সৃষ্টিকর্তা যদি থাকতেই হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তাঁকে হতে হবে সর্বশক্তিমান এবং অনন্ত। কিন্তু যদি দেখানো যায় যে তাঁর বাম পক্ষে একটি অক্ষমতা আছে তাহলে তাকে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকার করা যুক্তি সংগত হবে না। সৃষ্টিকর্তা সত্যিই আছেন। আল্লাহ বলেন, اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ আল্লাহতো সেই চিরঞ্জীব শাশ্বত সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্বজগতকে দৃঢ় ভাবে ধারণ করে আছেন। তিনি ছাড়া আর কেউই প্রভূ সার্বভীম নয়। তন্দ্রা বা নিন্দ্রা কোন কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। আকাশমন্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছুই আছে সব তো তারই কর্তৃত্বে মালীকানাধীন, তাঁর নিরংকুশ কর্তৃত্ব সার্বভেীমত্ব সমগ্র আসমান যমীনকে আয়ত্ব করে নিয়েছে এই আসমান ও যমীনের সংরক্ষণ তাকে বিন্দুমাত্র ও ক্লান্ত করতে পারে না, তিনিই একমাত্র মহান সুউচ্চ শ্রেষ্টতম। (সুরা বাকারহ, আয়াত ২৫৫)
সৃষ্টিকর্তা যদি থেকেই থাকেন তাহলে তিনি অনন্ত হতে পারেন না, কারণ তাঁকে যদি অনন্ত হতে হয় তাহলে এমন হতে হবে যে তাঁর কোন শুরুই ছিল না। কিন্তু যার শুরু বা সৃষ্টি হয়নি তার কোন অস্তিত্বই থাকতে পারে না। আর যদি বলা হয় যে তিনি আপনা আপনি থেকেই অনন্তকাল ধরে আছেন এবং থাকবেন তাহলে তাহারে নিছক বিশ্বাসের ব্যাপার, তাকে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। (সৃষ্টিকর্তা সত্যই আছেন, পৃষ্টা ৪)
উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে ধরা যাক সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাহলে তাঁকে অবশ্যই অনন্ত বা চিরস্থায়ী হতে হবে। এবং তাকে অবশ্যই দুর্বোধ্য হতে হবে। ধরে নেয়া যাক অনেক খোজা খুঁজির পর মানুষ তাঁকে বুঝতে পারল, তাহলে মানুষ আর তাঁকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে না। তিনি যতই ভয়ংকর বা ক্ষমতাশীল হোক না কেন? তখন মানুষ খুঁজবে এমন একজন সৃষ্টিকর্তাকে যাকে সে পুরোপুরি বুঝতে পারে না। মানুষ চিরকালই যাকে পুরোপুরি বুঝতে পারবে তাঁকেই অতিক্রম করে যেতে চাইবে। মানুষ একমাত্র তাতেই মাথা নত করে যাকে সে পুরোপুরি বোঝে না।দুর্বোধ্যতা তাই মানুষের এত পছন্দ।
সুতরাং সৃষ্টিকর্তা সহজ বোধ্য হলেও মানুষ নিজের সন্তুষ্টির জন্য তাঁকে দুর্বোধ্য করে তুলেতো। অর্থাৎ প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তাকে বুঝতে না পেরেই বেশি আনন্দিত। সুতরাং প্রকৃত জ্ঞানী ধার্মিক সৃষ্টিকর্তাকে পান না বলেই খুশি (সৃষ্টিকর্তা সত্যই আছেন, পৃষ্টা ৮)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, لَّوْ أَرَادَ اللَّهُ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا لَّاصْطَفَىٰ مِمَّا يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ سُبْحَانَهُ ۖ هُوَ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ মহান পবিত্র সর্ব দুর্বলতা মুক্ত তিনি, তিনি আল্লাহ এক ত্ত একক মহাপরাক্রমশালী। (সুরা যুমার, আয়াত ৪) আল্লাহ তায়ালা বলেন,وَنَادَيْنَاهُ مِن جَانِبِ الطُّورِ الْأَيْمَنِ وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيًّا পর্দার আড়াল থেকে তাঁকে আমি তুর পাহাড়ের ডান দিক হতে ডাকলাম, স্বয়ং আমি গোপনত্ব প্রকাশে তাকেনিকটবর্তী করলাম। (সুরা মরিয়ম, আয়াত ৫২)
নাস্তিক পন্ডিতগণ সৃষ্টিকর্তার অনস্তিত্বকে বিভিন্নভাবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। অনেকে মনে করেন যে তাদের প্রমাণ পর্যাপ্তভাবে চুড়ান্ত। প্রথমত ধর্মগ্রন্থের (যেমন বাইবেল, কুরআন) বিবৃতিকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে যে তাতে অসংগতি আছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্নবিরোধী কথা বলা হয়েছে যাদের একটি সত্য হলে অপরটি মিথ্যা হতে বাধ্য। দ্বিতীয় ধরনের যে প্রমাণ হাজির করা হয়েছে পর্যবেক্ষণজাত বিজ্ঞানের তত্ত্ব থেকে আত্নবিরোধ (Self contradiction) Symmetrical. Purposeful, classical, assumption, quantum physics এর মাধ্যমে। তৃতীয়ত সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের সবচেয়ে ব্যাপক এবং মৌলিক যে প্রমাণ গুলি দেয়া হয়ে থাকে তা দার্শনিক ও যুক্তিক, প্রমাণ হিসেবে এগুলোর যুক্তিকতা নির্ভর যোগ্যতা এবং মর্যাদা সব চেয়ে বেশি।
আমরা ধরে নিলাম সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাহলে তাঁকে নিঃসন্দেহে হতে হেব সর্বশক্তিমান এবং অনন্ত। প্রশ্নহলো তাঁর কোন অক্ষমতাই নেই। অনন্ত একটি অক্ষমতা তার আছে এবং তাহলো এই যে তিনি নিজেকে ধ্বংস করতে পারে না। নিঃসন্দেহে একটি অক্ষমতা। সুতরাং সর্বশক্তিমান বলে কিছু নেই এবং ফলে সৃষ্টিকর্তাবলেও কিছু নেই। অপর পক্ষে যদি ধরা হয় তিনি নিজেকে ধ্বংস করতে পারে তাহলেতো নিতি ধ্বংসশীল বা নশ্বর হয়ে গেলেন। অর্থাৎ তার ধ্বংস অসম্ভব। যার দ্বারাই হোক না কেন। কিন্তু নশ্বর কোন সত্ত্বা কখনো সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না। ফলে সৃষ্টিকর্তা বলতে কিছু নেই। (সৃষ্টিকর্তা সত্যই আছেন, পৃষ্টা ১২) কেননা আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন তিনি কেবল বলেন হও, ওমনি তা হয়ে যায়। সেটা সৃষ্টি ক্ষেত্রে হোক কিংবা ধ্বংসের ক্ষেত্রে হোক। (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৮২)
মানুষের বিচারে যাকে ধ্বংস বলা হয় সৃষ্টিকর্তার বিচারে ধ্বংস মানে তা নাও হতে পারে। কারণ মানুষের বিচারেও তো পুরো পুরি ধ্বংস বলতে কিছুই নেই। শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে মানুষ সৃষ্টিজগতের কোন শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে পারে না। সে শুধু এক প্রকার শক্তিকে অন্য প্রকার শক্তিতে রুপান্তরিত করে মাত্র। সুতরাং মানুষের ক্ষেত্রে যদি এই হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ব্যপার টি আরও স্থির। তিনি নিজেকে ধ্বংস করতে করতে সম্পূর্ন নিজেতেই রুপান্তরিত হন। ভিন্ন কিছুতেই রুপান্তিরিত হন না বা তাঁর কোন রুপান্তর নেই। অথবা রুপান্তর প্রক্রিয়াটাই তার জানা। নিজেকে ধ্বংস করতে করতে তিনি উক্ত ধ্বংসের প্রক্রিয়ার মধ্যে জীবিত থাকেন। তিনি স্বয়ং সম্পূর্ন (সৃষ্টিকর্তা সত্যই আছেন, পৃষ্টা ১৩,১৪,১৫)
আল্লাহ বলেন, كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ভূপৃষ্টের সব কিছুই নশ্বর, অবিনশ্বর কেবল তোমার রবের সত্তা যিনি মহিমাময় মহানুভব। (সুরা রহমান,আয়াত ২৬) অন্য আযাতে আল্লাহ বলেন, তিনিই আদি তিনিই অন্ত, তিনি যুগপৎ ব্যক্ত ও অব্যক্ত এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত (সুরা হাদদি, আয়াত ৩) সৃষ্টির সাথে সষ্ট্রার দুরত্ব যেটুকু তাহলো প্রশ্নের দুরত্ব। সব প্রশ্নের অবসান ঘটলে পরম জ্ঞান লাভ করা যায়। তখনেই ইহজগত সেই জ্ঞানীর আর কোনো কাজে লাগে না। মনে রাখা উচিত আমাদেরকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই বলে তাঁকে এলো পাথাড়ি ভাবে প্রয়োগ করা জ্ঞানীর লক্ষণ নয়। (কোরানের আলোকে অবধ্যাতিক শক্তির উৎস এবং অলৌকিক সান্নিধ্য লাভ পৃঃ ১৮০)
প্রশস্ত বিস্তৃত পৃথিবী, তাদে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে থাকা পর্বতমালা মানুষকে চিরকাল মুগ্ধ ও বিমোহিত করেছে। قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - اللَّهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ বল, তিনি তো আল্লাহ এক ও একক। আল্লাহ সবকিছু থেকে নিরপেক্ষ অনির্ভরশীল সবই তার প্রতি মুখাপেক্ষী। তাঁর কোন সন্তান নেই, তিনি জাত নন এবং তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ কেউ কোথাও নাই। (সুরা ইখলাছ, আয়াত ১-৪)
স্রষ্টা আল্লাহই! সৃষ্টিকর্ম কেবলমাত্র তাঁরই কৃত। সৃষ্টি করার ক্ষমতা শক্তি ও যোগ্যতা পুর্ণমাত্রায় কেবল তারই রয়েছে। তিনি নিরংকুশ ক্ষমতা ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আল্লাহর ইচ্ছা নিগূঢ় তত্ত্ব কি, তা কাররই জানা নেই। করুর পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। সে ইচ্ছা বাস্তবরূপ পরিগ্রহ করল কিভাব, েতা অনুভব করা মানবীয় ক্ষমতার বাইরে। এ তত্ত্ব গভীর নিগূঢ় তমসাচ্ছন্ন রহস্য। সে রহস্য জানার শক্তি মানুষের নেই। আল্লাহ মহান সত্ত্বা চিরন্তন শাশ্বত, তিনি চিরদিন ছিলেন, আছেন, থাকবেন। তার ধ্বংস বা বিলুপ্তি থেকে তিনি চিরমুক্ত ও চির উর্ধে। হাদীসে আল্লাহকে লক্ষ করে বাণী উদ্বৃত হয়েছে, ‘হে আল্লাহ! আপনিই সবকিছুর উপরে প্রকাশমান, বিজয়ী ও সর্বোচ্চ। অতএব আপনার উপরে কিছু নেই কেহ নেই। (সষ্ট্র ও সৃষ্টিতত্ব, পৃষ্টা ৭৪, ৭৫,৭৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের সকলের বেশি বেশি করে কুরআন ও হাদীস পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন