একজন শ্রমিক সারা দিন কাজ করে মজুরী পায় ৫০০ টাকা। অথচ একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট শরণাপন্ন হতে হলে তাকে যোগাড় করতে হয় নিম্নে ৫০০০ টাকা। এ হলো আমাদের উন্নয়নশীল দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চালচিত্র। আমাদের দেশের কিছু ডাক্তার কতো নিচু তার প্রমাণ একটা উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে। রোগীরা যখন ডাক্তারের কাছে যায়, তখন ডাক্তাডররা পরামর্শের জন্য ফি নেন। তার পরও পরামর্শ পত্রে চার, পাঁচটা টেস্ট করার Advice লিখে দেন এবং চিকিৎসকের পছন্দের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে বলেন। এই টেস্টের পিছনে চিকিৎসকদের স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। কারণ প্রতিটি টেস্টের জন্য রোগী যে অর্থ ব্যয় করেন পরমর্শ দানকারী চিকিৎসক ঐ টেস্টের ৪০% পান। দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য কতোটুকু নজরদারী করছে তা এখন ভাববার বিষয়। বাংলাদেশের চিকিৎসকগণ যেন রোগী দেখার নামে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। দিন কে কত রোগী দেখবেন এবং তার মাধ্যমে কতো বেশি টাকা কামাই করবেন এটাই এখন তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য বলে মনে হয়।
বাংলাদেশের বেশীর ভাগ ডাক্তারের ব্যবহার এতই খারপ যে, যে একবার ডাক্তারের কাছে যায় সে আর দ্বিতীয় বার ঐ ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। ডাক্তাররা রোগীদের মনুষ ভাবেন কিনা যথেষ্ট সন্দেহের কারণ আছে। রোগী যখন কোন ডাক্তারের কাছে যায় তখন তাকে আসামীর মতো মনে হয়। মনে হয় রোগ বাঁধিয়ে সে মস্ত বড় ভুল করেছে। ডাক্তার সাহেব রোগীর মুখের কথা শুনার আগে প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীর হাতে ধরিয়ে দেন। তখন রোগী আর ভয়ে কথা বলার সুযোগ পান না। ডাক্তাররা যদি রোগীদের কথা ও কষ্ট মন দিয়ে শুনেন কিংবা রোগীর গায়ে হাত দিয়ে ঠিক মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন এবং রোগীর সাথে ডাক্তার অমায়িব ব্যবহার ও বন্ধু সুলভ আচরণ করেন তাহলে রোগীর অর্ধেক রোগ ঐখানে ভাল হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের ডাক্তারদের মধ্যে তা অনুপস্থিত।
বর্তমান বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা অনুপযোগী হয়ে থাকে প্রায় সময়। সরকারী হাসপাতালগুলোতে কোন ভাল মানুষ গেলে সে রোগী হতে বাধ্য। আর রোগী গেলে কি অবস্থা অনুমেয়। সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রের অভাব, যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ লোকের অভাব, চিকিৎসক কাম টেকনেশিয়ানের অপ্রতুলতা, অনিয়ম, প্রতিষ্ঠানসমূহের নোংরা পরিবেশ, সহানুভূতির অভাব, খাবারের অভাব, হাসপাতালে দালাল, টাউট বাটপার, সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি, সর্বোপরি দুর্বল ব্যবস্থাপনা। এসব ক্ষেত্রে যদিও বেসরকারী হাসপাতালগুলো কিছুটা এগিয়ে থাকলেও টাকার কাছে হার মানতে হয় গরীব রোগীদের। এসব ক্ষেত্রে আমার দেশের নীতি নির্ধারকরা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তারা কেনইবা নেবেন, তারা তো আর বাংলাদেশে চিকিৎসা করান না।
এই গরীব জনগোষ্ঠী যাতে সুচিকিৎসা পায় তার জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশগুলো পেশ করা হলো :-
প্রত্যেক ডাক্তার দিনে গরীব ও অসহায় ১০ জন রোগীকে বাধ্যতামূলকভাবে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
ডাক্তারদের ভিজিট ক্ষেত্রে অধ্যাপক ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৪০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক ৩০০ টাকা, প্রভাষক ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা এবং অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের শাস্তি ব্যবস্থা করা।
আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত ডাক্তাররা সেবার বিপরীতে ডাক্তার ধর্মঘট করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের পদচ্যুতি করা।
একেবারে গরীবদের জন্য সমস্ত চিকিৎসা ব্যয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করা এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সত্যায়িত সার্টিফিকেটের বিধান রাখা যায়।
হাসপাতালগুলোতে রোগীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ সেবা পাচ্ছে কি না তা তদারকি করার জন্য সরকারীভাবে ভিজিলেন্স টিম গঠন করা।
পিতার টাকার জোর নয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণকারী ও ভাইভাতে নম্র ভদ্র ও অমায়িক ব্যবহারকারীদের অগ্রাধিকার দেয়া।
মেধাবী ও সেবার মনোভাবাপন্ন ছাত্র-ছাত্রীরা যেন চিকিৎসা বিদ্যায় আসে রাষ্ট্রীয়ভাবে তা দেখা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন