তরুণ মানেই সুন্দর, অথবা যা কিছু রয়েছে সুন্দর তাতেই তরুণদের কিরণ স্পর্শ। তরুণ মানেই এক ধরনের শিহরণ। তরুণরা নগদে বিশ্বাসী বাকী নামক ফাঁকিতে তরুণরা বিশ্বাসী নয়। তারা চির দৈত্য শিশু নাগ, শিশুর নাগ হিন্দোল। তাদের চরণ তলে দলে যায় মিথ্যার প্রাচীর। তাদের হাতের মুঠোয় আটকে পড়ে অন্যায়ের কঠিন শিকল। তরুণ অমিত বীর্যের ভান্ডার। অফুরন্ত যৌবনের ধারক, এরা আকাশ ফুঁড়ে উড়ে যায়, আবার পাতাল ভেদ করে চলে যায়। এরা মণি কুড়ায় বিষধর সাপের মাথা থেকে, চেপে ধরে সাপের উদ্যত ফনা, মিথ্যা মদিরার সকল পেয়ালা ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় এরা। শয়তানের আরামের আসরে বাসরে এরা হাবিয়ার অগ্নিজ্বালা ধরিয়ে দিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে। এরা পুরাতনকে ভাগে নতুনকে গড়ার প্রয়োজনে, এরা ভাঙ্গার মহানায়ক আবার সৃষ্টির পুরোধা। আমাদের দেশের তরুণদের অভাব নেই, অভাব তারুণ্যের।
বাংলাদেশের তরুণ মানেই মাথায় ঝাঁকড়া চুল, হাতে সোনার বা রূপার বালা, কানে দুল। এ দেশের তারুণ্য এখন আটকিয়ে আছে রঙিন সানগ্লাসে, টাইট জিন্স আর জ্বলন্ত সিগারেটে। আমার দেশের তারুণ্য মানেই মেয়েদের হাতের লম্বা নখ, চুলের ববকাট, পরনের সর্টস অশ্লীলতা প্রদর্শন করার মতো। তারুণ্য মানেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদের দেখে শিষ দেয়া, বাঁকা ভঙ্গিমায় তাদের হজম করা, এসিড নিক্ষেপে সুন্দর ললনার দেহ পুড়িয়ে দেয়া। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে আকাশ সংস্কৃতির সুবাদে পশ্চিমা জগত থেকে নিত্যদিন পরিবাহিত হচ্ছে অশ্লীলতা, আমাদের সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে এটি অবশ্যই অশালীন। মুসলমান অধ্যুষিত এই বাংলাদেশে নারীদের ঐতিহ্যগত শরম গুছিয়ে তাকে উন্মুক্ত করার মধ্যে শিহরণ থাকতে পারে, তাতে কোনো প্রগতিশীলতা নেই।
পাশ্চাত্যের সমাজ ব্যবস্থা আর আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এক নয়, বিস্তর ফারাক। সুতরাং তাদের কাছে যেটা গ্রহণীয় আমাদের কাছে বর্জনীয়। তরুণদের গ্রহণ, বর্জনের সমস্যা থাকতে পারে বা নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি স্বভাবসুলভ কৌতূহল বশতই তারা ঝুঁকে পড়তে পারে। কিন্তু তাদেরকে সঠিক পথ বাতলে দেয়ার মতো কয়জনের মনমানসিকতা আছে। জীবনের সেরা সময়ের সেরা সম্পদকে তারা যেন অপথে কুপথে ব্যয় করতে না পারে সেজন্য তাদেরকে গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। কিন্তু এমন দরদী হাত কোথায় পাবে এই হতভাগ্য তরুণ সমাজ ? কার ছত্রছায়ায় জমায়েত হয়ে এরা সৃষ্টি করবে সুন্দরের। বর্তমান তরুণ সমাজ জাতির সম্পদ না হয়ে জাতির ঘাড়ে বোঝা স্বরূপ।
তরুণরা আবেগপ্রবণ, প্রচন্ড হৃদয়াবেগের অধিকারী। এটি অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু শুধুমাত্র হৃদয়াবেগকে আগুনের মতো জ্বালিয়ে দিলে তো আর জীবন প্রদীপ জ্বলবে না। তরুণরা ঝুঁকি নিতে পারে, এরা প্রচন্ড সাহসী। সেই সাহসকে জাতীয়ভাবে কাজে লাগাতে না পারলে ভাগ্যের দুয়ারে ছিটকিনী লেগে যাবে। তরুণদের জেগে উঠতে হবে; যেমন উঠেছিল ১৯৭১ সালে ও ১৯৯০ সালে। তরুণরা মুক্তি চায়, তারা মুক্তির প্রতীককে অবারিত করে পৃথিবীর দুয়ার খুলে দিতে চায়। তরুণদের দিক-নির্দেশনা দিতেব্যর্থ হলে তরুণরা মৃত লাশের মতো হয়ে যাবে। যা দেখে অশ্রুপাত করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। আমি একজন তরুণ তাই সমস্ত তরুণদের মনের কথাটা লেখার চেষ্টা করলাম। সোজা কথা তরুণদের বাঁচাতে হবে। তাদের মনের সবুজ ঘাসকে ঘন সবুজ ঘাসে রূপান্তরিত করতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন