সৃষ্টিগতভাবে হিন্দুরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা অগণিত দেব-দেবীর পূজা, সতীদাহ, নরবলী ইত্যাদি ঈশ্বরের পূজা, ধর্মের ব্রাহ্মণ- শুদ্রের মধ্যে বিভেদ ও অস্পৃশ্যতা ইত্যাদির প্রচলন করে। তাদের অধর্মাচরণের এক দীর্ঘ ফিরিস্তি দিয়েছেন মি: আর সি দত্ত পুরাতন ভারতবর্ষ" নামক গ্রন্থে নিয়ে তাঁর কয়েকটি উদাহরণ। (ক) বেদ গ্রন্থে মান ৩৩টি দেবতার উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু ব্রাহ্মণরা তাকে ৩ কোটিতে পরিণত করেছে। (খ) মেয়েদের কোন মর্যাদা ছিল না, তাদের চাকুরাণীর মত দেখা হত। পুরুষের চিত্তবিনোলনের জন্য তাদেরকে সম্পূর্ণ বিষয় হয়ে নাচতে হত। (বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা: এর জীবনী, প্রফেসর এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান, পৃ ৫৪-৫৫ )
হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ 'মহাভারতে একই স্ত্রীলোকের একই সময় কয়েকজন স্বামীর উল্লেখ দেখা যায়। ছি এ খ্যাতনামা ধর্ম। এ ধর্ম বহু পুরাতন। যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি মানুষ এ ধর্মের অনুসরণ করে আসছে। কর্মধার আশিও ছিল। কিন্তু কালের গতিধারায় আবর্তিত হয়ে আজকের এ শিরকে আবর্জিত হয়েছে। মানব রচিত পরিবর্তনশীল হিন্দু ধর্মে নারীর কোন মর্যাদা বা সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে নি। বরং সতীদাহের মত নির্মম; নিষ্ঠর; অমানবিক হিন্দু ধর্মেরই আবিষ্কার।
পুরুষ একই সময়ে একাধিক বিয়ে বা স্ত্রী বিয়োগের পর পূনর্বিবাহ করতে পারত। কিন্তু নারী স্বামী বিয়োগের পর পুনর্নিবাহ করা তো দূরের কথা বাঁচিয়েও থাকতে পারত না। স্বামীর সঙ্গে জীবন্ত দক্ষ না হইলে মৃত স্বামীর সঙ্গে ছটফট করে পুড়ে মরতে না পারলে স্বর্গীয় সুখ লাভ হইবে না। (প্রগুপ্ত, পৃ ৫৫) যদি কোন নারী ভাগ্যক্রমে সতীদার হইতে বেঁচে যেত তবে ঘরে সমাজে বা আত্মীয় স্বজনের কাছে মুখ দেখাইবার সুযোগ ছিল না, এমনি অবস্থায় বেঁচে থাকার চাইতে মরা অধিকতর শ্রেয়। সনাতন ধর্মে একই সময়ে দশ দশটি স্ত্রী রাখার অনুমতি ছিল হিন্দুদের খ্যাতনামা মণীষী রাজা দশরথের তিনজন স্ত্রী ছিল। মহারাজা ধ্রুবের পাঁচজন, পান্ডর দুইজন, অর্জনের তিনজন স্ত্রী ছিল। বিজয় নগরের তেলেগু রাজার ১২০০ স্ত্রী ছিল। রাজা মানসিংহের ১৫০০ জন স্ত্রী ছিল। হিন্দুরা তালাক শব্দের সাথে পরিচিত নয়। ফলে যথেচ্ছা অত্যাচার উৎপীড়ন মানবাধিকার লংঘন করলেও মুক্তির উপায় নেই। স্বামী সৎ হলে সেই নারীর কপাল ভাল। কিন্তু স্বামী অসৎ হলে সেই নারীর জুলুম নির্যাতনের আর শেষ নেই। স্বামী হল নারীর দেবতা, সুতরাং দেবতার কোন পাপ থাকতে পারে না।
নারী দিবা রাত্রি কোন সময় স্বাধীনা থাকতে পারিবে না। সমস্ত ক্ষমতা স্বামীর অধিকারে থাকিবে। নারী স্বাধীন হওয়ার উপযুক্ত নয়। নারী জীবনে কখনও ইচ্ছামত কোন কাজ করতে পারবে না। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্য কোন পুরুষের অর্থ- শায়িণী হতে পারবে না। শয্যাপ্রিয়তা অলংকারাসিভ পাপ, লিল্লা, আত্মগর্ত, ক্রোধ, একগুয়েমী ও বিরক্তিকরণ নারী চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গর্হিত কাজ করা তাদের স্বভাব। মিথ্যা বলা তাদের অভ্যাস। নারীর সাথে কখনও পরামর্শ করতে নেই। পৃথিবীতে পুরুষ পাপ করিলে পরজনমে নারী হয়ে জন্ম গ্রহণ করবে There is no creature more sinful than woman Woman is burning fire. She is the sharp edge of the rezone. She is verily all these in a body অর্থাৎ 'নারীর ন্যায় এত পাপ পলিডামর প্রাণী জগতে আর নেই। নারী প্রজ্জ্বলিত আগ্নিস্বরূপ। সে ক্ষুরের ধারালো দিক। এই সমস্তই তার দেহে সন্নিবিষ্ট হিন্দু সমাজে নারীদের পারিবারিক সামাজিক জীবন প্রবাহ অত্যন্ত শোচনীয় ছিল।
নারী কোন ভালবাসার জাত নয় Men should not live their 'নারীদিগকে ভালবাসা পুরুষদের উচিৎ নয়। হিন্দু সমাজে স্ত্রী উরসে পুত্র সন্তান জন্মালে পরিবারে আনন্দের জোয়ার বইত। কিন্তু কন্যা সন্তান জন্মালে বিষাদের ছায়া ঘনিয়ে আসত। তারা প্রার্থনা করত এইভাবে The birth of a girl grant if else. Where here grants a boy দেবতা নারী সন্তান অন্যত্র দাও, আমাদেরকে পুত্র সন্তান দাও। হিন্দু আইনে লিখিত আছে, 'অদৃষ্ট নরক, কন্যা ও বিষবর সৰ্প এর কোনটিই নারী অপেক্ষা ক্ষতিকর নয়।' নারী হৃদয়ে বিষ ও অনল। রবীন্দ্রনাথ বলেন, নারীর বচনে মধু হৃদয়েতে হল হল, আধারে প্রিয়ার সূখা চিত্তে দাবানল।' নারী ভয়ঙ্কর। রবীন্দ্রনাথ বলেন, নারী যখন আপন প্রতিষ্ঠা থেকে এই হয়, তখন সংসারে সে ভয়ঙ্কর বিপদ হয়ে দেখা দেয়। পৃথিবীটা কেবল পুরুষের। সেন্টের মতে, মেয়েদের আকর্ষণও ততক্ষই থাকে যতক্ষণ তাদের রাখা হয়, আত্মমর্যাদার আঁধারে আবদ্ধ করে। সুগন্ধিযুক্ত বোতলের মুখ খুলে দিলেই মেন্ট উড়ে যায়। এটা পুরুষের পৃথিবী। এখানে সেন্ট আর মেয়ে মানুষের মূল্য একই।
নারী অবিশ্বাস্য-শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংশ বলেন, যদি মেয়ে মানুষ ভক্তিতে ফেঁসে গড়াগড়ি দেয়, তবুও কোন মতে তাকে বিশ্বাস করবে না।" নারী দেহ মৌমাছি। শংকর বলেন, মেয়ে মানুষের গতর যতক্ষণ আছে ততক্ষণ মৌমাছির অভাব হয় মা। অবশ্যই বর্তমান হিন্দু নারী সমাজে যুগের প্রভাব কাটিয়ে উঠে আত্মমর্যাদাবোধ প্রবল হতে চলেছে।
১৯৩০ সালের ২২ নভেম্বর 'সমাজে নারীর স্থান’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধকার খ্যাতনামা শিক্ষক একজন হিন্দুনারী বলেছেন, হিন্দু গ্রন্থগুলোতে কিভাবে নারী জাতিকে হীন, পাপ মূর্তি এবং বিশ্বাসের অযোগ্য বলে আখ্যায়িত করা হইয়াছে তা ভাবতেও অবাক লাগে।' প্রবন্ধকার বলেন, 'তুলসী রামায়নেও নিতান্তই নিষ্ঠর ভাষায় আমাদের প্রতি বিষেদানাগার করা হয়েছে তাতে আছে নারী জাতির অন্তরে সর্বদা ৮ টি দোষ বিদ্যমান থাকে যথা- ঐদ্ধত্য, মিথ্যা, চালাকী, শঠতা, ভয়, বুদ্ধিহীনতা, কর্কশতা এবং দয়াহীনতা। তাতে আরও লিখা আছে স্ত্রী ও শুভ্রকে লেখাপড়া শিক্ষা দিও না।' একটি সংস্কৃত শ্লোকে বলা হয়েছে 'যদি কোন শতবর্ষী হাজার রসনা বিশিষ্ট্য ব্যক্তি দুনিয়ার সব কিছু ছাড়িয়ে কেবল মাত্র নারীর দোষত্রুটি বর্ণনা করে তাতে সে উহা শেষ করতে পারবে না।' নারীর কাজ হল রান্না করা, কাপড় ধোয়া, পাত্র মাজা এবং দিবারাত্রী সেবা করাই তাহার কর্তব্য। নারী শুধু স্বামীর আমোদ ফুর্তির উপকরণ মাত্র।
উল্লেখিত কথাগুলো হিন্দু ধর্মের। নারীর সম্মান ও মর্যাদা তারা কেমন করে কিভাবে দিয়েছে ঐ কথাগুলো পড়লেই উপলব্ধি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন