সুশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

সুশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

সুশাসন একটি জাতি ও দেশের প্রাণ বলা যেতে পারে। বর্তমান পৃথিবীতে সুশাসনের বড় অভাব। প্রায় প্রতিটি দেশে দুর্নীতির একটি কালো ছায়া লেগে আছে সরকার আসে আর যায়। যে সরকারই ক্ষমতায় যায় তারা তাদের কতগুলো নির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে তারা শাসনকার্য পরিচালনা করে। তারা তাদের মন্ত্রীদের স্বার্থে, সংসদ সদস্যদের স্বার্থে, কর্মীদের স্বার্থে অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু ব্যাপক বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বার্থে তারা সাহসী পদক্ষেপগুলো নিতে চান না বা পারেন না। এটা আজকের বাংলাদেশের জন্য

একটি বড় দুর্বলতা বলে আমরা মনে করি। একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়ে গেল গত ১লা অক্টোবর। দেশ-বিদেশে এই নির্বাচন প্রশংসিত হয়েছে কিন্তু তারপরও আমাদের দেশের প্রধান বিরোধী দল তা মেনে নিচ্ছে না বা মেনে নেয়নি। যারা বিজয়ী হবেন তারা সরকার গঠন করবেন আর যারা পরাজিত হবেন তারা সেই পরাজয় মেনে নেবেন এটাই তো গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। কিন্তু আজ আমরা দেখি তার উল্টোটা। নির্বাচনে হারলেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আসে, ফলে বিরোধী দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সংঘর্ষ চলতেই থাকে। যার কারণে আজকে আমাদের দেশের উন্নয়ন বহু ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আজকে সারা দুনিয়ার সঙ্গে আমাদের তাল মেলাতে কষ্ট হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলার সঙ্গে সুশাসনের বা দুঃশাসন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। শাসন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকেন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব তাদের। আজকের রাজনীতিতে সৎ, দেশপ্রেমিক, ত্যাগী মানুষের জায়গা খুঁজে পাওয়া খুব কম যাচ্ছে। যারা অবৈধ অর্থের মজুদ গড়তে পারেন যারা মাস্তানী করতে পারেন, ক্ষমতার জন্য তারা সব কাজ করতে পারেন। তাদের ভূমিকা রাজনীতিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অথচ বক্তৃতায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলে। এর জন্য আমাদের উচিত আন্দোলনের মাধ্যমে এই প্রভাব থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে মুক্ত করা। প্রশাসনের মধ্যে যারা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ আছেন তাদেরকে আজ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আজকে আমাদেরকে ভালো রাজনীতিবিদ খুঁজে বের করতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের মধ্য থেকে। আমরা যদি আমাদের কথাকে সত্যে প্রমাণিত করতে চাই তাহলে সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। জনতা বলছে সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ চাই। এটা সমাজের চেতনা, এটাকে কার্যকরী করার জন্য আমাদের সবাইকে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। সন্ত্রাসের কারণ যদি আমরা অনুসন্ধান করি তাহলে দেখবো সন্ত্রাস জন্মানোর জায়গা বেশী না। মূলত এখনকার সন্ত্রাস অর্থনীতি নির্ভর। তবে এখনকার সন্ত্রাসের রাস্তা আরো ব্যাপক হচ্ছে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে, রাজনৈতিক হানাহানি, রাজস্ব আদায় নিয়ে, চোরাচালানির ট্যাক্স আদায় নিয়ে, এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে, কাস্টম অফিসারদের দুর্নীতি নিয়ে, বাস, ট্রাক, টেম্পু স্ট্যান্ড ও গরু বিক্রির হাট নিয়ে নানা ধরনের অঘটন ঘটে যাচ্ছে। বিভিন্ন সরকারের আমলে এই সকল অপতৎপরতা বন্ধের অপচেষ্টা করা হয়েছে। অনেক সময় নাগরিক কমিটি, অনেক ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশ যেই তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এরপরও সন্ত্রাসের আর এক জায়গা হলো ঠিকাদারী ব্যবসা। এর চাইতে মারাত্মক যে সন্ত্রাস আমাদের দেশে বিদ্যমান তা হলো রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সন্ত্রাস। রাজনীতি যখন সন্ত্রাসে যুক্ত হয়ে যায় তখন সে জাতীয় সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। দীর্ঘদিন আমাদের দেশে গণতন্ত্র না থাকার দরুন বা গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় আমরা দেখছি সর্বস্তরে পেশীশক্তির প্রভাব আমাদের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে যা আজকে আমাদের সমাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস প্রায় সর্বত্র। যদিও পুলিশ প্রশাসন মাঝে মাঝে সন্ত্রাস দমনের অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবে সন্ত্রাসী বার বারই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। কারণ তাদের পিছনে রয়েছে একটি বৃহৎ গোষ্ঠী। একটা ঘটনা হয়তো ঘটে যেতে পারে। তার বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত থাকতে পারে। কিন্তু তার পরের ইতিহাস? কেন এসব হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ উন্মোচিত হয় না। উদীচী হত্যাকাণ্ড, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড, নারায়ণগঞ্জে হত্যাকাণ্ড, গোপালগঞ্জে হত্যাকাণ্ড, সিপিবি হত্যাকাণ্ড, সাগর রুনি হত্যাকান্ড, অসখ্য গুমের গঠনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা জানি না এই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক কারা, কি তাদের পরিচয়। আজকে আমরা সুশাসনের কথা বলি। শাসন যার করার কথা সে যদি দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন না করে উল্টোটা করতে চায়, তাহলে কি শাসন চলে। শাসক হতে হলে একটু কঠোর হতে হয়। ভালবাসা দেয়া ভাল কিন্তু প্রয়োজনে কঠোরও হতে হয়। আজকের সমাজে যে সন্ত্রাস চলছে তার কেন্দ্রবিন্দু এদেশের রাজনৈতিক দলসমূহ। এদের লালন পালন ও দুধ কলায় এ সমস্ত সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই আজকের সমাজের মানুষ ঘরে, বাজারে, রাস্তায়, এমন কি ঘুমের মধ্যেও পর্যন্ত নিজেকে নিরাপদ বোধ করতে পারছে না।

আজকের পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন, বিচার বিভাগ সন্ত্রাস নির্মূলে তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আছে। ঠিক তেমনিভাবে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দেরও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা এর সবগুলোই কিন্তু যারা সরকারে আছেন তারাই করবেন। যে যেখানেই আছেন সে সেখানে তাঁর কর্মের জবাবদিহিতা করবেন। শুধুমাত্র সংসদেই জবাবদিহিতা করবেন তা নয়। 

আজকের বাংলাদেশের মানুষের নৈতিকতার বড়ই আকাল যাচ্ছে। আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগেও আমাদের যে নৈতিক অবস্থা ছিলো, আজ সে নৈতিক চরিত্রের অনেক অনেক অবক্ষয় হয়েছে। এই নৈতিক অবক্ষয় কিন্তু আইন- উন্নয়নে বাধা দেয়। তখনকার আমলে যে দায়িত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, সততা ও নিষ্ঠাবোধ ছিল তা আজ শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে। বর্তমানে যারা আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তাদের ঘাড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সকল দায়ভার চাপিয়ে দিলে কোন দিনই আমরা সুষ্ঠ আইন-শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে পারব না। আমাদের এই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যদি উন্নতি করতে হয় এবং জবাবদিহিতা যদি করতে হয় জনগণের কাছে, তাহলে সামগ্রিক সচেতন ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে প্রত্যেক এলাকাতে ছোট ছোট্ট সংগঠন সৃষ্টি করার মাধ্যমে সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারি। একদিন যেন আমরা গর্ব করে বলতে পারি যে, আমাদের পুলিশের আর দরকার নেই আমরা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই অবস্থা যদি আমরা সৃষ্টি করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমাদের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হবে।

সন্ত্রাসের মূল হোতা বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা। তাদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও সন্ত্রাস পরিচালিত হচ্ছে। প্রবন্ধের শুরুতে আগেই বলেছি সুশাসন একটি দেশের জন্য অবশ্যই জরুরী একটি দেশে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারীদল ও বিরোধী দল উভয় একটি সরকারের অংশ। দুভার্গজনক হলেও সত্যি এই চিন্তা-চেতনা এই বিশ্বাসটুকু আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে অনুপস্থিত।বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল যদি তার সবচাইতে যোগ্যতম ব্যক্তি, সবচেয়ে মেধাবী এবং দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিকে যদি নির্বাচনে মনোনয়ন দেন তাহলে তারা নির্বাচিত হয়ে সততা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের প্রতি দৃষ্টি দিতে পারবেন। কেননা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি ছাড়া তা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমি বলবো গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। গণতন্ত্রের কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এই কারণে যে আমরা সুশাসন চাই। 

সুতরাং আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের জবাবদিহিতা, সুশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা দল নিরপেক্ষ সরকারে মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা কিন্তু হতাশ নই। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে উপমহাদেশের মধে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে রাষ্ট্রীয় সুশাসন তৈরীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে সুস্থ রাজনীতির ধারা সৃষ্টি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here