মুসলিমদের দৃষ্টিতে নারী - Etikathon

Etikathon

দেশ ও সমাজ : আমার চিন্তার বহি:প্রকাশ

Etikathon

test banner

Post Title

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

মুসলিমদের দৃষ্টিতে নারী

বর্তমান বিশ্বে ১০ কোটি মুসলমান। মুসলিম সম্প্রদায় ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে নারীকে সম্মান মর্যাদা ও অধিকার দিয়ে থাকে। কেননা মুসলিম সম্প্রদায় তাদের ধর্ম ইসলামকে অনুসরণ করে ও ইসলামের আদর্শকে অনুসরণ করে। দুনিয়ার বিভিন্ন ধর্মে মতাদর্শে সমাজ ও সভ্যতায় নারীকে কি দৃষ্টিতে দেখে তার একটি সম্যক ধারণা ইতমধ্যে আমরা পেয়েছি। 

মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম নারীকে দিয়েছে প্রভূত সম্মান ও মর্যাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا 'আর নিশ্চিত জানবে আমরা আদম বংশ মানুষকে অত্যন্ত সম্মানই করেছি। জ্বলে, স্থলে তাদের করেছি কতৃত্ব সম্পন্ন। পবিত্র ৱিষিক দিয়েছি তাদের এবং আমাদের বহু সংখ্যক সৃষ্টিকূলের উপর বিশেষ ধরনের সম্মান শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত )

ইসলাম নারী সম্পর্কে অত্যন্ত যত্নবান। কোন কোন ধর্মে নারীর দ্বিতীয় বিয়ে করার অধিকার ছিল না, স্বামী মারা গেলে তাকেও জ্বলন্ত অগ্নিতে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হত। কিন্তু মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম এটাকে মানবতা বিরোধী বলে খ্যাতির প্রতি সুন্দর আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম নারী এবং দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ 'হে মানুষ তোমরা তোমাদের সেই আল্লাহকে ভ যাদেরকে এক জীবন্ত সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জুড়ি। (সুরা রুম, আয়াত ১) আয়াতে মানবতাকে সম্মোধন করা হয়েছে তার মধ্যে যেমন পুরুষ রয়েছে তেমনি নারীও রয়েছে।

আজ দুনিয়াতে নারীর অধিকার বলুন, আর নারীর স্বাধীনতার কথা বলুন অথবা লিঙ্গ সাম্য বা সম্মান যাই বলুন না কেন যেয়ে, ঘুষে যা কিছু বাকি আছে তা মুসলমান সমাজে বিদ্যমান। ইসলাম ধর্মে এমন কোনসিক বাকি নেই যে দিকটা নিয়ে আলোচনা করেনি ইসলাম। ইসলাম নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় দিক সকল দিকই আলোচিত হয়েছে। নারীর সম্মান ও মর্যাদা দিতে গিয়ে মৌলানা রুমী বলেন, 'নারী বিধাতার ছায়া, সে মহে কামিনী, নহে সে যে সৃষ্টি, তাবে এটা অনুমানি।’

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তা চেতনায় নারীর বিচিত্র অনুসঙ্গ বরাবরই যুক্ত ছিল। সমাজে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তাইতো তিনি নারীর সম্মান, অধিকার ঘোষণা করেছেন এভাবে, 'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।' নজরুল দেখেছেন পৃথিবীর সকল কাজেই নারীর অংশীদারিত্ব রয়েছে। সমাজের চাকা পুরুষ একাই বহন করেনি, সেখানে সতত প্রয়োজন হয়েছে নারীর। তাইতো নজরুল লিখেছেন, 'কোন ভালো হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ নারীর সম্মান ও মর্যাদা দিতে গিয়ে বলেন, নারী পুরুষের ভোগের জিনিস নহে, তারা আদরের পুতুল কায়ার ছায়া নহে। জীবন যুদ্ধে নারী পুরুষের সহযোগিণী, নারী যদি পুরুষের দাসী হয় পুরুষও নারীর দাস। নজরুল সাহিত্যে জননীর প্রভাব পরিব্যাপ্তী অসাধারণ, মানব সভ্যতার বিকাশ ধারায় যে রমনী কন্যা, জায়া, জননীতে রূপান্তরিত হয় তাকে বাদ দিয়ে জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতির কোন পর্যায়ই সুষ্ঠভাবে চলতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার দুই বোন উপন্যাসে শর্মিলার জবানীতে বলেছেন, মা হলেন বর্ষার ঋতু। ফুল দান করেন, ফল দান করেন, নিবারণ করেন তাপ, ঊর্ধ্ব লোক থেকে আপনাকে দেন বিগলিত করে, দূর করেন তদ্ধতা ভরিয়ে দেন অভাব।' কবি ওমর খৈয়াম নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে বলেন, 'ওগো নারী শ্রেষ্ট তুমি অবনীর, গোলাপে গঠিত যেন ভিতর বাহির, মাঝে মাঝে সবমিয়ে তাই মনে হয়, তুমিতো গোলাপ ছাড়া অন্য কিছু নয়।'

মুসলিম কাব্যে নারীর মাতৃরূপের প্রাসঙ্গিকতায় ফুটে উঠেছে মা হচ্ছেন সন্তানের আধার আশ্রয়স্থল ও বাৎসল্যপূর্ণ খনিস্বরূপ। মা যেমন সন্তানের জন্যে সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারেন, তেমনি সন্তানও মায়ের স্নেহ বাৎসল্যপূর্ণ বিকল্প খুঁজে পায় না। তাইতো নজরুল লিখেছেন, যেখানেতে দেখি যাহা, মায়ের মতন আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশানই, মায়ের মতন এত, আদর সোহাগ সেতো, আর কোন খানে কেহ পাইবে না ভাই, দেখিলে মায়ের মুখ, দূরে যায় সব দুখ, মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পারণ, মায়ের শীতল কোলে, সকল যাতনা ভোলে, কতনা সোহাগে মাতা বুকটি ভরণ। আমাদের পল্লিকবি জসিম উদ্দীন নারীকে ঝিনুকে মুক্তা সদৃশ্য উল্লেখ করে বলেন, 'দুঃখের সায়রে মায়ের এক সুখ, রঙিন ঝিনুক পোৱা মুক্ত এতটুকু।' হযরত ওমর রা: বলেন, ঈমানের পর চরিত্রবান স্ত্রী লাভ একটি বিরাট নিয়ামত।

নারীকে আবদ্ধ রাখা পাপ, তাইতো ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, 'পৃথিবীতে মানুষের স্বাধীনতার হরণ করার মত পাপ আর নেই, নারী জাতিকে সর্বদা আন্ত:পুরে বন্ধ রাখা ভীষণ ও ভয়ানক পাপ। নারী শিক্ষার জন্য অলংকার বিক্রি বা অলংকার না কেনার জন্য বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত বলেন, 'শিক্ষার অভাবে আমরা স্বাধীনতা লাভের অনুপযুক্ত হয়েছি, অযোগ্য হয়েছি বলে স্বাধীনতা হারিয়েছি, তাই বলি অলংকারের টাকা দ্বারা জেনানা স্কুলের আয়োজন করা হোক 
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা দেখতে পেলাম যে মুসলিম কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, জ্ঞানী-গুণী ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ প্রমূখ নারীকে কেবল সত্য ও সুন্দরের চোখেই দেখেছেন, তারা নারীকে বাকা চোখে দেখেন নি যেমন অন্যান্য ধর্ম, সমাজ ও সভ্যতায় দেখেছে। এর কারণ হল মুসলমানগণ তাদের ধর্মের বিধি-নিষেধের কারণে তারা নারীকে বাঁকা চোখে দেখেন নি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here