নারীর সামাজিক অবস্থা - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

নারীর সামাজিক অবস্থা

আল্লাহ পাক বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ‘হে মানব জাতি আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, এবং পরস্পর পরিচিত্তির জন্য বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করেছি, নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সেই সর্বাধিক সম্রাজ্ঞ যে সর্বাধিক পরহেজগার। (সুরা হুজরাত, আয়াত-) তার নির্দেশাবলীর মধ্যে একটি এই যে, خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ তিনি তোমাদের মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন, এখন তোমরা মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। (সুরা আর রহমান, আয়াত-)

নারী অর্ধেক মানবতা। পুরুষ মানবতার মাত্র একাংশের প্রতিনিধি। অপর অংশের প্রতিনিধিত্ব করে নারী। তাই নারী সমাজকে বাদ দিয়ে মানব জাতির জন্যে যে পরিকল্পনাই রচিত হয় তা অনিবার্যভাবে অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ। (নারী, মাওলানা আবদুর রহীম, খাইরুল প্রকাশনী, মগবাজার, ঢাকা পৃ. ) সৃষ্টির মূলে পৃথিবীর বুকে নারীর যথেষ্ট গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও ইসলাম পূর্বকালে পুরুষ সমাজ নারীকে যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা দেয় নি। পৃথিবীর বন্য একটি পশুর যে সম্মান ও মর্যাদা ছিল মানুষ সমাজে মনুষ্য জাতির অর্ধেক নারী জাতির সম্মান ও মর্যাদা ছিল না। নারীর সাথে সীমাহীন বাড়াবাড়ি এবং নুন্যতম বিশ্বয়কর নির্যাতন করা হয়েছে। নারী একদিকে মাতারূপে সন্তান প্রতিপালন করেছে, পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী সেঙ্গে তার জীবনের উত্থান-পতনে তাকে সহযোগিতা করেছে এবং তাকে শারীরিক ও মানসিক শান্তি দান করেছে। এ কারণেই নারী পুরুষের সুসম উন্নয়ন সমাজ প্রকৃতির একটি অনিবার্য পূর্বশর্ত।

পুরুষ নারীকে গরু, ছাগল, সেবিকা এবং দাস-দাসী হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় করেছে। নারীকে মালিকানা ও উত্তরাধিকারী হতে বঞ্চিত করেছে। নারীকে পাপ-পঙ্কিলতার ও লাঞ্চনার প্রতীক মনে করা হত। ছিল না তার কোন সামাজিক মর্যাদা। কোথায়ও কন্যা সন্তানকে অমর্যাদার প্রতীক ভেবে ডাকে জীবন্ত কবর দিত। সদ্য প্রসূত শিশু কন্যার দায় হইতে মুক্তি পাইবার বিভিন্ন পন্থা ছিল। কেহ কন্যাকে জবাই করত। কেহ নদীতে ভাসাইয়া দিত। কেহ জীবিত অবস্থায় মাটি চাপা দিত। কেহ পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করে পাপের প্রায়শ্চিত্য করত। ঐতিহাসিক খোদা বক্স বলেন, War woman and wine were the three absorbing of the Arab সুশৃঙ্খল জীবন সম্পর্কে আরব বাসীর কোন জ্ঞানই ছিল না। ফলে অন্যায় অরাজকতায় দেশ ভরে উঠেছিল। কবি ফরযদকের পিতামহ একবার কতকগুলি উঠের বিনিময়ে ১৮০টি শিশু কন্যাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়েকে স্কুলের কলঙ্ক ও অপমানের উৎস বলে মনে করা হত। মেয়ে সন্তান জন্মেছে বলে সংবাদ পেলে পিতা অত্যন্ত দুঃখ পেত। (সিরাতুন্নবী, র্থ  খন্ড) আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِالْأُنثَىٰ ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ-يَتَوَارَىٰ مِنَ الْقَوْمِ مِن سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ ۚ أَيُمْسِكُهُ عَلَىٰ هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ যখন তাদেরকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করা হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে দু:খ ও চিন্তায় বাঘিত হয়ে পড়ে। তাকে যে সুসংবাদ দেয়া হল তার লজ্জায় সে নিজের লোকদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়, সে চিন্তা করে অপমান সহা করেও তাকে জীবিত রেখে দেব, নাকি মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলব? জেনে রেখ কত নিকৃষ্ট তাদের সিদ্ধান্ত। (সুরা নাহল, আয়াত -)

আবু হামযা একজন সম্ভ্রান্ত বংশীয় সরদার ছিলেন। তার স্ত্রী একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করল। তখন সে এ লজ্জায় বাড়ি, ঘর পরিত্যাগ করে আত্মগোপন করল। তখন তার স্ত্রী সদ্যোজাত কন্যাকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে মনের দুঃখে এ, কবিতাটি আবৃদ্ধি করেছিলেন। তার অর্থ ছিল এরকম আবু হামযার কি হল? সে আমার কাছে আসে না অথচ প্রতিবেশির বাড়িতে রাত যাপন করে। পুত্র সন্তান প্রসব না করার দরুনই সে আমার উপর অসনতুষ্টু হয়েছে। আল্লাহর শপথ করে বলছি, পুত্র সন্তান প্রসব করা আমার ক্ষমতাধীন নয়।  আমরা নারীরা ক্ষেত্রফুল্য, স্বামীরা আমাদের মধ্যে যে শস্যের বীজ বপন করেন সে শস্যের দ্বারাই জন্মে। (বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা: এর জীবনী, প্রফেসর এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান, পৃ  এবং সীরাতুন্নবী থ খন্ড) 

‘কায়েস বিন আসিম’ নামক এক ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার পর রসূল সা: এর খিদমতে হাজির হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল সা: আমি নিজ হাতে আমার আটটি কন্যা সন্তানকে জীবিতাবস্থায় মাটির নিচে দাফন করেছি। কথিত আছে যে, কায়েসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল মেয়েদের জন্য তোমার দরদ লাগেনি? তখন সে উত্তরে বলেছিল হ্যাঁ। একটি মেয়ের জন্য প্রাণে ব্যথা লেগেছিল। কারণ মেয়েটিকে গর্তে ফেলে আমি গর্তটি ভরাট করছিলাম, যখন মেয়েটির বুক পর্যন্ত পুতে ফেলা হয়েছে, এমন সময় মেয়েটি তার দুহাত বাড়িয়ে আমার দাড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, আব্বাজান আপনার দাড়িতে ধুলা লাগছে। তখন অন্তরে একটু ব্যথা লেগেছিল। 

আরও কথিত আছে যে, কায়েসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আর কোন মেয়ের জন্য তোমার লাগে ব্যথা লাগেনি? উত্তরে সে বলেছি হ্যাঁ। একটি মেয়ের জন্য প্রাণে ব্যথা লেগেছিল। মেয়েটি ছিল খুব সুন্দরী যেন পূর্ণিমার চাঁদ তার মুখের হাজি ছিল যেন মধুর, কথায় ছিল মিষ্টি, এক কথায় মেয়েটি রূপেগুণে অতুলনীয়া ছিল, আমি যখন তাকে গর্তে ফেলে মাটি  ফেলতে আরম্ভ করলাম তখন সে অশ্রুজলে তার গন্ডদেশ প্লাবিত হতে লাগল এবং বিস্ফোরিত নেত্রে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল আব্বাজান আমি কি অপরাধ করেছি ? কি জন্য আপনি আমাকে নিষ্ঠরের মত মাটি ছাপা দিচ্ছেন। তখন আমার কোন জবাব ছিল না। (প্রগুপ্ত, পৃ ৮)

কোথায়ও নারীকে তার স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে তাকেও আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হত। কোথায় নারীর যৌবনকে ব্যবসার পুঁজি হালাজ। কোথায়ও নারীকে উলংগ হতে বাধ্য করা হত। জনৈক ঐতিহাসিক বলেন, This revolting customs prevailed extensively until it was suppressed by Mohammad peace be on him দমন না করা পর্যন্ত এই নিদারুন ঘৃণা প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।' চীন, মিশর, আফ্রিকা, ইউরোপ সর্বত্রই নারী ছিল দাসী অথবা পণ্য দ্রব্যের মত। প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি ভারত বর্ষেও নারীর অবস্থান ছিল না। পশ্চিমাসহ বিভিন্ন দেশে গর্ভপাতকে বৈধ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বিভিন্ন মেরিস্টোপ ক্লিনিকে ও অন্যান্য ক্লিনিকে অবাধে কন্যা সন্তান হত্যা করা হচ্ছে। অন্য দিকে আমাদের পাশের দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কন্যা সন্তানের পিতা যৌতুন ও নারী নির্যাতনের নির্মম চাল থেকে ভবিষ্যতে মেয়ে সন্তানকে রেহাই দেয়ার জন্য ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় জেনে কন্যা সন্তানকে আগেই হত্যা করছে। আর সেখানে Pay 500 Rupees and save 5000000!? (নৈতিক অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন : কারণ ও প্রতিকার, পৃ ) রমনীর যর্থাৎ মর্যাদা ছিল উপেক্ষিত ও অবহেলিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here