শিশুর অধিকার - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

শিশুর অধিকার

আজকের শিশু আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। এরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুরা দেশ ও জাতির চালিকা শক্তি। প্রবাধ আছে ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে’। এ শক্তির যদি সঠিক ব্যবহার আমরা না করতে পারি তাহলে এ শক্তি আমাদের উপকার না করে ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসবে। 

বাংলাদেশে প্রায়  কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী শিশু, কিশোর। এরাই আগামী দিনের সোনালী ভবিস্যৎ। আমাদের ভবিষ্যৎ বির্নিমানের স্বার্থে শিশুদের অবহেলিত রাখা যাবে না। এই সোনালী ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের ভাবনার শেষ নেই। সমস্যা সমাধানের সঠিক পথ খুঁজে খুঁজে আমরা আজ ক্লান্ত প্রায়। তার উপরে সামপ্রতিক দিনগুলোতে শিশু কিশোর হত্যার ঘটনা উদ্যেগ জনক। এ ধরনের ঘটনার চিহ্ন ও সংবাদ গুলোয় বিচলিত না হয়ে পারা যায় না। শিশু কিশোরদের যারা মৃত্যু কোলে টেলে দেয় তারা পেশাদার খুনি নয় বরং এই খুনিদের কেউ কেউ হত্যার শিকার শিশুদের বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন। এরা কেন এম হিংস্র বর্বর, নির্দয় হয়ে উঠতে পারল ? মানবিক মুল্যবোধের এই চরম অবক্ষয়ের কারণ খুঁজে বের করা দরকার। এই নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেমী ও আত্মীয়দের কাছেই যদি শিশুরা নিরাপদ না হয় তাহলে শিশুরা যাবে কোথায় ? সমাজেতো সুস্থির থাকবেনা। পারস্পরিক আস্থা ও ভালবাসায় ছিড় ধরবে। পরিবারের মধ্যে স্নেহ, ভালবাসা ও শ্রদ্ধার এতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

যারা আমাদের শিশুদের বিদেশে পাচার করে, যারা আমাদের শিশুদের উঠের জকি হিসাবে ব্যবহার করে, যারা শিশুদের বিরুদ্ধে সন্তাস করে তারা মানুষ রুপি পশু। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুদের উন্নয়ন মানেই উন্নত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। তাই তারা যাতে উন্নত সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে নিরাপত্তা ও সাচ্ছদ্যে বেড়ে উঠতে পারে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার আপনার আমার। কারণ শিশুরা দেশ জাতি ও বিশ্বের ভবিষ্যত। কিন্তু দুঃখজনক হলে ও সত্যি বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে যেখানে মা বাবা দারিদ্রের কষাঘাতে জজর্রিত সেখানে শিশুরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ক্ষুধার অন্ন, শীত নিবারনের বস্ত্র, রোগের চিকিৎসা ও উপযুক্ত বাসস্থান থেকেও তারা বহ্চিত। নিজ ভাষার বর্ণমালা ও তাদের কাছে অচেনা থেকে যায়। অপুষ্টির কারনে অন্ধত্বকে বরণ করতে হয়। জীবনের উষালগ্নে শৈশব কৈশোরেই নেমে পড়তে হয় জীবন যুদ্ধে। মায়ের পরম আদরে আপত্য স্নেহে যখন তাদের বেড়ে ওটার কথা তখন বাঁচার তাগিদে তাদের উদয়স্ত পরিশ্রম করতে হয়। কখনো শারীরিক নির্যাতন সহ নানা ধরনের নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়। কখনো অপহৃত বা বিক্রি হয়ে যায় শিশুরা। শিকার হতে হয় নানা ধরনে সহিংসতা ও প্রতিহিংসার অনলে অসুখে বিসুখে প্রাণ হারাতে হয় অকালে। বিশ্বে এখন ও শিশুদের একটি বিরাট অংশ নিষ্ঠুরতাও চরম নিরাপত্তাহীনতা মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়। এ অবস্থার আশু বড় প্রয়োজন দারিদ্র বিমোচন। প্রয়োজন ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সব শিশুর জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা।

উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশে দেশের মতো আমাদের বাংলাদেশেও নারী ও শিশুরাই সমাজের সবচেয়ে সুবিধা বঞ্চিত। সিমি, তৃষা, মহিমা তার ও আগে ইয়াসমিন, সীমা, এরকম অজস্র নাম বলা যাবে। এ সমাজ যাদের বাঁচতে দেয়নি। পাপড়ি মেলার আগেই যাদের এই পৃথিবী থেকে ঝরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সব চেয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছে কন্যা শিশুরা কারণ একই সঙ্গে তারা নারী এবং শিশু ও গ্রামীণ পরিবেশেও পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এখনো কন্যা শিশুর জন্মকে অনেক সময় অনাকাঙ্খিত মনে করা হয়। ফলে কন্যা শিশুর বঞ্চনা দিয়েই যাত্রা শুরু। অতপর শৈশব থেকে কৈশোর কৈশোর থেকে যৌবন বঞ্চনা তাকে আর চাড়ে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে শতকরা 40 ভাগ শিশু ঝরে পড়ে। এদের অধিকাংশ কিশোরী।

স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পুষ্টি বিধানের ক্ষেত্রে ও কন্যা শিশুরা অবহেরার শিকার। মায়ের অপুষ্টির কারণে বাংলাদেশের প্রায় অধেক শিশু স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহন করে। এসব স্বল্প ওজন বিশিষ্ট শিশু সারা জীবন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। এ ছাড়াও পরবর্তীকালে এসব পুষ্টিহীন কন্যা শিশুই মা হয়ে স্বল্প ওজনের শিশু প্রসব করে এবং সমাজের পুষ্টিহীনতাকে স্থায়ী করে দেয়। একবিংশ শতকে এ কখা নিতান্ত্যই বলা বাহুল্য যে কন্যা শিশুদের নিরাপত্তা জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রযাত্রার সঙ্গে অঙ্গঙ্গি ভাবে জড়িত।

শিশুরা হলো জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের ছোট্র কন্যাটি আগামী দিনের জননী। এদের গড়ে তুলতে পারলে একটি উন্নত জাতি দেশের কথা ভাবা যায়। শিশুদের অধিকার কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি আমরা তা ভাবা দরকার। বর্তমানে সবচেয়ে বেশী সহিংসতার শিকার হচ্ছে শিশুরা। জাতি সংঘের এক রির্পোটে বলা হয়েছে 18 বছরের কম বয়সী সব মানব সন্তানকে শিশু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ও তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছেনা।

প্রতিদিন অজস্র ছিন্নমূল শিশুর মানবেতর জীবন যাপন, অপহরণ, শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষন প্রমাণ করে এ সব ঘোষনা কেবল কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। পিতা মাতাহীন অসহায় অনাথ ছিন্নমূল সৃহহীন শিশুদের পূর্ণবাসন করা সমাজের দায়িত্ব। মাহীয়াসি নারী বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, মেয়েরা হলো পানির মতো। পানি ছাড়া আমাদের জীবন বাঁচে না। কিন্তু আমরা সে কথা ভূলে গিয়ে যথেবছা ভাবে পানি ব্যবহার করি। আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীন এই দেশের এই অবক্ষয় অবমান না দেখে কষ্ট হয়। এখন শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে ও এই অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হয় না।

নারী উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। তাদের জন্য ওটা দেয়া হবে সেটা দেয়া হবে ইত্যাদি। কিছু সিদ্দান্ত নারী সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়া হ। যেন ওগুলোর বাস্তবায়ন হলেই তাদের প্রতি যাবতীয় বৈষম্য দারিদ্র রাতারাতি দুর হয়ে যাবে। কিন্তু সত্যই কি তাই? দীর্ঘদিন থেকে এদশের নারী সমাজ তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া এরকম লাখো প্রতিশ্রুতির কথা শুনে এসছে। কিন্তু সে গুলোর বাস্তবায়ন আদৌ হয়েছে কি? 

একথা আবার ও বলতে হচ্ছে প্রতিটি দেশের সার্বিক জাতীয় উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মিশুর অগ্রগতি। শিশুর অধিকার রয়েছে আন্তর্জাতিক আইনগত ভিত্তি যা শিশুদের সব ধরনের কল্যানকে সুনিশ্চিত করবে। বিশ্বের কোটি শিশু অত্যন্ত প্রতিকুল অবস্থার মাঝে জীবন অতিবাহিত করছে। এদের অনেকেই এতিম, টোকাই, উদ্দাস্তু বা যুদ্ধের কারনে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক উদ্ধাস্তু শিশু রাসায়নিক জীবানু বা বিকিরনের শিকার হচ্ছে। মেয়ে শিশুরা পতিতা কিংবা অন্যান্য নীপিড়নের মেূখোমুখি হয়। শিশুরা পরিবার সমাজ রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট থেকে বিশেষ যত্ন নিরাপত্তা ও সহযোগিতা পাওয়ার দাবীদার।

শিশুর বিকাশ বেচেঁ থাকা সুরক্ষা ও শিক্ষা কোনো করুনা বা বদান্যতা নয়, বরং আইনগত বাধ্যবাধকতা। সরকার ও আনর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সমুহে শিশুদের অধিকার ও কল্যানের বিষয়টি সব কিছুর উপরে স্থান দেওয়ার ব্যাপারে তাদের নেতৃত্বের জন্য জবাব দিহি করতে হবে। আর যারা তা করতে ব্যর্থ হবে তাদেরকে ও জবাব দিহি করতে হবে।

শিশুদের অধিকার কল্যাণ নিশ্চিত করা সে দেশের টেকসই উন্নয়নের এবং বিশ্ব শান্তির ও নিরাপত্তার চাবি কাঠি। এই দায়িত্ব সর্ম্পূণ সুসঙ্গত ভাবে অপরিহার্য উপাদান। এই দায়িত্বের বেশীর ভাগ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের তবে অন্যান্য মহল যেমন সমাজ কর্মী ও উদ্যোক্তা, শিল্প ও বিজ্ঞানী, ধর্মীয় নেতা ও সাংবাদিক বৃন্দ।

আসুন আমরা সবাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্ণিমানে কন্যা শিশু তথা নারীদের প্রতি যাবতীয় বঞ্চনা ও নির্যাতনের অবসান ঘটাই, নিশ্চিত করি তাদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ যা ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও জাতির জন্য অপরিসীম কল্যান বয়ে আনবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here