চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনৈতিকতা - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনৈতিকতা

চিকিৎসা মানুষের একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। বেঁচে থাকার অদম্য আশা নিয়েই রোগী ডাক্তারের কাছে যায়। গভীর ভরসায় তাদের হাতে তুলে দেয় জীবন। কিন্তু কিছু ডাক্তার অবহেলা, উদাসীনতা কখনো ভুল চিকিৎসায় মানুষের এই আশা ভরসা চুরমার হয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত। গ্রামের পল্লি চিকিৎসক বা হাতুড়ে ডাক্তার এবং শহরের ঔষুধ বিক্রেতারা গরীব মানুষের একমাত্র ভরসা। তার কারণ এমবিবিএস বা বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকগণের পরামর্শ ফি মেটাতে না পারায় বাধ্য হয়ে ঔষুধ বিক্রেতাদের কাছ থেকে রোগের কারণ জানিয়ে ঔষুধ কিনে ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়নি। যার কারণে চিকিৎসকরা তাদের ইচ্ছা মতো পরামর্শ ফি আদায় করেন। যা সত্যি এক ধরনের অত্যাচার বটে।

একজন শ্রমিক সারা দিন কাজ করে মজুরী পায় ৫০০ টাকা। অথচ একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট শরণাপন্ন হতে হলে তাকে যোগাড় করতে হয় নিম্নে ৫০০০ টাকা। এ হলো আমাদের উন্নয়নশীল দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চালচিত্র। আমাদের দেশের কিছু ডাক্তার কতো নিচু তার প্রমাণ একটা উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে। রোগীরা যখন ডাক্তারের কাছে যায়, তখন ডাক্তাডররা পরামর্শের জন্য ফি নেন। তার পরও পরামর্শ পত্রে চার, পাঁচটা টেস্ট করার Advice লিখে দেন এবং চিকিৎসকের পছন্দের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে বলেন। এই টেস্টের পিছনে চিকিৎসকদের স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। কারণ প্রতিটি টেস্টের জন্য রোগী যে অর্থ ব্যয় করেন পরমর্শ দানকারী চিকিৎসক ঐ টেস্টের ৪০% পান। দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য কতোটুকু নজরদারী করছে তা এখন ভাববার বিষয়। বাংলাদেশের চিকিৎসকগণ যেন রোগী দেখার নামে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। দিন কে কত রোগী দেখবেন এবং তার মাধ্যমে কতো বেশি টাকা কামাই করবেন এটাই এখন তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য বলে মনে হয়।

বাংলাদেশের বেশীর ভাগ ডাক্তারের ব্যবহার এতই খারপ যে, যে একবার ডাক্তারের কাছে যায় সে আর দ্বিতীয় বার ঐ ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। ডাক্তাররা রোগীদের মনুষ ভাবেন কিনা যথেষ্ট সন্দেহের কারণ আছে। রোগী যখন কোন ডাক্তারের কাছে যায় তখন তাকে আসামীর মতো মনে হয়। মনে হয় রোগ বাঁধিয়ে সে মস্ত বড় ভুল করেছে। ডাক্তার সাহেব রোগীর মুখের কথা শুনার আগে প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীর হাতে ধরিয়ে দেন। তখন রোগী আর ভয়ে কথা বলার সুযোগ পান না। ডাক্তাররা যদি রোগীদের কথা ও কষ্ট মন দিয়ে শুনেন কিংবা রোগীর গায়ে হাত দিয়ে ঠিক মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন এবং রোগীর সাথে ডাক্তার অমায়িব ব্যবহার ও বন্ধু সুলভ আচরণ করেন তাহলে রোগীর অর্ধেক রোগ ঐখানে ভাল হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের ডাক্তারদের মধ্যে তা অনুপস্থিত।

অথচ একজন ডাক্তারের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে সততা ও সতর্কতার সহিত রোগীর চিকিৎসা করা। ডাক্তাররা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে কতটা অবহেলা ও অনৈতিক তার প্রমাণ দেয়া যাক। এখন ডাক্তারগণ ঔষৃুধ কোম্পানির কাছ থেকে মাসিক বেতন নেন। প্রতিটি কোম্পানি প্রতি মাসের এক অথবা দুই তারিখের মধ্যে তাদের প্রতিনিধির মারফত চেক পাঠিয়ে দেয়। তাছাড়া প্রতিটি প্রেসকিপশন মোবাইলে ছবি তুলে তা কোম্পানির এ্যাপে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে দেশে ডাক্তারদেরকে বউ এবং সন্তান ছাড়া সকল কিছু কোম্পানি দিয়ে থাকে। বিনিময়ে ডাক্তারগণ রোগীর ঔষধ লাগুক না লাগুক প্রেসকিপশন ভরে ঔষধ লিখেন এবং টেস্ট করতে দেন। এখন ডাক্তার রোগীকে মনে করেন ব্যবসায়িক মালামাল। এখনকার ডাক্তারগণ ডাকাতের ভুমিকায় নেমেছেন। অনেকে হয়তো বলবেন আমি এককভাবে ডাক্তারদের দোষ দিচ্ছি কেন? রোগীর কোন দোষ নাই ? আমি বলবো না, রোগীর কোন দোষ নেই। তবে একটা দোষ রোগীর দেয়া যায় তাহলো তার রোগ হওয়াটা। 

বর্তমান বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা অনুপযোগী হয়ে থাকে প্রায় সময়। সরকারী হাসপাতালগুলোতে কোন ভাল মানুষ গেলে সে রোগী হতে বাধ্য। আর রোগী গেলে কি অবস্থা অনুমেয়। সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রের অভাব, যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ লোকের অভাব, চিকিৎসক কাম টেকনেশিয়ানের অপ্রতুলতা, অনিয়ম, প্রতিষ্ঠানসমূহের নোংরা পরিবেশ, সহানুভূতির অভাব, খাবারের অভাব, হাসপাতালে দালাল, টাউট বাটপার, সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি, সর্বোপরি দুর্বল ব্যবস্থাপনা। এসব ক্ষেত্রে যদিও বেসরকারী হাসপাতালগুলো কিছুটা এগিয়ে থাকলেও টাকার কাছে হার মানতে হয় গরীব রোগীদের। এসব ক্ষেত্রে আমার দেশের নীতি নির্ধারকরা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তারা কেনইবা নেবেন, তারা তো আর বাংলাদেশে চিকিৎসা করান না।

অন্যদিকে সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার বাবুরা হাসপাতালে রোগীকে প্রেসক্রিপশন লিখে না। অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন চেম্বারে আসুন। আর চেম্বারে যাওয়া মানে পাঁচ হাজার', দশ হাজার টাকা পকেটে নিয়ে যাওয়া। তবে আমার নিবন্ধ লেখার অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশে কোন ভাল ডাক্তার নেই। তা আমি বলবো না, তবে তার সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য যা আলোচনায় আসে না। তাই বাংলাদেশের গরীব জনগোষ্ঠীর সুচিকিৎসা পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। 

এই গরীব জনগোষ্ঠী যাতে সুচিকিৎসা পায় তার জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশগুলো পেশ করা হলো :-

প্রত্যেক ডাক্তার দিনে গরীব ও অসহায় ১০ জন রোগীকে বাধ্যতামূলকভাবে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। 

ডাক্তারদের ভিজিট ক্ষেত্রে অধ্যাপক ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৪০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক ০০ টাকা, প্রভাষক ০০ টাকা  নির্ধারণ করতে হবে।

ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা এবং অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের শাস্তি ব্যবস্থা করা।

আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত ডাক্তাররা সেবার বিপরীতে ডাক্তার ধর্মঘট করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের পদচ্যুতি করা।

একেবারে গরীবদের জন্য সমস্ত চিকিৎসা ব্যয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করা এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সত্যায়িত সার্টিফিকেটের বিধান রাখা যায়।

হাসপাতালগুলোতে রোগীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ সেবা পাচ্ছে কি না তা তদারকি করার জন্য সরকারীভাবে ভিজিলেন্স টিম গঠন করা।

পিতার টাকার জোর নয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণকারী ও ভাইভাতে নম্র ভদ্র ও অমায়িক ব্যবহারকারীদের অগ্রাধিকার দেয়া।

মেধাবী ও সেবার মনোভাবাপন্ন ছাত্র-ছাত্রীরা যেন চিকিৎসা বিদ্যায় আসে রাষ্ট্রীয়ভাবে তা দেখা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here