবে অনেক উঁচু পর্যায়ের। তার অধিকারের ওপর আক্রমণের অর্থ হলো, যে কেউ—রাজনৈতিক বিরোধী, বন্ধুহীন ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজের সংগঠন, স্পষ্টভাষী ব্যক্তিরা বিপন্ন প্রজাতি।
সরকার প্রধান থেকে শুরু করে তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা অধ্যাপক ইউনূসকে হয়রানি, অবজ্ঞা, নিন্দা, সুদখোরসহ নানা কটুক্তির শিকার হয়েছেন। ড. ইউনূসের মতো উচ্চ মর্যাদার একজন ব্যক্তি তাকে পাওয়া আমাদের জাতির সৌভাগ্য। এরকম একজন ব্যক্তিকে দেশের সেবায় নিয়োগ করা যেত। দেশ গঠনের কাজে সহায়তার জন্য এ ধরনের ব্যক্তি তার শক্তি সামর্থ্য দিয়ে কাজ করবেন এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাড়াবে তা বলা মুশকিল। সরকার বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে আইনের একতরফা অপব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের বিচারব্যবস্থা; প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সাংবিধানিক সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন; কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সবই দলীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে তারা সুশাসনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, স্বাধীন গণমাধ্যম কর্মীদের, দমন–পীড়নে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে কারাগারে বন্দী করে রাখছে। বিপুলসংখ্যক ভুক্তভোগী জামিন ছাড়াই জেল খাটছেন। কিংবা মাথার ওপর ঝুলে থাকা বিপদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন।
সাদাপোশাকের ব্যক্তিরা কোনো পরোয়ানা ছাড়াই মধ্যরাতে যেকোনো বাড়িতে আসতে পারেন এবং আপনাকে টেনেহিঁচড়ে কোনো অজানা গন্তব্যে নিয়ে তাঁরা আপনার সঙ্গে যা ইচ্ছা তা–ই করতে পারেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ ধরনের কাজ এ জন্যই করতে পারে, তারা আইনের সামনে নিজেদের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে মনে করে। অন্যদিকে নাগরিকদের মধ্যে এই ভয় কাজ করে যে তাঁরা তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় আর আমাদের আদালতের ওপর নির্ভর করতে পারছেন না।
২০০৯ ১৪, ১৮, ২৪ সংসদ নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশন ব্যার্থ। তারা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের চেয়ে সরকারে ইচ্ছানুযায়ী নির্বাচন করছে। দুদক ক্ষমতাশীনদের সুস্পষ্ট দুর্নীতির ব্যাপারে তারা চুপ হয়ে আছে। অন্যদিকে বিরোধীদের বিচারে তারা বেশ তৎপর। বিনাভোটের সংসদ জনগণের উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না।
আইনের শাসন, নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ছাড়া এ জাতির ভাগ্যাকাশে কালোমেঘ দুর হবে না। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সুচিত হবে না। কেননা শাসনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া নাগরিক সমাজ বিপন্ন থেকে যায়।
ড. ইউনূসের
দারিদ্র বিমোচন নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তিনি কতটুকু সফল তা সময় বলে দবে। তাছাড়া সুদ
ভিত্তিক দারিদ্র বিমোচনের যে চিন্তা তা কখনো সফল হবে না। তার কারণ হলো আল্লাহ তায়ালা
নিজেই সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন। সুদ ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য
দেখতে খুব লাভবান বলে মনে হলেও তার ফলাফল অন্তসার শুন্য।
মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিকভাবে উঁচু মানের একজন ব্যক্তি। তার অধিকারের ওপর আক্রমণ মানে গোটা জাতির উপর আক্রমণ। তাই দেশের হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মীকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা, বিপুলসংখ্যক অভিযোগ ছাড়াই জেল খাটছে তাদেরকে মুক্তি দিয়ে সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এজাতির জন্য আসু সমাধান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন